গুরুত্ব পাচ্ছে বাংলাদেশ-ভারত অর্থনৈতিক অংশীদারি চুক্তি
বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সমস্যাগুলো সমাধান করতে একটি নতুন অর্থনৈতিক চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়ে অনেক দূর এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ ও ভারত, যে চুক্তির মাধ্যমে উভয় দেশ লাভবান হবে বলে মনে করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগামী ৪ মার্চ দিল্লিতে বাণিজ্য সচিব পর্যায়ের যে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে, সেখানে আলোচনার টেবিলে প্রস্তাবিত চুক্তিটি স্বাক্ষরের বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব পেতে পারে।
আলোচিত চুক্তিটির নাম ‘কমপ্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ এগ্রিমেন্ট’ বা সমন্বিত অর্থনৈতিক অংশীদারি চুক্তি, সংক্ষেপে সেপা। সূত্রগুলো জানায়, দিল্লির বৈঠকে আলোচিত কয়েকটি এজেন্ডার অন্যতম একটি হবে সেপা সইয়ের ইস্যুটি।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে এমন অনেক ইস্যু আছে যেটি প্রতি বছর আলোচনার টেবিলে উঠলেও এর সমাধান হচ্ছে না। ভারত মনে করছে নতুন এই অর্থনৈতিক চুক্তির মাধ্যমে পুরনো সমস্যাগুলো সমাধান করা সম্ভব। অর্থাৎ ‘সেপা’ হবে এমন একটি চুক্তি-যার লক্ষ্যই হলো বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও শিল্পায়ন বাড়ানোর পরিবেশ তৈরি করা। গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ পাটসহ আরও কয়েকটি পণ্যের ওপর আরোপিত অ্যান্টিডাম্পিং শুল্ক প্রত্যাহারের অনুরোধ জানাচ্ছে ভারতকে। নতুন একটি কাস্টমস আইন নিয়েও বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা সমস্যায় পড়েছেন। নতুন চুক্তি কাঠামোর মধ্যে এসব বাণিজ্যিক সমস্যা সম্ভব কি-না বাংলাদেশ তা পর্যালোচনা করে দেখছে।
কর্মকর্তারা জানান, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্প্রসারণের মূল বিষয়টিই হলো আমদানি-রপ্তানি বাধা দূর করা। এক্ষেত্রে ব্যবসা সহজতর করতে বন্দর ও সড়ক অবকাঠামোগত উন্নয়নের বিষয় রয়েছে। পাশাপাশি শুল্ক-অশুল্ক বাধা দূরীকরণে পদক্ষেপেরও প্রয়োজন হবে। এই চুক্তি স্বাক্ষর হলে চাইলেই কেউ চুক্তির তালিকায় থাকা পণ্যে অ্যান্টিডাম্পিং শুল্ক বসিয়ে বাণিজ্য বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না। অর্থাৎ এই চুক্তিটি দুই দেশের মধ্যে উইন উইন পরিস্থিতি তৈরি করতে সক্ষম হবে। এসব বিষয় বিবেচনা করেই সমন্বিত অর্থনৈতিক অংশীদারি চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়টি এবারের বৈঠকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাচ্ছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ-ভারত সমন্বিত অর্থনৈতিক অংশীদারি চুক্তি করার আলোচনা শুরু হয়েছে ২০২০ সাল থেকে। পরে এ বিষয়ে দুই দেশের সরকারের মধ্যে একটি যৌথ সমীক্ষার উদ্যোগ নেওয়া হয়। ভারতের একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বাংলাদেশের ফরেন ট্রেড ইনস্টিটিউট (বিএফটিআই) এই যৌথ সমীক্ষা সম্পন্ন করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে একটি প্রতিবেদন পাঠায়। গত বছরের সচিব পর্যায়ের বৈঠকে চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়ে নীতিগতভাবে ঐকমত্যে পৌঁছে উভয় দেশ। এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, কমপ্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ এগ্রিমেন্ট-এর বিষয়ে ভারতের দিক থেকে আলোচনার প্রস্তাব রয়েছে। চুক্তির বিষয়ে দীর্ঘ সমীক্ষার পর ইতিবাচক মতামতও দিয়েছে বিএফটিআই। তারপরও দুটি দেশের মধ্যে এ ধরনের চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়ে সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী পর্যায় থেকেই সিদ্ধান্ত আসতে হবে।
টেবিলে আরও যেসব ইস্যু থাকছে : সচিব পর্যায়ের বৈঠকে এবার বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এলডিসি উত্তরণের পরও শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা চালু রাখা, ভারতের মালবাহী রেলের খালি কনটেইনারে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির সুযোগ, ভারতের মাটি ব্যবহার করে নেপাল ও ভুটানে পণ্য ট্রানজিট সুবিধা, পাটপণ্য, ফ্লোটগ্লাসসহ বেশ কয়েকটি পণ্য রপ্তানিতে অ্যান্টিডাম্পিং ডিউটি প্রত্যাহার, ভারতের নতুন কাস্টম আইনে রপ্তানিকারকদের সমস্যা দূর করা ছাড়াও অধিকতর বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানির লক্ষ্যে ভারতের বিএসটিআই সনদের স্বীকৃতি ও অশুল্ক বাণিজ্য বাধা দূরীকরণের মতো বিষয়গুলোতে আলোকপাত করা হবে। অপরদিকে ভারতের পক্ষ থেকে সেপা চুক্তি স্বাক্ষরের দিণক্ষণ চূড়ান্ত করা ছাড়াও বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহার করে ট্রানশিপমেন্টে পণ্য পরিবহন সুবিধা বাড়ানো, সিরাজগঞ্জে একটি আইসিডি স্থাপন, বাংলাদেশের স্থলবন্দরগুলো দিয়ে ভারতের পণ্য রপ্তানির নিয়ন্ত্রণ তুলে নেওয়ার বিষয়ে আলোকপাত করা হবে বলে জানা গেছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্প্রসারণে ভারত চাইছে তাদের রাজ্যগুলোর সীমান্তে অবিস্থত এলসি স্টেশনগুলো দিয়ে পণ্য রপ্তানির ওপর আরোপিত নিয়ন্ত্রণ যেন তুলে নেয় বাংলাদেশ। দেশটি চাইছে প্রতিটি রাজ্যে কমপক্ষে একটি স্টেশন দিয়ে যেন তাদের সব ধরনের পণ্য রপ্তানির সুযোগ দেওয়া হয়।