আমার ভক্তদের জন্য সামনে আসছে একাধিক সারপ্রাইজ – জসিম মাহমুদ জীবন

বাংলা সংগীতের জনপ্রিয় গীতিকার জসিম মাহমুদ জীবন। তার গীতিকাব্যে ও সুরে তৈরী হয়েছে অনেক জনপ্রিয় গান।
আজ কথা হলো এই গীতিকার ও সুরকারের সঙ্গে।
কথা বলেছেন;জাহিদ হাসান নিশান।

প্রশ্নঃ- কেমন আছেন?

জসিম মাহমুদ জীবনঃ- সৃষ্টিকর্তার অসীমকৃপায় ভালো আছি।

প্রশ্নঃ আপাততো কী নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন?

জসিম মাহমুদ জীবনঃ- জীবনের তাগিদে অনেক কিছু নিয়েই ব্যস্ততায় থাকতে হয়। তবে আমার ভক্ত শ্রোতাদের জন্য সামনে বেশ কিছু সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে। সেসব সময় হলে জানানো হবে।

আপনার লেখা অনেক গানই তো জনপ্রিয় হয়েছে, আপনার অনুভূতি কী?

জসিম মাহমুদ জীবনঃ বাংলা গানের এক অন্য রকম আবেদন আছে। আমাদের বাংলা সংগীত এক রত্নভাণ্ডার যার আবেদন বিশ্বব্যাপি। আমি তাতে খানিকটা অবদান রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছি মাত্র প্রতিনিয়ত। বড় বড় শিল্পীর সঙ্গে কাজ করার সৌভাগ্য হয়েছিল বলেই সেটা সম্ভব হয়েছে হয়তো।

প্রশ্নঃ আপনার লেখালেখির মূল দর্শন কী ?

জসিম মাহমুদ জীবনঃ ভেতর থেকে তাগিদ না আসলে লেখালেখি হয় না। লেখাটা আসে ভেতর থেকে অন্তর থেকে। লিখতে লিখতে গীতিকারদের সাথে জীবনবোধ, দৃষ্টিভঙ্গি শাণিত হয়। গীতিকবি মাত্রই সত্য ও সুন্দরের সাধক। গীতিকবিদের জীবনই তাঁর জীবন দর্শনেরই ছায়া আর গান তার প্রমূর্তরূপ। জীবনব্যাপী অর্জিত শ্রেষ্ঠ অভিজ্ঞতার নির্যাস রূপায়িত হয় একেকটা গান। যিনি যতো বড় দার্শনিক তিনি ততো বড় গীতিকার। আমার ভেতর যে লেখকসত্তা বাস করেন তিনিই আমাকে লিখায়। মানবিক মানুষ তৈরি, বাসযোগ্য পৃথিবী বিনির্মানে নিজ নিজ অবস্থান থেকে কাজ করা প্রতিটি লেখকেরই দায়, আমিও দায়মুক্ত নই।

প্রশ্ন: লেখালেখি নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

জসিম মাহমুদ জীবনঃ কি পেলাম কি হারালাম আর সামনে কিবা অপেক্ষা করছে এই নিয়ে ভাবীনা তেমন, এই অঙ্গনে পা দিয়ে অনেক কিছুই পেছনে ফিলে আসতে হয়েছে। তাই যতোদিন পারি লিখবো। আমার একটা গান লেখায় যেনো সমাজ বদলের হাতিয়ার হয় , মানুষকে আলোর পথ দেখায়। আমার গান শুনে যেন মানুষ প্রশান্তি পায়। আমার লেখা গান শুনে যেন মানুষ স্মৃতিকাতর হয়। আনন্দে ভাঁসে এটাই চাওয়া আমার।

প্রশ্নঃ- এখনতো অনেকে তদবির করে কিংবা টাকা খরচ করে পুরস্কার গ্রহণ করছে, এব্যাপারে কী বলবেন?

জসিম মাহমুদ জীবনঃ- মনে রাখতে হবে, এই পুরস্কার সংগীতের জন্য অপরিসীম গুরুত্ব বহন করে। কেউ পুরস্কার পেলে তাঁর দ্বায়িত্ব আরও বেড়ে যাই সংগীতে। পক্ষপাতিত্ব বা তদবিরের সংস্কৃতি ত্যাগ না করলে ক্ষতি সার্বিকভাবে এ দেশের সংগীতঅঙ্গণ।

প্রশ্নঃ যাঁরা পুরস্কার দেবার দ্বায়িত্বে থাকেন, তাদের কি করা উচিত?

