সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে নতুন ইসির ব্যাপক কর্মপরিকল্পনা

0

বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ তৈরি করতে ব্যাপক কর্মপরিকল্পনা করছে নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ জন্য সর্বমহলের আস্থা অর্জনে করণীয় ঠিক করতে প্রথমেই দেশের বিশিষ্টজনদের সঙ্গে এবং পরে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করবে। এরই অংশ হিসেবে বিশিষ্টজনদের মধ্যে রবিবার শিক্ষাবিদদের সঙ্গে এবং পরে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ও সাংবাদিকদের সঙ্গে সংলাপ করবে ইসি। প্রধান লক্ষ্য- কিভাবে সবার অংশগ্রহণে সুষ্ঠু নির্বাচন করা যায় সে জন্য পরামর্শ গ্রহণ করা।

সূত্র জানায়, আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে ডেকে বিশিষ্টজনদের সঙ্গে কয়েক ধাপে সংলাপ করার পর সবশেষে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করবে ইসি। এ সময় সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যেসব পরামর্শ আসবে সেসব লিখে রাখা হবে। এ ছাড়া রাজনৈতিক দলগুলোও আগের মতো এবারও নির্বাচন কমিশনে লিখিত মতামত দেবে বলে নতুন ইসি আশা করছে। আর সবার মতামত পর্যালোচনা করে পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ অন্যান্য নির্বাচনের রোডম্যাপ তৈরি করবে নতুন নির্বাচন কমিশন।

দায়িত্ব গ্রহণের পর মাত্র ১০ দিন অতিবাহিত করেছে কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নতুন নির্বাচন কমিশন। ইতোমধ্যেই এই কমিশন রাজনৈতিক দলসহ সবার আস্থা অর্জনে কিছু করণীয় ঠিক করে সেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। এর অংশ হিসেবে রবিবার থেকে দেশের বিশিষ্টজনদের সঙ্গে সংলাপ শুরু করা হচ্ছে। কয়েক ধাপে বিশিষ্টজনদের সঙ্গে এবং পরে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় করবে ইসি। তারপর কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনসহ যেসব নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে এসেছে এক এক করে তফসিল ঘোষণা করা হবে। সেই সঙ্গে পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপও ঠিক করা হবে।

এ বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে নির্বাচন কমিশনার মোঃ আলমগীর জানান, পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে অংশীজনের সঙ্গে সংলাপে বসছে নির্বাচন কমিশন। রবিবার থেকে ধারাবাহিকভাবে অংশীজনদের সঙ্গে সংলাপ করা হবে। পর্যায়ক্রমে শিক্ষাবিদ, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, নির্বাচন বিশ্লেষক, সাংবাদিক ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে সংলাপ হবে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন করতে রাজনৈতিক দলসহ সব মহলের সঙ্গে পরামর্শের অংশ হিসেবে সংলাপ শুরু হবে। জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার ক্ষেত্রে যেসব সমস্যা তৈরি হয়, সেগুলো সংলাপের মাধ্যমে চিহ্নিত করে করণীয় নির্ধারণ করা হবে। ধারাবাহিক সংলাপে সবার শেষে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় করা হবে। সকলের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন কর্মকৌশল ঠিক করবে। শুধু তাই আলোচনা নয়, নির্বাচনের বিভিন্ন কৌশল সম্পর্কেও কমিশন বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মতামত নেবে। সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে স্বচ্ছতা নিয়েই নির্বাচন কমিশন কাজ করতে চায়। এর জন্য যা যা প্রয়োজন তা করার চেষ্টা হবে। সংলাপের মাধ্যমে সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে করণীয় ঠিক করা হবে।

এর আগের নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব গ্রহণ করে ২০১৭ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি। দায়িত্ব গ্রহণের পর সর্বশেষ ২০১৭ সালের ৩১ জুলাই থেকে বিভিন্ন মহলের সঙ্গে সংলাপ করে ওই নির্বাচন কমিশন। সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সংলাপে বসার মধ্য দিয়ে তখন সংলাপ শুরু হয়। এরপর ৪০টি রাজনৈতিক দল, নারী নেতৃত্ব, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ও গণমাধ্যমের সঙ্গে সংলাপ করে তৎকালীন কেএম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন কমিশন। তবে এবারের নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব গ্রহণের দুই সপ্তাহের মধ্যেই সংলাপ শুরু করছে। বর্তমান ইসি দায়িত্ব নেয় ২৮ ফেব্রুয়ারি। দায়িত্ব নেয়ার পর এত তাড়াতাড়ি আগের কোন কমিশন সংলাপ করার উদ্যোগ নেয়নি।

