নতুন রুটের সন্ধানে বিমান

নতুন নতুন রুট খোলার মিশনে নেমেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। পূর্ব থেকে পশ্চিম, দক্ষিণ থেকে উত্তর পৃথিবীর সব গোলার্ধেই পাখা মেলতে চায় বিমান। বাড়ানো হচ্ছে- ফ্লাইট ও ফ্লিট। বিমানের সোনালি অতীত ফিরিয়ে আনতে ইতোমধ্যেই চালু করা হয়েছে- টরন্টো, নারিতা, গুয়াংজু ও চেন্নাই রুটের ফ্লাইট। আগামী মাসেই চালু হচ্ছে রোমের ফ্লাইট। জুনে হচ্ছে মালদ্বীপ। বছরের শেষে বহুল প্রতীক্ষিত নিউইয়র্ক ফ্লাইটও চালু করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিউল আজিম। এর বাইরে আগামী দু-তিন মাসের মধ্যেই কোড শেয়ারিংয়ের মাধ্যমে চালু হচ্ছে ঢাকা নারিতা-ভেঙ্কুবার ও লসঅ্যাঞ্জেলস ফ্লাইট। পরের টার্গেট অস্ট্রেলিয়া। পাইপ লাইনে রয়েছেÑ কুনমিং ও ফিলিপিন্স। এভাবেই নিত্যনতুন রুট চালুর মাধ্যমে বিমানকে সত্যিকার অর্থেই বাণিজ্যিক সম্ভাবনার এয়ারলাইন্সে দাঁড় করাতে যাচ্ছেন- বর্তমান এমডি শফিউল আজিম।

বলেছেন, এখন আর পিছু হটার কোনো সুযোগ নেই। বিশ্বের শীর্ষে এয়ারলাইন্সগুলোর সঙ্গে তীব্র প্রতিযোগিতার মাধ্যমে টিকতে হলে- বাড়াতে হবে রুট, নিশ্চিত করতে হবে যাত্রী সেবা, দিতে হবে যাত্রীদের সর্বোচ্চ সম্মান, কলেবর বাড়াতে হবে বিদ্যমান বহরের। এ জন্য নেওয়া হয়েছে ব্যাপক পরিকল্পনা, যা বাস্তবায়নের জন্য এখন সবাইকে কাজ করতে হচ্ছে নিষ্ঠা, সততা ও ত্যাগের মানসিকতায়। অর্থাৎ বিমানকে বদলাতে হবে সেবার মাসনিকতায়, বাণিজ্যের নজরে। গত দুই বছর বিমানের দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি যা অর্জন করেছেন, যা দেখেছেন, তাতে তার কাছে মনে হয়েছে,্ এখন বিমানকে সঠিক পথে থাকতে হলে, বাড়াতে হবে বহর , বাড়াতে হবে নতুন নতুন রুট, নিশ্চিত করতে হবে যাত্রী সেবা। মানুষের মন থেকে বিমান সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা চিরতরে পাল্টে দিতে হবে।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রী ফারুক খান বলেছেন, বিমানের নতুন রুট যত বেশি চালু হবে, যত বেশি ফ্লাইট ফ্রিকোয়েন্সি বাড়ানো যাবে ততই লাভজনক হবে। এটাই ব্যবসার পলিসি। প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে টিকে থাকতে হলে এগুলো লাগবেই।

সর্বশেষ বিমানের সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে জানা গেছে, এখন বিমানে রয়েছে ২১টি এয়ারক্রাফট। যদিও বর্তমানে ৭০টি দেশের সঙ্গে এয়ার সার্ভিস এগ্রিমেন্ট রয়েছে। এ অবস্থায় রুট বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় বিমান। এতে প্রথমেই ২০২২ সালের জুলাইতে ঢাকা-টরন্টো ফ্লাইট চালু করা হয়। চীনের গুয়াংজু, জাপানের নারিতা এবং ভারতের চেন্নাইতে ডানা মেলেছে বিমান। ২০২৪ সালেও নতুন রুট সম্প্রসারণের ধারা বজায় রাখতে কাজ চলছে। ঢাকা-নারিতা ফ্লাইটের মাধ্যমে কানাডার ভ্যাংকুভার এবং আমেরিকার লসঅ্যাঞ্জেলসে যাত্রী নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এয়ার কানাডার সঙ্গে কোড শেয়ারিংয়ের মাধ্যমে এই সুবিধা পাওয়া যাবে। ইউরোপকে প্রাধান্য দিলে এশিয়ার বিভিন্ন দেশে ফ্লাইট চালু করা হবে। চলতি বছরের শেষে ম্যানিলা ফ্লাইট চালুরও পরিকল্পনা রয়েছে। ফিলিপিন্সের সঙ্গে করা ২৬ বছরের পুরনো চুক্তি হালনাগাদ করা হচ্ছে। এ ছাড়া চীনের কুনমিং ফ্লাইট চালু করতে কাজ চলছে। এটাকে বৃদ্ধি করাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। এ জন্য দরকার নতুন রুটের সন্ধান আর বহরের এয়ারক্রাফটের সংখ্যা বাড়ানো। ফ্লাইটের সিডিউল ঠিক রাখতে হলে এই মুহূর্তে আরও অন্তত গোটা চারেক মাঝারি ও সুপরিসর উড়োজাহাজ দরকার।

