প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার তালিকা প্রস্তুতে বাঁধা ও সমাধান। বীর মুক্তিযোদ্ধা আল মাহমুদ
বীর মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। জীবন বাজী রেখে যুদ্ধ করে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছে। ৫০ বছর পার হওয়ার পরেও তাঁদের সঠিক তালিকা প্রস্তুত করা যাচ্ছে না। কিন্তু কেন করা যাচ্ছে না বিষয়টি আমাদের গভীর ভাবে ভেবে তুলেছে। যদি না পারি তাহবে আমাদের জাতীয় ব্যর্থতা ও লজ্জার। যএ কারণে করা যাচ্ছে না আমার মনে হয় তার অন্যতম কারণগুলি নিম্নরূপঃ-
১। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশে ফিরে এসে কে মুক্তিযোদ্ধা তার সংজ্ঞা দিলেন এবং মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যানের জন্য ব্যবস্থা করে দিলেন। অথচ সেই সংজ্ঞা অকারণে পরিবর্তন করে নুতন সংজ্ঞা দেওয়া হলো এবং মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যান এর স্থলে সব লুটপাট হয়ে গেল ও বিতর্কের সৃষ্টি করা হলো যআর রেশ একখনও চলছে।
২। বঙ্গবন্ধুর দেওয়া সংজ্ঞা পরিবর্তন করে নুতন করে সংজ্ঞা দিয়ে সুবিধাবাদিদের সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে এবং তাতে জটিলতার সৃষ্টি করা হয়েছে। এখন তা জটিলতর হয়েছে।যারা প্রশিক্ষণ না নিয়ে অস্ত্র হাতে যুদ্ধে অংশ না করে শুধু সহযোগিতা করেছে তাদেরকে মুক্তি যোদ্ধা হিসেবে একাকার করে তালিকা ভুক্ত করা হয়েছে। যারা বেতন ভুক্ত তাদেরকে ও তালিকা ভুক্ত করা হয়েছে। অথচ বঙ্গবন্ধু তাদেরকে সুস্পষ্ট ভাবে মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞাভুক্ত করেননি।
৩। সার্টিফিকেট, লালমুক্তি বার্তা, গেজেট ইত্যাদি কে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই এর ভিত্তি হিসেবে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। অথচ জামুকা থেকে অনেক ব্যক্তিকে ঐসকল সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়েছে যারা আসলে মুক্তিযোদ্ধা নয়। ইতিমধ্যে কিছু অসাধু ব্যক্তি সনাক্তও হয়েছে। নিরপেক্ষ ভাবে যাচাই বাছাই করতে পারলে সব বেরিয়ে আসতো।
৪। প্রচুর দায়িত্ব শীল সরকারি কর্মকর্তারাও
অন্যায় প্রভাব খাটিয়ে মুক্তিযোদ্ধা না হয়ে ও ভুঁয়া সার্টিফিকেট সংগ্রহ করে মুক্তিযোদ্ধা তালিকার নাম উঠিয়েছে এবং সকল সুযোগ সুবিধা হাতিয়ে নিচ্ছে। সরকারি সচীর পর্যায়ের কয়েকজন ভূয়া সনাক্ত হয়েছে কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে তেমন কোন আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে ঐ রকম আরও রয়ে গেছে। সঠিকভাবে ও নিরপেক্ষ ভাবে যআচাই বাছাই করতে পারলে সব সনাক্ত করা সম্ভব হত।
৫। অন্যায় ভাবে যারা মুক্তিযোদ্ধা না হওয়া স্বত্যেও মুক্তিযোদ্ধা সাজলো এবং যারা সাজালো তাদের কাউকেই কোন জবাব দিহি করতে হয়নি ও তাদের বিরুদ্ধে বাস্তবে কোন শান্তিমুলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। ফলে অন্যায় করার প্রবনতা বৃদ্ধি পেয়েছে বহুগুণে। তারা আজও তাদের কুকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে।
৬। ভুয়া সার্টিফিকেট প্রদানকারী, গ্রহণ কারী এবং অন্যায় সুবিধা ভোগকারী কাউকেই আইনের আওতায় আনা হয়নি। ফলে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার তালিকা প্রস্তুতের কাজ বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছে।
৭। কতিপয় রাজনৈতিক দলের নেতারাও একই কাজ করে তাদের নাম তালিকাভুক্ত করেছেন এবং তারাই আবার যাচাই বাছাই কালে নেতৃত্বও দিচ্ছেন। অদ্ভুত ব্যাপার।
৮। কথিত যাচাই বাছাই করছেন ঐব্যক্তিরা যারা ভুঁয়া ব্যক্তিদের নাম লাল মুক্তি বার্তায় ও গেজেটে তুলেছেন এবং জাল ও ভুয়া সার্টিফিকেট দিয়েছেন। যে কারণে সু্স্ঠু ও নিরপেক্ষ যাচাই বাছাই হচ্ছে না সম্ভব ও নয়। ঐসকল স্বার্থান্বেষী ব্যক্তিরা দুর্নীতি করে রাজাকারকেও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকায় নাম লিখে দিয়েছেন। অন্য দিকে অনেক প্রকৃত মুক্তি যুদ্ধাদের নাম তালিকায় না উঠিয়ে বাদ দিয়ে দিয়েছেন।
৮। যতবার যাচাই বাছাই করা হয়েছে ততবারই দুর্নীতিবাজরা নিজেদের অপকর্ম সঠিক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার অকৌশল গ্রহণ করেছে এবং আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছে। যাচাই বাছাই কার্যক্রম কোন নিরপেক্ষ সংস্থা বা ব্যক্তি দ্বারা করা হয়নি।ফলে স্বজনপ্রীতি, দলপ্রীতি, আত্বীয়প্রীতি এই সকল বিষয় স্থান পেয়েছে বেশী। কখনো যাচাই বাছাই নিরপেক্ষ ভাবে হয়নি।
৯। তাই মুক্তিযোদ্ধার সঠিক তালিকা প্রস্তুত করতে হলে যাচাই বাছাই কারি নিরপেক্ষ হওয়ার কোন বিকল্প নেই এবং তা করতে হবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কতৃক ১৯৭২ সালে প্রদত্ত সংজ্ঞা অনুসারে। নিরপেক্ষ যাচাই বাছাই কারী হিসেবে সেনা বাহিনীকে দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে।
তাহলে ই শুধু প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার তালিকা প্রস্তুত করা সম্ভব হবে।
বিষয়টির প্রতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।