ঈদের আগেই সুশৃঙ্খল হচ্ছে মহাসড়ক

0

বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : সুশৃঙ্খল করা হচ্ছে সড়ক-মহাসড়ক। ঈদের আগেই সড়ক-মহাসড়ক থেকে সব জঞ্জাল সরিয়ে ফেলার কাজ শুরু হয়েছে। মহাসড়কের বস্নাক স্পট হিসেবে চিহ্নিত (দুর্ঘটনাপ্রবণ) শতাধিক স্থান পুরোপুরি মেরামত করা হয়েছে। বাকি একশ’টি স্পট মেরামতের কাজ চলছে। ইতোমধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের ৩৫টি বস্নাক স্পটের মেরামত কাজ শেষ পর্যায়ে। রোজার মাঝামাঝি সময়ের মধ্যেই দুর্ঘটনাপ্রবণ সকল স্পট মেরামতের কাজ শেষ করার কথা রয়েছে। দুর্ঘটনাপ্রবণ স্পট মেরামতের কারণে সড়ক মহাসড়কে দুর্ঘটনা তুলনামূলকভাবে কমে এসেছে। এছাড়া যানজট নিরসন, ছিনতাই, ডাকাতি প্রতিরোধ, মাদকাসক্ত হয়ে যানবাহন চালানো বন্ধ করতে নেওয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ। সড়ক পরিবহণ মন্ত্রণালয় ও হাইওয়ে পুলিশ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সূত্রটি বলছে, বেপরোয়া গতির যানবাহন শনাক্ত করতে স্পিড গান ব্যবহার করা হচ্ছে। রোজা শুরুর সঙ্গে সঙ্গে স্পিড গান ও ড্রাগ ডিটেক্টর ব্যবহার বাড়ানো হবে। ঈদের ১৫ দিন আগ থেকে হাইওয়েতে পেট্রোলিং আরও বাড়ানো হবে। মাদকাসক্ত চালকদের বিরুদ্ধে নেওয়া হবে কঠোর ব্যবস্থা।

এসব ব্যবস্থার মধ্যে রয়েছে চালকদের লাইসেন্স বাতিল বা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য লাইসেন্স জব্দ করে রাখা এবং কোনো যানবাহন মালিক যদি মাদকাসক্ত চালকদের হাতে যানবাহন তুলে দেন, তাহলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রয়োজনে মাদকাসক্ত চালকদের বিরুদ্ধে মাদক সেবনের অপরাধে সংশ্লিষ্ট হাইওয়ে থানা বা জেলা থানায় নিয়মিত মামলা দায়ের করা হবে। মাদকাসক্ত চালকদের তাৎক্ষণিক সাজা দিতে প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসানো হবে। মহাসড়কে দুর্ঘটনা, ছিনতাই ও যানজট নিরসনে দুর্ঘটনাপ্রবণ মহাসড়কে বসানো হচ্ছে সিসি ক্যামেরা। সিসি ক্যামেরার মনিটরিং ব্যবস্থা জোরালো করা হচ্ছে। দুর্ঘটনাপ্রবণ স্পটগুলোতে অনেক দূর থেকে দেখা যায়, এমন সাইনবোর্ড ও স্পিডব্রেকার বসানোর কাজ চলছে। এসব জায়গায় রেকার ও অতিরিক্ত টহল পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়েছে। উচ্চ আদালত যানজট কমাতে মহাসড়কের আশপাশের ১০ মিটার পর্যন্ত অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করার নির্দেশ জারি করেছেন। আদালতের নির্দেশ বাস্তবায়নের কাজ চলছে। হাইওয়ে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, দেশে মহাসড়কের পরিমাপ ১১ হাজার ৮০৬ কিলোমিটার। বিআরটিএ’র হিসাব মতে, সারা দেশে রেজিস্ট্রেশনকৃত প্রায় ২৫ লাখ বিভিন্ন প্রকারের যানবাহন চলাচল করে। যদিও বাস্তবে শুধু মহাসড়কেই প্রায় ৩০ লাখের বেশি যানবাহন চলাচল করে। যা মহাসড়কের পরিমাপের তুলনায় অনেক বেশি। এসব যানবাহন চালানোর জন্য বৈধ চালক রয়েছে প্রায় ১৬ লাখ। আর অবৈধ চালকের সংখ্যা অন্তত ১৫ লাখ। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) এক্সিডেন্টাল রিসার্চ ইনস্টিটিউটের হিসাব মতে, মহাসড়কে এক সময় ২০৮টি বস্নাকস্পট (দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা) ছিল।