রবিবার বিকেল ৩টায় নির্বাচন ভবনে শিক্ষাবিদদের সঙ্গে প্রথম সংলাপ করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন। প্রথমদিনের সংলাপে অংশ নেয়ার জন্য যাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে তারা হলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. মোঃ আখতারুজ্জামান, ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটির ভিসি প্রফেসর ড. আবদুল মান্নান চৌধুরী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য বিদায়ী ভিসি ড. ফারজানা ইসলাম, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়েরর ভিসি প্রফেসর ড. আতিকুল ইসলাম, ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটির ভিসি প্রফেসর ড. তানভীর হাসান, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির ভিসি প্রফেসর ড. এ এফ এম মফিজুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ইমেরিটাস ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, অধ্যাপক এম জাফর ইকবাল, অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী, অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ, অধ্যাপক ড. নুরুল আমিন বেপারি, অধ্যাপক ড. এম আনোয়ার হোসাইন, অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ, প্রফেসর এম আবুল কাসেম মজুমদার, অধ্যাপক ড. বোরহানউদ্দিন খান, অধ্যাপক সাদেকা হালিম, অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ, অধ্যাপক আকতার হোসেন, অধ্যাপক নীলুফার ইয়াসমিন, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস (ইউ ল্যাব) এর অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান, অধ্যাপক ড. মোহাব্বত খান, অধ্যাপক ড. মোবাশ্বের হোসেন, অধ্যাপক মোহাম্মদ ইয়াহিয়া আক্তার, অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ শামছুল আলম, অধ্যাপক ড. তাসলিম আরিফ সিদ্দিকী, অধ্যাপক আল মাসুদ হাসানুজ্জামান ও অধ্যাপক আসিফ নজরুল।

এদিকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের মতবিনিময় হলে তাতে বিএনপি অংশ নেবে কি না সে বিষয়টি এখনও স্পষ্ট নয়। কারণ, বিএনপি নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের আগে সার্চ কমিটির মতবিনিময় অনুষ্ঠানেও অংশ নেয়নি। এর আগে রাষ্ট্রপতির সংলাপেও যায়নি। এ ছাড়া নতুন নির্বাচন কমিশন নিয়োগের বিষয়টিও ভালভাবে নেয়নি। তবে বিএনপি নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল হওয়ায় শেষ পর্যন্ত ইসির মতবিনিময়ে যেতে পারে বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করছেন।

এর আগে ২০১৭ সালের ১৫ জানুয়ারি দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন আগের নির্বাচন কমিশন। দায়িত্ব গ্রহণের পর নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিয়য় করে ইসি। তখন সরকারী দল আওয়ামী লীগ এবং সরকার বিরোধী দল বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ইসির সঙ্গে মতবিনিময় করে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য বিভিন্ন পরামর্শ দেয়। বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল মৌখিক পরামর্শের পাশাপাশি লিখিত পরামর্শও দেন। এবারও রাজনৈতিক দলগুলো সেভাবে পরামর্শ দেবে বলে নির্বাচন কমিশন সংশ্লিষ্ট সূত্র মনে করছে।

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ও ১৪ দলীয় রাজনৈতিক জোটের প্রধান সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু জনকণ্ঠকে জানান, নতুন নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় করলে সেটি হবে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়, তাই বিএনপি এখন নির্বাচন কমিশন নিয়ে চিন্তা করছে না, বিএনপি চিন্তা করছে কিভাবে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা যায়।

আগের নির্বাচন কমিশন নিয়ে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও কিছু নির্বাচন বিশেষজ্ঞের কঠোর সমালোচনার পর দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সংবিধান অনুসারে নতুন আইন করে সে আইনের আলোকে সকল প্রক্রিয়া শেষ করে এবারের নির্বাচন কমিশন নিয়োগ করেন রাষ্ট্রপতি। সার্চ কমিটির কাছে প্রস্তাবিত ৩২২ নাম থেকে সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য ১ জনকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও ৪ জনকে নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দেয়া হয়। তাই এই নির্বাচন কমিশন নিয়ে এখন পর্যন্ত তেমন কোন সমালোচনা করতে পারেনি কেউ। তাই নতুন নির্বাচন কমিশন সকল রাজনৈতিক দলসহ সর্বস্তরের মানুষের আস্থা অর্জনের চেষ্টা করছে। এ জন্য তারা দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই বিভিন্ন কর্মকৌশল প্রণয়নে কাজ করে যাচ্ছে। সবার অংশগ্রগণে কিভাবে সুষ্ঠু নির্বাচন করা যায় সেদিকেই এখন তাদের দৃষ্টি।

