তোমরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করতে পারো, একজন বঙ্গবন্ধু সৃষ্টি করতে পারোনা – হীরেন পণ্ডিত
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যদি না জন্মাতেন, তাহলে স্বাধীন বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতির জন্ম কি হতো? এর একটিই মাত্র জবাব না।বঙ্গবন্ধু তাঁর বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রূপরেখা সম্পর্কে কিছু কথা বলতেন বিভিন্ন সময় প্রিয়জন ও ঘনিষ্ঠ সাংবাদিকদের। বলতেন তাঁর পরিকল্পনার কথা। অনেকে বঙ্গবন্ধুকে প্রশ্ন করতেন, আপনি ক্ষমতায় কতদিন থাকবেন। এই প্রশ্ন শোনে বঙ্গবন্ধু হেসে বলতেন, ‘বাংলার মানুষ যত দিন চায়। তবে আমার আশা, তারা আমাকে সহসা ক্ষমতা ছাড়তে বলবে না। কারণ আমি ক্ষমতায় থাকতে আসিনি। এসেছি একটি স্বাধীন, অসাম্প্রদায়িক সোনার বাংলা গঠনের ম্যান্ডেট নিয়ে। সেই বাংলা গঠন না করা পর্যন্ত আমার ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়া উচিত হবে না’। সাংবাদিকদের আরো একটি প্রশ্ন থাকতো, কতদিন আপনি বাঁচতে চান এর উত্তরে তিনি বলতেন ‘মহাত্মা গান্ধী চেয়েছিলেন ১২৫ বছর বাঁচবেন। আমি অতটা দীর্ঘ জীবন চাই না। তবে আমার মা-বাবা দুজনেই দীর্ঘ জীবন পেয়েছেন। আমিও তেমন দীর্ঘ জীবন পেলেই যথেষ্ট। আমি উপমহাদেশে একটি স্বাধীন, শোষণমুক্ত, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার ভিতটা প্রতিষ্ঠা করে যেতে চাই। তবে পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী শক্তি এবং দেশের স্বাধীনতাবিরোধী প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি আমাকে কত দিন বাঁচতে দেবে জানি না। একটা গুলি আমাকে অনবরত পশ্চাদ্ধাবন করছে বলে সন্দেহ করি’।
বঙ্গবন্ধু বলতেন, আমি একটি গণতান্ত্রিক দেশের প্রধানমন্ত্রী। ‘আমার পক্ষে কি ডিকটেটরের মতো লোহার ঘরের মধ্যে বাস করা সাজে? লখিন্দর কি লোহার ঘরে বাস করে বাঁচতে পেরেছিল? সাপ তো আমার ঘরের মধ্যেই আছে।বঙ্গবন্ধু বলতেন, আমি সোশ্যালিজমে বিশ্বাস করি। সেই সঙ্গে একজন জাতীয়তাবাদীও। কিন্তু এখনই বাংলাদেশে পূর্ণ সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। এখনই বড়, মাঝারি ও ছোট সব শিল্প প্রতিষ্ঠান রাষ্ট্রায়ত্ত করা হলে অলাভজনক শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষতি পূরণের মতো অর্থ সরকারি কোষাগার পূরণ করতে পারবে না। তখন বাজারে কাগজের নোট ছাড়তে হবে। ফলে যে মুদ্রাস্ফীতি ঘটবে তা দেশের অর্থনীতিকে বিপন্ন করে ফেলবে’।
বঙ্গবন্ধুর চোখে একটি সোনালি স্বপ্ন ছিল পুরো বাংলাদেশটার আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা পরিবর্তনের। সেই স্বপ্ন সফল হলে, তাঁকে ঘাতকের হাতে প্রাণ দিতে না হলে, ১৫ আগস্টের নিষ্ঠুর হত্যাকা- সংঘটিত না হলে আজকের বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ হতো সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ার চেয়েও উন্নত ও পরিচ্ছন্ন একটি দেশ। শোষণমুক্ত, দুর্নীতিমুক্ত একটি জনকল্যাণমূলক দেশ। শেখ হাসিনা পিতার স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ার জন্য নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। সুযোগ্য কন্যার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু আবার জাতীয় জীবনে ফিরে এসেছেন ১৯৯৬ থেকে ২০০১ আবার ২০০৮ থেকে এখন অবধি তাঁর স্বপ্নের বাস্তবায়ন এখন অনেক দূর এগিয়েছে। তাই তাঁর আকাঙ্খিত বাংলাদেশের দিকে, যা তিনি বেঁচে থাকলে অনেক আগেই গড়ে উঠত।
