নেত্রকোণায় জাল সনদে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা উত্তোলন

মেহেদী হাসান আকন্দ: নেত্রকোণার কলমাকান্দায় মুক্তিযোদ্ধার সনদ জাল করে ভাতা উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে আমজাদ হোসেন নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত আমজাদ হোসেন উপজেলার গোবিন্দপুর গ্রামের মৃত আঃ ওয়াহাব সরকারের ছেলে এবং খারনৈ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক।

গত ৩১ আগস্ট কলমাকান্দা উপজেলার সর্বস্তরের মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের প্রাক্তন ডেপুটি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ নুরুল ইসলাম। লিখিত অভিযোগে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা আমজাদ হোসেনের সম্মানীভাতা সাময়িকভাবে বন্ধসহ প্রতারনার জন্য তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানান।

সরেজমিনে গিয়ে দৈনিক মুক্ত খবর পত্রিকার প্রতিবেদকের কথা হয়, অভিযোগকারী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের প্রাক্তন ডেপুটি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ নুরুল ইসলাম, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আনোয়ার হোসেন আজাদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা মজিবর রহমান, বীর মুক্তিযোদ্ধা সুসেন চন্দ্র তালুকদার রানা, বীর মুক্তিযোদ্ধা সাহেব আলী মাস্টার, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মতিন, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ জনাব আলী, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল বারেক, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মান্নান মাস্টার, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জোব্বার, বীর মুক্তিযোদ্ধা বিকাশ চন্দ্র ভৌমিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা দিজেন্দ্র বিশ^াস এর সাথে। প্রত্যেক মুক্তিযোদ্ধা দাবী করে বলেন, আমজাদ হোসেন কোথাও মুক্তিযুদ্ধ করেননি। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি সপ্তম শ্রেণিতে পড়তেন। তিনি ১৯৭৬ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত কলমাকান্দা সাবরেজিস্ট্রি অফিসে নকল নবীশের কাজ করতেন। আমজাদ হোসেন কোনো দিন কারোও কাছে নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে পরিচয়ও দেননি। হঠাৎ করে আমজাদ হোসেন সোনালী ব্যাংক কলমাকান্দা শাখা থেকে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা ও ঈদ বোনাস উত্তোলন করায় মুক্তিযোদ্ধাগণ হতবাক হয়ে পড়েন বলে তারা জানান।

মুক্তিযোদ্ধা সংসদের প্রাক্তন ডেপুটি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ নুরুল ইসলাম বলেন, স্বাধীনতার ৫২ বছরে আমজাদ হোসেন মুক্তিযোদ্ধা ভাতা ও ঈদ বোনাস উত্তোলনের মধ্যদিয়ে মুক্তিযোদ্ধা রুপে আভির্ভূত হওয়ায় কলমাকান্দার সর্বস্তরের মক্তিযোদ্ধাদের ক্ষোভের সৃস্টি হয়েছে। এভাবে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার আভির্ভাব ঘটলে মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধা সম্পর্কে সাধারন মানুষের মধ্যে বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃস্টি হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। প্রতারক আমজাদ হোসেনের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানান।

উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আনোয়ার হোসেন আজাদ জানান, তিনি ৯ বছর কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেছেন। স্বাধীনতার ৫১ বছরেও কোনো দিন আমজাদ হোসেনকে মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দিতে কিম্বা কোনো অনুষ্টানে উপস্থিত হতে তাকে কেউ দেখিনি। স্বাধীনতা সংগ্রামের সনদ ভারতীয় তালিকা বই নং, এফএফ নং, সেক্টর নং, মুক্তি বার্তা নং, গেজেট নং ও ডাটা বেইজের কোথাও আমজাদ হোসেনের নাম নাই। তিনি কোনোদিন সেনাবাহিনীতে চাকরীও করেননি। স্বাধীনতার ৫১ বছর পর হঠাৎ করে সেনাবাহিনীর গেজেট মূলে কিভাবে মুক্তিযোদ্ধা হন এটা বোধগম্য নয়। যা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক, অপ্রাসঙ্গিক, মিথ্যা ও ভুয়া। এমতাবস্থায় দুর্নীতিবাজ, প্রতারক আমজাদ হোসেনের মুক্তিযোদ্ধা ভাতা বন্ধ করে তাকে আইনের আওতায় আনার তিনি দাবী করেন।
অভিযুক্ত আমজাদ হোসেনের সাথে কথা বলে জানা যায়, তিনি ১৯৭৫ সালে ম্যাট্রিক পাস করলেও কোনো পাসের সনদ তার কাছে নাই। তিনি ১৯৭৬ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত কলমাকান্দা সাবরেজিস্ট্রি অফিসে নকল নবীশের কাজ করতেন।