জসিম মাহমুদ জীবনঃ-
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যাঁরা গীতিকার, সুরকার, শিল্পীদের সম্মান স্বরুপ পুরুস্কার দিয়ে থাকেন অবশ্যই এটা একটা মহৎ কাজ। তবে সম্মানিত র্জুরিবোর্ড সদস্যদের আরও দায়িত্বসহকারে সব তদবির, ব্যক্তি আর গোষ্ঠীস্বার্থের ওপরে উঠে বিচারকার্য সম্পন্ন করার অনুরোধ থাকবে। যেন নিরপেক্ষতার ঘাটতিতে অযোগ্য লোকের হাতে পুরস্কার না যায়। তাতে সার্বিক অনুষ্ঠানের গুরুত্বহানি হয়। কোনো শাখায় মানসম্মত প্রতিযোগী না থাকলে সেই শাখায় ওই বছর পুরস্কার না-ও দেওয়া যেতে পারে।

প্রশ্নঃ এখন কী উন্নত মানের গীতিকথায় গান তৈরী হচ্ছে?

জসিম মাহমুদ জীবনঃ- গান একটা সাউন্ড, যা একজন মানুষ কানে শুনে এবং হৃদয়ে অনুভব করে। গান শুনে নিজের মতো করে চিন্তা করে। কল্পনা সাজায়। শ্রোতা গান শুনে তার মতো করে দৃশ্যকল্প তৈরি করে। এটা একটা আবেগের জায়গা, যা মানুষের কল্পনার জগৎকে সুন্দর করে। এখন তো গানের নামে সস্তা কথার বস্তা পচা গান তৈরি করা হচ্ছে। এগুলো আসলে গান নয়। এগুলো গানের নামে অশ্লীলতা। তাই সবার এই অরুচিকর লিরিকের গান বর্জন করতে হবে।

প্রশ্নঃ আপনার গান দেশের শীর্ষ সব চ্যানেলে প্রকাশ পেয়েছে, আপনার নিজের কোন চ্যানেল আছে?

জসিম মাহমুদ জীবনঃ- হ্যাঁ, আমি JMJ OFFICIAL নামে এরই মধ্যে একটা চ্যানেল করেছি। সেখানে নবীন, প্রবীণ সব শিল্পীকে নিয়ে গান প্রকাশ করছি।

প্রশ্নঃ-গান প্রকাশের ম্যাধম অনলাইন বা ইউটিউব এটাকে কিভাবে দেখেন আপনি?

জসিম মাহমুদ জীবনঃ-এখন সঙ্গীত বিষয়ে উচ্চতর পড়ালেখার সুযোগ তৈরি হয়েছে। সঙ্গীত নিয়ে গবেষণা করার সুযোগ তৈরি হয়েছে। এটা আমার কাছে ভীষণ ইতিবাচক মনে হয়। আবার বিশ্বায়নের অস্থিরতা সঙ্গীতাঙ্গনেও প্রভাব তৈরি করেছে। এখন অনলাইনে গান প্রকাশ হচ্ছে। এটি তেমন নেতিবাচক কিছু নয় বলেই আমি মনে করি, বরং অনেকাংশে ইতিবাচক। ইউটিউব আছে বলেই কিন্তু সবাই দেশের বাইরের গণ্ডিটা ছুঁতে পারছে সহজেই। নিজের দেশের সঙ্গে বাইরের দেশের সঙ্গীতও শোনার সুযোগ হয়েছে। তবে হ্যাঁ, এটা সত্য যে অনেক আনাড়ি শিল্পীদের বা যারা শখের বশে গান করেন, তাদের গানও ইউটিউবে আছে। সে ক্ষেত্রে গান বাছাই করার একটা ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে। ইউটিউব এক বিশাল ভাণ্ডারের খোঁজ দিয়েছে, যেখান থেকে ইচ্ছামতো গান শোনা যায়। ইউটিউবের নেতিবাচক থেকে ইতিবাচক দিকটাই বেশি মনে হয় আমার কাছে।

প্রশ্নঃ নতুন যারা সংগীত জগতে আসছে তাদের উদ্দেশ্যে কি বলবেন?

জসিম মাহমুদ জীবনঃ- এখন নবীনরা তো শিল্পী হওয়ার আগেই তারকা হয়ে যায়। তাদের শিল্পী হওয়ার ধৈর্য কম। কোনো কিছু সাধনার মাধ্যমে অর্জন করতে হয় এটা তারা বুঝতে চায় না। দুটো গান শিখেই তারা মিউজিক ভিডিও তৈরি করে। কণ্ঠ সাধনার চাইতে নিজেকে ক্যামেরার সামনে দেখাতেই বেশি পরিশ্রম করে। তাই সংগীতে নিজের অবস্থান তৈরী করতে হলে সংগীত সাধনার কোন বিকল্প নেই। আর এখানে যারা শিখে আসতে পারবে তারাই থেকে যাবে বাকিরা ছিটকে পড়বে।

জসিম মাহমুদ জীবন
Comments (0)
Add Comment