বিমানের গত বছরের সেরা দুটো অর্জন ছিল বহুল আলোচিত নারিতা ও চেন্নাই রুটে ফ্লাইট চালু। ১ সেপ্টেম্বর ঢাকা নারিতা রুট চাল করা হয় বর্ণাঢ্য আয়োজনে। যা দিন দিনই আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে। যাত্রী বাড়ছে, ব্যবসাও বাড়ছে। এখন পর্যন্ত বাণিজ্যিক সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে উঠছে। বিমানের বিপণন ও বাণিজ্যিক পরিচালক মো. সালাহ উদ্দিন জানালেন, নারিতা রুট বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। সামনের দিন আরও ভালো হবে। মানুষ এখন তো ঢাকা থেকে নারিতা হয়ে চলে যাচ্ছে কানাডার ভ্যাংকুবার ও যুক্তরাষ্ট্রের লসঅ্যাঞ্জেলসে। তারই ধারাবাহিকতায় এখন চলছে রোম ও মালদ্বীপ রুট চালুর জোর প্রস্তুতি।

তিনি জানালেন বিগত ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসে ঢাকা-চেন্নাই রুটে ফ্লাইট চালু করা হয়। সপ্তাহের শনি, সোম ও বৃহস্পতিবার যাত্রী পরিবহন করছে এখন।

দৃষ্টি এখন রোমে ॥ দীর্ঘ নয় বছর বিরতির পর আবারও ইতালির রোমে ফ্লাইট চালুর প্রস্তুতি নিচ্ছে বিমান। মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আগামী ২৬ মার্চ ঢাকা থেকে রোমে সরাসরি ফ্লাইট চালু হবে। প্রাথমিক অবস্থায় এ রুটে সপ্তাহে তিনটি ফ্লাইট পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিমান।

রোম ফ্লাইটের সর্বশেষ অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে পরিচালক সালাহ উদ্দিন বলেন, সব প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছি। বৃহস্পতিবার থেকে টিকিট বিক্রিও শুরু করেছি। এ স্বাধীনতা দিবসে রোম যাচ্ছি এটাই চূড়ান্ত। কেননা রোমে বিমানের জেনারেল সেলস এজেন্ট নিয়োগ ও স্টেশন চালু করাসহ সব ধরনের কাজ শেষ হয়ে গেছে। প্রাথমিকভাবে এ রুটে সপ্তাহে তিনটি ফ্লাইট পরিচালনা করা হবে। বোয়িং-৭৮৭ ড্রিমলাইনার দিয়ে ঢাকা থেকে ৯ ঘণ্টায় রোমে পৌঁছবে ফ্লাইটটি।

উল্লেখ্য, এ রুট চালুর জন্য দীর্ঘদিন ধরেই ইতালি প্রবাসীরা জোর দাবি জানিয়ে আসছেন। বিমানও বার বার উদ্যোগ নিয়েও হোঁচট খেয়েছে। এ অবস্থায় শফিউল আজিম ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনিই কার্যকর উদ্যোগ নেন। তার নির্দেশে এ রুটের সমীক্ষা চালানো হয়। তাতে দেখা যায়, ২০২২ সালের ১ জানুয়ারি পর্যন্ত ইতালিতে নিয়মিতভাবে বসবাস করছেন এক লাখ ৫০ হাজার ৬৯২ জন বাংলাদেশী। যাদের অনেকেই বছরে একাধিকবার বাংলাদেশে আসা-যাওয়া করেন। কিন্তু সরাসরি ফ্লাইট না থাকায় ট্রানজিটের মাধ্যমে এত বিপুল বাংলাদেশী যাত্রী পরিবহন করে আসছে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক এয়ারলাইনসগুলো। আবার মধ্যপ্রাচ্যে ট্রানজিটের কারণে যাত্রীদের ভ্রমণে বেশি সময়ও ব্যয় হচ্ছে। অন্যদিকে বিদেশী এয়ারলাইনসগুলোর মাধ্যমে দেশ থেকে চলে যাচ্ছে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা।

