ধূমপানে নারীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বেশি । হীরেন পণ্ডিত
তামাক মহামারি বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে বড় জনস্বাস্থ্য বিষয়ক হুমকিগুলোর মধ্যে একটি, যা সারা বিশ্বে বছরে ৮ মিলিয়নেরও বেশি মানুষের জীবন কেড়ে নেয়। ৭ মিলিয়নেরও বেশি মানুষের মৃত্যু সরাসরি তামাক সেবনের ফলে এবং প্রায় ১.২ মিলিয়ন ধূমপায়ীদের সেকেন্ড হ্যান্ড ধোঁয়ার সংস্পর্শে আসার ফলে। সব ধরনের তামাকই ক্ষতিকর এবং তামাকের সংস্পর্শের কোনো নিরাপদ মাত্রা নেই। সিগারেট ধূমপান বিশ্বব্যাপী তামাক ব্যবহারের সবচেয়ে সাধারণ রূপ।
বাংলাদেশে প্রতিবছর তামাকের কারণে ১.৬১ লাখেরও বেশি মানুষ মারা যায়। স্বাস্থ্য ঝুঁকি এবং তামাকের কারণে অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ কত? সাম্প্রতিক এক গবেষণার ফলাফল বেশ উদ্বেগজনক। গবেষণায় দেখা গেছে, তামাক ব্যবহারকারীদের তিনটি প্রধান ধরনের ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি- ফুসফুস, স্বরযন্ত্র এবং মুখ- ব্যবহারকারীদের তুলনায় ১০৯ শতাংশ বেশি। স্ট্রোক, হৃদরোগ এবং যক্ষ্মাসহ সাতটি জীবন-হুমকির রোগের ঝুঁকি তাদের ব্যবহারকারীদের তুলনায় ৫৭ শতাংশ বেশি।
গ্লোবাল অ্যাডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে (গ্যাটস), ২০১৭’-এর তথ্যমতে, বাংলাদেশে আচ্ছাদিত কর্মস্থলে কাজ করেন, এমন প্রাপ্তবয়স্ক জনগোষ্ঠীর ৪২ দশমিক ৭ শতাংশ পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হন। প্রায় ২ কোটি ৫০ লক্ষ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ গণপরিবহনে যাতায়াতের সময় পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হন। পরোক্ষ ধূমপান মৃত্যু ঘটায় এবং করোনা সংক্রমণে গুরুতর অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়। কাজেই পরোক্ষ ধূমপানের শিকার এই বিশাল জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য সুরক্ষা অত্যন্ত জরুরি।
দেশে তামাক সেবনকারী ও ধূমপায়ী নারীর সংখ্যাও বাড়ছে। পাঁচ বছর আগে ২৪ দশমিক ৪ শতাংশ নারী ধূমপানে আসক্ত থাকলেও বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২ শতাংশে। বিশেষ করে বিড়ি ও সিগারেটের মাধ্যমে আগে যেখানে ধূমপান করতেন ১ দশমিক ৫ শতাংশ নারী, এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ দশমিক ৬ শতাংশে। গ্রামাঞ্চলে এ সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। অর্থাৎ দেশের মোট নারীর ২ কোটির কিছু বেশি তামাক সেবন ও ধূমপানে আসক্ত বলে বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে।
এদিকে দেশে নারী ধূমপায়ীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাবার কারণে চিকিৎসা বিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা উদ্বেগ প্রকাশ করছেন। তারা বলেন, ধূমপানে পুরুষের তুলনায় নারীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি ও মৃত্যুর আশঙ্কা অনেক বেশি। ধূমপায়ী প্রসূতির ধূমপানের ঝুঁকি বহন করতে হয় সন্তানকে। ধূমপায়ী নারীরা সাধারণত সন্তান প্রসবে অক্ষম হন। কিন্তু তারপরও সন্তান করলেও তা হতে পারে অকাল গর্ভপাত। আবার নারী বিকলাঙ্গ শিশু জন্ম দিতে পারেন। পরে এসব শিশুর শারীরিক বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হয় ও পুষ্টিহীনতা দেখা দিতে পারে। ধূমপায়ী গর্ভবতীদের অপরিণত ও কম ওজনের শিশুর জন্ম হতে পারে। এছাড়া সন্তান প্রসাবের সময় রক্তক্ষরণও হতে পারে। ধূমপানজনিত নানা জটিলতা থেকে প্রসূতির মৃত্যুঝুঁকি অনেক বেশি। বিশেষ করে একজন ধূমপায়ী মায়ের জন্য একজন সন্তানকে জীবনভর স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে থাকতে হয়। তামাক চাষ প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত নারীদের মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকে। ফলে অনিচ্ছাকৃতভাবেই অনেকে বিকলাঙ্গ শিশুর জন্ম দিতে পারেন। নিজেও আক্রান্ত হতে পারেন জটিল ব্যাধিতে।
