দৃষ্টান্ত হতে পারে একজন নারী- শাহনাজ বেগম
মাহফুজ আলম : জীবন যুদ্ধে সংগ্রামী নারীর উপমা হতে পারে শাহনাজ বেগম-হীরা। পর্যটন বিষয়ে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে দেখা মিলে পর্যটক হিসেবে কাপ্তাই (রাঙ্গামাটিতে) বেড়াতে আসা সেই নারী যুদ্ধার সাথে।
এশিয়া মহাদেশের মধ্যে অন্যতম কাপ্তাই কৃত্তিম হ্রদের পাশে দাঁড়িয়ে পর্যটক শাহনাজ বেগম সাক্ষাৎকারে সময় সংবাদ কে বলেন, অপরূপ সৌন্দর্যের নীলাভূমি কাপ্তাইয়ের প্রকৃতিকে উপভোগ করতে সুদূর মুন্সিগঞ্জ থেকে ছুটে আসা হয় রাঙ্গামাটি কাপ্তাইয়ে।
তার সাথে আলাপচারিতার একপর্যায়ে জানা গেল, তার জন্ম, শৈশব ও বেড়ে ওঠা মুন্সীগঞ্জ শহরের মালপাড়ায়। তিনি তৃতীয় শ্রেণি হতে নৃত্য প্রশিক্ষক আমিরুল ইসলাম বাবলার কাছে নাচে হাতেখড়ি নেন। ১৯৯৪ সালে আলবার্ট ভিক্টোরিয়া যতীন্দ্র মোহন সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় হতে এসএসসিতে মুন্সীগঞ্জ জেলায় দ্বিতীয় স্থান ও মেয়েদের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করেন। সরকারি হরগঙ্গা কলেজ থেকে এইচএসসি ও পরবর্তীতে পদার্থ বিজ্ঞানে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।
তিনি দীর্ঘদিন শিশু একাডেমিতে নৃত্য প্রশিক্ষক ছিলেন। বিয়ের পর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চাকরি ছেড়ে দেন। স্বামীর সাথে যোগ দেন স্বামীর প্রতিষ্ঠিত ব্রিলিয়ান্ট ক্যাডেট কেজি স্কুলে। ২০২০ সালের ২৮ মার্চ স্বামী আব্দুস ছাত্তার দেওয়ান (আলাল) মৃত্যুবরণ করেন। স্বামীর মৃত্যুতে দীর্ঘ ১৭ বছরের দাম্পত্য জীবনের সমাপ্তি ঘটে। শুরু হয় আরেক সংগ্রাম। তিনি তিন সন্তানের জননী। (এক মেয়ে, দুই ছেলে)। সংসার ও স্কুল নিয়ে করোনাকালীন সময়ে নানা প্রতিকূলতার সম্মুখীন হয়েছেন তিনি। একই সময়ে কাজ করেছেন মহিলা পরিষদ মুন্সীগঞ্জ জেলা শাখায় ও টিআইবির সচেতন নাগরিক কমিটিতে। এখন ব্যস্ত রয়েছেন নারী ও শিশু অধিকার ফোরামে। তৃণমূলে নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, নারীর প্রতি সহিংসতা ও নির্যাতনের মূলে পারিবারিক ও নৈতিক শিক্ষার অবক্ষয়। সেক্ষেত্রে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হলে, পরিবার থেকেই শুরু করতে হবে। নারীর জন্য জায়গা তৈরি করতে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে নারীবান্ধব পরিবেশ তৈরি করতে হবেড় যাতে নারী নির্ভয়ে সমাজে তার উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে পারেন। হীরা বর্তমানে স্বামীর স্মৃতি বিজড়িত ব্রিলিয়ান্ট ক্যাডেট কেজি স্কুলে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সাংবাদিকতা ও বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। তার স্কুলটি নারীবান্ধব প্রতিষ্ঠান। শিক্ষক নিয়োগে তিনি নারীদের অগ্রাধিকার দেন। তার আবৃত্তির কণ্ঠও চমৎকার। বিভিন্ন সময়ে পেয়েছেন বিভিন্ন পুরস্কার। তার কাছে পুরস্কার বা সম্মাননা বড় বিষয় না, বড় বিষয় কাজ। তিনি কাজের মাঝে আনন্দ খুঁজে পান। স্বপ্ন দেখেন সুস্থ ও সুন্দর পৃথিবীর।