ডিজিটাল লেনদেনে নতুন সংযোজন ‘বিনিময়’ শুরু রোববার

0

বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : ব্যাংক, এমএফএস ও পিএসপির মধ্যে আন্তলেনদেন নিষ্পত্তির সুযোগ দিতে ‘বিনিময়’ নামে একটি নতুন একটি প্ল্যাটফর্ম করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই সেবার মাধ্যমে একটি অ্যাকাউন্ট দিয়ে বিকাশ থেকে রকেটে অথবা রকেট থেকে এমক্যাশ বা বিকাশে কিংবা ব্যাংকে তাৎক্ষণিক লেনদেন করা যাবে।

ডিজিটাল লেনদেনের এই প্ল্যাটফর্মের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হচ্ছে রোববার। রাজধানীর র‌্যাডিসন ব্লু হোটেলে আনুষ্ঠানিকভাবে এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়।

বাণিজ্যিক ব্যাংক বা মোবাইল ব্যাংকিং সার্ভিসেস (এমএফএস) প্রতিষ্ঠানে অ্যাকাউন্ট থাকলে সংশ্লিষ্ট গ্রাহক এই সেবা নিতে পারবেন। এমএফএস বা ব্যাংকের যেকোনো অ্যাকাউন্ট দিয়ে গ্রাহক বিকাশ, রকেট, উপায় কিংবা এমক্যাশে ‘বিনিময়’ ব্যবহার করে টাকা লেনদেন করতে পারবেন।

এত দিন শুধু বিকাশ দিয়ে বিকাশে বা রকেট দিয়ে রকেটে টাকা পাঠানো যেত। এখন যেকোনো অপারেটরে টাকা পাঠানো যাবে।

গ্রাহক তার ব্যাংক বা এমএফএস অ্যাপে ‘বিনিময়’ আইকন থেকে আইডি খুলতে পারবেন। ‘বিনিময়’ ব্যবহার করে কোনো ঝামেলা ছাড়াই সহজে ও দ্রুত লেনদেন করা যাবে। এ ক্ষেত্রে শুধু অন্যের ভার্চ্যুয়াল আইডি দিলেই চলে যাবে টাকা। নাম, ব্যাংক বা অ্যাকাউন্ট নম্বর দেয়ারও প্রয়োজন হবে না। প্রাথমিকভাবে ছোট পরিসরে লেনদেনের সুযোগ মিলবে এই ব্যবস্থা থেকে।

‘বিনিময়’ প্ল্যাটফর্মের জন্য শুরুতে ব্যয় ধরা হয়েছিল প্রায় ৫৫ কোটি টাকা। পরে খরচ বেড়ে হয় ৬৫ কোটি টাকা।

মূলত চারটি প্রতিষ্ঠান এই প্ল্যাটফর্ম তৈরির কাজ করে। তারা হলো- ওরিয়ন ইনফরম্যাটিকস লিমিটেড, মাইক্রোসফট বাংলাদেশ লিমিটেড, ফিনটেক সল্যুশন লিমিটেড ও সেইন ভেঞ্চারার্স লিমিটেড (জেভি)। এর মধ্যে ওরিয়ন ও ও ফিনটেক সল্যুশন রক্ষণাবেক্ষণ সেবা দিয়ে যাবে।

 

যেভাবে কাজ করবে ‘বিনিময়’

শুরুতেই বিনিময় নামে ভিন্ন কোনো অ্যাপ তৈরি হচ্ছে না। বিনিময় একটি সেবা হিসেবে ব্যাংক, এমএফএসের অ্যাপে যুক্ত হবে। বিনিময় ব্যবহার করতে চাইলে গ্রাহককে নিবন্ধন করে নামের পরে @binimoy.gov.bd-এ যুক্ত হয়ে একটি আইডি তৈরি করতে হবে। নিবন্ধনের পর ‘সেন্ড মানি’ ও ‘রিসিভ মানি’ নামে দুটি অপশন দেখতে পাবেন গ্রাহক।

কাউকে টাকা পাঠাতে চাইলে সেন্ড মানি অপশনে গিয়ে যেসব আর্থিক প্রতিষ্ঠানে গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট আছে তা থেকে একটি বেছে নিতে হবে। এটা নির্ধারণের পর টাকা যাকে পাঠানো হবে তার মোবাইল ফোন নম্বর বা ইতিমধ্যে যদি ওই ব্যক্তির ‘বিনিময়’-এ আইডি থাকে, সেই আইডি নম্বর দিয়ে টাকা পাঠানো যাবে।

যাকে টাকা পাঠানো হবে তিনি ‘রিসিভ মানি’ অপশনে গিয়ে নিজের অ্যাকাউন্টে থাকা যেকোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নম্বরে টাকাটা গ্রহণ করতে পারবেন।

 

