সাতক্ষীরায় কাজু বাদাম চাষে সফলতার মুখ দেখছেন সাবেক সেনা সদস্য

রিজাউল করিম সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরার তালা উপজেলার শিবপুর গ্রামের মরহুম কেরামত আলী খাঁ এর ছেলে সাবেক সেনা সদস্য রফিকুল ইসলাম জেলায় প্রথম বারের মত কাজু বাদাম চাষে করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন ।

কাজু বাদাম উষ্ণ মন্ডলীয় ফল। কাজুবাদাম চাষের জন্য বেশ উপযোগী বান্দরবানের পাহাড়ি এলাকা। কিন্তু চারা সংগ্রহসহ নানামুখী সমস্যায় চাষাবাদে অনাগ্রহী ছিলেন চাষীরা। কিন্তু সব কিছু পাশ কাটিয়ে সাবেক সেনা সদস্য রফিকুল ইসলাম তার মৎস্য ঘেরের বেড়িবাঁধের উপর রোপন করেন পাঁচটি কাজুবাদাম গাছ। চাষ করার পর ফলন ধরেছে দুই বছর।

রফিকুল ইসলাম জানান, কাজু বাদাম কষ্ট সহিষ্ণু ও খরা প্রতিরোধী। প্রখর সূর্যালোক পছন্দ করে এবং ছায়াতে তেমন বৃদ্ধি পায়না। তাপমাত্রা অত্যধিক হলে কচি ফল ঝরে যায়। অধিক বৃষ্টিপাত এবং মেঘাচ্ছন্ন আবহাওয়া ফলন কমিয়ে দেয়। তিনি পাঁচ বছর আগে এই কাজুবাদামের চাষ করেছেন। গতবছর ও এবছর গাছে কাজুবাদাম ধরেছে। কাজু বাদামের বীজ গুলো চারা দেওয়ার জন্য রেখেছেন। বাড়িতে বীজ রোপন করে নতুন চারা ও গজিয়েছে। তাছাড়া গাছে কলম পদ্ধতিতে গাছের বংশবিস্তারের চেষ্টা করছেন। ব্যাপকভাবে কাজুবাদাম চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা সাবেক এই সেনা সদস্য।

তিনি আরো জানান, তিনি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজুবাদাম চাষের গবেষণা ও পিএইসডি অধ্যায়নরত কৃষিবিদ জাকিয়া সুলতানাকে দেখে এই কাজুবাদাম চাষের প্রতি উদ্বুদ্ধ হয়েছেন। এই কাজুবাদাম চাষের জন্য তার কাছ থেকে কিছু বীজ এনে বাড়িতে চারা উৎপাদন করেন।স্বাস্থ্যকর স্ন্যাকস হিসেবে কাজু বাদাম অতুলনীয়। বিশ্বের কাজু বাদামের চাহিদার ৫২ শতাংশ ভিয়েতনাম এবং ২২ শতাংশ ভারত সরবরাহ করে। বাংলাদেশে যদি অধিক পরিমানে কাজুর চাষ করা যায় এবং তা প্রস্তুত করে বাইরের দেশে রপ্তানী করা যায় তাহলে প্রচুর পরিমানে বৈদেশিক মুদ্রা লাভ করা সম্ভব।

কাজু বাদাম একটি নাট বা বাদাম জাতীয় ফল। কাজু বাদাম গাছের বৈজ্ঞানিক নাম অ্যানাকার্ডিয়াম অক্সিডেনটেল। এটি সপুষ্পক অ্যানাকার্ডিয়েসি পরিবারের বৃক্ষ। বীজ থেকেও চারা তৈরি করা হয়। বেলে দো আশঁ মাটি অথবা পাহাড়ের ঢালে ভাল জন্মে। বৃক্ষ জাতীয় ফসলের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে কাজু বাদামের স্থান তৃতীয়। এর বীজ থেকে পাওয়া বাদাম সুস্বাদু ও পুষ্টিকর এবং অর্থনৈতিক দিক দিয়েও মূল্যবান। বাদামের উপরের অংশের ফল থেকে জুস, ভিনিগার এবং অ্যালকোহল তৈরি করা যায়।

কাজুবাদাম দামে চড়া দেশে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি কাজু বাদাম বিক্রি হয় ৮শত থেকে ১ হাজার টাকায়। কাজু বাদাম সাধারণত খাগড়াছড়ির, নারানখাইয়া, পানখাইয়াপাড়া, কমলছড়ি জামতলী ও পার্বত্য চট্টগ্রামে এলাকায় কিছুটা চোখে পড়ে। এসব এলাকায় কাজুবাদাম চাষ সম্প্রসারণের উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখছেন কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট।

পূর্ণবয়স্ক গাছ ১০ থেকে ১২ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। পাতা অর্ধডিম্বাকার, দেখতে কাঁঠালের পাতার মতো। নভেম্বর থেকে জানুয়ারি ফুল ফোটার সময়। এপ্রিল থেকে জুন মাসে ফল সংগ্রহ করা হয়। কাজুবাদামের দৈর্ঘ্য ৪ থেকে ৫ সেন্টিমিটার। এর ওজন ৫ থেকে ২০ গ্রাম হয়ে থাকে।

তালা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবৃদ হাজিরা খাতুন জানান, কাজুবাদাম একটি বিদেশী ফল দেশে পাহাড়ী অঞ্চলে এই ফলের চাষ হয়ে থাকে। তালা উপজেলায় কাজুবাদামের চাষ হয়েছেন অফিসের পক্ষ থেকে প্রদর্শনী করেছেন। তালা উপজেলায় কাজুবাদাম চাষের বিস্তার ঘটার সমূহ সম্ভাবনা দেখছেন।

সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপ-পরিচালক নুরুল ইসলাম জানান, কাজুবাদাম সাধারণ পাহাড়ী অঞ্চলে চাষ হয়। সাতক্ষীরা জেলায় তেমন চাষের সম্ভাবনা দেখছেন না। তবে তালা উপজেলা তিনি দেখেছেন মৎস্য ঘেরের বেড়ীবাঁধের উপর কাজুবাদাম চাষ। সাতক্ষীরা জেলায় এই প্রথম এবং জেলা সমূহে ব্যাপকভাবে কাজু বাদাম চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেকছে বলে তিনি মনে করেন।

 

কাজু বাদাম চাষকাজু বাদাম চাষ পদ্ধতিসাতক্ষীরায় কাজু বাদাম চাষে সফলতার মুখ দেখছেন সাবেক সেনা সদস্য
Comments (0)
Add Comment