গণমাধ্যমের ওপর আক্রমণ দেশ ও গণতন্ত্রের জন্য সুখকর নয়

0

হীরেন পণ্ডিত :  ৫২ বছরের ইতিহাসে স্বাধীন বাংলাদেশে রাজনৈতিক অঙ্গন চরম আকার ধারণ করেছে বিভিন্ন সময়। অনেকবারই প্রকট আকার ধারণ করেছে। কিন্তু এবারই প্রথম প্রধান বিচারপতির বাসায় হামলা, হাসপাতালের মতো জনসেবাকেন্দ্রে অগ্নিসংযোগ করা হয়, অডিট ভবন ও সরকারী গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা পুড়িয়ে দেয়া হয়।

মানবিকতা সম্পন্ন যে কোন নাগরিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলেও বলা যায় নিঃসন্দেহে এই বিষয়গুলো কতোটা নিন্দনীয়। এমন প্রেক্ষাপটে মানবাধিকারের ফেরিওয়ালা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার সোল এজেন্টরা কি বলবেন। যারা একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে তথাকথিত মুখপাত্রের ভূমিকা পালন করেন তাদের বক্তব্য কি হবে ? ১৯৪৮ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ কর্তৃক গৃহীত মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্রে মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও সংবাদমাধ্যমের গুরুত্বকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পেছনে রয়েছে গণমাধ্যমের ঐতিহাসিক অবদান, যা বহির্বিশ্বের জনমত গঠনে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। বাহান্নর ভাষা আন্দোলন, চুয়ান্নর নির্বাচন, বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন, ছেষট্টির ছয় দফা, উনসত্তরের ঐতিহাসিক গণ-অভ্যুত্থান এবং সত্তরের নির্বাচন প্রতিটি ঐতিহাসিক ঘটনার পেছনের অসামান্য অবদান রয়েছে গণমাধ্যমের। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা বলতে এমন একটি প্রক্রিয়াকে বোঝায়, যেখানে কোনো রাষ্ট্রের গণমাধ্যম সে রাষ্ট্র কিংবা সরকারের হস্তক্ষেপ অথবা যে কোনো রাজনৈতিক প্রভাব থেকে মুক্ত থাকবে।

সাংবিধানিকভাবেই বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক দেশ, তাই গণমাধ্যমের স্বাধীনতা একটি সাংবিধানিক অধিকার। জাতিসংঘের ১৯৪৮ সালের
মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে, ‘প্রত্যেকের মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অধিকার রয়েছে। এই অধিকারে হস্তক্ষেপ ছাড়াই মতামত রাখা এবং কোনো গণমাধ্যমের মাধ্যমে তথ্য ও ধারণা অনুসন্ধান করা স্বাধীনতার সীমানা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত।’ আমাদের সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদের ২- এর ধারায় উল্লেখ আছে, ‘সংবাদপত্রের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দেওয়া হইল’, অর্থাৎ জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জায়গা যথেষ্ট পাকাপোক্ত, এতে কোনো সন্দেহ নেই।

অন্যের মতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা গণতন্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত। মত প্রকাশের স্বাধীনতা জনগণের একটি মৌলিক অধিকার। বাংলাদেশের সংবিধানের ধারার ৩৯(১) চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা নিশ্চয়তা দান করা হয়েছে এবং ৩৯(২) সংবাদপত্র তথা গণমাধ্যমের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা প্রদান করা হয়েছে। আলোচনা, মতপ্রকাশ, ঐক্য হলো গণতন্ত্রেরগুরুত্বপূর্ণ সিঁড়ি। যেখানে গণমাধ্যম যত বেশি শক্তিশালী সেখানে গণতন্ত্র ততো বেশি শক্তিশালী।

গণমাধ্যমের সঠিক চর্চা যেমন গণতন্ত্র রক্ষা করতে পারে, তেমনি গণতন্ত্র পারে গণমাধ্যমকে স্বাধীন রাখতে। স্বাধীন গণমাধ্যম যে কোনো সরকারের সেরা বন্ধু। মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে একটি দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সূচক হিসেবে ধরা হয়। বাংলাদেশের সংবিধানে উল্লেখ করা রাষ্ট্রপরিচালনার চারটি মূলনীতির মধ্যে একটি হলো গণতন্ত্র। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে জনগণই সকল ক্ষমতার অধিকারী।

