আয়কর প্রশাসনের কলেবর বাড়ছে

0

বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : রাজস্ব আদায় কার্যক্রম জোরদার করতে আয়কর প্রশাসনের কলেবর বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এরই অংশ হিসাবে আয়কর প্রশাসনের সংস্কার, পুনর্গঠন ও সম্প্রসারণসংক্রান্ত প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। সেখানে জেলা পর্যায়ে নতুন কর অঞ্চল, বিশেষায়িত গোয়েন্দা ইউনিট এবং কর মামলা দ্রুত নিষ্পত্তিতে আপিল অঞ্চল স্থাপনসহ নতুন লোকবল নিয়োগের বিষয়টি বলা হয়েছে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

আরও জানা গেছে, আয়কর প্রশাসনের সম্প্রসারণের যৌক্তিকতা তুলে ধরে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে যে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, সেটির ওপর তিন দফা আলোচনা হয়েছে। জনপ্রশাসনের অনুমোদনের পর সেই প্রস্তাব অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। এরপর প্রশাসনিক সংস্কারসংক্রান্ত সচিব কমিটি হয়ে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য তা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হবে।

আয়কর প্রশাসনের সংস্কার ও সম্প্রসার প্রস্তাবের যৌক্তিকতায় বলা হয়েছে, ২০১১ সালে সর্বশেষ আয়কর প্রশাসনের কাঠামোগত সংস্কারের মাধ্যমে ৩১টি কর অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। সেই সময়ের তুলনায় এখন করদাতার সংখ্যা ৬ গুণ বেড়েছে। বর্তমানে প্রতিটি কর অঞ্চলে গড়ে ২ লাখ ৬ হাজার করদাতা রয়েছে। সার্কেল হিসাবে প্রতিটি প্রতিটি সার্কেলে করদাতা রয়েছে প্রায় ১০ হাজার। বর্তমানে প্রতিটি সার্কেলে ৯ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী কাজ করেন। এত কম সংখ্যক জনবল দিয়ে করদাতাদের মানসম্মত সেবা দেওয়া সম্ভব নয়। পাশাপাশি আয়কর বিভাগের পক্ষে সঠিকভাবে কর আদায়, করজাল বৃদ্ধি এবং কর ফাঁকি প্রতিরোধসহ অন্য কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হচ্ছে না।

ওই প্রস্তাবে আরও বলা হয়েছে, এখন ১০০ টাকা আয়কর আদায় করতে ৬৬ পয়সা খরচ হয়, যা পৃথিবীর মধ্যে সর্বনিু। বর্তমানে রাজস্ব আদায়ে আয়করের অবদান ৩৩ শতাংশ। আগামী ১০ বছরের মধ্যে এটি ৪৫ শতাংশে এবং ২০৩০-৩১ অর্থবছরের মধ্যে করদাতার সংখ্যা এক কোটি ৬০ লাখে উন্নীত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। আয়কর প্রশাসনের অবকাঠামো এবং লজিস্টিক খাতে যুক্তিসঙ্গত বরাদ্দ ছাড়া অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানো দুঃসাধ্য ব্যাপার। অন্যদিকে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের কারণে আইটিভিত্তিক নানা ব্যবসার সম্প্রসারণ ঘটবে। এ ধরনের ব্যবসার আয় থেকে বর্তমান কাঠামো দিয়ে কর আদায় সম্ভব নয়। তাই প্রত্যক্ষ কর আদায় বাড়াতে আয়কর বিভাগের সংস্কার ও সম্প্রসারণের বিকল্প নেই।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এনবিআরের প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়, আধুনিক, যুগোপযোগী, তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর এবং আন্তর্জাতিক উত্তম চর্চা অনুযায়ী আয়কর প্রশাসনকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর অংশ হিসাবে নতুন আয়কর বিরোধ ব্যবস্থাপনা ইউনিট; ই-ট্যাক্স ব্যবস্থাপনা ইউনিট; আয়কর গোয়েন্দা, তদন্ত ও এনফোর্সমেন্ট ইউনিট; আন্তর্জাতিক কর ইউনিট এবং উৎসে কর ব্যবস্থাপনা ইউনিট গঠন করা হবে। এছাড়া ঢাকায় ১৩টি কর অঞ্চল, চট্টগ্রামে ৩টি, খুলনায় ৩টি, রাজশাহী, সিলেট, বরিশাল ও রংপুরে ১টিসহ মোট ২৩টি নতুন কর অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা হবে।

