৫শ’ কোটি টাকার লিচু বাণিজ্যের সম্ভাবনা পাবনায়

লাল সিদুরে লিচুর মৌ মৌ ঘ্রাণে মুগ্ধ পাবনার বিভিন্ন লিচু ঘুরতে আসা দর্শনার্থীরা

0

পাবনা প্রতিনিধি : পাবনায় এ মৌসুমে প্রায় ৫শ’ কোটি টাকার লিচু বাণিজ্যের সম্ভাবনা দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। গত কয়েক বছর এ জেলায় লিচু চাষিরা আশানুরূপ লাভ পাননি। এ বছর লিচুর বাম্পার ফলনে ভাল লাভ হবে বলে মনে করছেন কৃষি বিভাগসহ সংশ্লিষ্টরা।

লিচুর রাজধানী খ্যাত পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার বিভিন্ন বাগানে ইতোমধ্যে লিচু বেচা-কেনা শুরু হয়েছে। লিচু সংরক্ষণাগার না থাকায় স্বল্প সময়ের এই রসালো ফল সংরক্ষণের অভাবে কৃষকরা ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন দীর্ঘদিন ধরে। এখানের কৃষকরা একটি লিচু সংরক্ষণাগার ও গবেষণা কেন্দ্রের দাবী জানিয়ে আসলেও কোন সুফল পাননি।

এর মধ্যে আঁটি জাতের লিচু সংগ্রহ শুরু হয়েছে। মে মাসের তৃতীয় সপ্তাহে অন্যান্য জাতের লিচুও পাবনার বাজারে ব্যাপকভাবে পাওয়া যাবে। ঈশ্বরদী উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা যায় গাছ থেকে লিচু আহরণ, বাছাই এবং প্যাকেট করার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছে চাষি ও ব্যবসায়ীরা।

ঈশ্বরদী উপজেলার মীরকামারী, জয়নগর, জগন্নাথপুর, বকচারপুর, ছলিমপুর, শাহপুর, দিয়ার শাহপুর, আথাইলশিমুল সহ প্রায় ৩০টি গ্রামে শুধু লিচু আর আর লিচু। এছাড়া সদর উপজেলার উগ্রগড়, জোয়ারদহ, হামিদপুরসহ প্রায় ১৫টি গ্রাম এবং চাটমোহর ও আটঘরিয়া উপজেলায় ভাল পরিমাণ লিচু আবাদ হয়েছে। চায়না-২, চায়না-৩ বোম্বাই জাতের লিচু বাজারে আসতে আরও কয়েকদিন সময় লাগবে। কিন্তু এর মাঝেও দেশী জাতের অনেক উন্নত মানের লিচু কেনা-বেচা চলছে। এখন প্রতিদিন ভোর থেকে সারা দিন শত শত কৃষক শ্রমিক বাগান থেকে লিচু আহরন করছে। বাগান থেকেই বিক্রি হচ্ছে। ঈশ্বরদীর ছলিমপুর ইউনিয়নের জয়নগর শিমূলতলায় প্রতিদিন সকালে বসছে বিশাল লিচুর হাট। জয়নগর শিমূলতলা ছাড়াও উপজেলার আওতাপাড়া, বাঁশেরবাদা, জয়নগর বোর্ডঘর, সাহাপুর ও দাশুড়িয়ায় পাইকারি লিচুর হাট বসছে। প্রতিদিন এসব হাট থেকে গড়ে ৬০ থেকে ৭০ ট্রাক লিচু যাচ্ছে সারা দেশে।

লিচু বাগান ঘুরে দেখা গেছে, বোম্বাই ও চায়না লিচুর গায়ের রং এখনও পুরোপুরি লাল হয়ে ওঠেনি। আগামী সপ্তাহ দু’য়ের মধ্যেই বোম্বাই লিচুর লাল টকটকে রসালো চেহারা ফুটে উঠবে গাছে গাছে। তখন এ লিচু বাজারে এলে ঈশ্বরদী থেকে প্রতিদিন অন্তত: এক থেকে ১৫০ ট্রাক লিচু লোড হবে।