জনসাধারণের প্রতিক্রিয়াই নির্ধারণ করে দেশটি কীভাবে সামনের দিকে এগিয়ে যাবে। অর্থাৎ গণতন্ত্র হলো জনসাধারণের শাসন ব্যবস্থা নাগরিকদের মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ করাই গণতন্ত্র। ফলে গণতন্ত্রে নাগরিকদের ব্যক্তিত্ব বিকাশের যথেষ্ট সুযোগ ও স্বাধীনতা থাকে। গণতন্ত্র ও গণমাধ্যম একে অপরের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। গণতন্ত্রের জন্য গণমাধ্যমের স্বাধীনতাও অপরিহার্য। গণতন্ত্রের পাশাপাশি সুশাসন ও উন্নয়নের সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িত গণমাধ্যমের স্বাধীনতা। অবাধ তথ্যপ্রবাহ ও মুক্ত গণমাধ্যমের চর্চাকে পাশ কাটিয়ে উন্নয়ন ও অগ্রগতি কল্পনা করা সম্ভব নয়। তবে হার্বার্ট স্পেন্সারের কথা মনে রাখতে হবে তার মানে দাঁড়ালো অন্যের অধিকারে হস্তক্ষেপ না করে নিজের ইচ্ছামত চলাই কিন্তু স্বাধীনতা। একটি রাষ্ট্রের উন্নয়ন একটি প্রক্রিয়া। গণমাধ্যমের সুষ্ঠু চর্চা একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সার্বিক উন্নয়নের সহায়ক হতে পারে। আধুনিক যুগে গণমাধ্যম একটি রাষ্ট্রের অন্যতম স্তম্ভ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। সমাজের ন্যায়-অন্যায়, অপসংস্কৃতি, কুসংস্কার, নাগরিকদের আশা, আকাক্সক্ষা, অধিকার, কর্তব্য, জনমত গঠন ও ভালো-মন্দের প্রতিফলন ঘটে গণমাধ্যমের কল্যাণে। একটি জাতির উন্নয়নের পথের অন্যতম অনুষঙ্গ হলো গণমাধ্যম। একজন বিবেকবান এবং সচেতন সংবাদকর্মী একটি জাতির জন্য অন্যতম পথপ্রদর্শক, যার সাথে সহায়ক ভূমিকা পালন করে একটি স্বাধীন গণমাধ্যম। অবহেলিত, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর কিংবা জনপদের সমস্যা, প্রতিকার এবং সম্ভাবনা লেখনীর মাধ্যমে তুলে ধরা, অনগ্রসর ও অসচেতন জনগোষ্ঠীর চিন্তা ও দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটানো, তাদের জনশক্তিতে পরিণত করা, নতুন নতুন, চিন্তা, ধারণা, উদ্ভাবনী শক্তির প্রচার-প্রসার ঘটিয়ে জাতিকে আলোর পথ দেখানোর সহায়ক ভূমিকা পালন করে গণমাধ্যম। তাই একটি দেশের গণমাধ্যমকে পাশ কাটিয়ে উন্নতির চিন্তা করার কোনো সুযোগ নেই।

মুক্ত এবং স্বাধীন গণমাধ্যম গণতন্ত্রের জন্য অপরিহার্য ও গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।এর মাধ্যমে নাগরিকরা অর্থনৈতিক উন্নয়নের তথ্য জানার পাশাপাশি তাদের নেতাদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য জানতে পারে। স্বাধীন গণমাধ্যমের অধিকারের বিষয়টি জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার দলিলের পাশাপাশি বাংলাদেশসহ অনেক দেশের সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষার মাধ্যমে আমরা আমাদের গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার রক্ষার মূল্যবোধকে সম্মিলিতভাবে সমুন্নত রাখি। সাংবাদিকদের অবশ্যই হয়রানি, ভীতি বা সহিংসতার ভয় ছাড়াই বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কাজ করার পরিবেশ নিশ্চিত করতে করতে হবে। এটি সুশাসনকে সহায়তা করা ও জনসাধারণ কে কোন একটি বিষয় সম্পর্কে পুরোপুরিভাবে অবহিত করা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয়। এছাড়াও সাংবাদিকদের অবশ্যই তথ্যে প্রবেশাধিকার থাকতে হবে এবং তথ্যের সূত্রগুলোর সুরক্ষা দিতে পারতে হবে।