এছাড়া করজাল বৃদ্ধি ও করদাতাদের দোড়গোড়ায় সেবা পৌঁছানোর লক্ষ্যে উপজেলা ও গ্রেথ সেন্টারের সংখ্যাও বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে ৮৬টি গ্রেথ সেন্টার বা সার্কেল অফিস আছে, এটা বাড়িয়ে ২৯০টি করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি কর মামলা ও কর বিরোধ নিষ্পত্তিতে কর আপিল অঞ্চলের সংখ্যাও বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়। বিদ্যমান ৭টির স্থলে ১১টি আপিল অঞ্চল গঠন করতে চায় এনবিআর। ঢাকায় নতুন ২টি, চট্টগ্রাম ও রংপুরে ১টি কর আপিল অঞ্চল প্রতিষ্ঠান করা হবে।

প্রস্তাবিত কর অঞ্চল, আপিল অঞ্চল এবং ইউনিটে কত জনবল প্রয়োজন হবে-তাও প্রস্তাবে তুলে ধরা হয়েছে। বর্তমানে আয়কর প্রশাসনে কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন ৮ হাজার ৯৩২ জন। প্রস্তাবে আরও ১০ হাজার ৬০০ জনবল নিয়োগ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা যা বলছেন : ২০৪১ সালের রূপকল্প অর্জনে আয়কর প্রশাসনের সম্প্রসারণ ও পুনর্গঠনের বিকল্প নেই বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা। তাদের মতে, অবকাঠামো ও প্রযুক্তিগত সংস্কার ছাড়া বিদ্যমান কাঠামো দিয়ে রাজস্ব আদায় বাড়ানো সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে শুধু লোকবল বাড়িয়ে সংস্কার করলে চলবে না, প্রযুক্তিগত সংস্কারে জোর দিতে হবে। আর ব্যবসায়ীরা বলছেন, কর জাল বাড়াতে আয়কর প্রশাসনের পুনর্গঠন, সংস্কারের বিকল্প নেই। এখন যারা কর দিচ্ছেন, তাদের কাছ থেকেই কর আদায়ে মনোযোগী মাঠপর্যায়ের কর কর্মকর্তারা। অথচ উপজেলা পর্যায়ে অনেক করযোগ্য ব্যক্তিও করের আওতার বাইরে থাকছেন। তাই করজাল বাড়াতে পারলে করের বোঝা কমবে। পাশাপাশি তা টেকসই রাজস্ববান্ধব পরিবেশ সৃষ্টিতে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে।

এ বিষয়ে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু বলেন, এখন যারা কর দিচ্ছেন, তাদের ওপরই বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এ সমস্যা সমাধানে ব্যবসায়ীদের তরফ থেকে বারবার বলা হচ্ছে, কর জাল বাড়াতে উপজেলা পর্যায়ে আয়কর-ভ্যাট অফিস স্থাপন করতে। সেদিক থেকে এনবিআরের আয়কর বিভাগ সম্প্রসারণের উদ্যোগ সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। এতে কর্মসংস্থানও বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি অটোমেশনেও গুরুত্ব দিতে হবে।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, আয়কর সংস্কার ও পুনর্গঠনে যেদিকে নজর দেওয়া দরকার, সেদিকে এনবিআরের নজর নেই। তারা শুধু লোকবল বাড়ানো বা কর অঞ্চল গঠনে গুরুত্ব দিচ্ছে। কিন্তু এসব করে কাক্সিক্ষত কর আদায় সম্ভব নয়।

তিনি আরও বলেন, যন্ত্র (অটোমেশন) দিয়ে যে কাজ করা যায়, এনবিআর সেটা মানুষ (কর্মকর্তা) দিয়ে করছে। আর মানুষ দিয়ে যেটা করা দরকার, সেটা করছে না। যেমন; এখনো পুরোপুরি অনলাইনে রিটার্ন জমা, প্রসেসিং ও কর দেওয়ার পদ্ধতি চালু করতে পারেনি। এটা নিয়ে কর্মকর্তারা বেশি ব্যস্ত থাকেন। কারণ এতে কর্মকর্তারা লাভবান হচ্ছেন। এছাড়া নাগরিকদের এনআইডিভিত্তিক নিজস্ব তথ্যভাণ্ডার করা দরকার, সেটা করছে না। অন্যদিকে কর্মকর্তাদের অডিটে মনোযোগী করা দরকার। কিন্তু সেটা কর্মকর্তারা ঠিকমতো করছেন না।

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.