উন্নয়ন সমঅধিকার ও সমসুযোগে নারীদের কাছে তথ্য থাকা জরুরি

0

হীরেন পণ্ডিত : ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস এবারের প্রতিপাদ্য হলো নারীর সমঅধিকার, সমসুযোগ এগিয়ে নিতে হবে বিনিয়োগ। বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন অঞ্চলে নারীদের প্রতি শ্রদ্ধা, তাঁদের কাজের প্রশংসা এবং ভালোবাসা প্রকাশ করে আন্তর্জাতিক নারী দিবসকে নারীদের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক সাফল্য অর্জনের উৎসব হিসেবেই পালন করা হয়। ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস।

বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন দেশে এই দিনটিকে বিশেষ ভাবে পালন করা হয়। তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশও। প্রথম ১৯০৯ সালে আন্তর্জাতিক নারী
দিবস পালন করা হয়। ওই বছর ২৮ ফেব্রুয়ারি প্রথম আমেরিকায় নারী দিবস উদযাপন করা হয়েছিল। সোশ্যালিস্ট পার্টি অফ আমেরিকা
নিউইয়র্কে ১৯০৮ সালে বস্ত্রশ্রমিকরা তাঁদের কাজের সম্মান আদায়ের লক্ষ্যে ধর্মঘট শুরু করেন। নির্দিষ্ট সময় অনুযায়ী কাজ আর সমমানের বেতনের দাবিতে চলে হরতাল। নারী আন্দোলনের দীর্ঘ পথপরিক্রমায় নারী সমাজের যথেষ্ট অগ্রগতি সাধিত হলেও লিঙ্গ সমতার বিষয়টি এখনও পুরোপুরি প্রতিষ্ঠিত হয়নি। এ চিত্র শুধু বাংলাদেশেই নয়, পৃথিবীর সর্বত্র দৃশ্যমান। অথচ দেশ কিংবা সমাজের উন্নয়ন নির্ভর করে জনগোষ্ঠীর সামগ্রিক অবদান ও অংশগ্রহণের ওপর। অর্থাৎ সমাজের অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারীদের অংশগ্রহণ ছাড়া কাক্সিক্ষত উন্নয়ন সম্ভব নয়।

বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা ও সামাজিক কর্মকা-ে নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে সত্য; কিন্তু তা কাক্সিক্ষত মাত্রার অনেক নিচে অবস্থান করছে। শুধু তাই নয়, নারী নির্যাতন ও বঞ্চনাও উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করা সম্ভব হয়নি।

দেশের নারী সমাজ এখনও নানা ধরনের পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় নির্যাতন-বঞ্চনার শিকার। শিল্পক্ষেত্রে নারী শ্রমিকের বঞ্চনা একটি
আলোচিত বিষয়। যৌতুক প্রথা, বাল্যবিবাহ, ধর্মীয় কুসংস্কার, পারিবারিক জীবনে পুরুষতান্ত্রিক মনোভাবের আধিপত্য, প্রথা, পুরোনো ধ্যান ধারণা আমলের মনোকাঠামো ইত্যাদি নারী অগ্রগতির পথে বড় বাধা। এসব অতিক্রম করার নিরন্তর প্রচেষ্টা চলছে দেশে।

সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে নেওয়া হচ্ছে নানা উদ্যোগ। কিন্তু আবহমানকালের প্রথাগত সামাজিক চিত্রটি একেবারে মুছে ফেলা সম্ভব হয়ে উঠছে না। তবে নারীর ক্ষমতায়নের মতো জটিল বিষয়ে ব্যাপৃত না থেকে অন্তর্ভুক্তি এবং অংশগ্রহণকে প্রতিপাদ্য বিষয় হিসেবে বেছে নেন অনেকেই। বাংলাদেশের উন্নয়ন কি নারীদের সম্পৃক্ত করতে পেরেছে? সাম্প্রতিক প্রবণতা কি নারীর ক্ষমতায়নের পক্ষে সাক্ষ্য দেয়? বাংলাদেশের উন্নয়ন সফলতায় কি নারীর ক্ষমতায়ন কতটুকু দরকারি? নারীর অন্তর্ভুক্তির বিষয়টা গৃহীত উন্নয়ন কৌশলে প্রাথমিক প্রাধান্য ছিল না।

