টাইফয়েড টিকাদান কর্মসুচির আওতায় কনসালটেশন ওয়ার্কশপে একদিন – এবাদত আলী
পাবনা প্রেসক্লাবের সদস্য হবার সুবাদে এবং উন্মুক্ত কলাম লেখক হিসেবে
পরিচিতি লাভ করায় বিভিন্ন অনুষ্ঠানাদিতে আমার ডাক পড়ে। সেদিন
একটি ফোন এলো পাবনা জেলা তথ্য অফিসের সিনিয়র তথ্য অফিসার জনাব
সামিউল আলমের কাছ থেকে । তিনি মাস ব্যাপি টাইফয়েড টিকাদান
বিষয়ক প্রচার কার্যক্রমের অংশ হিসেবে গণমাধ্যম কর্মীদের অংশগ্রহণে
জেলা পর্যায়ে কনসালটেশন ওয়ার্কশপে অংশগ্রহণের জন্য অনুরোধ জানালেন।
তিনি জানালেন ৯ অক্টোবর-বৃহস্পতিবার জেলা তথ্য অফিসের আয়োজনে
এবং পাবনা সিভিল সার্জন অফিসের সহায়তায় ‘ টাইফয়েড টিকাদান
কর্মসুচীর আওতায় কনমসালটেশন ওয়ার্কশপ’ পাবনা রশিদ হলে সকাল ১১
টায় অনুষ্ঠিত হবে।
সেমতে সেদিন ৯ অক্টোবর- ২০২৫ মোতাবেক ২৪ আশ্বিন শরতের শুস্ক
আবহাওয়ায় বাসা থেকে বের হয়ে আমার বন্ধুপ্রতিম সাংবাদিক ও নাট্যকার
এইচ কে এম আবু বকর সিদ্দিকের ছোট ছেলে পাবনা কলেজের প্রভাষক ও‘‘
দৈনিক যায় যায় দিন ’’ পত্রিকার সাংবাদিক আরিফ আহমেদ সিদ্দিকীর
প্রাইভেট কারে চড়লাম। আবু বকর সিদ্দিকের বড় ছেলে কামাল আহমেদ
সিদ্দিকীও সাংবাদিক। তাই আমরা চারজন একই কারে পাবনা জেলা পরিষদের
রশিদ হলে পোঁছলাম। কথায় বলে ‘আগে গেলে সোনা পায় পিছে গেলে
বাঘে খায়’ । আমরা আগে গিয়ে সোনা না পেলেও সামনের সারিতে গদি
আঁটা সোফায় বসার সুযোগ লাভ করলাম।
সিনিয়র তথ্য অফিসার
আমাদেরকে স্বাগত জানালেন। এরপর যথারীতি ফোল্ডার, কলম, সেমিনার নোট
বুক ও ওয়ার্কশপের বিষয় সংক্রান্ত তথ্যসম্বলিত কিছু গুরুত্বপুর্ণ কাগজ পত্র
পেলাম। টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইন- ২০২৫ উপলক্ষ্যে সংবাদ কর্মীদের
জন্য প্রণীত তথ্যাদি হতে জানা যায় যে, টাইফয়েড জ¦র একটি
প্রতিরোধযোগ্য সংক্রামক রোগ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০১৯ সালের তথ্য
অনুযায়ী, প্রতি বছর বিশ্বে প্রায় ৯০ লক্ষ মানুষ টাইফয়েড জ¦রে আক্রান্ত হয়
এবং এর মধ্যে প্রায় ১ লক্ষ ১০ হাজার জন মৃত্যুবরণ করে। উল্লেখ্য, আক্রান্ত ও
মৃত্যুবরণকারীদের অধিকাংশই দক্ষিন এশিয়া এবং সাব-সাহারান আফ্রিকায়
বসবাসকারী মানুষ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, বিশ্বের উন্নত দেশ
সমূহে এই রোগের প্রাদুর্ভাব অনেকাংশে কম হলেও বাংলাদেশসহ অনেক
উন্নয়নশীল দেশে অন্যতম জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে রয়ে গেছে। বিশ্বের
অন্যান্য দেশের তুলনায় টাইফয়েড জ¦রে আক্রান্তের হার বাংলাদেশে অনেক বেশি।
এক সমীক্ষা অনুযায়ী ২০২১ সালে বাংলাদেশে প্রায় ৪ লক্ষ ৭৮ হাজার জন
টাইফয়েড জ¦রে আক্রান্ত হয় এবং ৮ হাজার জন মৃত্যুবরণ করে, যার মধ্যে ৬৮
শতাংশই শিশু।
টাইফয়েড জ¦র স্যালমোনেলা টাইফি ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট একটি
সংক্রামক রোগ। টাইফয়েড জ¦রে আক্রান্ত হলে আর্থিক ক্ষতি, দীর্ঘ মেয়াদি
শারিরীক জটিলতা এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। আরও আশংকার বিষয় হলো
টাইফয়েড রোগীর চিকিৎসায় যে সকল এন্টিবায়োটিক ব্যবহৃত হয় , তার
একটি উল্লেখযোগ্য অংশ টাইফয়েড জ¦র নিরাময়ে কাজ করছেনা। অর্থাৎ
টাইফয়েডের জীবাণু যেসকল এন্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ
