সততা মানুষের সর্ব শ্রেষ্ঠ চারিত্রিক গুণ । বীর মুক্তিযোদ্ধা আল মাহমুদ
আমরা আমাদের ব্যক্তিগত জীবনে অনেকই নিজেকে সৎ বলে দাবী করে থাকি। সততা আসলে কি হয়তো আমরা তা ভালভাবে না বুঝেই নিজেকে বা অন্য কাউকে সৎ বলি বা মনে করি। সততাকে প্রত্যকেই পৃথক পৃথক ভাবে চিন্তা করে থাকে। মানুষের জীবনে সততা একটি উৎকৃষ্ঠ মানবিক ও চারিত্রিক গুণ এবং একটি অন্যতম আদর্শ। সততা অর্থ সাধুতা,বিশ্বস্ততা, ভদ্রতা, শিষ্ঠাচারীতা, বিনয়ী, নম্রতা, দায়িত্বশীলতা, মিথ্যা পরিহার করা, ন্যায় পরায়নতা, অন্যের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া, সুবিচার করা,ভাল কাজ করা,নিঃস্বার্থ ভাবে মানুষের উপকার করা, সুচিন্তা করা, ভাল কাজ করা ইত্যাদি হলো অন্যতম। সততা মানে শুধু আর্থিক ক্ষেত্রে সৎ হওয়াকে বুঝায় না আারও অনেক ক্ষেত্র রয়েছে। যে ক্ষেত্রগুলো অবশ্যই পরিপূর্ণ হতে হবে যদি কেউ নিজেকে একজন সৎ মানুষ হিসেবে দাবী করে।
একজন মানুষ ব্যক্তিগত ভাবে সততার দাবীদার কিন্তু তিনি কোন অসৎ কাজে প্রতিবাদ ও বিরোধিতা করেন না, হকদারের হক আদায় করেন না, অংশিদারকে তার ন্যায্য অংশ বুঝিয়ে দেন না, আমানত নষ্ট করেন, নিজ দায়িত্ব কর্তব্য পালনে অবহেলা ও সদা মিথ্যা বলতে অভ্যস্ত তাকে সৎ বলা যাবে না। কে কতটুকু সৎ তা সে নিজেই ভাল জানেন। কারণ ইংরেজিতে একটি কথা আছে Examinee knows better than the examiner. সুতরাং কেউ সৎ কাজ করলো নাকি অসৎ কাজ করলো তা তিনি ছাড়া অন্য কেউই অতটা বুঝবে না। একটি রাষ্টের সরকার প্রধান,রাষ্টপতি, প্রধানমন্ত্রী, প্রধান বিচারপতি বা কোন অফিসের প্রধান তাঁরা যদি দেশের প্রচলিত আইনানুসারে তাঁদের উপর অর্পিত দায়িত্ব ও কর্তব্য সঠিকভাবে পালন করতে ব্যর্থ হন তাহলে তাঁরা নিজেদেরকে সৎ দাবী করতে পারেন না যদি তাঁদের মধ্যে সততার মুল উপাদান এর অভাব থাকে।
উদ্দেশ্যপূর্নভাবে যোগ্যতা বিবেচনা না করে দলীয় লোকজন, আত্মীয় স্বজন, ছেলে মেয়ে, ভাই বোন দেরকে মন্ত্রী,এম,পি, বড় বড় পদে মনোনয়ন, নিয়োগ দেওয়া সুযোগ করিয়ে দেন বা আর্থিক সকল সুযোগ সুবিধা প্রদান করেন ও স্বজনপ্রীতি করেন তবে তা রীতিমত অসৎ কাজ।কারণ শুধু ব্যক্তিগত নয় একটা রাষ্ট্রে সততা প্রতিষ্ঠিা করা, জনগনের আমানত, রাষ্ট্রের তহবিল সঠিকভাবে ব্যয় করা, নিজ বা দলীয় স্বার্থে বা অন্য কোনভাবে মানুষের কল্যানে আসে না এমন কোন কাজে ব্যয় না করা নিশ্চিত ভাবে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের নীতিগত ও আইনগত দায়িত্ব ও কর্তব্য। সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারী যদি আইন গত ভাবে তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথ ভাবে পালন না করে কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর কাজে ব্যস্ত হন তা হলে সেটা অসততা এবং যিনি তার ব্যক্তিগত স্বার্থে সরকারি কর্মকর্তা, কর্মচারী দের ব্যবহার করাবেন সেটাও তার অসততা। বর্তমানে প্রতিটি সরকারি অফিসে সুন্দর করে সাইন বোর্ড ঝুলিয়ে