১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিহত না হলে বাংলাদেশ আজকে মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুরের মতো উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হত। তার মৃত্যুর পর জাতি যে হতাশার সাগরে নিমজ্জিত হয়েছিলো তা এখনো প্রতি মুহূর্তে আমরা উপলব্ধি করছি। ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ বাঙালি জাতির জীবনে এক বেদনাবিধুর ও কলঙ্কজনক অধ্যায়। এই দিনে দেশ-বিদেশের স্বাধীনতাবিরোধী ষড়যন্ত্রকারীদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে সেনাবাহিনীর কিছু বিপথগামী সদস্যের হাতে ধানমন্ডির নিজ বাসভবনে বাঙালি জাতির পিতা হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে শহীদ হন।ভাগ্যক্রমে সেদিন বঙ্গবন্ধুকন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ছোট বোন শেখ রেহানা দেশের বাইরে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান। সেদিন যাঁদের হত্যা করা হয়েছিল তাঁরা প্রত্যেকেই ছিলেন অত্যন্ত ভালো মানুষ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবমুক্ত করা দলিলের ভাষ্যমতে, ‘১৫ আগস্টে কতগুলো খাঁটি দেশপ্রেমিক ও সৎ লোককে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। তাদের প্রশাসনিক দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন থাকতে পারে কিন্তু তাদের দেশপ্রেম ও সততা প্রশ্নাতীত।’
১৯৭১ সালে বাংলাদেশ সৃষ্টিকে তিনি প্রথম বিপ্লব এবং তিন বছর পর ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু নতুন যে রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রবর্তনে উদ্যোগী হন, তাকে তিনি দ্বিতীয় বিপ্লব বলে আখ্যায়িত করেন। দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচির মধ্যে ছিল সরকার পদ্ধতির পরিবর্তন সংসদীয় পদ্ধতির স্থলে রাষ্ট্রপতি শাসিত ব্যবস্থা, সব দল বিলুপ্ত করে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সব দল ও সব শ্রেণী-পেশার মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করে বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ (বাকশাল) নামে একটি জাতীয় দল গঠন, চারটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকার অনুমতি, মহকুমাগুলোকে জেলায় উন্নীত করা, জেলা প্রশাসনের দায়িত্বে জনপ্রতিনিধি বা গভর্নর নিয়োগ, সমবায়ভিত্তিক কৃষি উৎপাদন ও ভূমি ব্যবস্থাপনা, পল্লী অঞ্চলে হেলথ কমপ্লেক্স প্রতিষ্ঠা, প্রশাসন বিকেন্দ্রীকরণ, বিচার ব্যবস্থার সংস্কার ইত্যাদি।
বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচি গ্রহণের পর দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটে। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য হ্রাস পায়, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে ওঠে, অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি ঘটে এবং গ্রামাঞ্চলে বিভিন্নপ্রকার কৃষিজাত ফসল ও পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। ১৯৭৪-৭৫ সালে দেশে সামষ্টিক আয়ের প্রবৃদ্ধি বেড়ে ৬.৫-৭.০ শতাংশ হয়, যেটি ২০১৫-১৬ অর্থবছরে অর্জন করা সম্ভব হয়েছে। তার পরও ষড়যন্ত্রকারীরা বাকশাল সম্পর্কে অপপ্রচার চালাতে থাকে এবং জনমনে বিভ্রান্তিসৃষ্টি করে বঙ্গবন্ধু হত্যার ক্ষেত্র সৃষ্টি করে।
বঙ্গবন্ধু বৈষম্যহীন সমাজ ও কল্যাণ রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রবর্তনে বিশেষভাবে আগ্রহী ছিলেন। তিনি অসাম্প্রদায়িক সমাজব্যবস্থায় দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন। তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে আজীবন লড়াই করে গেছেন। বঙ্গবন্ধু বুঝতে পেরেছিলেন, স্বাধীনতা শুধু পতাকা পরিবর্তন ও দেশের নতুন নামকরণ বোঝায় না, তার দৃষ্টিতে স্বাধীনতার অর্থ হলো সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য ও নীতিবোধসম্পন্ন আদর্শবাদ।’
বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশন গঠন করেন এবং প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা প্রণয়নের দায়িত্ব প্রদান করেন। দেশের উন্নয়ন কাঠামোতে অর্থনীতির কোন কোন খাতকে অগ্রাধিকার দিতে হবে, কোন কোন খাতের সমন্বয়ে একটি সদ্যস্বাধীন ভঙ্গুর অর্থনীতিকে পরিকল্পিত কাঠামোর মধ্যে নিয়ে আসা সম্ভব হবে এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে দেড় বছরেরও কম সময়ের মধ্যে দেশের প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয় ১৯৭৩ সালের নভেম্বর মাসে। পরিকল্পনা প্রণয়নে আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক অঙ্গীকারকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।
উৎপাদনশীল কার্যক্রমকে কোনোভাবেই বাধাগ্রস্ত না করে বৈষম্যহীন সমাজব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে পরিকল্পনা কৌশলপত্রে। যুদ্ধবিধ্বস্ত ভঙ্গুর অর্থনীতিকে একটি শক্তিশালী ভিত্তির ওপর দাঁড় করানোর মানসে কৃষি খাতে ভূমি সংস্কার এবং সমবায়ভিত্তিক কৃষিব্যবস্থা গড়ে তোলার মাধ্যমে ক্ষুদ্র এবং ভূমিহীন কৃষকের স্বার্থ সংরক্ষণের বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করা হয়। শিল্প খাতে বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠানকে রাষ্ট্রীয় মালিকানায় রেখে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পকে ব্যক্তিমালিকানায় প্রতিষ্ঠা করার নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় এবং সমবায় মালিকানাধীন এন্টারপ্রাইজগুলোকে বিশেষ প্রাধান্য দিয়ে ক্ষুদ্র ব্যবসাকে ব্যক্তিমালিকানাধীনে পরিচালনা করার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
জাতির পিতার উন্নয়ন ভাবনায় সাধারণ উদ্দেশ্যের পাশাপাশি খাতভিত্তিক উন্নয়ন রূপরেখাও প্রণয়ন করা হয়েছে। বিশেষ করে, কৃষিক্ষেত্রে উন্নয়ন দর্শন ছিল স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে প্রথাগত কৃষিকে ঢেলে সাজিয়ে আধুনিক কৃষিতে রূপান্তর করা। ফলে কৃষি খাতে আয় বৃদ্ধি পাবে, ক্রমবর্ধমান গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে, গ্রামীণ দারিদ্র্যতা হ্রাসের মাধ্যমে আয় বণ্টনে সমতা আনয়ন ত্বরান্বিত হবে, দেশীয় কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে রপ্তানি আয় বৃদ্ধি পাবে। ফলে বৈদেশিক মুদ্রা মজুদ পরিস্থিতির উন্নতি হবে এবং শস্য, মাছ, প্রাণিজাত দ্রব্য, ফল, সবজি, চিনি উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে পুষ্টি নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটানো হবে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার উন্নয়ন ভাবনায় অর্থনীতির প্রতিটি খাতকে যথাযথ গুরুত্বসহকারে বিবেচনায় নিয়েছেন, উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছেন, শুধু উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন করেই ক্ষান্ত হননি, তিনি মানুষকে প্রতিনিয়ত উদ্বুদ্ধ করেছেন প্রণীত পরিকল্পনার সুদক্ষ বাস্তবায়নের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় উন্নয়নে অবদান রাখার জন্য।
১৫ জানুয়ারি ১৯৭৫ প্রথম পুলিশ সপ্তাহের ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘জীবন অত্যন্ত ক্ষণস্থায়ী- এ কথা মনে রাখতে হবে। আমি বা আপনারা সবাই মৃত্যুর পর সামান্য কয়েক গজ কাপড় ছাড়া সঙ্গে আর কিছুই নিয়ে যাব না। তবে কেন আপনারা মানুষকে শোষণ করবেন, মানুষের ওপর অত্যাচার করবেন? গরিবের ওপর অত্যাচার করলে আল্লাহর কাছে তার জবাব দিতে হবে। তাই শুধু আপনাদের নয়, সব সরকারি কর্মচারীকেই আমি অনুরোধ করি, যাদের অর্থে আমাদের সংসার চলে তাদের সেবা করুন। যাদের জন্য, যাদের অর্থে আজকে আমরা চলছি, তাদের যাতে কষ্ট না হয়, তার দিকে খেয়াল রাখুন।’