ক্ষমতা অর্জন করেছে ফলে ঔষধ প্রতিরোধী টাইফয়েড জ¦রের প্রকোপ
প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইন-২০২৫ অধ্যায়ে বলা হয়েছে, টাইফয়েড
টিকা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা দ্বারা সুপারিশকৃত এবং নিরাপদ ও কার্যকর।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগে ইপি আই-এর ব্যবস্থাপনায়
বিনা মূল্যে এই টিকা প্রদান করা হবে।
একজন সংবাদকর্মী হিসেবে প্রত্যাশা অধ্যায়ে বলা হয়েছে, স্ব স্ব
প্রতিষ্ঠানের সকল সহকর্মীর সাথে টাইফয়েড টিকার গুরুত্ব ও
প্রয়োজনীয়তা বিষয়ে আলোচনা করা। বহুল প্রচারের জন্য প্রতিষ্ঠানের
বিভিন্ন চলমান কার্যক্রমের মাধ্যমে এই টিকার গুরত্ব তুলে ধরা। টাইফয়েড
টিকাদান ক্যাম্পেইন-এর খবর ও সফলতা স্থানীয় ও জাতীয় পত্র-পত্রিকাসহ সকল
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশের উদ্যোগ গ্রহণ করাসহ সকল
পর্যায়ে ক্যাম্পেইন বিষয়ে গৃহীত বিভিন্ন প্রচার কার্যক্রমে নিজেকে
সম্পৃক্ত করার আহবান জানানো হয়েছে।
যাক এই কনসালটেশন ওয়ার্কশপে পাবনা প্রেসক্লাবের সদস্য বৃন্দ, পাবনা
শহরে কর্মরত বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াতে কর্মরত ৮৫ জন
গণমাধ্যম কর্মীর উপস্থিতিতে রশিদ হল সরগরম হয়ে উঠলো। আমার পরিচিত।
অপরিচিত সাংবাদিকদের সঙ্গে কুশলাদি বিনিময় হলো। বিশেষ করে এক
ঝাঁক তরুন সাংবাদিকের সাথে পরিচিত হতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে
হলো।
অতিথিবৃন্দের আগমণের পর যথাসময়ে অনুষ্ঠান শুরু হলো। পাবনার সিভিল
সার্জন আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে ও জেলা সিনিয়র তথ্য অফিসার
সামিউল আলমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানের সুচনা করা হয়। সভাপতির ভাষণে সিভিল
সার্জন বলেন, আগামী ১২ অক্টোবর থেকে শুর হতে যাওয়া ট্ধাসঢ়;ইফয়েড
টিকাদান ক্যাম্পেইনে পাবনা জেলায় প্রায় ৮ লাখ শিশুকে টাইফয়েড জ¦র
থেকে সুরক্ষা প্রদানের লক্ষ্যে টিকা প্রদান করা হবে। তিনি আরো বলেন,
একটি সুস্থ্য জাতি গঠনে এবং আগামী প্রজন্মের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত
করতে টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইনের গুরুত্ব অপরিসীম।
গণযোগাযোগ অধি দপ্তরের ‘‘ শিশু কিশোর- কিশোরী ও নারী উন্নয়নে
সচেতনতামূলক প্রচার কার্যক্রম শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় টাইফয়েড
টিকাদান ক্যাম্পেইন -২০২৫ প্রচার কার্যক্রমের অংশ হিসেবে গণমাধ্যম
কর্মীদের অংশগ্রহণে জেলা পর্যায়ে কনসালটেশন কর্মশালায় অতিরিক্ত জেলা
প্রশাসক (সার্বিক) জাহাঙ্গীর আলম আগামী ১২ অক্টোবর থেকে টাইফয়েড
টিকাদান ক্যাম্পেইন সফল করার লক্ষ্যে গণমাধ্যমকে সম্পৃক্ত করার গুরুত্ব তুলে
ধরেন। বিশেষ করে তিনি ৯ মাস থেকে
১৫ বছর সকল শিশুকে টাইফয়েড টিকা প্রদান নিশ্চিত করতে সকলকে
সমন্বিতভাবে কাজ করার আহবান জানান। অনুষ্ঠানে টাইফয়েড জ¦র, শিশু
স্বাস্থ্যের ক্ষতিকর প্রভাব প্রতিরোধসহ টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইন
২০২৫ সফল করে তোলার লক্ষ্যে করণীয় দিক গুলোর প্রতি আলোকপাত করেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধি ডাঃ রাশেদুল বারী পাওয়ার পয়েন্ট।
