ভোটের বার্তা নিয়ে মাঠে শেখ হাসিনা

0

বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : ২৪ নভেম্বর যশোর, ৪ ও ৭ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম-কক্সবাজারে জনসভা ♦ উন্নয়ন কর্মকান্ডের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ♦ টানা তিন মেয়াদের উন্নয়ন তুলে ধরা ♦ চতুর্থ মেয়াদে কী করবেন জানানো ♦ স্মরণকালের জনসমাগমের প্রস্তুতি ♦ ২৪ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয়সহ মাসব্যাপী জেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের সম্মেলন

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এক বছরের কিছু বেশি বাকি থাকতেই ভোটের বার্তা নিয়ে মাঠে নামছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামী বৃহস্পতিবার যশোর থেকে শুরু হবে তাঁর নির্বাচনী জনসভা। এরপর ৪ ও ৭ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজারে দলীয় জনসভায় ভাষণ দেবেন। এ তিনটি জনসভায় স্মরণকালের জনসমাগম ঘটানোর প্রস্তুতি চলছে স্থানীয় পর্যায়ে। কেন্দ্রীয় নেতারাও এসব জনসভা সফল করতে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও আওয়ামী লীগের উচ্চ পর্যায়ের একাধিক সূত্র জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন করোনা থাকার কারণে প্রধানমন্ত্রী দেশে কোনো দলীয় কার্যক্রমে সরাসরি অংশ নিতে পারেননি। করোনা-উত্তর যশোরের জনসভাই হবে ঢাকার বাইরে প্রধানমন্ত্রীর প্রথম কোনো প্রকাশ্য কর্মসূচি। এর মাধ্যমে তিনি দেশব্যাপী দলীয় কার্যক্রমেরও সূচনা করতে যাচ্ছেন। ওইদিন যশোর শহরের শামসুল হুদা স্টেডিয়ামে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় ভাষণ দেবেন তিনি। এরপর ৪ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের পোলোগ্রাউন্ডে ও ৭ ডিসেম্বর কক্সবাজারের শেখ কামাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দলীয় জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেবেন। এসব কর্মসূচিতে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের ফলক উন্মোচন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। এ ছাড়া বিগত টানা ১৪ বছর ক্ষমতায় থাকায় আওয়ামী লীগ সরকার দেশের যেসব উন্নয়ন করেছে তা জনগণের সামনে তুলে ধরবেন তিনি। একই সঙ্গে ক্ষমতায় আসার আগে কী পরিস্থিতি ছিল সেগুলোও জনগণকে মনে করিয়ে দেবেন। টানা চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতায় আসতে জনগণের কাছে আবারও নৌকায় ভোট চাইবেন টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

একই সঙ্গে বিএনপিসহ সরকারবিরোধীদের বিভিন্ন অপপ্রচারের জবাব দেবেন। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘করোনার কারণে বঙ্গবন্ধুকন্যা জনগণের কাছাকাছি দীর্ঘদিন যেতে পারেননি। করোনার প্রকোপ কমে আসায় তিনি এখন বিভিন্ন জায়গায় জনসভা শুরু করবেন। ইতোমধ্যে তিনটি জেলায় জনসভার তারিখ চূড়ান্ত হয়েছে। এসব জনসভায় সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ড তুলে ধরার পাশাপাশি বিএনপি-জামায়াত আমলে দেশের পরিস্থিতি কী ছিল তা-ও জনগণকে মনে করিয়ে দেবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।’ দলের একাধিক সূত্র জানিয়েছেন, সর্বশেষ আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা জানিয়েছেন তিনি এখন সংগঠন শক্তিশালী করতে মাঠ পর্যায়ে যাবেন। টানা ১৪ বছর ক্ষমতায় থাকায় যেসব জেলায় যেতে পারেননি, সেসব জেলাকে প্রাধান্য দিয়ে কর্মসূচি সাজানো হবে। দলের আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মী শেখ হাসিনাকে একনজর কাছ থেকে দেখতে চান। তাঁর মুখ থেকে দিকনির্দেশনা পেতে চান। সামনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন, নির্বাচনী বার্তা নিয়ে তিনি জনগণের কাছে যাবেন। বিগত তিন মেয়াদে দেশের পরিস্থিতি কতটা উন্নত হয়েছে, তা তুলে ধরবেন জনগণের সামনে। একই সঙ্গে আগামীতে ক্ষমতায় এলে কী কী করবেন সেগুলোও জানাবেন দেশবাসীকে।’