ঈশ্বরদীর আথাইলশিমুল গ্রামের লিচু চাষি শিক্ষক গোলাম মোস্তফা বলেন , তার নিজের লিচু বাগানে ৩০টি গাছ আছে। প্রতিটি গাছ থেকেই এবার ভালো ফলন পাওয়া যাচ্ছে। তিনি বলেন, গত বছর একটি মাঝারি আকারের গাছ থেকে ৮ থেকে ১০ হাজারের বেশি লিচু পাওয়া যায়নি। একই আকারের গাছ থেকে এ বছর ১২ থেকে ১৫ হাজার লিচু পাওয়া যাচ্ছে। তবে ফলন ভালো পেলেও বাজারে লিচুর দাম কম হওয়ায় আশানুরূপ লাভ হচ্ছে না বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, ‘গত বছর প্রতি হাজার লিচু ২২০০ থেকে ২৩০০ টাকায় বিক্রি করলেও এ বছর ১২০০ থেক ১৫০০ টাকার বেশি পাওয়া যাচ্ছে না।’ তবে, ফলন ভালো হওয়ায় দাম নিয়ে খুব একটা চিন্তিত নন তিনি।

শুধৃ মৌসুমি ব্যবসায়ী নয়, লিচু বাগান থেকে লিচু সংগ্রহ, বাছাই করা, প্যাকেট করাসহ এক মণ লিচু প্রক্রিয়া করতে দুই জন শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। লিচু সংগ্রহ শুরু হওয়ায় অনেকেই লেখাপড়া বা সংসারের কাজের পাশাপাশি লিচু বাগানে শ্রম দিয়ে অতিরিক্ত অর্থ উপার্জন করার সুযোগ পেয়েছেন।

পাবনার সদর হেমায়েতপুর ইউনিয়নের হঠাৎপাড়া গ্রামের লিচু চাষি ইমরান হোসেন জানানা এবার ফলন ভালো হয়েছে যদি কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হয় তাহলে এবার অনেক লাভবান হবো।

পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার তিলকপুর গ্রামের কলেজ ছাত্র আলিফ, লিচুর মৌসুম শুরু হওয়ার পর থেকেই লেখাপড়ার পাশাপাশি লিচু বাগানে কাজ করছেন। তার মতো অনেকেই বাগানে মৌসুমি শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন। আলিফ জানান, সকালে কয়েক ঘণ্টা লিচু বাগানে কাজ করেই ৫০০ টাকা আয় করা সম্ভব, লিচুর মৌসুমে বিপুল সংখ্যক মৌসুমি শ্রমিক প্রয়োজন হওয়ায় তার মত অনেকেই লিচু বাগানে কাজ করে অতিরিক্ত আয় করছে।

পাবনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের তথ্য মতে, পাবনা জেলার লিচু বাগানগুলোর আয়তন এ বছর ৪ হাজার ৭৩১ হেক্টরে গিয়ে ঠেকেছে। এসব বাগান থেকে ৪২ হাজার ৫৭৯ টন লিচু পাওয়া যেতে পারে।

পাবনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক মো. মিজানুর রহমান জানান , লিচুর ফলন উপযোগী আবহাওয়ার পাশাপাশি গ্রীষ্মের শুরুতে বড় আকারে ঝড়-বৃষ্টি না হওয়ায় এ বছর লিচুর বাম্পার ফলন পাওয়া যাবে। ব্যবসা হবে কয়েকশ’ কোটি টাকার। এখানে কৃষকের স্বার্থেই একটি লিচুসহ ফল জাতীয় গবেষণা কেন্দ্র ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট প্রয়োজন। এ বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট বিভাগে জোড়ালোভাবে সুপারিশ করা হয়েছে। আশা করা যায় কৃষকের স্বার্থেই সরকার বিষয়টি বিবেচনা করবেন।

আপনি এগুলোও দেখতে পারেন

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.