মোনায়েম সরকার বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নে নিরলস যাঁর প্রচেষ্টা
হীরেন পণ্ডিত : বঙ্গবন্ধু বাংলার মানুষের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। এই প্রেরণাবোধ মোনায়েম সরকারের চেতনায় দারুণভাবে নাড়া দেয়। নিজেকে উৎসর্গ করেন মানুষের কল্যাণে। তাঁর নিজের জীবনে কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শকে বুকে ধারণ করে তাঁর এই ত্যাগের দৃষ্টান্ত সবার জন্য শিক্ষণীয়। বঙ্গবন্ধুর ক্ষুধা-দারিদ্রমুক্ত অসাম্প্রদায়িক সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন নিরন্তর।
মোনায়েম সরকার একজন স্থির, বিচক্ষণ, নির্লোভ এবং সৎ রাজনীতিকের প্রতিভূ। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশের রাজনীতির সকল আন্দোলনে যেমন ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ এর যুক্তফ্রন্ট গঠন, ১৯৬২ শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৯ গণঅভ্যূত্থান, ১৯৭০ এর নির্বাচন, ১৯৭১ স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে আজ পর্যন্ত সকল স্থানে তাঁর অনিবার্য উপস্থিতি ছিল। কৈশোরের ১৯৫২ সালে ভাষা-আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তাঁর প্রগতিশীল রাজনৈতিক আন্দোলনে অংশগ্রহণের যে সূচনা, তা আজকের বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নময় সোনার বাংলাদেশের মাটিতে অনেক শক্তভাবে প্রোথিত।
বাংলাদেশের প্রগতিশীল রাজনৈতিক আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী হিসেবে আজন্ম অকৃতদার এই মানুষটির অবদান ছিল নিঃশঙ্ক। জীবনে চলার পথে তাঁর বিচিত্র অভিজ্ঞতা, সংগ্রামী দক্ষতা, সততা ও দৃঢ়তাই তাঁর প্রগতিশীল ভাবনার একমাত্র অবলম্বন। জীবনে কোনো কিছু চাওয়ার নেই, পাওয়ার নেই- তবু গণমানুষের কল্যাণে নিবেদিত এই মানুষটি আজও বাংলাদেশের স্থপতি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর প্রতি অকুণ্ঠ ভালোবাসা, তাঁর আর্দশই জীবনের শেষ পাথেয় এবং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত কর্মে অটল থাকবেন বলে তাঁর স্থির বিশ্বাস।
রাজনীতিবিদ, লেখক, কলামিস্ট মোনায়েম সরকারের বয়স বাড়ছে না, থেমে আছে এক জায়গায়, তিনি চিরসবুজ, চির যুবক, আটাত্তর তাঁর কাছে একটি সংখ্যা, বয়স নয়। ১৯৪৫ সালের ৩০ মার্চ পৃথিবীর আলো দেখেছিলেন। এখনো প্রতিদিন ভোর হয়, বিকেল গড়িয়ে রাত, এভাবেই দিন যায়, মাস যায়, বাঙালি জাতির কল্যাণে ব্যস্ত থাকেন সব সময়। কিন্তু বার্ধক্যের কোনো ছাপ তাঁর ভেতর দেখিনা, তাঁর চিন্তায়, মেধা মননে কিংবা তাঁর কর্মে। মোনায়েম সরকারের জীবনে আলস্যের কোনো অবকাশ নেই। পরিবার বলতে তাঁর সংগঠনই সবচেয়ে বড় পরিবার। জীবন ও রাজনীতি মিলে একাকার হয়ে গেছে তাঁর জীবনে।