২৮ রাজধানীর নয়াপল্টন ও কাকরাইল মোড়ে পুলিশ- বিএনপির সংঘর্ষে পেশাগত দায়িত্বপালনের সময় বেশ কয়েকজন সংবাদকর্মী হামলার শিকার হয়েছেন। দৈনিক সংবাদমাধ্যম ইত্তেফাক, সময় টিভি, যমুনা টিভি, কালবেলাসহ একাধিক গণমাধ্যমের সংবাদকর্মী হামলার শিকার হয়েছেন। কাকরাইলে সংঘর্ষে ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন ঢাকা টাইমসের প্রতিবেদক। তাকে চিকিৎসার জন্য জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) নেওয়া হয়েছে। গুরুতর আহত অবস্থায় দৈনিক কালবেলার প্রতিবেদককে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন ব্রেকিংনিউজের ক্রাইম রিপোর্টার, আক্রান্ত হোন ব্রেকিংনিউজের নিজস্ব
প্রতিবেদক, ইনকিলাব পত্রিকার ফটোসাংবাদিকসহ আরও অনেকে। গলায় আইডিকার্ড ঝুলানো থাকলেও তাদেরকে এলোপাতাড়ি মারধর করা হয়। হামলায় অনেকের শরীর ক্ষতবিক্ষত হয়। এছাড়া অনেকের মোবাইল মোবাইল ফোনও ছিনিয়ে নিয়ে যায় হামলাকারীরা।

গত ১৮ অক্টোবর সরকার পতনের এক দফা দাবিতে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণার জন্য ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশের ডাক দেয় বিএনপি। এরপর থেকেই রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা আলোচনা তৈরি হয়। একইদিনে সমাবেশের ঘোষণা দেয় গণতন্ত্র মঞ্চ, জামায়েতে ইসলামী বাংলাদেশ, এপি পার্টি, এনডিএম, গণঅধিকার পরিষদসহ বেশ কয়েকটি সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দল। অন্যদিকে শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশের ঘোষণা করে আওয়ামী লীগ। ঢাকায় একই দিনে অনেকগুলো রাজনৈতিক কর্মসূচিকে ঘিরে নিরাপত্তা জোরদার করে পুলিশ। সবাই ভেবেছিলেন, শান্তিপূর্ণ
কর্মসূচি পালন করবে দলগুলো। তবে শেষমেষ তা আর শান্তিপূর্ণ থাকলো না। সংঘর্ষে জড়ালো পুলিশ ও বিএনপি। পুলিশের দাবি, শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অনুমতি নিয়ে বিএনপি পুলিশের ওপর হামলা করছে। আর বিএনপির দাবি, তাদের সমাবেশে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ হামলা চালিয়েছে। শনিবার দুপুর ১টার কিছু আগে রাজধানীর কাকরাইল মোড়ে পুলিশ ও বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। বিএনপি নেতা-কর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়ে। এরপর পুলিশ বিএনপি নেতাকর্মীদের দিকে কাঁদানে গ্যাস ছুড়তে শুরু করে। এ সময় বিএনপির নেতাকর্মীরা কাকরাইল মসজিদের সামনের পুলিশ বক্স ভাঙচুর ও আগুন ধরিয়ে দেন। তারও আগে বেলা সোয়া ১২টার দিকে কাকরাইল মসজিদের সামনে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বহনকারী একটি বাস ও দু’টি পিকআপে হামলার ঘটনা ঘটে। এ সময় হামলাকারীরা বাস ও পিকআপ ভাঙচুর চালায়। আওয়ামী লীগের অভিযোগ, বিএনপি নেতাকর্মীরা এই হামলা চালিয়েছে।

স্বাধীন বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস পর্যালোচনা করলে একটি বিষয় স্পষ্টতই প্রতীয়মান হয়, রাজনৈতিক অঙ্গনে সহাবস্থানের বিষয়টি বরাবরই অনুপস্থিত বা দুর্বল ছিলো। কিন্তু গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় সহাবস্থানই মুখ্য বিষয়। এবার সাংবাদিক ও গণমাধ্যম কর্মীরা
ছিলেন আন্দোলনকারীদের আক্রমণের কেন্দ্রবিন্দুতে। প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ওপর অতর্কিত আক্রমণ, হাসপাতালে হামলার পাশাপাশি সাংবাদিকদের যেভাবে নির্যাতন-নিপীড়ন করা হয়েছে এবং পেশাগত দায়িত্বপালনে বাধা দেওয়া হয় তা নজীরবিহীন। তবে এটা ঠিক সাংবাদিক বা গণমাধ্যম কর্মীদের কাজ করা খুব সহজ সেটিও নয়।