তাতে লেখা হয়েছে ” আমার অফিস দুর্নীতি মুক্ত।” অর্থাৎ ঐ অফিসের কেউই দুর্নীতি করে না। কিন্তু দেখা যায় ঐ অফিসের প্রধান সহ অফিসের প্রায় সকলেই দুর্নীতির সহিত ওতোপ্রোতো ভাবে জড়িত যা সকলেই অবগত ও অনেকই ভুক্তভোগী। ঘুষ ব্যতিরেকে কোন অফিসে বিশেষ করে সরকারি অফিসে কোন কাজ হয় না সে ব্যপারে দেশের প্রায় সকলেই জ্ঞাত ও অনেকের তিক্ত অভিজ্ঞতাও রয়েছে। কাজেই সহজেই অনুমেয় সততা কথাটি বর্তমানে বই পুস্তকে লেখা থাকলেও বাস্তবে অনুপস্থিত। কাজেই
“আমার অফিস দুর্নীতি মুক্ত “
এরূপ সাইন বোর্ড ঝুলানো টা জনগনের সঙ্গে প্রতারণা ছাড়া আর কি হতে পারে ? লিখে রেখেছেন আমার অফিস দুর্নীতি মুক্ত অথচ নিয়ন্ত্রনহীনভাবে দুর্নীতি করে যাচ্ছেন এই দ্বিমুখি আচরণ কেন। হয়তো তাদের ধারনা দেশের মানুষ অবোধ তারা কিছুই বুঝে না।
অফিসে না গিয়ে কাজ ফাঁকি দিয়ে এবং কয়েক দিন পর পর গিয়ে হাজিরা খাতায় সারা সপ্তাহ বা মাসের স্বাক্ষর একদিনে করা,কাজ না করে কাগজ পএ ঠিক করে টাকা বেহাত করা,কম মূল্যের জিনিস বেশি মূল্য দেখিয়ে ভাউচার করে টাকা হাতিয়ে নেয়া এবং মানুষকে নানা ভাবে হয়রানি করা এগুলোও সততা নয়। এমনিভাবে হাজারো উদাহরণ উপস্থাপন করা যেতে পারে।
বিভিন্ন পএ পএিকায় প্রকাশিত খবর ও বিভিন্ন সংস্থার প্রতিবেদনে এবং গনমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে দেখা যায় বাংলাদেশের সকল অফিসই দুর্নীতিতে ভরে গেছে এবং বিভিন্ন ভাবে ও কৌশলে মানুষকে অনবরত ধোকা দেওয়া ও বোকা বানানো হচ্ছে। প্রচার এক রকম কাজ অন্য রকম।অর্থাৎ কথা, প্রচার আর কাজের মধ্যে রাত দিন তফাৎ কোন মিল খোঁজে পাওয়া যায় না। সুতরাং ব্যক্তি, চাকরিজীবি, রাজনীতিবিদ, নেতাকর্মী, শিক্ষিত, অশিক্ষিত, ধনী গরীব কোথাও হাই পাওয়ারের বৈদ্যুতিক বাতী জ্বালিয়েও সততা খোঁজে পাওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
একদিন বিভিন্ন কুকর্মের সাথে জড়িত এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাঃ এর নিকট এসে বললেন তিনি ভালো হতে চান। রাসুলল্লাহ সাঃ তাকে বললেন তুমি শুধু মিথ্যা বলা ছেড়ে দাও। লোকটি বললো এটা আর এমনকি। লোকটি রাজি হয়ে গেল। সে যখনই কোন অন্যায় কাজ করতে যায় তখনই তার মনে হয় যদি কেউ জিজ্ঞেস করে তো সত্য কথাই বলতে হবে আর তাহলে সবাই জেনে যাবে যে সে অন্যায় করছে। মিথ্যা বলা ছেড়ে দিয়ে সে ভালো হয়ে গেল আর কোন অন্যায় ও অপরাধ জনক কাজ করতে পারল না।
সুতরাং সৎ হওয়ার মুল শর্ত হলো মিথ্যা না বলা।
সততার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সাঃ)।জীবনে কোনদিন মিথ্যা বলেননি। তাঁর দ্বারা কারো কোন ক্ষতি হওয়ার কোন প্রশ্ন ছিল না। সর্ব দিক দিয়ে সৎ, আদর্শবান বিশ্ব নন্দিত ও অনুস্মরনীয় মানুষ। সততা এমনি একটি মানবিক গুণ যা মানুষকে শ্রদ্ধার আসনে বসায় ও চিরকাল স্মরণীয় করে রাখে। তাই আসুন আমরা প্রিয় নবীর আদর্শ অনুস্মরণ করে মিথ্যা বলা ছেড়ে দিয়ে সততা এর আদর্শ নিয়ে ইহকাল ও পরকালের মুক্তির পথ অনুসন্ধান করি।
লেখক : কলামিষ্ট ও আইনজীবী ।