তাঁর লেখার সাথে সেই ১৯৮৬ সালের শেষের দিকেই পরিচয়, সবে মাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবীন এক ছাত্র হিসেবে এসেছি ঢাকায়। দীর্ঘদিন লেখার সাথে পরিচয় থাকলেও যোগাযোগ হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যাণে অনেক পরে। বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন ফর ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ পরিদর্শন করার পর, আগ্রহ বাড়ছে প্রতিনিয়ত, যত দেখি ততই মুগ্ধ হই, দেশ নিয়ে ভাবনা, রাজনীতি নিয়ে ভাবনা, রাজনীতির জ্ঞানগর্ভ বিশ্লেষণ, প্রগতিশীল রাজনীতির অগ্রযাত্রা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় নতুন প্রজন্মকে শাণিত করার নিরলস প্রচেষ্টা সত্যিই বিমোহিত করে আমাদের। জাতির যে কোন ক্লান্তিলগ্নে বীরদর্পে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং এখনো সবসময় দিয়ে যাচ্ছেন। ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের হাল ধরার জন্য বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে দলের সভাপতির দায়িত্ব দিয়ে ১৭ মে ১৯৮১ সালে স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে যাঁরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন তিনি তাঁদের অন্যতম। জননত্রেী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের কারণেই আজ বাংলাদেশের দৃপ্ত পদচারণা মাটি থেকে মহাকাশে। উন্নয়নের রোল মডেল। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রাতিষ্ঠায় নতুন মাত্রা পেয়েছে।
স্বাধীনতাবিরোধী দেশি-বিদেশি চক্রের হাতে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পর কালো অন্ধকার গ্রাস করেছিল বাংলাদেশকে, সেই অন্ধকার তাড়াতে আলোর মশাল জ্বালিয়েছিলেন তিনি তাঁদের সামনের সারিতে ছিলেন। সে মশাল, প্রাথমিক সংকট- সীমাবদ্ধতার পর দিকে দিকে আলোকিত করতে থাকে, শুরু হয় বাঙালির ও বাংলাদেশের রাহু মুক্তির পালা। সব আবর্জনা দূর করতে প্রভাতে যেমন বাঙালি একাকার হয়, প্রতিশ্রুতিতে সমৃদ্ধ হয়, তেমনি এক শুভ প্রতিশ্রুতির বাতাস বইতে দেখা যায় জননেত্রী শেখ হাসিনার দেশে ফেরার দিন ১৯৮১ সালের ১৭ মে থেকে।
মোনায়েম সরকারের সাংগঠনিক শক্তির সাথে পরিচিত হই সব সময়। নেতৃত্বদানের মাধ্যমে সবাইকে উদ্বুদ্ধ করার সেই এক অসাধারণ ক্ষমতা লক্ষ্য করি তাঁর মাঝে। কবি শামসুর রাহমানের ওপর মৌলবাদী জঙ্গিদের আক্রমণের প্রতিবাদের কর্মসূচি গ্রহণের জন্য আয়োজিত সংস্কৃতিসেবীদের সভা এমন অসংখ্য প্রতিবাদ সভায়। কক্সবাজারের রামু, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর, সুনামগঞ্জের শাল্লা, কুমিল্লার শহরের ঘটনা, পাবনার সাঁথিয়া, রংপুরের গঙ্গাছড়া, যশোরের ঋষিপাড়াসহ সাম্প্রদায়িক দুঃখজনক ঘটনাগুলোতে তাঁর মন কেঁদে উঠে, এই বাংলাদেশতো তিনি চাননি, আবার আস্থা রাখেন জননেত্রী শেখ হাসিনার ওপর এই ভেবে যে, অন্ধকার কেটে যাবে একদিন, মৌলবাদী ও ধর্মান্ধগোষ্ঠীর পরাজয় হবেই। এসব দু:খজনক ঘটনার প্রতিবাদে আয়োজন করেন সমমনাদের নিয়ে বিভিন্ন প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ সমাবেশ।