১১ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে লেনদেন শুরু

এর আগেও এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর একটির সঙ্গে আরেকটির পারস্পরিক লেনদেনের প্রক্রিয়া, অর্থাৎ এক এমএফএস থেকে অন্য এমএফএসে টাকা পাঠানোর সব প্রস্তুতি শেষ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেবা চালু করেনি বাংলাদেশ ব্যাংক। কারণ, তখন এতে যুক্ত হয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ। নতুন সরকারি প্রকল্প নেয়া হয়।

দীর্ঘদিন ধরে এমএফএস সেবার গ্রাহকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক এই সেবা চালু করেছে। তবে ‘বিনিময়’ চালু হওয়ার পর এখনই সব ব্যাংক, এমএফএস ও পেমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডার (পিএসপি) এ সেবাতে যুক্ত হচ্ছে না।

প্রাথমিকভাবে ১১টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে লেনদেন শুরু হচ্ছে। এর মধ্যে ৮টি ব্যাংক এবং বাকি তিনটি এমএফএস প্রতিষ্ঠান।

ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে- সোনালী, ব্র্যাক, ইউসিবি, ইস্টার্ন, মিউচুয়াল ট্রাস্ট, পূবালী, আল-আরাফাহ ইসলামী ও মিডল্যান্ড ব্যাংক। আর এমএফএস প্রতিষ্ঠান হলো- বিকাশ, ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংকের রকেট ও ইসলামী ব্যাংকের এমক্যাশ। এর বাইরে টালি পে নামের একটি পেমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডার (পিএসপি) যুক্ত হবে।

 

‘বিনিময়’-এর চার্জ

‘বিনিময়’ সেবার লেনদেনসহ অন্যান্য চার্জ ও ফি কত হবে তা নির্ধারণ করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেমস বিভাগ চার্জ ফি চূড়ান্ত করে একটি সার্কুলার জারি করেছে।

তাতে বলা হয়েছে, ইন্টার অপারেবল ডিজিটাল ট্রানজেকশন প্ল্যাটফর্ম (আইডিটিপি) ‘বিনিময়’ ব্যবহার করে যে কোনো অংকের প্রতিটি লেনদেনে অর্থ গ্রহণকারী প্রতিষ্ঠান প্ল্যাটফর্মকে অর্থাৎ বাংলাদেশ ব্যাংককে ৫০ পয়সা দেবে।

ব্যাংক ছাড়া অন্যদের ইন্টারঅপারেবল চার্জ দিতে হবে, যা অর্থ গ্রহণকারী প্রতিষ্ঠান অর্থ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানকে দেবে। ইন্টারঅপারেবল ফি গ্রাহক থেকে নেয়া যাবে না।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, বিনিময় প্লাটফর্ম থেকে ব্যাংক টু ব্যাংক যে কোনো অংকের লেনদেনে গ্রাহক থেকে সর্বোচ্চ ১০ টাকা নেয়া যাবে।

ব্যাংক থেকে পিএসপি এবং এমএফএস লেনদেনে গ্রাহক থেকে কোনো চার্জ নেয়া যাবে না। তবে এমএফএস ও পিএসপির ক্ষেত্রে অর্থ গ্রহণকারী প্রতিষ্ঠান অর্থ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানকে শূন্য দশমিক ৪৫ শতাংশ হারে চার্জ দেবে।

আর এমএফএস ও পিএসপি থেকে ব্যাংক লেনদেনে গ্রাহক থেকে সর্বোচ্চ ১ শতাংশ ফি আদায় করা যাবে। এখানে কোনো ইন্টারঅপারেবল চার্জ লাগবে না।

তবে পিএসপি টু পিএসপি ও এমএফএস লেনদেনে গ্রাহক থেকে নেয়া যাবে সর্বোচ্চ শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ। এক্ষেত্রে ইন্টারঅপারেবল চার্জ হিসেবে অর্থ গ্রহণকারী প্রতিষ্ঠান অর্থ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানকে ফি দেবে দশমিক ৭৫ শতাংশ হারে।

অর্থাৎ গ্রাহক পর্যায়ে বিকাশ থেকে রকেটে লেনদেনে প্রতি হাজারে গ্রাহকের খরচ পড়বে পাঁচ টাকা। এই সেবার মাধ্যমে পিএসপি থেকে কোনো ব্যাংকে টাকা গেলে প্রতি হাজারে গ্রাহককে গুনতে হবে ১০ টাকা। পিএসপি থেকে পিএসপি ও এমএফএসে টাকা পাঠালে গ্রাহককে দিতে হবে প্রতি হাজারে পাঁচ টাকা। এ ক্ষেত্রে যে পিএসপি ও এমএফএসে টাকা যাবে, তাদের দশমিক ৭৫ শতাংশ হারে মাশুল দিতে হবে। যে প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা যাবে সেই প্রতিষ্ঠান এই মাশুল পাবে। একইভাবে এমএফএস থেকে ব্যাংকে টাকা গেলে প্রতি হাজারে গ্রাহককে দিতে হবে ১০ টাকা।

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.