যশোর হবে মহাসমুদ্র : স্থানীয় সূত্র জানান, ১৯৭২ সালের ২৬ ডিসেম্বর যশোর স্টেডিয়ামের জনসভায় ভাষণ দিয়েছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সে জনসভা জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছিল। একই স্টেডিয়ামে ৫০ বছর পর ২৪ নভেম্বর বৃহস্পতিবার জনসভায় ভাষণ দেবেন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর জনসভা সফল করার লক্ষ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে জেলা আওয়ামী লীগ। এ জনসভায় ১০ লক্ষাধিক মানুষের উপস্থিতি নিশ্চিতে কাজ করছে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর প্রতিটি ইউনিট। ইতোমধ্যে যশোর শামসুল হুদা স্টেডিয়ামের নতুনরূপে সাজসজ্জার কাজ শুরু হয়েছে। স্টেডিয়ামের উত্তরপাশের জীর্ণ গ্যালারি ভেঙে ফেলা হয়েছে। এতে স্টেডিয়াম ও ডা. আবদুর রাজ্জাক মিউনিসিপ্যাল কলেজ মাঠ একাকার হয়েছে। বিশাল মাঠে ব্যাপক জনসমাগম ঘটাতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি ইউনিটের নেতা-কর্মীরা তৃণমূলে জনসংযোগ করছেন। বর্তমান সরকারের উন্নয়ন ও সফলতার বার্তা পৌঁছে দিচ্ছেন। একই সঙ্গে জনসভায় হাজির হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন নেতারা। এ জনসভা জনসমুদ্রে রূপ দিতে বঙ্গবন্ধুর ভ্রাতুষ্পুত্র বাগেরহাট-১ আসনের সংসদ সদস্য শেখ হেলাল উদ্দিন দীর্ঘ সাত দিন যশোরসহ পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোয় কর্মিসভা, বর্ধিত সভা, পথসভা করে চলেছেন। তাঁর দীর্ঘদিনের এ পরিশ্রমে জনসভাটি রীতিমতো মহাসমুদ্রে রূপ নেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। শেখ হেলাল উদ্দিনের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন, শেখ সারহান নাসের তন্ময় এমপিসহ নেতারা কাজ করছেন। এ ছাড়া বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্মসাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ও সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক শুধু যশোরই নয়, পার্শ¦বর্তী জেলা-উপজেলায় গণসংযোগ, কর্মিসভা করে বেড়াচ্ছেন। এতে আওয়ামী লীগের অন্য নেতারাও অংশ নিচ্ছেন। যশোরের জনসভা সফল করতে গতকালও মাগুরা জেলা আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভা করা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন শেখ হেলাল উদ্দিন। মাগুরা জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আ ফ ম আবদুল ফাত্তাহর সভাপতিত্বে ও জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ কুমার কুন্ডুর সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, যুগ্মসাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল ও এস এম কামাল হোসেন, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সদস্য অ্যাডভোকেট আমিরুল আলম মিলন এমপি, অ্যাডভোকেট গ্লোরিয়া ঝর্ণা এমপি, মাগুরা-১ আসনের এমপি অ্যাডভোকেট সাইফুজ্জামান শিখর, মাগুরা-২ আসনের এমপি বীরেন সিকদার, বাগেরহাট-২ আসনের এমপি শেখ সারহান নাসের তন্ময় প্রমুখ। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে আগামীর বাংলাদেশ কেমন হবে, সে বার্তা দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিএনপি-জামায়াত সাম্প্রদায়িক শক্তি কাজে লাগিয়ে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত- দেশবাসীকে এ বিষয়ে সতর্ক করবেন তিনি। দলীয় নেতা-কর্মীদের দেবেন দিকনির্দেশনা। অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে শান্তির বার্তাই হবে এ জনসভা।’ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন, ‘পদ্মা ও কালনা সেতুর মাধ্যমে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ নতুন স্বপ্ন দেখা শুরু করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুধু স্বপ্নই দেখান না, নিজে স্বপ্ন পূরণে নিরলস পরিশ্রম করেন। বৃহস্পতিবারের জনসভা জনসমুদ্রে রূপ দিতে বঙ্গবন্ধুর ভ্রাতুষ্পুত্র শেখ হেলাল উদ্দিন দীর্ঘ সাত দিন মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। এর প্রতিফলন আমরা ওইদিন দেখতে পাব।’