উন্নয়ন অগ্রাধিকারে নারীকে অন্তর্ভুক্ত করেছে। অনেক ক্ষেত্রে নারীর নিয়োগের পেছনে সচেতন অন্তর্ভুক্তিমূলক উদ্দেশ্যেও চেয়ে নারীর উপযুক্ততা কাজ করেছে বেশি। এটা নারী হিসেবে যেমন সত্য ছিল, তেমনি সত্য উন্নয়নের এজেন্ট হিসেবে নারীর ক্ষেত্রেও। উন্নয়ন কর্মশক্তিতে নারীর অন্তর্ভুক্তির শুরু সত্তর দশকে। তখন স্বাস্থ্য এবং পরিবার পরিকল্পনা উন্নয়নমূলক কাজের প্রধান ক্ষেত্র ছিল। সেবা সরবরাহের প্রধান মাধ্যম ছিল কমিউনিটি আউটরিচ।

সত্তর দশকের স্বাস্থ্য কর্মীদের অধিকাংশই ছিলেন পুরুষ, কিন্তু আশি দশকের শুরুতে ব্যাপক টিকা প্রচারাভিযানে অপেক্ষাকৃত উন্নত এলাকায় নারী কর্মী নিয়োগের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হতে থাকে। সমগ্র গ্রামীণ বাংলাদেশে ৬৪ হাজার পরিবার পরিকল্পনা কর্মী যখন নিয়োগ পেলেন, নারীরা নিয়মিত পরিদর্শনে যেতেন নারীদের সেবায়। উন্নয়ন সীমানায় নারীদের সম্পৃক্ত করানো স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং পরিবার পরিকল্পনায় কর্মশক্তিতে নারীর অন্তর্ভুক্তি এবং প্রাথমিক সুবিধাভোগী হিসেবে শনাক্তকরণ ছিল বাংলাদেশের উন্নয়ন কৌশলের বৈশিষ্ট্য। এমনি করে নারী হয়ে ওঠে উন্নয়নের দৃশ্যমান বিষয়।

বাংলাদেশের উন্নয়নে নারী একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্তমূলক কিছু বলা না গেলেও উল্লেখ করা যায়
যে বাস্তবায়নকারী এবং পরিকল্পিত সুবিধাভোগী হিসেবে নারীর অন্তর্ভুক্তি গুরুত্বপূর্ণ এবং সফলতার এ গল্পের কেন্দ্রে অবস্থিত, বিশেষ করে যখন উন্নয়নকে দেখা হয় সামাজিক উন্নয়ন উদ্দেশ্যের আলোকে। নারীর শিক্ষা, প্রত্যাশিত জীবন, জীবন প্রভাবিত করে এবং কয়টি সন্তান তারা নিতে পারে এমন বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ইত্যাদি প্রবণতা পর্যালোচনা করে উপসংহার টানা যায় যে গত ৫০ বছরে নারী তার পরিবেশে ব্যাপক পরিবর্তন প্রত্যক্ষ করেছে।

সাধারণত বেকার নারী জীবনের প্রথম ভাগে ক্ষমতাহীন হয় এবং শিক্ষার মাধ্যমে সুযোগ-সুবিধা বঞ্চিত হয়। সুতরাং দৃষ্টি নিবদ্ধ করতে হবে শ্রমবাজারে তাদের প্রবেশের পথ সুগম করা, কাজ আর জীবনের মধ্যে ভারসাম্য আনয়নে। এছাড়া সমস্যা সমাধান এবং নারীকে তার পূর্ণ
প্রতিভার বিকাশে সাহায্য করতে হবে। মোট কথা, বাংলাদেশের সফলতার গল্পে নারী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। উন্নয়ন কর্মী এবং উন্নয়নের সুবিধাভোগী হিসেবে তাদের অন্তর্ভুক্তিতে বিনিয়োগ বাংলাদেশের জন্য সফলতা সম্ভব করেছে। এখন গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে অন্য বাধাগুলো অপসারণ করা, যাতে অন্তর্ভুক্তি মানে দাঁড়ায় ইতিবাচক ক্ষমতায়ন।

