ডাক্তার সংকটে অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্স ২৯ জনের স্থলে আছেন ১০ জন

0

যশোর প্রতিনিধি : ৫০ শয্যা বিশিষ্ট যশোরের অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। নেই কোন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার। ২৯ জনের মধ্যে ১০ জন ডাক্তার দিয়ে চলছে চিকিৎসা ব্যবস্থা। ডাক্তার সংকটের কারণে অনেক রোগী ছুটছেন বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে।

২৪৭.১৯ বর্গ কিলোমিটার আয়তন বিশিষ্ট অভয়নগর উপজেলায় রয়েছে একটি প্রথম শ্রেণির পৌরসভা ও ৮টি ইউনিয়। মোট ১২১টি গ্রামে জনসংখ্যা প্রায় তিন লাখ। জেলার গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা হওয়ায় সরকারি এ হাসপাতালের জরুরী বিভাগে প্রতিদিন একশ থেকে দেড়শ এবং বহির্বিভাগে তিনশ থেকে সাড়ে তিনশ রোগি সেবা নিয়ে থাকেন। অতিরিক্ত রোগি সামলাতে ১০ জন ডাক্তারকে প্রতিদিন হিমশিম খেতে হয়। রোগির চাপ ও বিশেষজ্ঞ ডাক্তার না থাকায় অনেক রোগিকে দালাল চক্র ফুসলিয়ে বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পাঠিয়ে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

সরেজমিনে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা গেছে, পরিচ্ছন্ন পরিবেশে সেবা গ্রহণের অপেক্ষায় জরুরি ও বহির্বিভাগে রোগিদের লম্বা লাইন। বেড সংখ্যার থেকে রোগি বেশি হওয়ায় অনেক রোগিকে বারান্দায় রেখে চিকৎসা দেওয়া হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞ ডাক্তার না থাকায় আধুনিক অপারেশন থিয়েটার বা ওটি বন্ধ রাখা হয়েছে। পুরুষ, মহিলা, প্রসূতি ও করোনা রোগিদের জন্য পৃথক ওয়ার্ড রয়েছে। ছোটখাটো অপারেশন, এক্সরে, ইসিজিসহ বিভিন্ন পরীক্ষানিরীক্ষার ব্যবস্থা সচল রয়েছে।

একজন ঠিকাদারের মাধ্যমে রোগীদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা রয়েছে। সরকারি ওষুধেরও ব্যবস্থা রয়েছে। চিকিৎসা নিতে এসে ফিরে যাওয়া গুয়াখোলা গ্রামের আলমগীর হোসেন বলেন, ‘বিশেষজ্ঞ ডাক্তার না থাকায় তার স্ত্রীকে নিয়ে খুলনায় যেতে হচ্ছে। তিনি সরকারি হাসপাতালে ডাক্তার সংকট সমাধানের দাবি করেন।’

সুন্দলী ইউনিয়নের বৃদ্ধ মলয় কুমার বলেন, ‘গ্রাম থেকে সরকারি হাসপাতালে এসে হাড়ের ডাক্তার খুঁজে পেলাম না। এ বয়সে যশোর-খুলনায় যাতায়াত করা যেমন কষ্টের তেমন খরচের। কবে এক ছাদের নিচে সব সেবা পাবো; এমন প্রশ্ন করে তিনি চলে যান।’

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আলিমুর রাজিব বলেন, ‘জনবল সংকট ও বিশেষজ্ঞ ডাক্তার না থাকায় অনেক রোগি সেবা না পেয়ে অন্যত্র চলে যায়। কর্তব্যরত ১০ জন ডাক্তারের মধ্যে আরএমওকে প্রশাসনিক কাজ এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে (ইউএইচএফপিও) সার্বক্ষণিক তদারকির কাজ করতে হয়। বাকি ৮ জন ডাক্তারের মধ্যে আবার তিনজনকে করোনা ইউনিটে কাজ করতে হয়। এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ১৫৭ পদের মধ্যে জনবল রয়েছে ১০৫ জন। যে কারণে অনেক সমস্যার সৃষ্টি হয়’।

তিনি আরো বলেন, ফিল্ড স্টাফ ৫৭ জনের মধ্যে ৩২ জন, নার্স ২৮ জনের মধ্যে ২৬ জন, সাপোর্ট স্টাফ ২৪ জনের মধ্যে ১৭ জন, ফিজিশিয়ান ১৯ জনের মধ্যে ৯ জন, মেডিক্যাল টেকনোলজি ৯ জনের মধ্যে ৭ জন রয়েছেন। ডেন্টাল সার্জন একজন নেই, এএমসি একজন নেই এবং অন্যান্যে কাজের সাথে জড়িত ১৮ জনের মধ্যে রয়েছেন ১৩ জন। ৫২টি পদে এখনও জনবল সংকট রয়েছে। উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র রয়েছে তিনটি এবং কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে ২৬টি। বর্তমানে ৪০ ধরণের ওষুধ মজুদ রয়েছে।

সার্বিক বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এসএম মাহমুদুর রহমান রিজভী জনবল সংকটের কথা স্বীকার করে জানান, এ ব্যাপারে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। জনবল সংকটের কারণে তিনিসহ অন্যান্য ডাক্তারদের পরিশ্রম বেশি হলেও হাসপাতালের প্রতি এলাকাবাসীর সুনজর রয়েছে। যে কারণে স্থানীয় ব্যবসায়ী, জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সহযোগিতায় একটি অত্যাধুনিক অ্যাম্বুলেন্স পেয়েছেন।

বর্তমানে হাসপাতালে দুটি অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে। করোনা রোগিদের জন্য ২৯টি কনসেনট্রেটর মেশিন, ৪০টি অক্সিজেন সিলিন্ডারসহ বিভিন্ন সরঞ্জামাদি পেয়েছেন। বিশেষজ্ঞ ডাক্তারসহ অন্যান্য পদগুলো সচল হলে প্রতিদিন অনেক রোগি সেবা নিতে পারবে।

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.