অনেক সময় রাজনৈতিক শক্তির প্রতিপক্ষই নয়, সমাজের প্রভাবশালীরাও সাংবাদিক ও গণমাধ্যম কর্মীদের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেন। পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ২৮ অক্টোবর কমপক্ষে ২৫ জন সাংবাদিক বিভৎস আক্রমণের শিকার হয়েছেন, যে গণতান্ত্রিক অধিকারের কথা বিরোধী দল থেকে বারবার উচ্চারিত হয়, মত প্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে বুলি আওড়ান তারাই নিজেরা কতোটা এই বিষয়ে
অঙ্গীকারবদ্ধ সেই প্রশ্নটা একবার নিজেদের করতে পারেন। ওই দিন পুলিশের ওপর অতর্কিত হামলার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সংঘাত-সহিংসতা আরও ব্যাপক আকার ধারণ করে।

আন্দোলনকারীদের ওপর এভাবে হামলে পড়ার ঘটনা নতুন কিছু নয়। তবে এবারের ঘটনা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, সহিংসতার মূল টার্গেট হয়ে দাঁড়িয়েছেন সংবাদমাধ্যমের কর্মীরা অর্থাৎ সাংবাদিকরা। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে গণমাধ্যমের একশভাগ স্বাধীনতা থাকতেই হবে। যে গণমাধ্যম সরকারের সমালোচনা করবে, সেই গণমাধ্যমের স্বাধীনতা আবার সেই সরকারকেই নিশ্চিত করতে হবে। জনসাধারণের কথাই উঠে আসে গণমাধ্যমে। তাই এই গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে পারলে গণতন্ত্র সমুন্বত রাখা সম্ভব।

গণমাধ্যমের স্বাধীনতার বিষয়ে আলোচনা করতে হলে গণমাধ্যমের দায়িত্ব সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকা চাই। গণমাধ্যমের দায়িত্ব হলো, তথ্য সংগ্রহ করা এবং তা জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়া। ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি, সম্পদের অপব্যবহার, নাগরিকদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়ার ঘটনা প্রকাশে গণমাধ্যম প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং এটি অন্যতম দায়িত্বও বটে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র একটি অপরটির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ছাড়া গণতন্ত্র অচল হয়ে পড়ে।

গণমাধ্যমের কাজ হলো এই জনগণের বার্তা নিরপেক্ষ ও নির্ভুলভাবে সরকারের কাছে তুলে ধরা। একটি দেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা আছে কি নেই এবং নাগরিকের চিন্তার স্বাধীনতার আছে কি নেই, তা দিয়ে সহজেই গণতান্ত্রিক পরিস্থিতি পরিমাপ করা সম্ভব। গণমাধ্যমের সমন্বয়হীনতা রোধ করা জরুরি। মত প্রকাশের স্বাধীনতা, বাকস্বাধীনতা এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে পারলেই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে। নানা সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক অর্জনের পেছনে গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে এবং এখনো রাখছে। দেশ, জাতি, গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, মানবাধিকার, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং আইনের শাসনের নিশ্চিত করা জরুরি।

সব সময় দেশের স্বাধীনতা, মানবাধিকার, সুশাসন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রকে সুসংহত করার জন্য নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে মিডিয়া। একটি স্থিতিশীল ও শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, নাগরিক অধিকার, আইনের শাসন এবং মানবাধিকারের মতো বিষয়গুলোর ওপর জোর দিয়ে বাংলাদেশের অদম্য যাত্রা অব্যাহত রাখছে মিডিয়া। মিডিয়াকে ভয় দেখিয়ে কায়েমী স্বার্থ হাসিল করার সময় বোধ হয় শেষ হয়ে এসেছে। সহাবস্থান নিশ্চিত করার মাধ্যমেই গণতন্ত্র ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে।

লেখক : প্রাবন্ধিক ও গবেষক

আপনি এগুলোও দেখতে পারেন

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.