আন্তর্জাতিক নারী দিবস শুধু একটি দিন নয়, আত্মসচেতনতা, অধিকার অর্জন ও প্রতিবন্ধক চিহ্নিত করা ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে নারীর অবস্থান কোন পর্যায়ে রয়েছে তা নিয়ে ভাবনার একটি নতুন দিন। নারী একদিকে যোদ্ধা, বীরঙ্গনা, কর্মী, আত্মত্যাগী ও মোনালিসার কোমল সৌন্দর্য ও বিহবলতার ধার। নারী তার শারীরিক সীমাবদ্ধতা ঝেড়ে ফেলে মেধা ও যোগ্যতায় অনেক ঊর্ধ্বে আরোহণ করছে। একুশ শতকের এ উত্থানের নারী গতানুগতিক ধারায় বন্দি নয়।

নারী তার ভাবনা থেকে বেরিয়ে এসে এক আলোকিত ভুবন তৈরি করেছে। নারী কন্যা, নারী জায়া, নারী জননী ইত্যাদিতে নারী তার পরিচয় ব্যাপ্ত করেছে। রাষ্ট্র পরিচালনায় সে যেমন কুশলতার পরিচয় দিয়েছে, বিজ্ঞান গবেষণায় ছুয়েছে সাফল্যের সোপান। সমাজ, রাষ্ট্র, পরিবার তাকে বারবার বঞ্চিত করেছে। নারীকে আমরা শুধু নারী হিসেবে দেখব, নাকি মানুষ হিসেবে, সেবক হিসেবে ও সমাজ রূপান্তরের কারিগর হিসেবে দেখব- এ ভাবার যথাযথ সময় এসেছে।

নারী তার শিশু বয়স থেকে বৃদ্ধ বয়স পর্যন্ত নানা নিগ্রহের শিকার। বিকৃত পুরুষ যৌন নির্যাতনের মাধ্যমে শুরু করে অধিকার বঞ্চনায় শেষ করে। বিবাহ নামক সম্মতিমূলক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার পর নারী কী মর্যাদা, অধিকার, প্রাপ্য পায় কয়টি পরিবারে? পদে পদে চলে লাঞ্ছনা। কৃষি হাতে প্রথম শুরু। শিশু প্রতিপালন, ঘরকন্যার কাজ করাসহ সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে। উৎপাদন, বিনিয়োগ ও মেধার ব্যবহার নারী প্রগতি ও অগ্রযাত্রার বাতি জ্বালিয়ে রেখেছে। গৃহে নারী যে শ্রম দেয় তার জন্য কোনো পারিশ্রমিক বরাদ্দ নেই। এমনকি ন্যূনতম সম্মান, সহমর্মিতা সে পায় না। এনজিও প্রতিষ্ঠান ও সরকারি সংস্থার উদ্যোগে নারীকে স্বাবলম্বী করার কার্যক্রম গ্রহণ করা হচ্ছে।

ঋণ প্রদান অনুদান ও বয়স্ক ভাতা দেওয়া হয়। এ সাহায্য পর্যাপ্ত নয়। গবাদি পশু-হাস-মুরগি প্রতিপালন, সেলাই মেশিন ক্রয়ের জন্য টাকা
দেওয়া হয়। নানা শর্তযুক্ত থাকে। বোঝা থেকে মুক্ত হতে নারীকে জটিল সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। কৃষি ব্যাংক অন্যান্য প্রতিষ্ঠান অল্প
টাকায় হিসাব খোলা ও ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা করেছে, এগুলো পর্যাপ্ত নয়। ফাঁদের ভুবন ভরা এই জগৎ সংসারে নারী এক বৃত্তাবদ্ধ জীবনযাপন
করছে। নারীকে আজও সহ্য করতে হয় নানা নির্যাতন নানা অত্যাচার। রক্তচক্ষু, সামাজিক ব্যবস্থা, বৈষম্যের বেড়াজালে আটক নারী কী দেবে
এ সমাজকে? তবু প্রচেষ্টা চলে।

