দেশ নিয়ে কাউকে ছিনিমিনি খেলতে দেব না : প্রধানমন্ত্রী
বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা কাউকে দেশ নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে দেব না। তারা আন্দোলন করতে চাইলে আমরা বাধা দেব না। কিন্তু আন্দোলনের নামে আবারও নাশকতা করলে, দেশের ক্ষতি করতে চাইলে তাদের উপযুক্ত জবাব বাংলাদেশের জনগণ দেবে। আগামী দিনে একটা মানুষকেও তারা ক্ষতিগ্রস্ত করলে যে হাত দিয়ে আগুন দেবে, ওই আগুনে সেই হাত পুড়িয়ে দেওয়া হবে। যে হাতে মানুষ খুন করবে, তাদের উপযুক্ত শিক্ষা দেওয়া হবে।
এ কথাটা যেন সবার মনে থাকে। শনিবার টুঙ্গিপাড়া উপজেলা কার্যালয়ে আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটি, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি ও উপদেষ্টা পরিষদের প্রথম যৌথসভায় তিনি এসব কথা বলেন। সভার কার্যক্রম শুরুর আগে শোক প্রস্তাব গৃহীত হয়। এর আগে তিনি গোপালগঞ্জের সার্বিক উন্নয়নে ২৭টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন এবং একটি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে দেশ চলবে। এ মাটিতে বসে প্রতিজ্ঞা করছি, বাংলাদেশের মানুষের আর্থসামাজিক উন্নতি কেউ যাতে গতিরোধ করতে না পারে, সেজন্য আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যন্ত প্রতিটি নেতাকর্মীকে সজাগ থাকতে হবে, দৃঢ় থাকতে হবে। যে কোনো অপকর্ম প্রতিরোধ করতে হবে। তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত অগ্নিসন্ত্রাস করেছিল। তাদের ঘৃণা জানাতে হবে। তারা মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করে মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। হত্যা, খুন ও গুম জিয়াউর রহমান শুরু করেছিল। খালেদা জিয়া ও তার কুলাঙ্গার পুত্র মিলে ২১ আগস্ট থেকে শুরু করে অনেক মানুষ হত্যা করেছে এবং অত্যাচার নির্যাতন করেছে। দলকে সুসংগঠিত ও তৃণমূলকে শক্তিশালী করে গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের সজাগ থাকতে হবে যাতে অতীতের মতো আগুনসন্ত্রাস ও নাশকতা করে কেউ যেন দেশকে অস্থিতিশীল করতে না পারে। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, দেশের মানুষের জীবনমান উন্নয়নে যা যা করা দরকার, আওয়ামী লীগ সব করতে অঙ্গীকারবদ্ধ। আমরা সর্বদা জনগণের পাশে আছি এবং জনগণের সেবা করাই আমাদের মূলমন্ত্র। শুধু আওয়ামী লীগ সরকার নয়, এর নেতাকর্মীরাও জনগণের প্রয়োজনে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। করোনাভাইরাস এবং যে কোনো দুর্যোগে জনগণের পাশে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের দাঁড়ানো প্রমাণিত হয়-আওয়ামী লীগ সর্বদা জনগণের প্রতিটি দুঃখ-কষ্টে পাশে থাকে। তিনি বলেন, দেশবাসীর আর্থসামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট দেশে রূপান্তরের স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করতে নবগঠিত কমিটির সব সদস্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমাদের (আওয়ামী লীগের) নীতি হলো জনগণের দুঃখ-কষ্টে তাদের পাশে দাঁড়ানো। কারণ, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশবাসীকে একটি সুন্দর জীবন দিতে চেয়েছিলেন এবং আমরা সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছি। তিনি জানান, তার সময়ে দেশের ব্যাপক অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে। এসব উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রেখে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা হবে। স্মার্ট বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীও স্মার্ট হবে। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে উন্নত বাংলাদেশ।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের যে নতুন কমিটি হয়েছে, আমাদের কমিটির সদস্য প্রত্যেকে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ বাংলার মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়নে আমাদের যা যা করণীয়, তা আমরা করে যাব; তাদের পাশে আমরা চিরদিন থাকব; চিরদিন আছি এবং মানুষের সেবা করাটাই আমাদের সব থেকে বড় লক্ষ্য। বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের যে মর্যাদা পেয়েছে, তা ধরে রেখে এগিয়ে যাওয়াই তার সরকারের লক্ষ্য উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, উন্নয়নশীল দেশ হিসাবে কী কী করণীয়, সে বিষয়েও সরকার কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। তিনি বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে আরও ব্যাপকভাবে অর্থনৈতিক মন্দা শুরু হয়েছে। আজ উন্নত দেশও হিমসিম খাচ্ছে এবং নিজেদের তারা অর্থনৈতিক মন্দার দেশ হিসাবে ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু আল্লাহর রহমতে বাংলাদেশ এখনো সে পর্যায়ে যায়নি এবং তার সরকার এখনো বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখতে সক্ষম হয়েছে। পাশাপাশি সামাজিক নিরাপত্তাবলয়ের কর্মসূচির কলেবর বৃদ্ধি করেছে। অতি উচ্চমূল্যে বিদেশ থেকে ক্রয় করতে হলেও ভর্তুকি প্রদান করে নিত্যপণ্য মানুষের মাঝে সরবরাহ করছে। এর মধ্যে মাত্র ১৫ টাকায় চাল ক্রয়, মধ্যবিত্তের জন্য টিসিবির বিশেষ কার্ডের মাধ্যমে চাল ক্রয়ের সুবিধা, ভিজিডি-ভিজিএফ-এর মাধ্যমে একেবারে হতদরিদ্রদের খাদ্য সাহায্য প্রদান, বয়স্কভাতা, বিধবা বা স্বামী পরিত্যক্ত ভাতা ও প্রতিবন্ধি ভাতাসহ নানা ধরনের ভাতা বর্ধিত হারে প্রদান করছে, যাতে মানুষের কোনো কষ্ট না হয়। এ সময় দেশের সব অনাবাদি জমিকে চাষের আওতায় আনার মাধ্যমে উৎপাদন বাড়ানোয় তার আহবান পুনর্ব্যক্ত করে তিনি বলেন, অনেক দেশে আজ খাদ্যের জন্য হাহাকার। কিন্তু আমরা এ মাটিকে যথাযথ ব্যবহার করতে পারলে নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে অন্যকেও সাহায্য করতে পারব।
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ এদেশের মানুষকে স্বাধীনতা যেমন এনে দিয়েছে, তেমনই আর্থসামাজিক উন্নতিও এনে দিয়েছে। মাত্র ১৪ বছরে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। বিশ্বে একটা মর্যাদা পেয়েছে। এ জাতিকে একটি আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন জাতি হিসাবে আমরা গড়ে তুলতে চাচ্ছি এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলেছি। সেই সঙ্গে আমরা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও নিয়েছি। সারা দেশে আমরা যেমন হাইটেক পার্ক করছি, স্কুলগুলোয় কম্পিউটার ল্যাব করছি, প্রযুক্তি শিক্ষা এবং বহুমুখী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি। আমাদের তরুণ প্রজন্ম যেন নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে, সেজন্য কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকে বিনা জমানতে ঋণ দেওয়া, বর্গাচাষিদের বিনা জমানতে ঋণ দেওয়া হচ্ছে, কৃষকদের জন্য ১০ টাকায় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে ভতুর্কির টাকা সরাসরি পাওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রায় ২ কোটি কৃষককে কৃষি উপকরণ ক্রয় করার জন্য কার্ড দেওয়া হয়েছে, ২ কোটি ৫০ লাখ শিক্ষার্থীকে বৃত্তি-উপবৃত্তি দিয়ে সহযোগিতা করছে, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে বিনামূল্যে পাঠ্যবই বিতরণ, শীতে কম্বল ও গরম কাপড় বিতরণ করার মাধ্যমে তাঁর সরকারের যতটুকু সাধ্য, তা নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে এবং বিত্তবানদেরও জনগণের দুঃখ-কষ্টে তাদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।
শনিবার টুঙ্গিপাড়ায় শেখ হাসিনা খুবই কর্মব্যস্ত দিন কাটান। দুপুর ১টা ৫ মিনিটে আওয়ামী লীগের ২২তম কাউন্সিলে নবনির্বাচিত জাতীয় পরিষদ, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ এবং উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে স্বাধীনতার মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। সমাধিসৌধ বেদীতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এরপর তিনি বঙ্গবন্ধুসহ ১৫ আগস্টের শহিদদের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং দেশ ও জাতির অগ্রগতি কামনা করে পবিত্র ফাতেহা পাঠ ও মোনাজাতে অংশ নেন।
শ্রদ্ধা নিবেদনের পর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গণমাধ্যমকে বলেন, নির্বাচনের বছরে চ্যালেঞ্জ অনেক রয়েছে। তবে যে কোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ক্ষমতাসীন দল প্রস্তুত। বিএনপিকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আন্দোলনের নামে কোনো অপতৎপরতা করে জনগণকে কষ্ট দেবেন না। যেভাবে পৃথিবীর অন্যসব উন্নত দেশে নির্বাচন হয়, বাংলাদেশেও একইভাবে নির্বাচন হবে। সরকার নির্বাচনে কোনো হস্তক্ষেপ করবে না। শুধু রুটিং ওয়ার্ক করবে।
বিকাল সাড়ে ৪টায় দুদিনের সফর শেষে প্রধানমন্ত্রীর সড়কপথে টুঙ্গিপাড়া থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা করেন।