ধূমপান আসক্ত নারীদের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি পুরুষদের তুলনায় বেশি থাকে। বিশেষ করে অন্ত্রে ও মলাশয়ে ক্যান্সারের ঝুঁকি পুরুষদের তুলনায় ধূমপায়ী নারীদের বেশি। এমনকি ধূমপায়ী নারীদের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও পুরুষদের চেয়ে বেশি। বাংলাদেশসহ বিশ্বে ধূমপায়ী নারীদের মৃত্যুঝুঁকিও বেড়েছে অনেক বেশি।
গবেষণা থেকে জানা যায় উচ্চবিত্ত ঘরের নারীরা ফ্যাশন বা চাকচিক্যের মোহে পড়ে ধূমপানের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। তারা ধূমপান ছাড়াও অন্যান্য মাদকও গ্রহণ করেন। মধ্যবিত্ত ঘরের নারীরা লোকলজ্জার ভয়ে ধূমপানে কম আসক্ত হন। দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী নারীরা অনিচ্ছাকৃতভাবেই ধূমপানের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। এখনও দেশের প্রায় ১ লাখ একর জমিতে তামাক চাষ হচ্ছে। আইনে নিষিদ্ধ হলেও পাবলিক প্লেসে ধূমপান করে ৯৫ শতাংশ ধূমপায়ীকে একবারও জরিমানা দিতে হয়নি। এখনও ধূমপান নিরোধ আইনের তেমন কোনো কার্যকারিতা নেই। তামাক চাষ ও তামাকজাত পণ্যের বিস্তার ঠেকাতে সরকারি পদক্ষেপেও তেমন কোনো গতি আসেনি। মিডিয়ায় সিগারেটের বিজ্ঞাপন বন্ধ থাকলেও ধূমপায়ীর হার বাড়াতে কম দামের সিগারেটের সঙ্গে তামাকজাত পণ্যের কোম্পানিগুলো কৌশলে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে।
রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় ও জেলা শহরের উন্মুক্ত স্থানে ধূমপায়ী নারীর সংখ্যাও উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। এছাড়াও বিভিন্ন বস্তিসহ ঘনবসতিপূর্ণ স্বল্প আয়ের মানুষ বসবাসকারী এলাকাগুলোতেও অসংখ্য নারী প্রকাশ্যে ও গোপনে ধূমপান করছেন। বিভিন্ন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, নামিদামি রেস্তোরাঁসহ অবকাশ যাপন কেন্দ্রগুলোতে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়গামী শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে মধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্ত ও ছিন্নমূল নারীদের ধূমপানের চিত্র এখন স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে।
এদিকে বাংলাদেশে নারীদের অবাধ এই ধূমপানের চিত্র তামাক নিয়ে কাজ করা দেশীয় সংস্থাগুলোর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক প্রতিবেদনেও উঠে এসেছে। শুধু তাই নয়, ২০১৬ সালের শুরুর দিকে ক্রোয়েশিয়া ইন্সটিটিউট অব পাবলিক হেলথের এক প্রতিবেদনে নারী ধূমপায়ীদের ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে শীর্ষে স্থান দেয়া হয়েছে। নারী ধূমপায়ীদের সংখ্যা কম মনে হলেও অবাক করা বিষয় হলো নারী ধূমপায়ীর তালিকায় বিশ্বে বাংলাদেশ শীর্ষস্থান দখল করে আছে। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ক্রোয়েশিয়া। নারী ধূমপায়ীদের সংখ্যার দিক থেকে বিশ্বের ২২টি দেশের মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ।