মোনায়েম সরকার দক্ষতার সঙ্গে আলোচনাকে নিয়ে আসেন সামনে। কর্মসূচি ও দায়িত্ব বণ্টনের প্রয়োজনীয় জায়গাটাতে। প্রতিটি সফল ও বড় একটি বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় শহীদ মিনারে। মোনায়েম সরকারের স্মৃতিশক্তি প্রখর। তিনি জীবন্ত এক কিংবদন্তী ও ইতিহাস। তাঁর অনেক লেখার সঙ্গে আমি পরিচিত। পত্রিকায় পড়েছি, বইতেও পড়ার সুযোগ হয়েছে। তাঁর লেখায় থাকে সমাজের একটি ছবি। থাকে দেশের চলমান রাজনীতির জানা-অজানা নানা খবর ও তাৎক্ষণিক বিশ্লেষণ। বহু ঘটনাকে তিনি নিজের মতো করে দেখেন এবং অনেক ক্ষেত্রে যুক্তিবাদী বিশ্লেষণ করেন, ভালো কাজের প্রশংসা করেন, আবার নীতিনির্ধারকদের যে কোন ভুল সিদ্ধান্তের সমালোচনামূলক বিশ্লেষণ করে সেখান থেকে উত্তরণের উপায়গুলো বলে দেন অবলীলায় যা দেশের কল্যাণে অনেক কাজে আসে।
এমন অনেক অজানা ঘটনাকে তিনি স্মরণে রাখেন, যেগুলো সমাজ ও রাজনীতিকে বোঝার জন্য সহজ উপাদান হিসেবে কাজ করে আমাদের কাছে। তাঁর কাহিনীতে ব্যক্তি অবশ্যই আছেন; কিন্তু ব্যক্তি যে প্রধান হয়ে উঠেছেন তা নয়, এবং যে ব্যক্তিটি উপস্থিত রয়েছেন তাঁর ব্যক্তিত্বটি অত্যন্ত আকর্ষণীয়। সব ঘটনারই তিনি সতর্ক দর্শক, কোথাও কোথাও আবার অনুঘটক।
আমাদের বিদ্যমান সমাজ ও রাজনৈতিক বাস্তবতাকে হৃদয় ও বুদ্ধি দিয়ে বুঝে চলেছেন প্রতিনিয়ত, আমাদের সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। বাস্তবতার এবং এর ভেতর নির্মমতা ও তাঁর ভেতরকার অন্যায়, বিশেষ করে ধনী গরিবের বৈষম্য তাঁর লেখায় জীবন্ত হয়ে উঠে। এটা বুঝেছেন এবং আমাদের বুঝতে সাহায্য করেছেন যে অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলাটাই যথেষ্ট নয়; মানুষের মুক্তি আনতে হলে যে কাঠামোগত পরিবর্তন দরকার।
মোনায়েম সরকার ইচ্ছা করলে অনেক কিছু হতে পারতেন, এবং সে ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য কাজ অবশ্যই করার কথা ছিল; কিন্তু রাজনীতিই ছিল তাঁর নেশা। পেশা যদি বলতে হয় তবে সেটাও ওই রাজনীতিই। তবে সে-রাজনীতি ক্ষমতা লাভের নয়। মন্ত্রী নয়, এমনকি সংসদ সদস্যও নয়, রাজনীতির কর্মীই রয়ে গেলেন সারাটা জীবন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, “মোনায়েম সরকার আমাদের পার্মানেন্ট সরকার, প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত আপনজন মনে করেন তাঁকে”।
মোনায়েম সরকার যেমন তত্ত্ব বুঝেছেন তেমনি বাস্তব জগতে তত্ত্বের প্রয়োগের জন্য ক্ষেত্র খুঁজেছেন। এ কারণেই প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে সার্বক্ষণিকভাবে যোগদানটা তাঁর জন্য ছিল অনিবার্য। বহু বিপদ-আপদ-দুর্যোগ-সঙ্কট সত্ত্বেও সেখান থেকে তিনি সরে আসেননি। মোনায়েম সরকারের রাজনীতি কিন্তু একেবারেই ভিন্ন ধরনের। সেটি সব সময়েই ছিল সমাজ পরিবর্তনের। ক্ষমতার লিপ্সা তাঁকে কখনোই তাড়া করেনি। তিনি সাংগঠনিক কাজ করেছেন, নেতৃত্ব দিয়েছেন অনেক সময়ে। লিখেছেন। যোগ দিয়েছেন সম্মেলনে। পত্রিকা প্রকাশ ও সম্পাদনা করেছেন।