সূত্র জানায়, বর্তমান ইসির সামনে প্রথম নির্বাচন কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের। তাই এই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার প্রস্তুতি চলছে। এ নিয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হচ্ছে। প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি শেষ করে কুসিক নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবে ইসি। তবে এই নির্বাচনে যাতে সরকারী দল আওয়ামী লীগের পাশাপাশি বিএনপিসহ অন্যান্য দলও অংশ গ্রহণ করে সে লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছে নতুন ইসি। এ নির্বাচনের আগেই প্রথমে দেশের বিশিষ্টজনদের সঙ্গে মতবিনিময় করতে যাচ্ছে ইসি। রবিবার থেকে এ মতবিনিময় শুরু হচ্ছে। প্রথম দিন শিক্ষাবিদদের সঙ্গে এবং এর পর অন্যান্য পেশার বিশিষ্টজনদের পর আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে মতবিনিময় করবে নির্বাচন কমিশন। তার আগেই রাজনৈতিক দলগুলোকে আমন্ত্রণ জানাবে। কে এম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন ২০১৭ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি দায়িত্ব গ্রহণ করে পুরো ৫ বছর পর বিগত ১৪ ফেব্রুয়ারি বিদায় নিয়েছে। তবে এই নির্বাচন কমিশন বিদায়ের আগে কঠোর সমালোচনার মুখে পড়ে। আর বিষয়টি মাধায় রেখেই দেশের বিশিষ্টজন ও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় করে কাজের গতি বাড়াতে চায় বর্তমান নির্বাচন কমিশন।

আগের নির্বাচন কমিশনের কার্যক্রম পর্যালোচনা করে কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নতুন নির্বাচন কমিশন ২৮ ফেব্রুয়ারি দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম দিনই দীর্ঘ বৈঠক করে কিছু কর্মপরিকল্পনা শুরু করে। পরবর্তী বৈঠকে আরও বিস্তারিত কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করে সে মোতাবেক ছক কষে কাজের গতি বাড়াবে বলে জানা যায়। আওয়ামী লীগসহ সরকার সমর্থিত সব রাজনৈতিক দল সকল নির্বাচনে অংশ নিলেও বিএনপিসহ তাদের সমমনা কিছু রাজনৈতিক দল বর্তমান সরকারের অধীনে আর কোন নির্বাচনে অংশ নেবে না বলে ধারাবাহিকভাবে বলে আসছে। বিদায়ী নির্বাচন কমিশনের শেষদিকে অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনগুলোতেও তারা অংশ নেয়নি। তবে তাদের দলের কিছু স্থানীয় নেতা স্বতন্ত্র নির্বাচন করে বিজয়ী হয়েছে। তাই নতুন নির্বাচন কমিশন যদি বিএনপিকে মতবিনিময় সভায় ডেকে ভাল নির্বাচনের বিষয়ে আস্বস্ত করতে পারে তাহলে তারাও পরবর্তী নির্বাচনগুলোতে অংশ নেবে।

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে এসে এবারই প্রথমবারের মতো সংবিধান অনুসারে আইনের আলোকে অধিকতর গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন নিয়োগ দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ । তাই নতুন এই ইসি নিয়ে সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরে আসে। এখন পর্যন্ত নতুন ইসির কারো বিরুদ্ধে কোন অনিয়ম বা দুর্নীতির অভিযোগ আসেনি। এমনকি বিএনপিও তাদের নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করতে পারেনি। তাই নতুন ইসি দেশবাসীর প্রত্যাশা পূরণ করবে বলে মনে করা হচ্ছে।

সংবিধানের ১১৮(১) অনুচ্ছেদ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে ৫ ফেব্রুয়ারি সার্চ কমিটি গঠন করেন রাষ্ট্রপতি। নিজেদের মধ্যে ৭টি বৈঠক ও দেশের বিশিষ্টজনদের সঙ্গে ৪টি বৈঠকের পর সার্চ কমিটি ২৪ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতির কাছে ১০ জনের নামের তালিকা হস্তান্তর করেন। ২৬ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতি সেখান থেকে ৫ জনকে নিয়ে নতুন নির্বাচন কমিশন নিয়োগ করেন। এর মধ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) নিয়োগ করা হয় সাবেক সিনিয়র সচিব কাজী হাবিবুল আউয়ালকে। আর ৪ কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় সাবেক জেলা ও দায়রা জজ বেগম রাশিদা সুলতানা, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আহসান হাবীব খান, সাবেক সিনিয়র সচিব মোঃ আলমগীর ও সাবেক সিনিয়র সচিব আনিছুর রহমানকে। ২৭ ফেব্রুয়ারি নতুন ইসি প্রধান বিচারপতির কাছে শপথ গ্রহণ করে। এই ইসি নির্বাচন ভবনে গিয়ে দায়িত্ব গ্রহণ করে ২৮ ফেব্রুয়ারি।