বাংলাদেশ সরকার টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ৩ (তিন) এর আলোকে স্বাস্থ্য বিষয়ক বিভিন্ন নীতি ও কৌশল প্রণয়নের বিষয়টির ওপর অধিক
গুরুত্ব দিয়েছেন। তথ্য জানানোর প্রয়াসে সরকার সেবাগ্রহিতার অধিকার সনদ ও সিটিজেনস চার্টার প্রণয়ন করেছেন এবং এর ওপর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। তাছাড়া স্বাস্থ্য বিষয়ক বিভিন্ন নীতি ও কৌশলেও তথ্য জানানোর বিষয়টি উঠে এসেছে।

জনগণের স্বাস্থ্য অধিকার এবং প্রজনন স্বাস্থ্য অধিকার চর্চার পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশ সরকার ‘সেবাগ্রহিতার অধিকার সনদ’ প্রণয়ন করে। এ সনদে বিভিন্ন পর্যায়ের সেবাকেন্দ্রগুলোতে যেসব সেবা পাওয়া যায় সে সম্পর্কে সেবা গ্রহিতাদের তথ্য জানার অধিকারের কথা বলা হয়েছে। ২০০৮ সালে স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোতে জনগণের সেবা প্রাপ্তি বিষয়ে সিটিজেনস চার্টার’ প্রণয়ন করা হয়। এই চার্টারের মাধ্যমে জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে জনগণ কী ধরনের প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সেবা পেতে পারে, সে বিষয়ে তথ্য দেয়া হয়েছে।

প্রজনন স্বাস্থ্য সমস্যা সম্পর্কিত কি কি তথ্য জানার অধিকার রয়েছে? নারী ও কিশোরীদের নিরাপদ মাতৃত্ব এবং প্রজননতন্ত্রের সুস্থ্যতা একটি অধিকার, বিশেষত নারী ও কিশোরীদের জন্য। সেজন্য তাদের প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য জানার অধিকার রয়েছে। সেগুলো হলো নিরাপদ মাতৃত্ব কি বা এর জন্য করণীয় সম্পর্কিত তথ্য; গর্ভকালীন বিপদগুলি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানা যাতে তারা গর্ভকালীন বিপদ বা জটিলতাগুলো নিজেরাই শনাক্ত করতে পারেন এবং যথাসময়ে সেবাকেন্দ্রে সাহায্যের জন্য যেতে পারেন; গর্ভধারণজনিতে জটিলতা থেকে সৃষ্ট রোগ বা মাতৃত্বজনিত অসুস্থ্যতা এবং এসব রোগ বা বিপদ হতে পরিত্রাণের উপায় সম্পর্কিত তথ্য; যৌনবাহিত রোগ ও রোগের লক্ষণ সম্পর্কিত তথ্য পেতে পারে।

ক্রমবর্ধমান জন্যসংখ্যা বর্তমানে বাংলাদেশের একটি বড় সমস্যা। দেশের অপরিকল্পিত জনসংখ্যা রোধে পরিবার পরিকল্পনা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে। তাছাড়া পারিবারিক স্বচ্ছলতা ও সন্তানদের সঠিকভাবে গড়ে তোলার জন্যও পরিকল্পিত পরিবার গঠন অত্যাবশ্যক, যা
পরিবার পরিকল্পনার মাধ্যমে করা সম্ভব। পরিবার পরিকল্পনার মাধ্যমে একজন নারী, পুরুষ ও সক্ষম দম্পতি তাদের প্রজনন এবং যৌন অধিকারসমূহ চর্চা করতে পারে। যেমন-অনাকাক্সিক্ষত গর্ভরোধকরণে, জন্ম বিরতিকরণ পদ্ধতি ব্যবহার করবে তা নির্ধারণে, কাক্সিক্ষত সময়ে
গর্ভধারণে, নিজের পছন্দ মতো জন্মবিরতি গ্রহণে, মা-বাবার বয়স অনুয়ায়ী সন্তান এবং পরিবারে কয়টি সন্তান নিতে চায় তা নিরূপণে; পরিবার পরিকল্পনার বিভিন্ন পদ্ধতি (স্থায়ী এবং অস্থায়ী) সম্পর্কে জানার অধিকার যেমন নারীর রয়েছে, তেমনি এর পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া বা সুবিধা সম্পর্কে ও সঠিক তথ্য জানার অধিকার তাদের রয়েছে। কোথায় গেলে পছন্দমাফিক পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি গ্রহণ করতে পারবেন এ ব্যাপারে ও তথ্য জানার অধিকার রয়েছে।

