অবকাঠামো নির্মাণে অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা চাই

0

বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : কোন অবকাঠামো নির্মাণের পরিকল্পনা বা প্রকল্প নেয়ার সময় অগ্নিনিরাপত্তার দিকটি নিশ্চিত করতে উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এবং প্রকৌশলীদের তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, শিল্প কালকারখানাসহ প্রতিটি ভবন, যেখানে অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়, বিভিন্ন ইনস্টিটিউশন, শপিং মল, বিনোদন কেন্দ্র, সিনেমা হলের অবস্থান- প্রতিটি ক্ষেত্রেই অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। বর্তমান সরকার জনগণের ভাগ্যোন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে, দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এ জন্য অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

রবিবার দেশের বিভিন্ন স্থানে নবনির্মিত ৪০টি ফায়ার স্টেশনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী কোথাও আগুন লাগলে যারা নেভানোর দায়িত্ব পালন করতে যান, তারা যেন হামলার শিকার না হন, সে ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, আগুন লাগল, সেখানে গেল ফায়ার ফাইটাররা গাড়ি নিয়ে, অমনি গাড়ির ওপর আক্রমণ, গাড়িতেই আগুন ধরিয়ে দিল- এই ধরনের ঘটনা যেন না ঘটে।

এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা আরও বলেন, যারা এই রকম করবে, সঙ্গে সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। তাদেরকে শাস্তি দিতে হবে। কারণ, বহু ঘটনা এমন ঘটে বলেই আমি এই কথাগুলো বললাম। তিনি বলেন, উদ্ধারকাজে যারা যাবে, তাদের ওপর আক্রমণ যারা করতে আসে, তারা তো আসলে মানুষের শত্রু হয়ে যায়। কাজেই সেই দিকটাও আপনাদের বিশেষভাবে দেখতে হবে এবং এর জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজধানীর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরে অনুষ্ঠিত মূল অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন। উদ্বোধন হওয়া পাঁচটি বিভাগের ২৫টি জেলার ৩৯টি উপজেলার ৪০টি ফায়ার সার্ভিস স্টেশনও ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে সংযুক্ত ছিল।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব মোঃ মোকাব্বির হোসেন অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ সাজ্জাদ হোসাইন সূচনা বক্তব্য প্রদান করেন। অনুষ্ঠানে দমকল বাহিনীর আধুনিকায়ন এবং নবনির্মিত ৪০টি ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের ওপর একটি ভিডিও চিত্রও প্রদর্শিত হয়।

প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে আরও বলেন, বিভিন্ন এলাকায় যে সব প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে সেখানেও অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থাটা থাকতে হবে। তিনি বলেন, যারা আমাদের উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এবং যারা স্থাপত্যবিদ বা প্রকৌশলী, যারা ডিজাইন বা সব কিছু করেন তাদেরকে লক্ষ্য রাখতে হবে- নতুন কোন প্রকল্প গ্রহণ করলে সেখানে অগ্নিনির্বাপণের আধুনিক ব্যবস্থা যেমন নিশ্চিত করতে হবে, পাশাপাশি কখনও আগুন লেগে গেলে সেটা নির্বাপণে পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে, জলাধারগুলো সংরক্ষণ করতে হবে। পাশাপাশি বৃষ্টির পানি সংরক্ষণেরও ব্যবস্থা নিতে হবে।

জলাধার ভরাট করে বক্স কালভার্ট করাটা ঠিক নয় উল্লেখ করে সরকারপ্রধান ২০০৯ সালে বসুন্ধরা শপিং মলের টাওয়ার অংশে লাগা অগ্নিকা-ের কথা স্মরণ করে দিয়ে বলেন, এক সময় এই পান্থপথের পুরো এলাকাটাই বিল ছিল, যেখানে বসুন্ধরা শপিং মল তৈরি হয়েছে। আজকে সেখানকার জলাধার ভরাট করে বক্স কালভার্ট করে পুরো এলাকার জলাধার বিলীন করে ফেলায় সে দিনের অগ্নিকা-ে আগুন নেভানোর জন্য হোটেল সোনারগাঁওয়ের সুইমিং পুল থেকে দমকল কর্মীদের পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী এ সময় দুর্গত এলাকায় যেন দমকল বাহিনীর গাড়ি পৌঁছতে পারে, সে জন্য রাস্তার প্রশস্ততার পাশাপাশি পানির সহজপ্রাপ্যতা নিশ্চিত করার নির্দেশ দেন। আমাদের দমকল বাহিনীর এখন ২০ তলা পর্যন্ত অগ্নিনির্বাপণ সক্ষমতা রয়েছে এবং ক্রমেই এই সক্ষমতা বৃদ্ধি পাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বহুতল ভবন নির্মাণের সময় দুর্ঘটনা ঘটলে সেখান থেকে উদ্ধার পাওয়ার সম্ভাবনা সম্পর্কে সকলকে নিশ্চিত হয়েই নির্মাণ পরিকল্পনা করার পরামর্শ দেন। এ জন্য নিয়মিত অগ্নিনির্বাপণ মহড়ার আয়োজন এবং বহুতল ভবনে খোলা বারান্দা রাখার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন তিনি।