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশকে নিয়ে সব সময়ই স্বপ্ন দেখতেন আত্মমর্যাদাশীল একটি জাতি হিসেবে গড়ে তুলতে। সেই ভাবনা থেকেই তিনি বলেছিলেন, ‘স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে হবে। যে মানুষ ভিক্ষা করে তার যেমন ইজ্জত থাকে না, যে জাতি ভিক্ষা করে তারও ইজ্জত থাকে না। ভিক্ষুক জাতির নেতৃত্ব আমি দিতে চাই না। আমি চাই আমার দেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ হোক এবং সেজন্য কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। শৃঙ্খলা আনতে হবে এবং শৃঙ্খলা দেশের মধ্যে আনতে হবে।’
এ প্রসঙ্গে ১১ জানুয়ারি ১৯৭৫ সামরিক একাডেমিতে প্রদত্ত বঙ্গবন্ধুর ভাষণটি স্মরণ করা যেতে পারে, ‘তোমাদের এখন একটা জিনিস মনে রাখা দরকার। দেশ যখন আমাদের আছে, মাটি যখন আমাদের আছে, বাংলাদেশের সোনার মানুষ যখন আছে, তখন আমরা সবই পাব। যদি আমরা সোনার ছেলে তৈরি করতে পারি, তা হলে ইনশাআল্লাহ আমার স্বপ্নের সোনার বাংলা একদিন অবশ্যই হবে। আমি হয়তো দেখে যেতে পারব না। কিন্তু তা হবে।’হচ্ছেও তাই, বাংলাদেশের অগ্রগতির ভিত্তি রচনা করেছিলেন বঙ্গবন্ধু, এগিয়ে নিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা।
জাতির পিতার উন্নয়ন ভাবনাকে ধারণ করে তাঁরই রক্ত এবং আদর্শের উত্তরসূরি প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছেন এক অনন্য উচ্চতায়, বাংলাদেশ আজ বিশ্বের অনেক রাষ্ট্রের জন্য অনুকরণীয় হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে, বাংলাদেশকে আজ বিশ্ববাসী সম্মান করে, বাংলাদেশ আজ স্বপ্ন দেখে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবে বিশ্বকে নেতৃত্ব দেওয়ার। আমরা বলতে পারি প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ নিশ্চয়ই ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ হিসেবে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে, জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলার পতাকা আত্মমর্যাদায় বলীয়ান হয়ে উড়বে বিশ্বের বুকে।
পুনর্গঠন ও পুননির্মাণের কাজের বর্ণনা ছিল ১৯৭২-১৯৭৩ সালের বাজেটে। এ পুনর্গঠনে অনেক বন্ধুরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাহায্য দিয়েছিলেন, যেগুলো পরিশোধ করার প্রয়োজন ছিল না। এসব সাহায্যকারী দেশের মধ্যে ছিল ভারত, (সোভিয়েত ইউনিয়ন) রাশিয়া, যুক্তরাজ্য, কানাডা, জাপান, জার্মানি, সুইডেন, ডেনমার্ক ও নেদারল্যান্ড। বঙ্গবন্ধুর লক্ষ্য ছিল, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন। এছাড়া ১৯৭২-৭৩ সালের বাজেটে গুরুত্ব দেয়া হয়েছিল পুনর্বাসনের পরই শিক্ষা খাতে। বাংলার দরিদ্র মানুষের জন্য দুঃখ বিমোচন এবং সবার জন্য যাতে অন্ন-বস্ত্র-শিক্ষা, সুস্বাস্থ্য ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়, উন্নয়নের সঙ্গে একটি বৈষম্যহীন সমাজ গড়ে ওঠে এই ছিল বঙ্গবন্ধুর চিন্তা ও রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক কাঠামো গঠনের প্রচেষ্টা ও অবদানের লক্ষ্য।
১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু ও তার সপরিবারে হত্যা বিশ্ব মানব সভ্যতার ইতিহাসে সবচেয়ে জঘন্য, বর্বর ও নৃশংস হত্যাকাণ্ডের একটি। এটি শুধু হত্যা ছিল না। সদ্য স্বাধীন জাতির অগ্রযাত্রাকে চিরতরে স্তব্ধ করার ষড়যন্ত্রও ছিল। একজন প্রতিশ্রুতিশীল রাজনীতিবিদ যিনি তাঁর সমগ্র জীবন তাঁর জাতির সেবায় উৎসর্গ করেছিলেন তাঁকে এত নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল যে আমাদের দেশের মানুষ এখনও কাঁদে এবং বলে তোমরা একজন বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করতে পারো একজন বঙ্গবন্ধু সৃষ্টি করতে পারো না।
লেখক : প্রাবন্ধিক ও রিসার্চ ফেলো