প্রজেক্ধসঢ়;শনের মাধ্যম চ্যালেঞ্জ এবং করণীয় বিষয়গুলো তুলে ধরেন। কর্মশালায়
পাবনা সিভিল সার্জন অফিস থেকে জাননো হয় পাবনা জেলার ২ হাজার ৯শ
৭৭ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত সকল ছাত্র-ছাত্রীদের নিজ স্কুলেই ১২
অক্টোবর থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত টাইফয়েড টিকা প্রদান করা হবে। এছাড়া
৯ মাস থেকে ১৫ বছর বয়সী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বহির্ভুত এবং স্কুল পর্যায়ে
বাদ পড়া ১ নভেম্বর থেকে জেলার ১ হাজার ৮শ ৬০ টি ইপিআই কেন্দ্রে এই
টিকা ২৩ নভেম্বর পর্যন্ত গ্রহণ করতে পারবে। জেলার ৯টি উপজেলা স্বাস্থ্য
কমপ্লেক্স ৪ টি পৌরসভা (পাবনা ,ঈশ্বরদী, সুজানগর ও বেড়া) এবং ২৫০ শয্যা
বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের ই পি আই স্থায়ী টিকাদান কেন্দ্রে শুক্রবারে ও
সরকারি ছুটির দিন ব্যতীত প্রতিদিন টিকা কার্যক্রম চলমান থাকবে।
অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন সহকারি পুলিশ সুপার সাদিক আহমদ, পাবনা
প্রেসক্লাবের সভাপতি আখতারুজ্জামান আক্তার প্রমুখ। এসময় পাবনার
ডেপুটি সিভিল সার্জন ডাক্ত্ধসঢ়;ও মোহাম্মদ খায়রুল কবীর, পাবনা
প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক জহুরুল ইসলাম, সহ সম্পাদক মোখলেসুর
রহমান বিপ্লব, সিনিয়র সহসভাপতি ছিফাত রহমান সনম, সহ সভাপতি এস
এম আলাউদ্দিন, সাবেক সভাপতি এবিএম ফজলুর রহমান, সাবেক সহ সভাপতি
কামাল আহমেদ সিদ্দিকী, সাবেক সম্পাদক আখিনুর ইসলাম রেমন, সাবেক
সম্পাদক ও মাছরাঙা টেলিভিশনের উত্তরাঞ্চলীয় ব্যুরো প্রধান উৎপল মীর্জা,
অর্থ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, সাহিত্য সংস্কৃতি সম্পাদক ইয়াদ
আলী মৃধা পাভেল, ক্রীড়া সম্পাদক ইমরোজ খন্দকার বাপ্পী, কল্যাণ সম্পাদক কলিট
তালুকদার, দপ্তর সম্পাদক মনিরুজ্জামান শিপন, দৈনিক ইছামতির নির্বাহী
সম্পাদক মোস্তাফা সতেজ, দৈনিক পাবনার খবর সম্পাদক এম জি বিপ্লব
চৌধুরী, দৈনিক উন্নয়নের কথা পত্রিকার সম্পাদক অধ্যাপক আবুল হাশেম,
সাংবাদিক ও নাটৗকার দৈনিক চাঁদনী বাজার পত্রিকার পাবনা ব্যুরো প্রধান
এইচ কে এম আবু বকর সিদ্দিক, সাংবাদিক ও কলামিস্ট দৈনিক চাঁদনী
বাজার পাবনা ব্যুরো প্রতিনিধি এবাদত আলী, সাংবাদিক নরেশ মধু, আবু
হাসনা মোঃ আইয়ুব, শুশীল তরফদার, রফিকুল ইসলাম সুই্ধসঢ়;ট, তপু আহমেদ,
সাংবাদিক জিকে সাদী, মিজানুর রহমান, এটি এন বাংলার পাবনা
প্রতিনিধি রিজভী জয়, দৈনিক যায় যায় দিন পত্রিকার পাবনা জেলা
প্রতিনিধি আরিফ আহমেদ সিদ্দিকী, সাংবাদিক আবুল এহসান এলিস-,
সাংবাদিক এস এম আলম, কাজী মাহবুব মোর্শেদ বাবলা, মাহফুজ আলম,
আব্দুল হামিদ খান, শুশান্ত কুমার, সেলিম মাহমুদ. প্রবীর কুমার সাহা, শফিক
আল কামাল, খালেদ আহমেদ এবং শিশির ইসলাম প্রমুখ সাংবাদিক বৃন্দ।
ওয়ার্কশপের শেষ প্রান্তে জেলা সিনিয়র তথ্য অফিসার সামিউল আলম কর্তৃক
উপস্থিত সকল সাংবাদিককে ধন্যবাদ জ্ঞাপনের মাধমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি
ঘোষণা করা হলো। অতঃপর শুরু হলো নিজ গন্তব্যে পথ চলা। (লেখক ঃ সাংবাদিক ও
কলামিস্ট)
এবাদত আলী, সাংবাদিক ও কলামিস্ট, সদস্য পাবনা প্রেসক্লাব।
তারিখ-১২/১০/২০২৫