প্রকল্প গ্রহণকালে বাণিজ্যিক চিন্তা-ভাবনার জন্য মানুষের জীবন যাতে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে না পড়ে- তা নিশ্চিত করার এবং মানুষের চলাচলের জন্য ফুটপাথ যেন উন্মুক্ত থাকে, প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্টদের সে বিষয়েও লক্ষ্য রাখার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি ফায়ার স্টেশন নির্মাণ ছাড়াও অত্যাধুনিক অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্রপাতি সংযুক্ত করা, দেশে-বিদেশে ফায়ার ফাইটারদের উন্নত প্রশিক্ষণসহ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সংস্থাটির সক্ষমতা বাড়াতে সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রমের কথা তুলে ধরেন।

শেখ হাসিনা বলেন, আমি সিদ্ধান্তই দিয়েছিলাম, আমাদের প্রতি উপজেলায় অন্তত একটি করে ফায়ার স্টেশন হতে হবে এবং দেশের জনগণকে আরও সচেতন করে তুলতে হবে। আমাদের ফায়ার ফাইটাররা যাতে আধুনিক প্রশিক্ষিত হয় এবং আন্তর্জাতিক মানের হয়, সেদিকে লক্ষ্য রেখেই তার সরকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ফায়ার একাডেমি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে বলেও তিনি জানান।

অত্যাধুনিক ও দক্ষ ফায়ার সার্ভিস সেবা নিশ্চিতে সরকারের বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে দেশের অগ্নিঝুঁঁকি ও অন্যান্য দুর্যোগ মোকাবেলার পূর্ণ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি বাহিনী আমাদের প্রয়োজন। বিভিন্ন ঘটনায় অগ্নিনির্বাপণ কাজে ফায়ার ফাইটারদের দক্ষতা ও ত্যাগের প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী ফায়ার স্টেশন এবং এর মূল্যবান যন্ত্রপাতি যথাযথভাবে সংরক্ষণেরও নির্দেশ প্রদান করেন।

তিনি বলেন, ফায়ার স্টেশনগুলো এবং এর মূল্যবান যন্ত্রপাতি জনগণের সম্পত্তি। এগুলোর যথাযথ যতœ নিবেন। সর্বোচ্চ পরিমাণ সেবা যাতে আমরা পেতে পারি সেদিকে লক্ষ্য রাখবেন। পাশাপাশি অগ্নিকা-স্থলে দমকল বাহিনীর গাড়ির ওপর হামলার অতীত নজির দেশে থাকার উল্লেখ করে এ ধরনের ঘটনা ঘটলে ঘটনায় জড়িতদের আইনানুগ ব্যবস্থার সম্মুখীন হতে হবে বলেও তিনি সতর্ক করে দেন। একই সঙ্গে অগ্নিকা- যাতে না ঘটে সে জন্য দেশের জনগণকে সচেতন থাকার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে আবার রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে সারাবিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিলেও আওয়ামী লীগ সরকার দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী যে কোন প্রকার মজুদদারির বিরুদ্ধে ত্বরিত ব্যবস্থা গ্রহণেরও নির্দেশ প্রদান করেন। উৎপাদন বৃদ্ধির এবং দেশের সকল জমি আবাদের আওতায় আনার ফের আহ্বান জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা হোল্ডিং করবে বা যারা মানুষের এই প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে কোন রকমের খেলা খেলতে যাবে, তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। তিনি বলেন, অনেক উন্নত দেশে এখন খাদ্যের জন্য হাহাকার। অনেক ইউরোপিয়ান দেশে ৭, ৮, ৯ পার্সেন্ট ইনফ্লেশন রেট। তারপরও আমরা কিন্তু আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছি দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে।

দেশের মানুষকে উদ্দেশ করে শেখ হাসিনা বলেন, এই যুদ্ধের কারণে বিদেশ থেকে যে সমস্ত জিনিস আমরা আমদানি করি, সেগুলো আনা খুব কষ্টকর হয়ে গেছে, পাওয়া যাচ্ছে না। অনেক দেশ তাদের উৎপাদিত পণ্য আর রফতানি করছে না বা তারাও বিপদে আছে। সে ক্ষেত্রে আমাদের দেশে আমাদের যে মাটি, মানুষ আছে- সেটাই ব্যবহার করে আমাদের নিজেদেরকে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি থাকবে না। যেখানে যার যতটুকু আছে তা আবাদ করবেন। নিজের প্রয়োজনীয় জিনিস নিজেরা উৎপাদন করে নিজেদের ব্যবহার করার ব্যবস্থা নিতে হবে। যেন কারও মুখাপেক্ষী হয়ে আমাদের থাকতে না হয়। সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দেবেন। উল্লেখ্য, রবিবার দেশের পাঁচটি বিভাগের ২৫টি জেলার ৩৯টি উপজেলার ৪০টি ফায়ার স্টেশনের কার্যক্রম নতুন করে চালু হলো। সারাদেশে প্রত্যেক উপজেলা ও গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে ফায়ার স্টেশন নির্মাণে তিনটি প্রকল্প চলমান রয়েছে। চলমান তিনটি প্রকল্পের কাজ শেষ হলে ফায়ার স্টেশনের মোট সংখ্যা হবে ৫৪৪টি।

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.