রাজনীতিবিদ, লেখক, কলামিস্ট মোনায়েম সরকারের বিভিন্ন সময়ে লিখিত ও প্রকাশিত মোট বইয়ের সংখ্যা ১১৬ টি। বাংলাদেশের রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক সমস্য সমাজের ব্যাপক নৈতিক অবক্ষয়ের এক চিত্র তুলে ধরা হয়েছে এই বইগুলোতে। সুদীর্ঘ মুক্তিসংগ্রামের ভেতর দিয়ে আমাদের অর্জন, মহান মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার কথা, আমাদের মহান অর্জনগুলিকে প্রতিক্রিয়াশীল শক্তিকে ভূলুণ্ঠিত করার কাহিনী।
একই সঙ্গে সাম্প্রদায়িক ও প্রতিক্রিয়াশীল শক্তিকে পরাজিত করে উদার ও সেক্যুলার গণতান্ত্রিক ধারায় দেশকে পরিচালিত করার আহ্বান। লেখকের বাস্তব রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার প্রতিফলন লক্ষ্য করা যায় তাঁর লেখনিতে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে সেক্যুলার, উদারনৈতিক গণতান্ত্রিক ধারাই হলো মূলধারা এই ঐতিহাসিক সত্যটি আজ প্রতিষ্ঠিত। আজকের সমাজ ও রাজনীতির বাস্তবতায় বাংলাদেশের রাজনীতির মূলধারা প্রতিষ্ঠার জন্যে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির ইস্পাত কঠিন ঐক্যের খুব প্রয়োজন।
বাঙালি জাতির অতীত অর্জনের গৌরবময় ইতিহাস ভূলুণ্ঠিত হওয়ার প্রক্রিয়া এবং সে অর্জন পুন:প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সুস্থ গণতান্ত্রিক রাজনীতির বিষয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফলিত পদার্থবিদ্যায় এম এসসি ডিগ্রি লাভ করার পর প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে সার্বক্ষণিক কর্মী হিসেবে যোগদান করেন। বঙ্গবন্ধু নির্মমভাবে নিহত হওয়ার পর মোনায়েম সরকার বাংলাদেশে স্বাধীনতার ধারা ও মূল্যবোধ পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জনমত গড়ে তোলেন যুক্তরাজ্য ও ভারতসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে।
পঁচাত্তর পরবর্তী প্রায় ৪ বছর প্রবাসী জীবনে তিনি শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী, পি.এন. হাকসার, ভূপেন গুপ্ত, রমেশ চন্দ্র, রাজেশ্বর রাও, ডি.টি. রনধিকে, অধ্যাপক শান্তিময় রায়, গণেশ ঘোষ, মনুখ নাথ গুপ্ত প্রমুখ বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলেন। শওকত ওসমান রচিত ডায়েরি উত্তর পর্ব মুজিবনগর’ পড়লে মোনায়েম সরকারের ভূমিকা যথার্থভাবে জানা যায়। ১৭ জানুয়ারি ১৯৭৯ তারিখে ডায়েরিতে তিনি লিখেছেন; দেশাত্মবোধের সঙ্গে জীবন সংগ্রামের চিন্তাধারা এমনভাবেই মিলেছে যে বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর আর দেশে থাকতে পারেনি। এখানে সে যেন সব রাজনৈতিক রিফিউজিদের অভিভাবক হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছিলেন। অভ্যাসের জন্যে টাকা-পয়সা যোগাড় করা থেকে রাজনৈতিক প্রবাহ বজায় রাখার জন্যে কত ভাবে না নিজেকে ব্যাপৃত রেখেছিলেন।