তিনি সেনাবাহিনীতে কোনোদিনও চাকরী করেননি বলে স্বিকার করেন। তিনি নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা প্রমাণে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের একটি কাগজ উপস্থাপন করেন। সেখানে তার মুক্তিযোদ্ধা নম্বর: ০১৭২০০০৩৭৩৮ এবং মুক্তিযোদ্ধার সমর্থনে প্রমাণক/ তথ্য-মুক্তিযোদ্ধাদের ভারতীয় তালিকা (সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী) ২৫৫৮ উল্লেখ আছে। সেনাবহিনীতে চাকরী না করেও মুক্তিযোদ্ধাদের ভারতীয় (সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী) তালিকায় নাম অর্ন্তভুক্তির বিষয়ে আমজাদ হোসেন জানান, ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁও উপজেলার ধামাইল গ্রামের মৃত আব্দুল জোব্বারের ছেলে মুসলিম উদ্দিনকে দিয়ে তিনি টাকার বিনিময়ে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা করিয়েছেন। মুক্তিযোদ্ধাদের ভারতীয় (সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী) তালিকায় নাম অর্ন্তভুক্তির বিষয়ে তিনি কোনো কিছুই জানেননা। সোনালী ব্যাংক কলমাকান্দা শাখায় ২৫০২৬০১০২৫৬৩১ নং হিসাব নাম্বারে গত জুন মাস থেকে ২ মাসের মুক্তিযোদ্ধা ভাতা এবং ঈদ বোনাসের টাকাসহ মোট ৫০,০০০/-(পঞ্চাশ হাজার) টাকা তিনি উত্তোলন করেছেন বলে স্বিকার করেন।

সোনালী ব্যাংক কলমাকান্দা শাখা সূত্রে জানা যায়, অভিযুক্ত আমজাদ হোসেন ২৫০২৬০১০২৫৬৩১ নং হিসাব নাম্বার হতে ৬ জুলাই/২২ তারিখে সর্ব প্রথম মুক্তিযোদ্ধা ভাতা ও ঈদ বোনাসের ৩০,০০০/- (ত্রিশ হাজার) টাকা উত্তোলন করেন এবং ১১ আগস্ট/২২ তারিখে আবারো ২০,০০০ (বিশ হাজার) টাকা মুক্তিযোদ্ধা ভাতা উত্তোলন করেন। তার ব্যাংক হিসাব নাম্বারে আরোও ২০,০০০ (বিশ হাজার) টাকা জমা হয়েছে কিন্তু এই টাকা এখনো উত্তোলন করেননি।

অভিযোগের সত্যতা স্বিকার করে কলমাকান্দা উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবুল হাশেম জানান, উপজেলা সমাজ সেবা অফিসারকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পেলে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে ।

উপজেলা সমাজ সেবা অফিসার মো: রেজাউল করিম জানান, অভিযোগটি তদন্তাধিন রয়েছে। তবে অভিযুক্ত আমজাদ হোসেন ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁও উপজেলার ধামাইল গ্রামের মৃত আব্দুল জোব্বারের ছেলে মুসলিম উদ্দিনকে দিয়ে টাকার বিনিময়ে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ তৈরি করে সোনালী ব্যাংক কলমাকান্দা শাখায় ২৫০২৬০১০২৫৬৩১ নং হিসাব নাম্বারে গত জুন মাস থেকে ২ মাসের মুক্তিযোদ্ধা ভাতা এবং ঈদ বোনাসের টাকাসহ মোট ৫০,০০০/-(পঞ্চাশ হাজার) টাকা তিনি উত্তোলন করেছেন বলে স্বিকার করেছেন। দু’একদিনের মধ্যেই তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে বলে তিনি জানান।

মুক্তিযোদ্ধা
Comments (0)
Add Comment