বঙ্গবন্ধুর প্রদত্ত মুক্তিযোদ্ধা এর সংজ্ঞা পরিবর্তন করে নুতন সংজ্ঞা প্রদান করা হয়েছে। বীর মুক্তিযোদ্ধা আল মাহমুদ
।। পর্ব –১।।
অনেক আন্দোলন, সংগ্রাম ত্যাগ তিতিক্ষার পরে এক রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। তদানীন্তন চাকুরীরত বেতনভুক্ত সেনাবাহিনী,পুলিশ, আনসার, ইপিআর অনেকেই মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করে। বিনা বেতনে, বিনা চাকুরীতে বিনা স্বার্থে যারা মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেয় তারা হলো তদানিন্তন পূর্ব পাকিস্তানের যুবক সমাজ, ছাত্র ছাত্রী, রাজনৈতিক দলের কিছু নেতাকর্মী সহ বাংলার দামাল ছেলেরা। এরা নিঃস্বার্থ, নির্লোভ, টাকা চায়নি, চাকুরী চায়নি বা কোন সুযোগ সুবিধার জন্য বা কোন কিছুর বিনিময়ে না শুধু এদেশকে হানাদার মুক্ত করার প্রত্যয়ে মৃত্যুর মুখোমুখি হয়ে জীবন বাজী রেখে জীবনের বিনিময়ে হলেও দেশকে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করতে হবে এই প্রত্যাশায় অবর্ননীয় কষ্ট স্বীকার করে ভিন দেশের মাটিতে প্রশিক্ষণ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ করে স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছে । বাঙ্গালী জাতীকে একটি স্বাধীন দেশ উপহার দিয়েছে যার নাম বাংলাদেশ।
এরা বীর, দেশের শ্রেষ্ট সন্তান, এরা জাতির গর্ব এবং সর্ব্বোচ্চ সম্মান পাওয়ার যোগ্য। এদের সাথে অন্য কারো তুলনা হয় না। ওদের বলিষ্ঠ ভূমিকার কারণেই আজ আমরা স্বাধীন বাংদেশের স্বাধীন মানুষ। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১০ই জানুয়ারি ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশে প্রত্যার্পন করার পরে ১৯৭২ সালের ৭ ই আগস্ট তারিখে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যানের জন্য বঙ্গবন্ধু BANGLADESH( FREEDOM FIGHTERS) WELFARE FOUNDATION, ORDER, 1972 জারি করেন এবং তা গেজেটে প্রকাশিত হয়। উক্ত Order এর উপধারা (h) এ মুক্তিযোদ্ধা এর একটি সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। সংজ্ঞাটি হলো নিম্নরূপঃ-
(h) freedom fighter means any person who had served as a member of any force engaged in the war of Liberation but shall not include members of the defence service or police or the civil armed forces.
সুতরাং মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ কারী ব্যক্তি যিনি মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে যে কোন ফোর্সের সাথে কাজ করেছেন তিনি মুক্তিযোদ্ধা। তবে দেশরক্ষা বাহিনী, পুলিশ ও সিভিল অস্ত্রধারী ফোর্স মুক্তিযোদ্ধা এর অন্তর্ভূক্ত নয়। মুক্তিযুদ্ধ শেষ হওয়ার ৪৫ বছর পর ৮ই নভেম্বর, ২০১৬ তারিখে মুক্তিযোদ্ধা এর আরেক টি সংজ্ঞা দেওয়া হলো।কিন্তু কেন পুনরায় নতুন করে সংজ্ঞা প্রদানের দরকার হলো জাতি তা জানে না। বলা হচ্ছে ঐ টা নাকি মুক্তিযোদ্ধা এর সর্বশেষ সংজ্ঞা। বর্তমানে সেই সংজ্ঞা অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধা গন্য করা হচ্ছে। সেই সর্বশেষ সংজ্ঞা অনুসারে অনেকের নাম মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গন্য হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। গেজেট ও প্রকাশিত হয়েছে।
বাংলাদেশ গেজেট
অতিরিক্ত সংখ্যা
কতৃপক্ষ কতৃক প্রকাশিত
বৃহস্পতিবার, ১০ নভেম্বর,২০১৬
গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
মুক্তিযুদ্ধ বিসয়ক মন্ত্রণালয়
প্রজ্ঞাপন
বিষয়ঃ মুক্তিযোদ্ধা এর সংজ্ঞা ও বয়স নির্ধারণ।
নং ৪৮০০,০০০০,০০৪,৪৯,২৩৩,০৯-১৮৩২.
জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের সুপারিশের আলোকে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের একটি নির্ভরযোগ্য ও গ্রহণযোগ্য তালিকা প্রনয়নের লক্ষ্যে মুক্তি যোদ্ধা এর সংজ্ঞা ও বয়স নিম্নরূপ নির্ধারণ করা হলোঃ-
সংজ্ঞাঃ-
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কতৃক স্বাধীনতার ঘোষণায় সাড়া দিয়ে ১৯৭১ সালের ২৬ শে মার্চ হতে ১৬ ই ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ের মধ্যে যে সকল ব্যক্তি বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছেন তারাই মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গন্য হবেন।
যথাঃ-
ক) যে সকল ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণের জন্য বাংলাদেশের সীমানা অতিক্রম করে ভারতের বিভিন্ন ট্রেনিং/ প্রশিক্ষণ ক্যম্পে নাম অন্তর্ভুক্ত করেছেন,
খ) যে সকল বাংলাদেশী পেশাজীবি মুক্তিযুদ্ধের সময় বিদেশে অবস্থানকালে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিশেষ অবদান রেখেছেন এবং যে সকল বাংলাদেশী বিশিষ্ট নাগরিক বিশ্বে জনমত গঠনে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন,
গ) যারা যুদ্ধ কালীন সময়ে গঠিত গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ( মুজিবনগর সরকার) অধীনে কর্মকর্তা কর্মচারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন,
ঘ) সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ, ইপিআর, আনসার বাহিনীর সদস্য যারা মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশ গ্রহণ করেছেন,
ঙ) মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ কারী ও গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের (মুজিবনগর সরকারের) সাথে সম্পৃক্ত এম, এম,এ গন,(M.N.A) ( গণ পরিষদ সদস্য)
একই দিনে আরেকটি গেজেট প্রকাশিত হয়।যেখানে আর ও কিছু সংযোজন করা হয়েছে। গেজেটটি নিম্নরূপ ঃ-
বাংলাদেশ গেজেট অতিরিক্ত ১০ই নভেম্বর, ২০১৬।
চ) পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ও তাদের সহযোগী কতৃক নির্যাতিত নারীগন, বিরাঙ্গনা
ছ) স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দের শিল্পী ও কলা কৌশলীবৃন্দ এবং দেশ ও দেশের বাহিরে দায়িত্ব পালনকারী বাংলাদেশী সাংবাদিকগন,
জ) স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের খেলোয়াড় বৃন্দ,
ঝ) মুক্তিযুদ্ধকালে আহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা সেবা প্রদানকারী মেডিকেল টীমের ডাক্তার,
২। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নতুনভাবে অন্তরভুক্তির ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধার বয়স ২৬-০৩-১৯৭১ তারিখে ন্যুনতম ১৩ বছর হতে হবে।
৩। জনস্বার্থে প্রজ্ঞাপনটি জারি করা হলো এবং উহা অবিলম্বে কার্যকর হবে।
বিষয়টির প্রতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর, মাননীয় মুক্তিযুদ্ধ বিসয়ক মন্ত্রী সহ সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
(অসমাপ্ত)
লেখক : বীর মুক্তিযোদ্ধা আল মাহমুদ আইনজীবী ও কলাম লেখক ।