মঞ্চ নাটক জনকের অন্তিম যাত্রা ও কিছু কথা – ড. নরেশ মধু

0

পাবনা বনমালী শিল্পকলা কেন্দ্রে মঞ্চায়ন হল নাটক ”জনকের অন্তিম যাত্রা”। বনমালী শিল্পকলা কেন্দ্রের হলটি কানায় কানায় পূর্ণ। দর্শকদেরও বর্ণময় পরিবর্তন দেখা গেল। যারা এতদিন মঞ্চ নাটক থেকে মুখ ফিরিয়ে রেখেছিলেন এ নাটকে তাদের উপস্থিতি প্রমাণ করে এখনও ভাল মঞ্চনাটকের দর্শক-স্রোতা রয়েছে।

সময় ৬.৩০ মিনিটি মঞ্চে এলেন নাটকের সমন্বয়কারী বিশিষ্ঠ অভিনেতা এড. আব্দুল হান্নান শেলী। সমন্বয়কারী মুখবন্ধ উপস্থাপন এবং মঞ্চে ডাকলেন নাটকের রচনা ও নিদের্শক মাসুম রেজাকে। তিনি নাটকের প্রতিপাদ্য বিষয় নিয়ে কথা বলেন এবং তিনি বললেন এটি এই নাটকের তৃতীয় মঞ্চায়ন। এবং ঢাকার বাইরে এটিই প্রথম। দর্শকদের উপস্থিতি তাকে অনুপ্রাণিত করেছে। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে এধরনের নাটক এটিই প্রথম।

ফিরে আসি নাটকের প্রতিপাদ্য বিষয় নিয়ে। বঙ্গবন্ধুর মহাপ্রয়াণ নিয়ে আলোচনা লেখা-লেখি অনেক হয়েছে এবং আর চলবে। কিন্তু এর মাঝে আজকের নাটকের প্রতিপাদ্য বিষয় নিয়ে এধরনের নাটক এই প্রথম। নাটকে বরাবরই কিছু সত্যের অপলাপ ও বিকৃত হয়। এটি নাটকের সহজাত বৈশিষ্ঠ্য। নাটকের নামাকরণ থেকে মূল বিষয়ে প্রবেশ বেশ সহজ।কিন্তু সংলাপ বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। কারন জনকের অন্তিম যাত্রা বলতে ১৫ অগাস্টের ভোর থেকে টুঙ্গি পারায় সমাহিত। আবার এও বুঝায় মৃত্যু পরবর্তী দাফন পর্যন্ত ও সময়টুকু তার বর্ণনা। সনাতনী ভাষায় বলা হয় শশ্মান যাত্রা। এই যাত্রা পথের যা কিছু ঘটনা তার বিবরণ নিয়ে শশ্মান যাত্রা।

নাটকে প্রতিষ্ঠা করেছেন প্রথমত জয় বাংলা থেকে বাংলাদেশে জিন্দাবাদ, সাম্প্রদায়িক শক্তির বিকাশ, বঙ্গবন্ধু বিশেষণের নিষিদ্ধকরন এবং যেটি বেশ তাৎপর্যপূর্ণ সেটি হল হিন্দুদের এদেশের অস্তিত্ব নিয়ে। বঙ্গবন্ধুকে সমাহিত করায় আড়ম্বরতা ছিলনা কিন্তু ইসলামিক নিয়ম মেনেই করা হয়েছে। আজিজুল হাকিম সংলাপ উপস্থাপনায় সাবলীলভাবে সৈনিকদের ইসলামিক নিয়ম মেনেই জাতির পিতার সমাহিত প্রতিষ্ঠিত করেছেন।

নাটকের উপস্থাপনায় নাট্যকার প্রতিষ্ঠা করেছেন বঙ্গবন্ধুর হত্যার ২টি কারণ। প্রথমত ধর্মনিরপেক্ষ রাস্ট্র থেকে ইসলামিক রাস্ট্রের প্রতিষ্ঠা ও ভারতের আনুগত্যতা থেকে মুক্তি।

অপরদিকে নাট্যকার টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর মহাসমাধিস্থলে প্রতিষ্ঠিত করেছেন ধর্মনিরপেক্ষতা । একদিকে ইসলামিক রাস্ট্র প্রতিষ্ঠার নায়কেরা অপরদিকে ধর্মনিরপেক্ষতাকামী মানুষের দল। দু’টো দলের মুখোমুখি দাড় করিয়েছেন জনগনকে, দাড় করিয়েছেন সত্যের মুখোমুখি।

মাসুম রেজা বরাবরই তার নাটকে সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া ব্যাক্ত করেছেন। যা সত্য তা প্রতিষ্ঠা করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।

পাবনার বনমালী শিল্পকলা কেন্দ্রে নাটক নিয়ে প্রতিক্রিয়ায় মাসুম রেজা বলেছেন পাবনায় এটি নাটকের তৃতীয় কিন্তু ঢাকার বাইরে প্রথম মঞ্চায়ন তার কাছে এক নতুন অনুভূতি । কানায় কানায় পরিপূর্ন একটি হল, কেউ কেউ টিকিট না পেয়ে ফিরে গেছেন, এটি তার কাছে এক ধরনের অনুপ্রেরণা। এখনও যে ভাল নাটকের দর্শক রয়েছে তা তিনি উপলব্ধি করেছেন।

বনমালী শিল্পকলা কেন্দ্রর সাধারণ সম্পাদক ড. মো: হাবিবুল্লা বলেন, এধরনের নাটক উপহার দিতে পেরে তাদের ভাল লেগেছে। তিনি বলেন, ভাল নাটকের এখন দর্শক -স্রোতা রয়েছে। তারা নিরন্তর চেষ্টা করছেন স্বাধীনতা ও মুক্তযুদ্ধের চেতনায় সমৃদ্ধ সংস্কৃতি চর্চ্চার।

বলিষ্ঠ্য নাট্যজন আজিজুল হাকিম বলেন নাটকের দর্শক -স্রোতার উপস্থিতি তাকে অনুপ্রাণিত করেছে। রাজধানীর বাইরে জেলা শহরে এখনও ভাল দর্শক -স্রোতা রয়েছে যা তিনি নাটকের জীবন বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেন ২৬ বছর পর আবার মঞ্চ নাটকে প্রত্যার্বতন আমার কাছে আবার নতুন করে পথ চলার সুযোগ, বিশেষ করে নতুন নাটকে। পাবনার দর্শক -স্রোতার প্রতি তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।

ড. নরেশ মধু- সাংবাদিক ও কলাম লেখক

 

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.