এ অবস্থা দীর্ঘায়িত হলে দেশে নারী স্বাস্থ্য ক্রমেই ধ্বংসের মুখে পড়তে হবে মনে করছেন বিশেষজ্ঞ ও চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা। ধূমপানের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে নারী-পুরুষ সবাইকে সচেতন করতে হবে। তামাক উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের নির্দিষ্ট আইন করে তা মানতে বাধ্য করতে হবে। বাজারের বিক্রীত ইলেকট্রিক সিগারেটসহ সব ধরনের তামাকজাতীয় পণ্য যত্রতত্র বিক্রির ব্যাপারে বিধিনিষেধ আরোপ করতে হবে। আর এ বিষয়ে পরিবার থেকে রাষ্ট্র সবাইকে এর কুফল সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করতে হবে।
দেশে ধূমপানবিরোধী আইন থাকলেও তার সঠিক বাস্তবায়ন নেই। তামাক ও নেশা জাতীয় পণ্যের আমদানি-রপ্তানিতে নজরদারির অভাব রয়েছে। বিশেষ করে আদিবাসী, গ্রামীণ, ভাসমান, কলকারখানা ও ইট ভাটায় কাজ করা নারীদের ধূমপানে ক্ষতির ব্যাপারে সচেতনতার অভাব রয়েছে। এছাড়া তামাক, জর্দা, গুল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের জন্য নির্দিষ্ট আইন থাকলেও সেটা তারা মানছে না। এর জন্য বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি জনগণকেও এগিয়ে আসতে হবে।
“সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর” প্রতিটি সিগেরেটের প্যাকেটে এই সতর্ক বাণী সবার খুব বেশি পরিচিত। কিন্তু তারপরও বহু মানুষ আছেন যারা ধূমপান করে থাকে। আমরা সবাই জানি ধূমপান আমাদের দেহের জন্য কত বেশি ক্ষতিকর। কিন্তু তারপরও কেন আর কী কারণে মানুষ ইচ্ছাকৃত ভাবে নিজের ক্ষতি করে থাকে, যারা ধূমপান করেন তারাই এর কারণ বলতে পারবেন। যদিও ধূমপান কোনো ভালো কাজ নয় তবু যুগ যুগ ধরেই পুরুষেরা ধূমপান করে আসছেন। কিন্তু প্রশ্ন হল, নারীরা কেন ধূমপান করেন ? তাঁদের ধূমপান করার পেছনের কারণ কী?
যুগ এতো বেশিই বদলে গিয়েছে যে নারীরাও এখন ধূমপান করে থাকেন প্রকাশ্যে। কিন্তু কেন ধূমপান করেন নারীরা এই বিষয় নিয়ে এই পর্যন্ত অনেক দেশের নামী-দামি গবেষকেরা গবেষণা করেছেন এই বিষয়টি নিয়ে। কানাডায় অবস্থিত হেলথ কানাডা স্মোকিং প্রিভেনশন’ সেন্টার ও আমেরিকান ক্যানসার সোসাইটির’ নানা ধরনের গবেষণায় উঠে এসেছে এমন কিছু বিষয় যার কারণে পুরো বিশ্ব জুড়ে বহু নারীরা ধূমপান করে থাকেন। ১। পারিবারিক অশান্তি ও অভিভাবকদের কঠোরতা থেকে মুক্তি পেতে নারীরা ধূমপান করে থাকে। ২। ছেলে-মেয়েরা আজকাল এক সাথেই ধূমপান করে থাকেন। আর নারীরা মনে করেন একসাথে ধূমপান করার ফলে বন্ধুত্ব ভালো হয়। ৩। শারীরিক ভাবে ফিট বা স্লিম থাকার জন্য নারীরা ধূমপান করে থাকেন। ৪। রিলাক্স থাকার জন্য ও দুশ্চিন্তা মুক্ত থাকার জন্য ধূমপান করেন নারীরা। ৫। হাতে একটি সিগেরেট রেখে চলার মধ্যে আনন্দই আলাদা তাই নারীরা ধূমপান করেন। ৬। নিজের রাগ ও কষ্ট নিয়ন্ত্রন করতে ধূমপান করেন নারীরা। ৭। নিজের সাহস বাড়াতে অনেক নারী ধূমপান করে থাকেন। ৮। ধূমপান করে নারীরা অনেক আনন্দ পান তাই ধূমপান করেন। ১০। অনেক নারীরাই বলেছেন সিগেরেটের ধোঁয়া তাঁদের খুব ভালো লাগে তাই তাঁরা ধূমপান করেন। ১১। অনেক নারীরাই মনে করেন সিগেরেট খেলে ক্ষুধা কমে যায় তাই ধূমপান করেন। ১২। তাছাড়া যেসকল নারীরা খুব অল্প বয়স থেকেই ফ্যামিলির নানা ধরনের সমস্যা দেখে বড় হন বিশেষ করে বাবা-মাকে নিয়ে সমস্যা যাদের। তাঁরা খুব অল্প বয়স থেকেই ধূমপান করে থাকেন।
এদিকে আধুনিক তরুণীরা এখন ধোঁয়াবিহীন ব্যাটারিচালিত ইলেকট্রনিক সিগারেট তথা ই-সিগারেটের প্রতিও আসক্ত হচ্ছেন। এই পদ্ধতিতে বিষাক্ত তামাক সেবনের বদলে আসক্তরা বাষ্পে পরিণত হওয়া তরল নিকোটিন গ্রহণ করে। এটি ‘ভ্যাপিং’ নামেও পরিচিত। এর ফলে মস্তিষ্কে ধূমপানের মতো অনুভূতি তৈরি হয়। তবে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এই পদ্ধতিতে নিকোটিন সেবনও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এর মধ্যে রয়েছে জীবাণুনাশক ফরমালডিহাইড, যাতে ক্যানসার তৈরির উপাদান রয়েছে।
