বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : দেশে করোনা সংক্রমণের গতি ঊর্ধ্ব। আক্রান্ত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যুহারও বাড়ছে। সংক্রমণ এবং মৃত্যুহার নিয়ন্ত্রণে রাখতে টিকায় জোর দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু টিকাদান শুরুর এক বছরে দেশের মাত্র অর্ধেক জনগোষ্ঠী এক ডোজ টিকা নিয়েছেন। টিকাদানের ধীরগতি এবং নিবন্ধনের অনীহায় কঠিন হয়ে পড়ছে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ।
টিকাদানের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে স্বাস্থ্য বিভাগ পিছিয়ে আছে। গত বছরের ২৭ জানুয়ারি করোনার গণটিকাদান কর্মসূচি উদ্বোধন করেছিল স্বাস্থ্য বিভাগ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সর্বশেষ পরিসংখ্যান বলছে, এ পর্যন্ত দেশের ৪৬ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ এক ডোজ এবং ৩১ দশমিক ৯ শতাংশ মানুষ পূর্ণ দুই ডোজ করোনার টিকা পেয়েছেন। মোট জনসংখ্যার ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকা দিতে চায় সরকার। কিন্তু এখন পর্যন্ত ৫০ শতাংশের ঘরই ছুঁতে পারেনি টিকা কর্মসূচি।
শুরুর দিকে দেশে পর্যাপ্ত টিকা আসা নিয়ে কিছুটা অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছিল। গত দুই মাসে সে অনিশ্চয়তা অনেকটাই দূর হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের হিসাব অনুযায়ী, ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে টিকা এসেছে ২২ কোটি ২ লাখ ৩৭ হাজার। দেশে এ পর্যন্ত প্রথম ডোজ টিকা পেয়েছেন ৮ কোটি ৫১ লাখ ৮৭ হাজার ৬৭৭ জন। দ্বিতীয় ডোজ টিকা পেয়েছেন ৫ কোটি ৬১ লাখ ৫৮ হাজার ৭৯০ জন। বুস্টার ডোজ পেয়েছেন ৫ লাখ ৭২ হাজার ৮৬৩ জন। দেশে প্রায় ৮ কোটি ডোজ টিকা মজুত আছে। গতকাল রাতে আরও ২৩ লাখ ডোজ ফাইজারের টিকা দেশে এসে পৌঁছানোর কথা রয়েছে। আগামী মার্চের মধ্যে আরও ৯-১০ কোটি টিকা আসার সম্ভাবনার কথা বলেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
টিকার মজুত নিশ্চিত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ১ জানুয়ারি থেকে সারা দেশের ইপিআই কেন্দ্রে করোনার টিকা দেওয়া সিদ্ধান্ত নেয় স্বাস্থ্য বিভাগ। এক মাসে ৩ কোটি ৩২ লাখ মানুষকে প্রথম ডোজ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সে হিসাবে প্রথম সপ্তাহে অর্থাৎ ১ থেকে ৬ জানুয়ারি পর্যন্ত ৮০ লাখের বেশি মানুষকে টিকা দেওয়ার কথা। অর্থাৎ নিয়মিত করোনার টিকা দেওয়া ছাড়াও দৈনিক আরও ১৩ লাখের বেশি মানুষকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ছিল। বাস্তবে তা হয়নি। স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিসংখ্যান বলছে, ১ থেকে ৬ জানুয়ারি সারা দেশে ৩২ লাখ ৭৪ হাজার মানুষকে প্রথম ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে। এর আগের সপ্তাহেও প্রায় একই পরিমাণ প্রথম ডোজের টিকা দেওয়া হয়েছিল। এতে দেখা যাচ্ছে, আগের সপ্তাহের চেয়ে সর্বশেষ সপ্তাহে মাত্র ৩ হাজার বেশি মানুষ প্রথম ডোজ পেয়েছে। গত তিন মাসে টিকাদানের হার পর্যালোচনায় দেখা গেছে, দৈনিক টিকাদানের পরিমাণ কিছুটা বাড়তির দিকে। কিন্তু দ্রুত সব মানুষকে টিকার আওতায় আনার জন্য তা যথেষ্ট নয়।
প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও ইউজিসি অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেছেন, করোনা সংক্রমণ আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। যারা আগে থেকেই বিভিন্ন জটিল রোগে ভুগছেন তাদের জন্য করোনার যেকোনো ভ্যারিয়েন্টই ঝুঁকিপূর্ণ। সংক্রমণ ও মৃত্যুহার নিয়ন্ত্রণে টিকা কার্যকর ভূমিকা পালন করছে। কিন্তু টিকা কর্মসূচিতে কিছুদিন হচ্ছে ধীরগতি দেখা যাচ্ছে। এখন মানুষের আগ্রহেও বেশ খানিকটা ভাটা পড়েছে। টিকা কার্যক্রম বেগান করতে আবার দেশব্যাপী ক্যাম্পেইন চালাতে হবে। এ কার্যক্রমে জনপ্রতিনিধি, এলাকার গণমান্য ব্যক্তিদের সম্পৃক্ত করার পরামর্শ দিয়েছেন এ চিকিৎসক।