মনোহরদীর তিন লক্ষ মানুষের জন্য নেই কোন মেডিকেল অফিসার

0

সাইফুর নিশাদ মনোহরদী, নরসিংদী প্রতিনিধি : মনোহরদীতে ১২টি ইউনিয়নের এক বিশাল জনপদের চিকিৎসার জন্য কোনো ডাক্তার নেই। ফলে দূরবর্তী জনপদের মানুষের নির্ভরতা কেবল হাতের কাছের উপ-সহকারীতে। কোথাও আবার তাও নেই। ফলে প্রায় ৩ লাখ মানুষের চিকিৎসার সুষ্ঠু চিকিৎসা ব্যবস্থা বিঘ্নিত হচ্ছে।

নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলায় ১টি পৌরসভা ও ১২টি ইউনিয়ন রয়েছে। এ সবের মধ্যে মনোহরদী পৌরসভা, নিকটবর্তী শুকুন্দী এবং চন্দনবাড়ী ইউনিয়নের রোগী সাধারন চিকিৎসার জন্য মনোহরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দ্বারস্থ হতে পারেন। বাদবাকী ১০টি ইউনিয়নবাসী চিকিৎসার জন্য কোন সুবন্দোবস্ত নেই। নেই কোন ডাক্তার। পৌর এলাকার শতাব্দী প্রাচীন ব্রাডলী বার্থ চ্যারিটেবল ডিসপেনসারিটিতে একজন উপ-সহকারী আছেন। মেডিক্যাল অফিসার তথা ডাক্তার নেই এখানে প্রায় ২বছর ধরে। কৃষ্ণপুর মনোহরদীর নব গঠিত একটি ইউনিয়ন। এখানে কোন ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রই নেই, নেই মেডিকেল অফিসার, উপ-সহকারী কেউ। ১২ হাজার জনগোষ্ঠীর এ ইউনিয়নটি রীতিমতো একটি চিকিৎসা বঞ্চিত জনপদ হিসেবে গন্য। তার পার্শ্ববর্তী ইউনিয়ন বড়চাপা। ৪৩ হাজার মানুষের চিকিৎসার জন্য এখানে একটি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র আছে। তবে ডাক্তার নেই অনেকদিন।

সব ধরনের সুযোগ সুবিধে থাকা সত্বেও এখানকার বাসিন্দারা সুচিকিৎসা বঞ্চিত রয়েছেন। এখানে একজন উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার দিয়ে স্বাস্থ্য সেবার কাজ চলছে। গোতাশিয়া, লেবুতলা ও দৌলতপুর ইউনিয়নেরও একই অবস্থা। ইউনিয়নগুলোতে উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ভবন আছে, ডাক্তার নেই অনেক দিন। ফলে এলাকাবাসীর চিকিৎসা সেবায় নির্ভরশীলতা উপজেলা সদরের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। এতে তাদের যেমন যাতায়াতের ভোগান্তি পোহাতে হয় তেমনি আবার বাড়তি পয়সাও খরচ হয়ে থাকে। উপজেলার খিদিরপুর,চমান্দালীয়া ও একদুয়ারিয়া ইউনিয়নের অবস্থাও বেশ সঙ্গীন। ইউনিয়গুলোতে উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রও নেই,ডাক্তারও নেই। ফলে এ জনপদের বাসিন্দাদের ভোগান্তি সীমাহীন। উপজেলার কোন ইউনিয়নেই কোন ডাক্তার না থাকায় একটি বিস্তির্ণ জনপদের প্রায় ৩ লাখ মানুষের সুষ্ঠু চিকিৎসার জন্য একমাত্র নির্ভরতা মনোহরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। সীমিত সংখ্যক ডাক্তার দিয়ে এখানেও রয়েছে জোড়াতালির চিকিৎসা।

প্রতিদিন উপজেলার দূরবর্তী অঞ্চল থেকে আসা প্রচুর রোগীর চাপ হয় এখানকার আউটডোরে। এ সকল রোগীর ৯৫ ভাগই মহিলা। মাত্র ৩ জন চিকিৎসক একটি মাত্র কক্ষে গাদাগাদি করে বসে চিকিৎসা দিতে দেখা যায় এখানে।সংকীর্ণ পরিসরের ভেতর মহিলা রোগীদের বিরাট লম্বা ভীড় হয় প্রতিদিন। অথচ দূরবর্তী ইউনিয়নগুলোতে প্রয়োজনীয় ডাক্তারের ব্যবস্থা করলে এখানে এতো চাপ এড়ানো যেতো। এতে ১২টি ইউনিয়নের বিশাল জনগোষ্ঠীর যেমন ভোগান্তির যেমন নিরসন হয়। তেমনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও সুষ্ঠু চিকিৎসা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো। এ ব্যাপারে বড়চাপা ইউপি চেয়ারম্যান উপাধ্যক্ষ সুলতান উদ্দীনের সাথে আলাপ হলে তিনি বড়চাপা উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে অবিলম্বে ডাক্তার নিয়োগের দাবী জানিয়েছেন।

একই দাবি চরমান্দালীয়া ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল কাদির ও কৃষ্ণপুর ইউপি চেয়ারম্যান এমদাদুল হক আকন্দ ও একদুয়ারিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আনিসুজ্জামান মিটুলের। তারা তাদের ইউনিয়নের চিকিৎসা দুর্ভোগ লাঘবের দাবি জানান। নরসিংদীর সিভিল সার্জন ডা. নুরুল ইসলামের সাথে এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হয়। তিনি জানান, এ মুহুর্তে ডাক্তারের সংকট রয়েছে। বিসিএসের নতুন নিয়োগ থেকে ডাক্তারদের শূন্যতা পূরনে সব রকম চেষ্টা করবেন বলেও জানান তিনি।

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.