জানতে চাইলে শফিউল আজিম বলেন, সর্বশেষ সমীক্ষায় দেখা গেছে ইতালিতে বসবাসকারী বাংলাদেশী ছাড়াও বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন কাজে যাওয়া-আসা মিলিয়ে এ রুটে বছরে ৩ লাখের বেশি যাত্রী রয়েছে। ফলে এটি হবে বিমানের রেডি মার্কেট। আমাদের টার্গেট থাকবে এই রুটের প্রবাসীদের সর্বোচ্চ সেবাদান নিশ্চিত করা। সেই চ্যালেঞ্জই শুরু হচ্ছে আগামী ২৬ মার্চ।

বিমান জানিয়েছেÑ ১৯৮১ সালের ২ এপ্রিল বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ঢাকা-রোম রুটে ফ্লাইট চালু হয়। তবে ২০১৫ সালের ৬ এপ্রিল থেকে তা বন্ধ ছিল। মূলত লোকসানের কারণেই ২০১৫ সালের এপ্রিলে রোম রুটের সরাসরি ফ্লাইট বন্ধ করে দেওয়া হয়। চালু থাকা অবস্থায় বহরে থাকা বোয়িং-৭৭৭ ইআর উড়োজাহাজ দিয়ে ফ্লাইটটি পরিচালিত হতো। আসন সক্ষমতার তুলনায় গড়ে ৪০ শতাংশের বেশি যাত্রী না মেলায় সে সময় প্রতি ফ্লাইটে বিমান লোকসান দিত প্রায় এক কোটি টাকা।

এদিকে বিমান জানিয়েছে বৃহস্পতিবার দুপুর ২টা ৫ মিনিট থেকে বিমানের সব ডিস্ট্রিবিউশন চ্যানেলে একযোগে বিক্রির জন্য টিকিটসমূহ উন্মুক্ত করা হয়েছে। যাত্রীরা বিমানের বাণিজ্যিক ওয়েবসাইট মোবাইল অ্যাপস, বিমানের যে কোনো সেলস সেন্টার, বিমান কল সেন্টার ০১৯৯০৯৯৭৯৯৭ এবং বিমান অনুমোদিত ট্রাভেল এজেন্সি থেকে এ রুটের টিকিট কিনতে পারবেন। নতুন রুট উপলক্ষে বিশেষ ছাড় চলছে। ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৬ মার্চের মধ্যে বিমানের ওয়েবসাইট ও মোবাইল অ্যাপস থেকে টিকিট কেনার ক্ষেত্রে প্রমোকোড বিজি রোম-১৫ ব্যবহার করে ১৫ শতাংশ ছাড় পাওযা যাবে। এ ছাড়া বিমান কল সেন্টার, নিজস্ব টিকিট কাউন্টার ও অনুমোদিত ট্রাভেল এজেন্সি থেকে টিকিট কিনলে মূল ভাড়ার ওপর ১০ শতাংশ ডিসকাউন্ট পাওযা যাবে। ২৬ মার্চ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত সপ্তাহে প্রতি সোম, মঙ্গল এবং বৃহস্পতিবার ঢাকা থেকে ফ্লাইট বিজি৩৫৫ স্থানীয় সময় রাত ২টায় রোমের উদ্দেশে যাত্রা করে রোমে পৌঁছাবে স্থানীয় সময় সকাল ৭টায়। একই দিন রোম থেকে স্থানীয় সময় সকাল ৮টা ৪৫ মিনিটে যাত্রা করে ঢাকায় পৌঁছাবে রাত ১১টা ৪৫ মিনিটে। তবে ১ এপ্রিল থেকে গ্রীষ্মকালীন সূচি অনুযায়ী প্রতি সোম, মঙ্গল ও বৃহস্পতিবার ঢাকা থেকে স্থানীয় সময রাত ৩টায় যাত্রা করে রোমে পৌঁছাবে সকাল ৯টা ১০ মিনিটে এবং রোম থেকে স্থানীয় সময় সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে যাত্রা করে ঢাকায় পৌঁছবে রাত ১২টা ৩০ মিনিটে।

