এক মেট্রোরেলে ক্ষতি কমবে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা

0

বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : রাজধানী ঢাকায় যানজটে বছরে ক্ষতির পরিমাণ ৩৩ হাজার ৮৮৮ কোটি টাকা। উত্তরার দিয়াবাড়ি থেকে মতিঝিল পর্যন্ত নির্মাণাধীন এমআরটি-৬ (মেট্রোরেল) তিন হাজার ৪৯০ কোটি টাকা ক্ষতি কমবে। যাতায়াতের সময় কমায় দিনে ক্ষতি কমবে আট কোটি ৩৮ লাখ টাকা। পরিবহন পরিচালনা বাবদ দৈনিক সাশ্রয় হবে এক কোটি ১৮ লাখ টাকা।

বুধবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘প্রগ্রেস অ্যান্ড প্রসপেক্ট অব এমআরটি লাইন-৬’ শীর্ষক সেমিনারে এ তথ্য জানান মেট্রোরেলের নির্মাণকারী সরকারি কোম্পানি ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম, এ, এন, ছিদ্দিক।

সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরীর সভাপতিত্বে সেমিনারে বক্তব্য রাখেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম, সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি রওশন আরা মান্নান। একই অনুষ্ঠানে এমআরটি-১ এর লাইসেন্স হস্তান্তর করেন দুই মেয়র।

সেমিনারের পর সচিব ও মেট্রোরেলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন। এমআরটি-৬ লাইনের স্টেশন থেকে সিঁড়ি নামানোর পর ফুটপাত অবশিষ্ট না থাকার বিষয়ে এম, এ, এন, ছিদ্দিক বলেন, প্রকল্পের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা হয়েছিল আগের সরকারের সময়ে। তখন মিরপুর এলাকার ফুট ওভারব্রিজের সিঁড়ি ফুটপাতেই ছিল। কাজ শুরুর পর দেখা যায়, সিঁড়ি নির্মাণের পর ফুটপাত থাকছে না। ফলে সিঁড়ির পাশে তিন মিটার করে জমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে ফুটপাত নির্মাণে।

কবে কাজ শুরু হবে- এ প্রশ্নে বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর পর্যন্ত (এমআরটি-১) মেট্রোরেল নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক সাইদুল হক জানান, পরিকল্পনায় দীর্ঘ সময় লাগলেও বাস্তবায়ন দ্রুত হবে। তিনটি টানেল বোরিং মেশিনে (টিবিএম) প্রতিদিন ৩০ মিটার করে পাতাল রেলপথ নির্মাণ সম্পূর্ণ হবে। স্টেশন নির্মাণ হবে ওপেন কাট পদ্ধতিতে। এমআরটি-১ মাটির ৩০ মিটার গভীরে নির্মিত হওয়ায় জনদুর্ভোগ হবে না। প্রতিটি স্টেশন নির্মাণে ছয় মাস করে সময় লাগবে।

এমআরটি-১ বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর এবং নতুনবাজার থেকে পূর্বাচল এই রুটে বিভক্ত। ১৯ দমশিক ৮৭ কিলোমিটার দীর্ঘ বিমানবন্দর-কমলাপুর অংশের ১২টি স্টেশনই মাটির নিচে নির্মিত হবে। ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানান, যেসব প্রতিষ্ঠান ঠিকাদারি কাজ পাবে, তারাই টিবিএম আনবে। টানেল খনন করবে। কবে নাগাদ এ কাজ শুরু হবে তা স্পষ্ট করেননি তিনি।

এমডি আবারও জানান, ডিসেম্বরেই চালু হবে এমআরটি-৬ এর দিয়াবাড়ি-আগারগাঁও অংশ। ট্রেন ঘোরানোর জায়গা নেই বলে ফার্মগেট পর্যন্ত এখনই চালু করা যাচ্ছে না। যাত্রীদের সুবিধার্থে দিয়াবাড়ি এবং আগারগাঁও থেকে বিআরটিসির বাস সুবিধা থাকবে। শিগগির এ বিষয়ে সংস্থাটির সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই হবে।

এমআরটি-৬ এ সর্বনিম্ন ২০ টাকা ভাড়া প্রস্তাব করা হয়েছে। পরবর্তী প্রতি স্টেশনের জন্য ১০ টাকা করে দিতে হবে। এ ভাড়াই চূড়ান্ত হবে, না কমবে- এ প্রশ্নে সচিব জানিয়েছেন, এ বিষয়ে কাজ চলছে। ভাড়া চূড়ান্ত হলে জানানো হবে।

ডিএমটিসিএল ঢাকায় ৬১ কিলোমিটার পাতালসহ প্রায় ১২৯ কিলোমিটার দীর্ঘ পাঁচটি মেট্রোরেল লাইন নির্মাণ করছে। সেতু বিভাগ ২৫৮ কিলোমিটার পাতাল রেলপথ (সাবওয়ে) নির্মাণে ৩২১ কোটি টাকায় সম্ভাব্যতা যাচাই করেছে।

সেতু বিভাগও কেন পাতাল রেলে ঝুঁকেছে- এ প্রশ্নে এম, এ, এন, ছিদ্দিক বলেছেন, ডিএমটিসিএল সরকারি রাস্তার ওপরে বা নিচে রেলপথ তৈরি করছে। সেতু বিভাগের পরিকল্পনায় অনেক ক্রস কাটিং রয়েছে। তারা সাধারণ মানুষের জমির নিচে রেলপথ নির্মাণের পরিকল্পনা করছে। ফলে মাটির ৯০ মিটার গভীরে নির্মাণকাজ করতে হবে। এতে ব্যয় বেশি।

সিটি করপোরেশনের সঙ্গে মেট্রোরেলের সমন্বয়হীনতা নিয়ে সেমিনারে প্রশ্ন তুলেন মেয়র আতিকুল ইসলাম। তিনি বলেছেন, সমন্বয়ের বিকল্প নেই। মেট্রোরেলের নিচের রাস্তা, ড্রেন, ফুটপাত ঠিক রাখতে হবে। তা না হলে যাত্রীরা স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচল করতে পারবেন না। স্টেশন থেকে ওঠানামার পাবলিক স্পেস খুব গুরুত্বপূর্ণ। ফজলে নূর তাপস বলেন, ঢাকা শহরে হাতের ইশারায় ট্রাফিক ব্যবস্থা চলে। উন্নত শহর চাইলে এই ব্যবস্থা থেকে বের হতে হবে। এর জন্য মানসিকতারও পরিবর্তন দরকার।

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.