দেশবিরোধী কাজে জড়ালে বাতিল হবে নিবন্ধন
বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : বেসরকারি সংস্থা বা এনজিওর কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবস্থাপনায় নতুন আইন তৈরি করছে সরকার। আইন কার্যকর হলে বিদ্যমান অধ্যাদেশটি বাতিল হয়ে যাবে।
নতুন আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে কোনো এনজিও নিষিদ্ধ রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়াতে পারবে না। দেশের সংবিধান ও প্রচলিত আইনের পরিপন্থি কাজে সম্পৃক্ত হলে নিবন্ধন বাতিল করা হবে।
এছাড়া এনজিও পরিচালনায় দুর্নীতি হলে কার্যক্রম স্থগিত, কার্যনির্বাহী পরিষদ বাতিল করে প্রশাসক বা তত্ত্বাবধায় নিয়োগ দেবে সরকার। কেউ সংক্ষুব্ধ হলে প্রতিকারের জন্য উচ্চ আদালতে যেতে পারবেন।
খসড়া আইনটিতে শ্রেণিবিশেষকে আইনের সব অথবা বিশেষ বিধান পালন থেকে অব্যাহতি দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রতি ১০ বছর পর এনজিওর নিবন্ধন নবায়ন করতে হবে। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় খসড়া আইনটিতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মতামত নিচ্ছে। স্বেচ্ছাসেবী সমাজকল্যাণ সংস্থার (এনজিও) নিবন্ধন ও ব্যবস্থাপনা আইন-২০২২ নামে এটি অভিহিত হবে।
এ বিষয়ে সমাজকল্যাণ সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম শনিবার যুগান্তরকে বলেন, অধ্যাদেশটি ১৯৬১ সালে তৈরি। এটি পুরোনো। এখন অধ্যাদেশটি আইনে রূপান্তর করা হচ্ছে। এতে নতুন বিধিবিধান যুক্ত হবে। তবে কাউকে হেনস্তা করার জন্য আইন করা হচ্ছে না। তাছাড়া অংশীজনরা যে মতামত দেবেন, সেগুলো গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নেব।
খসড়ায় বলা হয়, কোনো বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) যদি জনস্বার্থ বিরোধী, রাষ্ট্রবিরোধী, দেশের প্রচলিত আইন ও সংবিধানবিরোধী কোনো কাজে সম্পৃক্ত হয়, তবে সরকার ওই প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন বাতিল করবে। সার্বিক কার্যক্রম বন্ধের পাশাপাশি নিবন্ধন বাতিলের তারিখ থেকে প্রতিষ্ঠানটির বিলুপ্তি ঘটবে। এছাড়া আর্থিক অনিয়ম তথা দুর্নীতি কিংবা প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় অব্যবস্থাপনা পাওয়া গেলে এনজিওর কার্যক্রম স্থগিত করা হবে।
উপযুক্ত তদন্তে যদি এনজিওটির কার্যনির্বাহী পরিষদের এক বা একাধিক সদস্যের বিরুদ্ধে উল্লিখিত অপরাধে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে তাকে বা তাদের বহিষ্কার করা হবে। এরপর সরকার নির্দিষ্ট মেয়াদে এনজিওতে প্রশাসক অথবা পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট তত্ত্বাবধায়ক পরিষদ নিয়োগ করবে।
সংস্থার কার্যনির্বাহী কমিটির মতোই প্রশাসক বা তত্ত্বাবধায়ক পরিষদ ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবে। তবে নিবন্ধন বাতিল হলে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি বা সংস্থা প্রতিকারের জন্য উচ্চ আদালতে আবেদনে এই আইন বাধা হবে না।
নিবন্ধন বাতিল ও স্থগিতের ৩০ কর্মদিবসের মধ্যে সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কর্তৃক গঠিত আপিল কমিটির কাছে আপিল করবেন। আপিলের তারিখ থেকে পরবর্তী ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে নিষ্পত্তি হবে। যদি আপিল কমিটি নিবন্ধন বাতিল বা স্থগিতের আদেশ বহাল রাখে তাহলে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি কিংবা সংস্থা সমাজকল্যাণ সচিব অথবা উচ্চ আদালতে প্রতিকার দাবি করতে পারবেন।
আর নির্দোষ প্রমাণিত হলে ৯০ কর্মদিবসের মধ্যে এনজিওর গঠনতন্ত্র অনুসারে কার্যনির্বাহী কমিটি গঠন এবং স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনা করবে। সেই ক্ষেত্রে প্রশাসক বা তত্ত্বাবধায়ক কমিটি বিলুপ্ত হবে।
নিবন্ধন ছাড়া যেমন কোনো এনজিওর কার্যক্রম পরিচালনা করা যাবে না। তেমনি যথাযথ নিয়ম প্রতিপালন ছাড়া কোনো এনজিওর কার্যক্রম বন্ধও করা যাবে না। আইনের শিডিউলের বাইরে গিয়ে কোনো এনজিও নিবন্ধন নেওয়া যাবে না। এমনকি নামের ছাড়পত্রেও যদি কোনো ধরনের অগ্রহণযোগ্য শব্দ পাওয়া যায়, তবে এনজিওর নাম আংশিক কিংবা পুরোটাই বাতিল করবে নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ। সেই ক্ষেত্রে নতুন করে নামের ছাড়পত্র নিয়ে এনজিওর নিবন্ধন নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।
এনজিও বলতে কি বোঝায় তা স্পষ্ট করতে আইনের খসড়ায় বলা হয়, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে স্বেচ্ছাসেবকমূলক কাজ পরিচালনার জন্য এনজিওবিষয়ক ব্যুরোর নিবন্ধন রয়েছে এমন প্রতিষ্ঠানকে বোঝাবে। এছাড়া বিদেশি কোনো রাষ্ট্রের নিজস্ব আইনে নিবন্ধিত সংস্থা বাংলাদেশে কাজ করতে এলে এই আইনের আওতায় আসবে। এছাড়া কোনো স্বেচ্ছাসেবী সমাজকল্যাণ সংস্থা, সংগঠন, ফোরাম, সমিতি, ফাউন্ডেশন, শিশুসদন, ট্রাস্ট, বিশেষ বিদ্যালয়, পাঠাগার, অলাভজনক প্রতিষ্ঠানও এর ভেতর পড়বে। ব্যক্তি নয় সংস্থার নামে স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির এনজিওর সম্পত্তি হিসাবে বিবেচিত হবে।
সরকারের পক্ষে নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ হবে সমাজসেবা অধিদপ্তর। সংস্থাটি এনজিওর সার্বিক কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবস্থাপনা করবে। নিবন্ধন বাতিল হওয়ার পর এনজিওর সব সম্পত্তি স্বয়ংক্রিয়ভাবে সরকারি ফান্ডে জমা হবে। সমাজসেবা অধিদপ্তরের ডিজি বিধি মোতাবেক এই সম্পত্তি বিলি বণ্টন করবেন।
খসড়ায় বলা হয়, আইনের বিধান ভেঙে রাষ্ট্র ও জনস্বার্থবিরোধী কোনো কাজে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে জড়িতদের সাজা ভোগ করতে হবে। এজন্য আইনে এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড অথবা সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের কথা বলা আছে। তফশিলের বাইরে গিয়ে কেউ এনজিও পরিচালনা করতে পারবে না। এই আইন বাস্তবায়িত হলে স্বেচ্ছাসেবী সমাজকল্যাণ সংস্থাগুলোর (নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাদেশ ১৯৬১ বাতিল হয়ে যাবে।