বিমানের বিক্রয় ও বিপণন পরিচালক সালাহ উদ্দিন জানিযেছেন এ রুটে সব প্রকার ট্যাক্সসহ ইকোনমি ক্লাসে একমুখী সর্বনিম্ন ভাড়া জনপ্রতি সর্বমোট ৬৪ হাজার ৩৫৫ টাকা থেকে শুরু হবে এবং রাউন্ড ট্রিপ টিকিটের মূল্য শুরু হবে এক লাখ ৪ হাজার ৫৬৮ টাকা থেকে। ট্যাক্সসহ বিজনেস ক্লাসে ঢাকা-রোম রুটে একমুখী সর্বনিম্ন ভাড়া শুরু হবে এক লাখ ৪৪ হাজার ১০৫ টাকা থেকে এবং রাউন্ড ট্রিপ টিকিটের মূল্য শুরু হবে দুই লাখ ৫৮ হাজার ৫৬৮ টাকা থেকে। এই রুটে ইকোনমি ক্লাসে একমুখী সর্বনিম্ন ভাড়া শুরু হবে ৪৮ হাজার ৭৮৮ টাকা থেকে এবং রাউন্ড ট্রিপ টিকিটের মূল্য শুরু হবে ৮৯ হাজার ৮৫২ টাকা থেকে। বিজনেস ক্লাসের ক্ষেত্রে একমুখী ও রাউন্ড ট্রিপ ভাডা শুরু হবে যথাক্রমে এক লাখ ২২ হাজার ৬৬৩ টাকা ও দুই লাখ ২২ হাজার ২৩৬ টাকা থেকে। তবে মুদ্রা বিনিময় হার, সময় ও চাহিদা বিবেচনায় ভাড়ার পরিমাণ কম-বেশি হতে পারে।

পরের টার্গেট মালদ্বীপ ॥ বিমান জানিয়েছে রোম ফ্লাইট চালুর পরই মালদ্বীপ ফ্লাইট চালুর পরিকল্পনা রয়েছে। পর্যটন নির্ভর এ রুটটি বেশ জনপ্রিয় ও বাণিজ্যিক সম্ভাবনাময়। বিমানও আগামী জুনের আগেই টার্গেট নিয়েছে মালদ্বীপ যাওয়ার। এ বিষয়ে পরিচালক সালাহ উদ্দিন জানান, মালদ্বীপ চালুর সিদ্বান্ত ও পরিকল্পনা রয়েছে। তবে ঠিক এখনই হয়তো সম্ভব হবে না। আমাদের কিছু ককপিট ক্রু অর্থাৎ পাইলট লাগবে। পাইলট নিয়োগের নীতিমালাও চূড়ান্ত পর্যায়ে। আশা করছি নিয়োগ হয়ে গেলেই আমরা পারব।

লস অ্যাঞ্জেলস-ভ্যাংকুবার অস্ট্রেলিয়া ॥

বিমান জানিয়েছে-রোম চালুর পরের টার্গেট রয়েছে বহুল প্রতীক্ষিত আমেরিকার লস অ্যাঞ্জেলস। কোড শেয়ারিংয়ের মাধ্যমে বিমানের ঢাকা থেকে নারিতা হয়ে লস অ্যাঞ্জেলস যাওয়ার জোর প্রচেষ্টা চলছে। এ জন্য জাপান এয়ারলাইন্সের সঙ্গে বিমানের সমঝোতা স্বাক্ষর চুক্তি হয়েছে। এ জন্য এয়ার কানাডার সঙ্গেও একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। তারপর টার্গেট থাকবে অস্ট্রেলিয়া। এটিও চালু করা হবে কোড শেয়ারিংয়ে।

এ বিষয়ে পরিচালক সালাহ উদ্দিন বলেন, এসব রুট বেশ জনপ্রিয় ও বাণিজ্যিক সম্ভাবনাময়। কারণ ইতোমধ্যে ঢাকা থেকে অনেক যাত্রী নারিতা হয়ে লস অ্যাঞ্জেলস ও ভ্যাংকুবার যাচ্ছেন। এতে তাদের সময় ও ব্যয় দুটোই কম লাগছে। আমরা এ দুটো রুটের সঙ্গে কোড শেয়ারিং সংক্রান্ত সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পথে। এখন শুধু নিপ্পন অল ও জাপান এয়ারের সে ঙ্গ চুক্তিটা হয়ে গেলেই আমরা চালু করতে পারব।