আমাদের দেশের বয়োঃসন্ধিকালীন জনগোষ্ঠী বিভিন্ন ধরনের প্রজনন স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যায় ভুগে থাকে। বিশেষ করে কিশোরীরা বাল্যবিবাহ, অল্প বয়সে মা হবার ঝুঁকি এবং এ থেকে সৃষ্ট প্রজনন স্বাস্থ্য সংক্রান্ত ঝুঁকির শিকার। তাছাড়া অল্প বয়সে মা হওয়ার ফলে বাংলাদেশের কিশোরী মা এবং নবজাতকের মৃত্যু জাতীয় পর্যায়ে মাতৃ ও নবজাতকের মৃত্যুর হারের চাইতে অনেক বেশী। দেশের সামাজিক সাংস্কৃতিক পরিবেশ অনেক সময় কিশোর-কিশোরীদের প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কে তথ্য পাবার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এছাড়া তাদের মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষারও ঘাটতি রয়েছে। প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ক সঠিক তথ্য সঠিক সময়ে সহজলভ্য হলে। বিশেষভাবে বাল্য বিবাহ ও কিশোরী মাতৃত্ব এবং এর থেকে সৃষ্ট সমস্যা প্রতিরোধ করা সম্ভব। কোথায় গেলে প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কিত তথ্য পাওয়া যাবে তা জানার অধিকার নারীর রয়েছে। তাছাড়া সেবাকেন্দ্রগুলোতে কি কি ধরনের চিকিৎসা পাওয়া যায়, কোনটি সেবামূল্য কেমন, কখন বা কোন সময় নির্ধারিত সেবা পাওয়া যাবে, কি কি ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা আছে, সেগুলোর মূল্য কত, কখন করা যাবে ইত্যাদি বিভিন্ন তথ্য জানবার পূর্ণ অধিকার নারীর রয়েছে।

জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে কার কাছে গেলে প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কিত তথ্য পাওয়া যাবে, সেসব তথ্য জনার অধিকার ও এর
অন্তর্ভুক্ত। স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে ধারাবাহিকতা থাকা উচিত। যেমন, গর্ভকালীন পরিচর্যা, প্রসব ও প্রসবোত্তর পরিচর্যা ইত্যাদি যেহেতু ধারাবাহিক বিষয় সেহেতু এইসব ক্ষেত্রে চিকিৎসার ধারাবাহিকতাও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ধারাবাহিক চিকিৎসা বা ফলোআপ কি তা আমাদের জানার অধিকার রয়েছে। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় আসার পর চিকিৎসক যে ঔষধ-পথ্যাদি দিলেন সেগুলো ব্যবহার করার পর রোগীর অবস্থা কেমন হলো অথবা রোগীর অন্য কোন চিকিৎসার প্রয়োজন আছে কিনা এইসব তথ্য ও চিকিৎসক উক্ত রোগীকে প্রদান সহায়তা ও পরামর্শ দেবে। একেই নিরাপদ ও ধারাবাহিক সেবা পাবার অধিকার বলা হয়। প্রজনন স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সেবাগ্রহণের ক্ষেত্রে সেবা গ্রহিতাদের গোপনীয়তা বা প্রাইভেসি
রক্ষার প্রয়োজন। এ সংক্রান্ত পরামর্শ বা চেকআপের সময় এই প্রাইভেসি বা গোপনীয়তা সেবা গ্রহিতার অধিকারের মধ্যে পড়ে।

কিন্তু অনেক সময়ই সেই পরিবেশ তারা পান না। পাশাপাশি প্রজনন স্বাস্থ্য সংক্রান্ত চিকিৎসার সকল লিপিবদ্ধ তথ্য, গোপনীয়তা বজায় রাখতে চাওয়াটাও সেবা গ্রহিতার অধিকার। সেসকল লিপিবদ্ধ তথ্য হস্তান্তর করার প্রয়োজন হলে অবশ্যই উক্ত সেবা গ্রহিতার অনুমতি নিতে হবে। এসবই ‘প্রজনন স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণে গোপনীয়তার অধিকার’-এর অন্তর্ভুক্ত।

লেখক :  প্রাবন্ধিক, গবেষক ও কলামিস্ট

আপনি এগুলোও দেখতে পারেন

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.