এসব স্পটে যানজট, দুর্ঘটনায় অধিক প্রাণহানির ঘটনা ছাড়াও ছিনতাই, চুরি ও ডাকাতির মতো অপরাধ সংঘটিত হতো। বর্তমানে দুর্ঘটনাপ্রবণ স্পট প্রায় একশ’। এর মধ্যে অনেকগুলোর কাজ চলছে। এসব দুর্ঘটনাপ্রবণ স্পটের মধ্যে বেশিরভাগই ছিল ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে। ইতোমধ্যেই ১০৮টি দুর্ঘটনাপ্রবণ স্পট পুরোপুরি মেরামত করা হয়েছে। বাকিগুলোর মধ্যে ৩৫টি স্পটের কাজ চলছে। আশা করা হচ্ছে, ঈদের আগেই দুর্ঘটনাপ্রবণ সব স্পটের মেরামত কাজ শেষ হবে। তারপরেও এসব স্পটে বাড়তি রেকার রাখা হচ্ছে। যাতে কোনো যানবাহন বিকল হয়ে পড়লে বা দুর্ঘটনা কবলিত হলে দ্রম্নত সরিয়ে ফেলা যায়। এতে করে যানজটের কবল অনেকটাই রক্ষা পাওয়া যায়। সূত্রটি বলছে, প্রতি বছর গড়ে সড়ক-মহাসড়কে দুর্ঘটনায় কয়েক হাজার মানুষের মৃতু্য হয়। মৃতু্যর পাশাপাশি সড়ক দুর্ঘটনায় বছরে গড়ে অন্তত ২০ হাজার মানুষ আহত হন। আহতদের মধ্যে গড়ে অন্তত ৫ হাজার মানুষকে চিরতরে পঙ্গুত্ববরণ করতে হয়। নিহত ও চিরতরে পঙ্গুত্ববরণকারীদের অধিকাংশই সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। হাইওয়ে পুলিশের একজন ঊধর্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, অবৈধ চালকরা ভুয়া নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে লাইসেন্স নিয়ে থাকে। ফলে কোনো পণ্যবাহী গাড়ি ছিনতাই হলে বা কোনো যাত্রীবাহী যানবাহন দুর্ঘটনায় পড়লে সহজেই চালকদের খুঁজে পাওয়া যায় না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে গাড়ির মালিকেরও হদিস মিলে না। কারণ ভুয়া লাইসেন্সধারীরা লাইসেন্স প্রাপ্তির ফরমে সঠিক নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে না।