বাংলাদেশের রাজনীতির উত্থান-পতনের একজন দক্ষ বিশ্লেষক হিসেবে তাঁর সু-লেখনী সকলের মাঝে প্রশংসিত। রাজনীতি, সমাজনীতি এবং সাংস্কৃতিক আন্দোলনের এই অগ্রপথিকের দীর্ঘায়ু কামনা করি আমরা। আমরাও বিশ্বাস করি, তিনি তাঁর শেষ দিন পর্যন্ত বাঙালি-বাংলা-বাংলাদেশের মানুষের কল্যাণে নিবেদিত থাকবেন।
১৯৭৫ এর ১৫ আগস্টের পর দেশ গভীর সংকটে নিমজ্জিত। সম্পূর্ণরূপে স্বাধীনতাবিরোধী এবং সাম্প্রদায়িক অশুভশক্তির হাতে দেশ। মোনায়েম সরকার দেশের এই অরাজকতা দূর করার লক্ষ্যে একটি প্রস্তাবনা ইন্দিরা গান্ধীর কাছে পেশ করলেন। বঙ্গবন্ধু হত্যা, জেল হত্যা, আওয়ামী রাজনীতি নির্মূলকরণের বিরুদ্ধে সমগ্র বিশ্ব জুড়ে যেখানে যত আওয়ামী লীগ অনুরাগী, রাজনৈতিক কর্মী, বুদ্ধিজীবী সাহিত্যিক আছেন তাঁরা তাদের মতো করে রাজনৈতিকভাবে সবকিছু প্রতিহত করার চেষ্টা করেন।।
১৯৮০ বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবেশ ধীরে ধীরে আওয়ামী রাজনৈতিক আন্দোলনের কারণে অসাম্প্রদায়িকতার দিকে ধাবিত হয়। আওয়ামীপন্থী নেতৃবৃন্দও তাদের ভীতিমূলক অবস্থান থেকে বেরিয়ে এসে মূল ধারার রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার চর্চায় নিবেদিত হন। কিন্তু আওয়ামী লীগের হাল ধরবে কে? এ নিয়ে ছিল প্রত্যেকের দ্বিধা। হাল ধরার কাণ্ডারি ছিল অনেকজন। তাদের অনেকেই সর্বজন শ্রদ্ধেয় ছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার নাম প্রস্তাব করা হয়। এক পারিবারিক পরিবেশে শেখ হাসিনার নাম প্রথম প্রস্তাব আকারে ভারতের রাজনীতির এক দূরদর্শী ব্যক্তিত্ব পিএন হাকসারের কাছে তুলে ধরেন মোনায়েম সরকার। শেখ হাসিনার নাম প্রস্তাব হওয়ায় তা সর্বমহলে গৃহীত হয় সর্ব সম্মতিতে।
১৯৯৬ জাতীয় নির্বাচন। নির্বাচনী কমিটি তৈরি করা হয়। যুগ্ম আহ্বায়ক- শাহ এ এম এস কিবরিয়া ও গাজীউল হকসহ আরও অনেকে। কিন্তু নির্বাচনী পরিচালনার প্রথম সারির কারিগরের মধ্যে ছিলেন- শাহ এ এম এস কিবরিয়া এবং মোনায়েম সরকার। এই কমিটির নির্বাচনী পরিচালনার দক্ষতায় ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ দেশশাসন প্রক্রিয়ায় অধিষ্ঠিত হয়। শাহ এ এম এস কিবরিয়া এবং মোনায়েম সরকার বাংলাদেশের রাজনীতি, সমাজ ও সংস্কৃতির মূলধারার গবেষণাগার বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন ফর ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ প্রতিষ্ঠা করেন। গবেষণাগারের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব আমৃত্যু পালন করেন- শাহ এ এম এস কিবরিয়া এবং প্রতিষ্ঠাতা মহাপরিচালকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন মোনায়েম সরকার।
মোনায়েম সরকারের কোন অহংকারবোধ কেউ কখনো দেখেন নি, এমন বন্ধুবৎসল ও অতিথিপরায়ণ মানুষ আমাদের সমাজে বিরল। মোনায়েম সরকারের মতো গুণী ও নির্লোভ মানুষের আমাদের সমাজে বড় বেশি প্রয়োজন, তাহলেই বাংলাদেশ আরো দ্রুত এগিয়ে যাবে।
হীরেন পণ্ডিত : প্রাবন্ধিক, গবেষক ও কলামিস্ট