জনস্রোত নামবে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে : ৪ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের পোলোগ্রাউন্ড মাঠে আওয়ামী লীগের জনসভা। ৭ ডিসেম্বর কক্সবাজারে জনসভা। এ জনসভা সফল করতে বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনসহ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে যেসব কেন্দ্রীয় নেতা আছেন তাঁরা রাতদিন পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। চট্টগ্রামে ৪ ডিসেম্বরের জনসভা উপলক্ষে পোলোগ্রাউন্ড মাঠে ৪ লাখ নেতা-কর্মীসহ মাঠের বাইরে ১০ লাখ মানুষের সমাগম ঘটানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। তারা যেন প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য শুনতে পারেন সেজন্য লাগানো হবে ৩০০ মাইক। পোলোগ্রাউন্ডে ৭ ফুট উঁচু মঞ্চ তৈরি করা হবে। এর দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ হবে যথাক্রমে ১২০ ও ১৪০ ফুট। এতে বসতে পারবেন ২০০ অতিথি। কক্সবাজারে সমুদ্রপাড়ের শেখ কামাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ৭ ডিসেম্বরের জনসভাস্থল ও এর আশপাশ এলাকায় ৫ লাখ মানুষের সমাগম ঘটানোর টার্গেট নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে জেলা আওয়ামী লীগ প্রধানমন্ত্রীর জনসভা সফল করতে কয়েক দফা বৈঠক করেছে। এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, ‘জনসভা দুটি সফল করার জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে। নেতা-কর্মীরা অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন। এ জনসভা দুটির চরিত্র হবে নির্বাচনী জনসভা। আমরা আশা করছি বীর চট্টলা ও সমুদ্রকন্যা কক্সবাজার অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করে জনসভার নতুন রেকর্ড গড়বে।’

চলমান রয়েছে সাংগঠনিক কার্যক্রম : ২৪ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলন। এর আগে হবে সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সম্মেলন। কেন্দ্রীয় সম্মেলন সফল করতে চলছে জেলা-উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন। ২৫ নভেম্বর স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ-স্বাচিপের সম্মেলন। ২৬ নভেম্বর মহিলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন। ২ ডিসেম্বর ঢাকা মহানগরী উত্তর ও দক্ষিণ ছাত্রলীগের সম্মেলন, ৮-৯ ডিসেম্বর ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলন। ১৫ ডিসেম্বর যুব মহিলা লীগের সম্মেলন হবে। এ ছাড়া ঢাকা মহানগরী উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সম্মেলন হওয়ার কথা রয়েছে। কিছুদিন ধরে প্রায় প্রতিদিনই জেলা-উপজেলায় সম্মেলন চলছে। গতকালও লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন হয়েছে। ৭৮টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে প্রায় ৫০টির মতো জেলার সম্মেলন হয়েছে। ৬৫০টি সাংগঠনিক উপজেলার মধ্যে প্রায় পৌনে ৫০০ উপজেলার সম্মেলন শেষ হয়েছে। সব মিলে আওয়ামী লীগকে ঢেলে সাজাতে চলছে সাংগঠনিক কার্যক্রম। একটাই লক্ষ্য- তৃণমূল শক্তিশালী করা এবং অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসন করে টানা চতুর্থ মেয়াদে আওয়ামী লীগকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এনে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি।

আপনি এগুলোও দেখতে পারেন

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.