গৌরীপুরের প্রথম শহীদ ব্রজেন বিশ্বাস স্মরণে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

মো. হুমায়ুন গৌরীপুর : স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এসো গৌরীপুর গড়ি এর উদ্যোগে ১৯৭১ সনে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ময়মনসিংহ জেলার গৌরীপুর উপজেলার প্রথম শহীদ ব্রজেন বিশ্বাস স্মরণে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত। শনিবার ২৩ এপ্রিল বিকাল ৩ টায় গৌরীপুর পৌর শহরের শহীদ হারুন উদ্যানের শহীদ মিনারে স্মরন সভা অনুষ্ঠিত হয়। সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান সমন্বয়কারী আবু কাউছার চৌধুরী রন্টি’র সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন গৌরীপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা জনাব আব্দুর রহিম। অন্যানদের মাঝে বক্তব্য রাখেন এসো গৌরীপুর গড়ি সংগঠনের অন্যতম সদস্য সুমন সরকার, শংকর ঘোষ পিলু, কামাল তালুকদার, শুভঙ্কর ঘোষ মিঠু প্রৃমুখ। অনুষ্ঠানে মুল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গৌরীপুর প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, এসো গৌরীপুর গড়ি সংগঠনের অন্যতম সদস্য আনোয়ার হোসেন শাহীন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সংগঠননের সাংগঠনিক সম্পাদক, সাংবাদিক শেখ বিপ্লব।
সভায় বক্তারা গৌরীপুরের প্রথম শহীদ ব্রজেন বিশ্বাসের নাম শহীদ মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় অন্তর্ভুক্তি ও পরিবারের সদস্যদের রাষ্টীয় মর্যাদা দেয়ার আহবান জানান।

উল্লেখ্য ১৯৭১ সালে ২৩ এপ্রিল হানাদার বাহিনী ময়মনসিংহের গৌরীপুর প্রবেশ করে তান্ডবলীলা, লুটপাট চালিয়ে ছিল। এদিন (শুক্রবার) সকাল ১১টার মধ্যে ৩/৪ টি বোমারু বিমান গৌরীপুরে আকাশে চক্কর দেয়ার সময় মানুষের দিগ্বিদিক দৌড়াদৌড়ি ও আত্বচিৎকারে আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠেছিল। বিমান থেকে বোমা নিক্ষেপে মানুষ নিহত না হলেও এ সময় তিনটি গরু মারা পড়ে ছিল। এদিকে রেলপথ দিয়ে ঈশ্বরগঞ্জ বোকাইনগর হয়ে অগ্রসর হতে থাকে হানাদার বাহিনী। সে দিন ট্রেন থেকে ভারী অস্ত্র দিয়ে ঝাঁঝড়া করে দিয়েছিল জঙ্গল, বাঁশ ঝাড় বিভিন্ন ঘড়বাড়ি। আক্রান্ত হয়ে ছিল মাঠের কাঁচাপাকা ধান।

ভবানীপুর রেল বীজ পাড় হয়ে পাকসেনার একটি দল সড়ক পথে বালুয়াপাড়া হয়ে গৌরীপুর শহরের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। পথে ছয়গন্ডা নিবাসী সতিশা প্রাইমারি স্কুলের সহজ সরল প্রধান শিক্ষক ব্রজেন বিশ্বাস হানাদারের মুখামুখি হলে স্যার নমস্কার দেন, মুহুর্তে হানাদারের বুলেটে তার বুকে বিদ্ধ হলে লুটিয়ে পড়েন রৌদ্রতপ্ত রাজ পথে। তার রক্তে প্রথম সিক্ত হয় গৌরীপুরের মাটি। তিনিই স্বাধীনতা যুদ্ধে গৌরূপুরের প্রথম শহীদ। সুত্রঃ রণজিৎ কর রচিত “গৌরীপুরের ইতিহাস ঐতিহ্য”পৃষ্ঠা সংখ্যা ১৪৭)।

” হিন্দুকা দোকাল লুটো” – পাক বাহিনীর এ রকম নির্দেশনায় স্থানীয় রাজাকারদের সহায়তায় কালীপুর, মধ্যবাজার দোকানেগুলোতে চালায় লুটতরাজ। মুহুর্তে পৌর শহরে দোকানপাট, বাসা বাড়ী হয়ে পড়ে জনমানব শূন্য এক মুরুভুমি। গৌরীপুর রেল জংশন স্টেশনের পশ্চিম পাশে দাড়িয়ে ছিলেন জগৎ চন্দ্র নমদাস। পাক সেনার গুলিতে তিনিও নিহত হন। শহীদের তালিকায় যুক্ত হয় আরেকটি নাম।
প্রতি বছর এ দিনটি নিরবে নিভৃতে চলে যায়।

২০১৯ সালের ২৩ এপ্রিল ছয়গন্ডায় এলাকায় গৌরীপুরে প্রথম শহীদ বুদ্ধীজীবি ব্রজেন চন্দ্র বিশ্বাসের স্মরণে “স্মৃতি ফলক নির্মান”, বুদ্ধিজীবি তালিকায় নাম অন্তর্ভূক্ত করণের দাবীতে প্রধান মন্ত্রীর বরারবে স্মারক লিপি প্রদান লক্ষে অস্থায়ী বেদীতে প্রথম পুষ্পমাল্য অর্পণ করে স্মরণ করেছিল স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এসো গৌরীপর গড়ি। এরপর অস্থায়ী ফলকটি রাতের আধারে স্বাধীনতা বিরুধী অপশক্তি ভেঙ্গে ফেলে।

গৌরীপুরের প্রথম শহীদ ব্রজেন বিশ্বাস স্মরনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিতশহীদ ব্রজেন বিশ্বাস
Comments (0)
Add Comment