এজন্য দুর্ঘটনাপ্রবণ স্পটগুলোতে সিসি ক্যামেরা লাগানোর বিষয়ে জোর দেওয়া হয়েছে। যাতে দুর্ঘটনার শিকার যানবাহনের চালককে শনাক্ত করা সহজ হয়। তিনি আরও জানান, মহাসড়কের দুই পাশের ১০ মিটার পর্যন্ত সব ধরনের স্থাপনা উচ্ছেদে উচ্চ আদালতের নির্দেশ রয়েছে। কিন্তু সে নির্দেশ স্থানীয় প্রভাবশালীদের কারণে এখনও পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। যে কারণে এখনো হাইওয়েতে কিছু কিছু যানজট হচ্ছে। এক সময় দেশের মারাত্মক যানজটপ্রবণ স্থানের মধ্যে ছিল ঢাকার মহাখালী, আব্দুলস্নাহপুর, সায়েদাবাদ, গাবতলী, যাত্রাবাড়ি, শ্যামপুর, কদমতলী, শনিরআখড়া, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কাঁচপুর ব্রিজ, চট্টগ্রামের মিরসরাই, ঢাকা-মুন্সীগঞ্জ-নারায়ণগঞ্জের পঞ্চবটি, ফতুলস্না, শ্যামপুর, কুমিলস্নার দাউদকান্দি ব্রিজ, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রা, কালিয়াকৈর, যমুনা সেতুর পূর্বপাড়, এলেঙ্গা, ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক, ঢাকা-মাওনা ফেরিঘাটসহ অন্তত ৩০টি স্পট। দায়িত্বশীল এই কর্মকর্তা বলছেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের ফোর লেনের কাজ প্রায় শেষ হওয়ার কারণে যানজট অনেকাংশে কমে এসেছে। এছাড়া মহাসড়কে বুদ্ধিদীপ্ত ইউটার্ন নির্মাণ করার কারণেও যানজট অনেক সহনীয় পর্যায়ে চলে এসেছে। এখন মহাখালী বা অন্যান্য জায়গায় বাস টার্মিনাল থেকে সরাসরি বাস বের হয়ে আর পার হতে পারছে না। তাদের অন্তত কোয়ার্টার কিলোমিটার বা আধা কিলোমিটার গিয়ে ইউটার্ন নিয়ে গন্তব্যের মহাসড়কে দিকে যাত্রা করতে হচ্ছে। এতে করে টার্মিনালকেন্দ্রিক যে যানজট তা কমে গেছে। তারপরেও ঈদের সময় এসব স্পটে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হবে। হাইওয়ে পুলিশ সূত্রে আরও জানা গেছে, আগে মহাসড়কের যে কোনো দুর্ঘটনায় সংশ্লিষ্ট জেলার থানায় দায়ের হতো। থানা মামলাগুলো তদন্ত করত। এখন মাদক ও দুর্ঘটনা সংক্রান্ত মামলাগুলো হাইওয়ে থানায় দায়ের হচ্ছে। সেগুলোর তদন্ত করছে হাইওয়ে থানা পুলিশ।

হাইওয়ে পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপারেশনস) মুহম্মদ শামসুল আলম সরকার যায়যায়দিনকে বলেন, মহাসড়কে দুর্ঘটনা প্রতিরোধে চালকদের যানবাহনের গতি মানতে বাধ্য করানোর চেষ্টা চলছে। ওভার স্পিডে চলাচলকারী যানবাহনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। শুধু তাই নয়, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে ওভার লোড বা ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত ওজন নিয়ে চলাচলকারী যানবাহনের বিরুদ্ধেও। এছাড়া যানজট নিরসনে টহল বাড়ানো হয়েছে। রাখা হয়েছে রেকার। যাতে দুর্ঘটনাকবলিত যানবাহন দ্রম্নত সরিয়ে ফেলা সম্ভব হয়। এছাড়া মাদকাসক্ত চালকদের শনাক্ত করতে ড্রাগ ডিটেক্টর ব্যবহার করা হচ্ছে। ইতোমধ্যেই অনেক দুর্ঘটনাপ্রবণ স্পটের মেরামত কাজ শেষ হয়েছে। বাকিগুলোর মেরামত কাজ চলছে। গত বছর থেকে হালনাগাদ মহাসড়কে ঘটে যাওয়া ১৬টি ডাকাতির মামলার রহস্য উদঘাটন, লুণ্ঠিত মালামাল উদ্ধার ও ডাকাতির সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ডাকাতিপ্রবণ এলাকা চিহ্নিত করে টহল বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে মনিটরিং করা হচ্ছে মহাসড়কের অনেক বিষয়াদি।

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.