বছরান্তে নিউইয়র্ক ॥ বিমানের বহুল প্রতীক্ষিত রুট নিউইয়র্ক। এক সময় ডিসি-১০ দিয়ে ফ্লাইট চালাত বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ এ রুটটিতে। কিন্তু বিগত বিএনপি জামায়াত সরকারের শেষ মুহূর্তে এক হঠকারী সিদ্ধান্তে এক কলমের খোঁচায় বন্ধ করে দেওয়া হয় বিশ্বের সবচেয়ে দামি এ রুটটি। এ নিয়ে তখন চরম আলোড়ন সৃষ্টি হয়। তারপর এক-দেড় যুগ ধরে চেষ্টা করেও চালু করা সম্ভব হয়নি নিউইয়র্ক ফ্লাইট। এ নিয়ে বারবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একের পর এক নিরাপত্তা অডিটের মতো কঠিন বিষয় চাপিয়ে দিতে থাকে। সিভিল এভিয়েশানও এফএএএর বেশ কিছু পর্যবেক্ষণ ও শর্তাদি পূরণ করার পরও কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারেনি। সর্বশেষ এখন আগামী জুনের মধ্যে আরও দুটো অডিট শেষ করার ইস্যুতে ঝুলে আছে এ রুটের ভাগ্য। তবে এত কিছুর পরও বিমান আশাবাদী এ বছরের মধ্যেই তা সম্ভব হবে। এ জন্য গত বছর মে মাসেই যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল এভিয়েশন অথরিটি (এফএএ) বরাবর এ জন্য আবেদন করেছে বিমান। যদিও তবে ঢাকা-নিউইয়র্ক রুটে ফ্লাইট পরিচালনার বিষয়টি নির্ভর করছে সিভিল এভিয়েশন এবং আমেরিকার ফেডারেল এভিয়েশন অথরিটির ওপর। হযরত শাহজালাল ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টের রানওয়ের ক্যাটাগরি, নিরাপত্তা বা সুযোগ-সুবিধা, এটি নিয়ে সিভিল এভিয়েশন ফেডারেল এভিয়েশন অথরিটির সঙ্গে কাজ করছে। তারা গত ডিসেম্বরে ইন্সপেকশন করে গেছে। এ বিষয়গুলো এপ্রিল থেকে সর্বোচ্চ জুনের মধ্যে সম্পন্ন হলেই ফ্লাইট চালু করা যাবে।

জানতে চাইলে বিমানের এমডি শফিউল আজিম বলেন- আমর হাল ছাড়ছি না। সিভিল এভিয়েশান যেমন কিছু বিষয় মীমাংসা করার চেষ্টা চালাচ্ছে আমরাও প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। যাতে যখনই অনুমোদন পাওয়া যায় তখনই চালু করা যায় ঢাকা নিউইর্য়ক সরাসরি ফ্লাইট।

বড় হচ্ছে কলেবর ॥ এদিকে নতুন রুট ও ফ্লাইট চালুর জন্য বিমান বহরে জরুরি দরকার ছোট-বড় আরও অন্তত চারটি ফ্লাইট। বিমানে বর্তমানে রয়েছে ছোট-বড় মাঝারি আকারের মোট ২১টি উড়োজাহাজ। এ অবস্থায় পৃথিবীর শীর্ষ দুই কোম্পানি বোয়িং ও এয়ারবাস ইতোমধ্যে অফার দিচ্ছে অত্যাধুনিক উড়োজাহাজ বিক্রির।

ঢাকায় উভয় কোম্পানি দৌড়ঝাঁপ চলছেই। প্রথমেই এয়ারবাস তাদের অত্যাধুনিক ১০টি পরে বোয়িংও ১০টি এয়ারক্রাফট বিক্রির প্রস্তাব দেয়। বিমান বর্তমানে উভয় কোম্পানিকেই কৌশলে আশ্বাস বিশ্বাসে রেখেছে। যদিও এই মুহূর্তে ঢাকায় এয়ারবাসের প্রতিনিধির সঙ্গে আপাতত দুটো এয়ারবাস (এ-৩৫০) বিক্রি নিয়ে দর কষাকষি করছে। আগামী বছর একটি পরের বছর আরেকটি কেনার পরিকল্পনা নিয়েছে বিমান। পাশাপাশি বোয়িং থেকেও দুটো এয়ারক্রাফট কেনার কৌশল নিয়ে এগুচ্ছে বিমান। এসব নিয়ে বিমান সুস্পষ্ট কিছু না বললেও নতুন বিমান ও পর্যটন মন্ত্রী ফারুক খান বলেছেন, বিমানের রুট বাড়াতে হলে ফ্লিটও বাড়াতে হবে। বিমানকে লাভজনকভাবে টিকে থাকতে হলে অবশ্যই ফ্লিট ও রুট বাড়াতে হবে। আরও কার কাছ থেকে কি কেনা হবে সেটা যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। বিমানের জন্য যেটা লাভজনক সেটাই করা হবে।

বিমান
Comments (0)
Add Comment