যেহেতু আজকাল অনেক নারী ধূমপান করে থাকেন তাই তাঁদের অবশ্যই জানা উচিত যে ধূমপান করার ফলে দেহে কি কি ক্ষতি হতে পারে। পুরুষের তুলনায় এমনিতেই নারীদের রোগপ্রতিরোধক্ষমতা কম থাকে। অনেকেই জানেন যে ধূমপান করার ফলে ক্যানসার, হার্টের অসুখ, স্ট্রোক এই ধরনের অসুখ দেখা দেয়। কিন্তু গবেষণায় উঠে এসেছে আরও অনেকগুলো অসুখের কথা যা নারীদেহের জন্য ক্ষতিকর। ১। হাড়ের ঘনত্ব কমে যাওয়া ২। গাঁটে ব্যথা, বাতের ব্যথার সমস্যা ৩। চোখে অকালেই ছানি পড়ার সম্ভবনা থাকে ৪। দাঁতের মাড়ির সমস্যা দেখা দেয় ৫। পাকস্থলীতে আলসার সমস্যা দেখা দেয় যার কারণে মৃত্যুও হয় ৬। হতাশা কমানোর জন্য নারীরা ধূমপান করে থাকেন কিন্তু ধূমপান করার ফলে নারীদের হতাশা আরও বৃদ্ধি পায়। ৭। কিছু গবেষণায় এসেছে যে ধূমপান এর ফলে নারীদের পিরিয়ডের সমস্যা দেখা দেয়। প্রতিমাসে পিরিয়ড ঠিকভাবে হয় না আর হলেও তা খুব কষ্টদায়ক হয়ে তাহকে ব্যথার কারণে। ৮। প্রচুর ধূমপান করার কারণে নারীদের নির্দিষ্ট বয়সে মনোপজ হওয়ার আগেই তাঁদের পিরিয়ড হওয়া বন্ধ হয়ে যায়। এবং এমনটা হয়ে থাকলে নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে নারীদের। ৯। যে সকল নারীরা ধূমপান করে থাকেন তাঁদের বাচ্চা হতেও খুব সমস্যা হয়ে থাকে। আর বাচ্চা কনসিভ করে থাকলেও, বাচ্চা জন্ম নেয়ার আগেই অ্যাবরশন হয়ে যাবার ভয় থাকে। ১০। যে সকল নারীরা ধূমপান করে থাকেন তাঁদের শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা দেখা দিতে পারে।
জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় বিশেষ করে তরুণদেরকে ধূমপান থেকে নিরুৎসাহী করতে বিদ্যমান তামাকজাতদ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০০৫ কে সংশোধন করে বিক্রয়স্থলে তামাকজাতদ্রব্য প্রদর্শনসহ সকল প্রকার বিজ্ঞাপন সুনির্দিষ্টভাবে নিষিদ্ধ করা। আমাদের সংবিধানের ১৮(১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী জনস্বাস্থ্যের উন্নয়ন এবং সুরক্ষার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। এছাড়াও সংবিধানের ৩২ অনুচ্ছেদে মানুষের জীবনের অধিকার রক্ষণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ তামাক নিয়ন্ত্রণবিষয়ক আন্তর্জাতিক চুক্তি ‘ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি)’-এ স্বাক্ষর করেছে এবং সে অনুযায়ী একটি তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন প্রণয়ন করেছে। অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা এবং ২০৩০-টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি)-এর লক্ষ্যমাত্রা ৩এ এফসিটিসি বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে। অন্যদিকে, তামাক অর্থনীতির জন্যও বড় একটা বোঝা। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তামাক ব্যবহারের ফলে অর্থনৈতিক ক্ষতির (চিকিৎসা ব্যয় এবং অন্যন্য ফসলের উৎপাদনশীলতা হারানো) পরিমাণ ছিল ৩০ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা, যা একই সময়ে (২০১৭-১৮) তামাক খাত থেকে অর্জিত রাজস্ব আয়ের (২২ হাজার ৮১০ কোটি টাকা) চেয়ে অনেক বেশি। তামাকের বহুবিধ ক্ষয়ক্ষতি উপলব্ধি করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন এবং বর্তমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনকে এফসিটিসির সঙ্গে অধিকতর সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে সংশোধন করার তাগিদ দিয়েছেন এর জন্য সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে এবং জনগণেকে সচেতন করতে হবে।
লেখক: প্রাবন্ধিক ও গবেষক