পুঁজিবাজারে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগে ‘বড় ছাড়’

0

বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান পরিচালক শাকিল রিজভী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পুঁজিবাজারের জন্য এটি বেশ একটি ভালো খবর। এর ফলে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে বেশ বড় ছাড় দেয়া হয়েছে। তারা এখন পুঁজিবাজারে সরাসরি আরও বেশি বিনিয়োগ করতে পারবে।…গত সাত বছর ধরেই আমরা এই দাবিটি করে আসছিলাম। দেরিতে হলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই দাবিটি মেনেছে। তাই আমরা খুশি।’

পুঁজিবাজারের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিনিয়োগের সুযোগ বাড়িয়ে সার্কুলার জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, পুঁজিবাজারে সাবসিডিয়ারি কোম্পানির দীর্ঘমেয়াদি ইক্যুইটি বিনিয়োগসীমার বাইরে থাকবে।

মঙ্গলবার রাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই সার্কুলার জারি করে। এটি দেশের সব আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে পাঠানো হয়েছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক সভাপতি শাকিল রিজভী নিউজবাংলাকে বলেছেন, তাদের সাত বছরের দাবি পূরণ হয়েছে।

বিনিয়োগসীমা বাজারমূল্যে : সার্কুলারে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগসীমা যে শেয়ারের বাজারমূল্যেই থাকছে, সেটি আবার নিশ্চিত করা হয়। এতে বলা হয়, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পুঁজিবাজারে মোট বিনিয়োগ হিসাবায়নের ক্ষেত্রে ধারণকৃত তালিকাভুক্ত সব শেয়ার, ডিবেঞ্চার, করপোরেট বন্ড, মিউচুয়াল ফান্ড ইউনিট এবং পুঁজিবাজারের অন্যান্য নিদর্শনপত্রের বাজারমূল্য ধরা হবে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান পরিচালক শাকিল রিজভী নিউজবাংলাকে ‘গত সাত বছর ধরেই আমরা এই দাবিটি করে আসছিলাম। দেরিতে হলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই দাবিটি মেনেছে।’

বেশ কয়েক মাস ধরে শেয়ারের ক্রয়মূল্যে বিনিয়োগসীমা নির্ধারণের বিষয় নিয়ে গুঞ্জন চলছিল। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি এই নীতিতেই ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগসীমা নির্ধারণের পক্ষে। গত নভেম্বরে দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও পরে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে দুই পক্ষের বৈঠকও হয় এই বিষয়ে। এরপর একটি গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে যে, বাজারমূল্যের বদলে ক্রয়মূল্যে শেয়ারের বিনিয়োগসীমা নির্ধারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে নির্দেশনা পাঠিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। বিষয়টি বিনিয়োগকারীদের আশাহত করলেও এই সার্কুলারের অন্য যেসব বিষয় তুলে ধরা হয়েছে, সেগুলো তাদের জন্য স্বস্তিকর হতে পারে।

যে কারণে বাড়বে বিনিয়োগের সুযোগ : সার্কুলারে বলা হয়েছে নিজস্ব সাবসিডিয়ারি কোম্পানি বা কোম্পানিগুলোর প্রদত্ত ইক্যুয়িটি দীর্ঘমেয়াদি ইক্যুয়িটি বিনিয়োগ/ভেঞ্চার ক্যাপিটাল, সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি (বিডি) লিমিটেড স্টক এক্সচেঞ্জগুলোর শেয়ার ওই আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ হিসেবে গণ্য হবে না।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক আরও সিদ্ধান্ত নিয়েছে:

ক. পুঁজিবাজার কার্যক্রমে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নিজস্ব সাবসিডিয়ারি কোম্পানি বা সহযোগী কোম্পানিগুলোকে প্রদত্ত ঋণের স্থিতি;

খ. পুঁজিবাজারে কার্যক্রমে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নিয়োজিত অপর কোনো কোম্পানি বা কোম্পানিগুলোর অথবা কোনো স্টক ডিলারকে প্রদত্ত ঋণের স্থিতি ও তাদের সাথে রক্ষিত তহবিলের স্থিতি (প্লেসমেন্ট বা অন্য যে নামেই অভিহিত করা হউক না কেন);

গ. পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে গঠিত কোনো তহবিলের প্রদত্ত চাঁদাও বিনিয়োগসীমা হবে।

ভালো খবর বলছেন শাকিল রিজভী : ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান পরিচালক শাকিল রিজভী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পুঁজিবাজারের জন্য এটি বেশ একটি ভালো খবর। এর ফলে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে বেশ বড় ছাড় দেয়া হয়েছে। তারা এখন পুঁজিবাজারে সরাসরি আরও বেশি বিনিয়োগ করতে পারবে।’

তিনি বলেন, ‘গত সাত বছর ধরেই আমরা এই দাবিটি করে আসছিলাম। দেরিতে হলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই দাবিটি মেনেছে।’

এই সার্কুলারটি কীভাবে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ বাড়াবে- তার ব্যাখ্যা করে শাকিল রিজভী বলেন, ‘ধরুন, সিটি ব্যাংকের পুঁজিবাজারে ৩০০ কোটি টাকা বিনিয়োগসীমা আছে। আবার এই ব্যাংকের সাবসিডিয়ারি কোম্পানি সিটি ব্রোকারেজ হাউস বা মার্চেন্ট ব্যাংকেও এর বিনিয়োগ আছে। এই বিনিয়োগ এখন সেই ৩০০ কোটি টাকার মধ্যে পড়বে না। সেই ৩০০ কোটি টাকা কেবল পুঁজিবাজারে সরাসরি বিনিয়োগ করবে তারা।’

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সার্কুলারে অবশ্য এই দিকগুলো ব্যাখ্যা করা হয়নি। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রস্তাব মেনেই এই পরিবর্তন আনা হয়েছে। এর ফলে পুঁজিবাজারে প্রতিষ্ঠানগুলোর সরাসরি বিনিয়োগের সুবিধা বাড়ল।

পুঁজিবাজারের বিনিয়োগ নিয়ে তথ্য তিন মাস পরপর : গত বছরের আগস্টে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের তথ্য প্রতিদিন দেয়ার নির্দেশ দিলেও নতুন সার্কুলারে তা পরিবর্তন করা হয়েছে।

আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগসংক্রান্ত বিবরণী এখন দিতে হবে তিন মাস পরপর। চার প্রান্তিকে শেষ হওয়ার পরের সাত কর্মদিবসের মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংযুক্ত ছক মোতাবেক আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগে এই হিসাব জমা দিতে হবে।

আপনি এগুলোও দেখতে পারেন

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.