নতুন নির্বাচন কমিশন নিয়ে বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবীরাও ইতিবাচক মন্তব্য করেছেন। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের পর রাজনীতিতে বিএনপির অত্যন্ত কাছের মানুষ হিসেবে পরিচিত বুদ্ধিজীবী, বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরী ইতিবাচক মন্তব্য করেছেন। নতুন ইসির প্রতি বিএনপিকে আস্থা রাখার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, নতুন সিইসি অত্যন্ত দক্ষ, মেধাবী, সাহসী ও নিরপেক্ষ। কাজী হাবিবুল আউয়ালের মতো খাঁটি মানুষ পেয়েছে ইসি। তাই বিএনপি তার নেতৃত্বাধীন ইসির প্রতি আস্থা রাখতে পারে। সরকার একটা ভাল কাজ করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, এই ইসিকে সবার সহযোগিতা করা উচিত।

নিয়োগ পাওয়ার পর কয়েক দফা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন নতুন সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল। তিনি জানান, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে আমরা বদ্ধপরিকর। তবে এ বিষয়ে সকল রাজনৈতিক দলসহ সবার সহযোগিতা চাই। আমরা সব দলের প্রতি সমান আচরণ নিশ্চিত করতে কাজ করব। তবে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের সব দায় শুধু নির্বাচন কমিশনের নয়। এখানে রাজনৈতিক দলগুলোরও সহযোগিতা প্রয়োজন। সবার প্রতি আমাদের সমান দৃষ্টি থাকবে। আমরা বিএনপিসহ বিভিন্ন দলকে চায়ের আমন্ত্রণ জানাব।

সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার পরও আগের কোন সরকারই নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন প্রণয়ন করেনি। বর্তমান সরকারের আমলে আইন প্রণয়ন করে সেই আইন অনুসারে নির্বাচন কমিশন গঠনের দাবি জোরদার হয়। তাই একটি আইন করার বিষয়ে আগে থেকেই এ সরকার প্রস্তুতি শুরু করে। কিন্তু বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হওয়ার মাত্র ২ মাস আগেও আইন প্রণয়নের বিষয়ে সরকারের জোরালো কোন পদক্ষেপ না দেখে বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ও বিদেশী কূটনীতিকরা অধিকতর তৎপর হয়। এ পরিস্থিতিতে গতবছর ২০ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সঙ্গে সংলাপের মধ্য দিয়ে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বঙ্গভবনে সংলাপ শুরু করেন রাষ্ট্রপতি। আর এ বছর ১৭ জানুয়ারি ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংলাপের মধ্য দিয়ে তা শেষ করেন তিনি। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে অংশ নিয়ে ২৪টি রাজনৈতিক দল নির্বাচন কমিশন নিয়োগে আইন প্রণয়নের জোর দাবি জানায়। এ পরিস্থিতিতে সরকার আগে থেকে ফাইল ওয়ার্ক করে রাখা আইন প্রণয়নের জন্য কাজের গতি বাড়ায়। অবশেষে সকল প্রক্রিয়া শেষ করে স্বাধীনতার ৫০ বছর পর নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য কমিশনার নিয়োগ আইন-২০২২’ প্রণয়ন করে।

অভিজ্ঞ মহলের মতে, রাজনৈতিক দল ও বিশিষ্টজনদের সঙ্গে মতবিনিময় করে প্রয়োজনীয় গাইডলাইন নিয়ে কাজ করলে নতুন ইসি দেশবাসীর প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবে। রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দেয়ার পরপরই এই ইসির প্রতি আস্থা প্রকাশ করে দেশের বিশিষ্টজনরা বলেছেন, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করাই হবে এই কমিশনের বড় চ্যালেঞ্জ। তাই তাদের সেদিকে খেয়াল রেখেই এগিয়ে যেতে হবে।

নতুন নির্বাচন কমিশন কিভাবে সুষ্ঠু নির্বাচন করে সবার আস্থা গ্রহণ করতে পারে তা দেখার জন্য অপেক্ষা করছে দেশের সর্বস্তরের মানুষ। স্বাধীনতার ৫০ বছর পর এই প্রথম আইন প্রণয়ন করে নির্বাচন কমিশন নিয়োগ করায় এই কমিশনের কাছে মানুষের প্রত্যাশাও বেশি। এ ছাড়া বিএনপিসহ যেসব রাজনৈতিক দল ও নির্বাচন বিশ্লেষক নতুন আইনে সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠনের সমালোচনা করছেন তারাও অপেক্ষা করছেন এই কমিশনের কর্মপদ্ধতি দেখার জন্য। তবে নতুন নির্বাচন কমিশন সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেই সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নিজেদের কর্মপরিকল্পনা সাজাচ্ছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়।

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.