রৌমারীতে মা ও শিশু সন্তান হত্যার রহস্য উদঘাটন

আল এনায়েত করিম রনি, কুড়িগ্রাম থেকে : কুড়িগ্রামের রৌমারীতে চাঞ্চল্যকর মা ও শিশু হত্যার ঘটনা উন্মোচন করেছে জামালপুর র‍্যাব-১৪। ছায়া তদন্তের মাধ্যমে এই ক্লু-লেস এই হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের আটক করতে সমর্থ হয় তারা। বুধবার (২৫ মে) দুপুরে রৌমারী
অফিসার্স ক্লাবে অনুষ্ঠিত এক প্রেস ব্রিফিং-এ আলোচিত এই হত্যাকান্ডের জট খুলে সাংবাদিকদের সামনে ঘটনার বর্ণনা দেন জামালপুর র‍্যাব-১৪, সিপিসি-১ এর কোম্পানি কমান্ডর স্কোয়াড্রন লিডার আশিক উজ্জামান।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এই হত্যাকান্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন হাফসা খাতুনের ভাসুর চান মিয়া (৪৩)। এসময় তাকে সহযোগিতা করে হাফসার কথিত উকিল বাবা জাকির হোসেন ওরফে জফিয়াল (২৮)। পারিবারিক কলহের জেড়ে নিজের ছোট ভাইয়ের স্ত্রী হাফসা খাতুন (২৭) ও তার ৫মাস বয়সি ছেলে হাবীবকে গলা কেটে নির্মমভাবে হত্যা করে চান মিয়া। এসময় তাকে সহযোগিতা করে জাকির হোসেন। হত্যাকান্ডের পর উপজেলার শৌলমারী ইউনিয়নের বোয়ালমারী গ্রামের এক আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে যায় চান মিয়া। এ ঘটনার পর নিহত হাফসা আক্তারের
বাবা হারুন উর রশীদ বাদি হয়ে রৌমারী থানায় অজ্ঞাত আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, মা ও শিশুসন্তান হত্যাকান্ডের ঘটনায় র‍্যাবের জামালপুর ক্যাম্পের প্রতিনিধিরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ছায়া তদন্ত শুরু করে। তারা বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত ও ঘটনা বিশ্লেষণের মাধ্যমে আসামী জাকির হোসেন জফিয়ালকে সনাক্ত করতে সমর্থ হয়। এরপর তাকে ট্রাকিং করে পালানোর সময়
জামালপুর জেলার বকসীগঞ্জ উপজেলা শহর থেকে আটক করা হয়। পরে তার দেয়া তথ্যমতে চান মিয়াকেও রৌমারীর শৌলমারী থেকে এক আত্মীয়ের বাড়ী থেকে আটক করা হয়।

তিনি আরও বলেন, ঘটনার দিন ভিকটিম হাফসা আক্তার তার অসুস্থ্য ৫ বছর বয়সী ছেলে হাবীবকে কুড়িগ্রামে ডাক্তার দেখানোর পর চিকিৎসা শেষে রৌমারীতে ফিরছিলেন। পথিমধ্যে রৌমারী বাজার হতে প্রয়োজনীয় ঔষধপত্র ও একটি ফ্লাক্স কিনে শ্বশুর বাড়িতে যান। সেখান থেকে ছেলেকে নিয়ে তার বাবার বাড়ি সদর ইউনিয়নের নতুন বন্দর গ্রামে যাওয়ার সময় জনৈক আব্দুর সবুর মিয়ার পুকুরের পূর্ব পাড়ে ওৎপেতে থাকা চান মিয়া ও জাকির হোসেন হাফসা আক্তার ও তার শিশু সন্তানকে আটক করে। এখানেই নির্মমভাবে দুজনের গলা কেটে হত্যা করা হয়। শিশু
সন্তানটি সাথে সাথে মারা গেলেও গুরুতর আহত হাফসা আক্তারকে প্রথমে রৌমারী স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও পরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজহাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যান।

পারিবারিক কলহের জেরে পূর্বপরিকল্পিতভাবে গলা কেটে হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটানো হয়। প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন, র‍্যাব-১৪, সিপিসি-১, জামালপুর ক্যাম্পের স্কোয়াড কমান্ডর এএসপি এমএম সবুজ রানা। এছাড়াও বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়া কমর্ীরা এসময় উপস্থি ছিলেন। র‍্যাবের হাতে আটক ওই দুই আসামীকে দুপুর আড়াইটার সময় রৌমারী থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন রৌমারী থানার অফিসার ইনচার্জ মো. মুন্তাছের বিল্লাহ। উল্লেখ্য গত ২১ মে শনিবার সকালে উপজেলার সদর ইউনিয়নের নতুনবন্দর নামক এলাকায় এক পুকুর পাড়ে ধান ক্ষেত থেকে গলা কাটা অবস্থায় হাফসা আক্তার এবং তার পাঁচ মাস বয়সী শিশু সন্তান হাবীবের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেবার পথে হাফসা আক্তারের মৃত্যু হয়। এঘটনায় নিহত হাফসা আক্তারের বাবা হারন উর রশীদ বাদি হয়ে রৌমারী থানায় অজ্ঞাত আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

রৌমারীতে মা ও শিশু সন্তান হত্যার রহস্য উদঘাটন
Comments (0)
Add Comment