মায়াজালে এখনো আমি । আনান্নিয়া আন্নি

0

পর্বঃ ০৮

রাত এগারো টা বেজে আটত্রিশ মিনিট। মেজো কাকি উঠে নিজের ঘরে চলে গেলো, ছোট কাকি সব দরজা জানালা চেক করে কুমু আর ঝিলি কে ঘুমিয়ে যেতে বললো; এরইমধ্যে হসপিটাল থেকে কোনো খবর আসলে জানাবে, এই বলে ছোট কাকি ও নিজের ঘরে চলে গেলো।

কুমু আর ঝিলি ও নিজের ঘরে গিয়ে বসলো, যদিও ছোট ফুপু-র জন্য তাদের চিন্তা হচ্ছে ঠিকই কিন্তু ডায়েরি-র বাকি অংশ টা পড়ার জন্য ও তাদের মনটা ছটফট করছে এটা বলতেই হবে।
হসপিটাল থেকে ভালো কোনো খবর পাওয়ার আশা নিয়ে আবারও ডায়েরি খুলে বসলো কুমু আর ঝিলি…

(১৭ই অক্টোবর)
আজ তৃতীয় মেসেজ টা পাওয়ার পর ফোন করলাম সেই নাম্বারে ;
ফোন রিসিভ করতেই আমি সালাম দিয়ে কথা শুরু করলাম, কিন্তু ফোনের ওপারের ভদ্রলোক সালামের জবাব দিলেননা, তাতে অবশ্য আমার তাকে নিতান্তই একজন অভদ্রলোক বলে মনে হয়েছিল।

এই ঝিলি… ছোট ফুপু কি লিখেছে দেখ?
নীড় মামা তো সালামের জবাব দেবেনা এটাই স্বাভাবিক, কারন নীড় মামা তো হিন্দু ছিলো।

কুমু-র কথা শুনে ঝিলি হকচকিয়ে উঠে বসলো;
মানে কি বলছিস তুই? তারমানে কি ঐ হিন্দু ছেলেটার সাথেই খালার সম্পর্ক হয়েছিল? তাও আবার না জেনে?
জলদি পড়তো পরের পাতাটা?

হ্যা পড়ছি…

যাইহোক তাকে জিজ্ঞেস করলাম কে আপনি?

তিনি বললেন আবারও পরিচয় দিতে হবে?

মানে? আমরা কি কোনোভাবে আগেও পরিচিত হয়েছিলাম?

পরিচিত তো হয়েছিলাম অল্প স্বল্প। আমি তবুও আপনাকে যতটুকু জানি আপনি আমাকে ততটুকু ও জানেননা এখনো।

ঠিক বুঝতে পারছিনা আপনার কথা।

বুঝতে না পারারই কথা। আচ্ছা আমার তুলে দেওয়া ছবি গুলো কেমন হয়েছিল বলুনতো?
মুখটা গোমড়া করে না রাখলে আরো বেশি সুন্দর দেখাতো কিন্তু!

বুঝতে বাকি রইলোনা এই সেই ঝিলপাড়ের ছেলেটা, আমার সন্দেহ টাই ঠিক ছিলো।

কেনো এমন করছেন আপনি? আমার সাথে প্লিজ এরকম করবেননা, এমনিতেই আমার জীবনে ঝামেলা ঝঞ্ঝাট এর শেষ নেই, নতুন করে আর ঝামেলা করবেননা দয়া করে।

কিসের এতো ঝামেলা আপনার জীবনে?

আপনাকে কেনো সেসব বলতে যাবো বলুনতো? আপনার সাথে আমার কি সম্পর্ক যে আমার ব্যাক্তিগত বিষয় বলবো আপনাকে?

আমি আপনার ব্যাক্তিগত বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে চায়নি,শুধু আপনার ভেতরের চাপা কষ্টগুলো কি বা কেনো সেটুকুই কেবল জানবার ইচ্ছে প্রকাশ করেছি।
আমি মনে করি কারো ভেতরের কষ্টগুলো শুনে তাকে একটু হালকা করতে কোনো সম্পর্কের প্রয়োজন হয়না,যার কাছে আপনি দিনশেষে সারাদিনের ব্যাস্ততা টুকু উগড়ে দিতে পারেন,যার কাছে আপনি নিজেকে ভেঙেচুরে উপস্থাপন করে একটা ভাষাহীন মানসিক শান্তি অনুভব করবেন সেই মানুষ টার সাথে আপনার বলার মতো সম্পর্ক না থাকলেই বা কি বলুনতো? একটা নামহীন সম্পর্কে থেকে যদি কেউ ভালো থাকে তবে সেটাই বা দোষ কিসে?

আর কোনো উত্তর দিতে পারিনি ছেলেটার কথার।কিছু না বলেই কল কেটে দিলাম, কি একটা মনে করে যেনো আবার সাথে সাথে ইমাদ কে কল করলাম, ফোন রিসিভ করলোনা বলে আর কিছু বলা হলোনা, কিই বা বলতাম, কেনো ফোন করেছি সেটা তো আমি নিজেও জানিনা,রিসিভ না করে বরং ভালোই হয়েছে।

(১৮ই অক্টোবর)
আজ কুমু কে আনতে স্কুলে গিয়েছি, চারটে বাজতে এখনো দশমিনিট বাকি আছে, দাঁড়িয়ে আছি স্কুলের গেটে। এমন সময় পেছন থেকে কেউ বলে উঠলো;
কেমন আছেন অপ্সরা?

পেছন ফিরে তাকাতেই দেখলাম, এ আর কেউ নয় নীড়। তা ছাড়া আর কেই-বা হবে।
ওর কথার কোনো জবাব দিলামনা।

ছেলেটা আবারও বলে উঠলো;
চা খাবেন? চা খেলে মন ভালো থাকে।

আমি ওর কথা শুনে একটু এগিয়ে গিয়ে দাঁড়ালাম।ও আবারও আমার কাছে এসে দাঁড়িয়ে বললো স্কুল ছুটি হতে এখনো প্রায় দশমিনিট মতো বাকি রয়েছে,হয়ে যাক না এক কাপ চা?

দেখুন.. এভাবে যেখানে সেখানে অযাচিতভাবে আমার সাথে কথা বলতে আসবেননা, এগুলো আমার একদম পছন্দ নয়।

কথাটি বলে বোধহয় ছেলেটিকে আমি হালকা কষ্ট দিয়ে ফেলেছি,কেমন চুপ হয়ে গেলো আর কোনো কথা বললোনা।

স্কুল ছুটি হলে কুমু আর মহুয়া একসঙ্গে বেড়োলো;ওরা আমাদের দুজনকে দেখে বেশ খুশি হয়েছে। কুমু আমার কাছে এসে বললো ফুপু তোমার সাথে পরিচয় করিয়ে দেই;
ইনি হলেন মহুয়া-র মামা, উনার নাম নীড়। তোমাকে বলেছিলাম না?

কুমু-র কথায় আরেকবার আমরা দুজন দুজনকে একদম না চেনার ভান করে পরিচিত হলাম ওদের সামনে।

বাসা একই রাস্তায় হওয়ায় চারজনেই হেঁটে এগোচ্ছিলাম বাস স্ট্যান্ড অব্দি। মহুয়া-র বায়না সে ফুচকা খাবে,সাথে কুমু ও। দুজনের আবদার রাখতে ভদ্রতার খাতিরে বাচ্চা দুটের সাথে বসলাম ফুচকা খেতে।

তারপর …..

চলবে♥️

 

আপনি এগুলোও দেখতে পারেন

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.