চতুর্থ মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হবেন শেখ হাসিনা
বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যেও ‘সময়োচিত সংস্কার পদক্ষেপ’ গ্রহণের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসা করেছে বিশ্বখ্যাত সংবাদ সংস্থা ব্লুমবার্গ। বাংলাদেশে আগামী সাধারণ নির্বাচনে তার নেতৃত্বাধীন সরকার চতুর্থ মেয়াদে নির্বাচিত হবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে সংবাদ সংস্থাটি।
আন্তর্জাতিক অর্থবিষয়ক সংবাদ সংস্থাটি এক নিবন্ধে লিখেছে, ‘তিনি (শেখ হাসিনা) টানা চতুর্থ মেয়াদে জয়ী হবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।’ একই সঙ্গে শেখ হাসিনাকে পুরো তহবিল পেতে আরও সংস্কার করতে হবে বলেও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়, শেখ হাসিনা ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচনে টানা চতুর্থ মেয়াদে সম্ভাব্য জয়ী হওয়ার কারণ এটা নয় যে, যে তার অনেক প্রতিপক্ষ কারাগারে আছেন বা আইনি ফাঁদে পড়েছেন।
নিবন্ধে বলা হয়েছে যে, শেখ হাসিনার বিজয়ের কারণ ‘শুধু তার অনেক প্রতিপক্ষ কারাগারে আছে বা আইনি ফাঁদে পড়েছেন এটা নয় বরং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে তার সাফল্যের কারণেই এটা ব্যাপকভাবে প্রত্যাশিত।’
আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে দক্ষিণ এশিয়ার দেশটির সময়োপযোগী সংস্কারের জন্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণপ্রাপ্তির পটভূমিতে ব্লুমবার্গ দুটি উপ-শিরোনামসহ ‘বাংলাদেশ লিডার বেটস আইএমএফ-ম্যান্ডেটেড রিগর উইল পে অব ইন পোলস’ শিরোনামের এই নিবন্ধটি প্রকাশ করে। এতে বলা হয়, পুরো তহবিল পেতে শেখ হাসিনাকে আরও সংস্কার করতে হবে। নির্বাচনে তিনি টানা চতুর্থবারের মতো জয়ী হবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
ব্যালট বাক্সে পরাজিত হওয়ার ভয়ে বিশ্বজুড়ে সরকারি দলের নেতারা প্রায়ই আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সঙ্গে সম্মত সংস্কার বাস্তবায়নে পিছিয়ে পড়ছেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের মতো নন।
তার দ্রুত আইএমএফ ম্যান্ডেটের বাস্তবায়ন দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটি ঘুরে দাঁড়িয়েছে, যেখানে পাকিস্তান এখনো জ্বালানি ভর্তুকি নিয়ে দুরবস্থার মধ্যে রয়েছে। শ্রীলঙ্কা স্থানীয় পৌরসভা নির্বাচন বিলম্বিত করেছে, কারণ, তারা গত সপ্তাহে আইএমএফ তহবিল পেতে কর এবং সুদের হার বাড়িয়েছে।
গত জুলাই মাসে আইএমএফের সহায়তা চাওয়া দক্ষিণ এশিয়ার তিনটি দেশের মধ্যে সর্বশেষ ছিল বাংলাদেশ। দেশটি দ্রুত জ্বালানি মূল্যবৃদ্ধির পর প্রথম ঋণ অনুমোদন পেয়েছে। ৭৫ বছর বয়সী শেখ হাসিনা এই পদক্ষেপ নিতে কোনো কুণ্ঠাবোধ করেননি।
গত ৩১ জানুয়ারি আইএমএফের কাছ থেকে ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যেই শেখ হাসিনা বলেন, ‘গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যেতে পারে যদি সবাই কেনার খরচ দিতে সম্মত হয়। কতটা ভর্তুকি দেওয়া যেতে পারে? আর আমরা কেন ভর্তুকি দিতে থাকব?’ এ ধরনের মন্তব্য নির্বাচনের আগে সাধারণত শোনা যায় না। যেহেতু তিনটি দেশই আগামী ১৮ মাসে নির্বাচনের মুখোমুখি হবে।
উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান বলেছেন, ‘যদি ক্ষমতাসীন দল দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে পারে, সে ক্ষেত্রে সরকারের বিরুদ্ধে কাজ করে এমন ক্ষোভ অথবা জনসাধারণের অনুভূতি প্রশমিত হয়। শেখ হাসিনার অবশ্যই এটা বন্ধ করার বিশ্বাসযোগ্যতা আছে।’
বিপরীতে, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ চলতি বছরের শেষ দিকে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনের আগে একটি জরিপে কম ভোট পেয়েছেন। কারণ ভোটাররা দেশটির অর্থনৈতিক মন্দার জন্য তার সরকারকে দায়ী করেছে। যদিও শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রপতি রনিল বিক্রমাসিংহে সংস্কারের দিকে এগিয়ে গেলেও তিনি একটি শক্তিশালী গোষ্ঠী পরিচালিত দলের সমর্থনের ওপর নির্ভরশীল। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে তাকে নতুন ম্যান্ডেট চাইতে হবে। শেখ হাসিনার সরকার আইএমএফের পদক্ষেপের ওপর গুরুত্ব দিয়েছে এবং ৪৬০ বিলিয়ন ডলারের বাংলাদেশের অর্থনীতিকে শ্রীলঙ্কার পথে যাওয়া ঠেকিয়েছে। এ ক্ষেত্রে পাকিস্তান খেলাপি হওয়ার সম্ভাবনার সম্মুখীন।
আইএমএফের তহবিল পাওয়ার মাধ্যমে শেখ হাসিনা সরকার নির্বাচনের আগে দেশের অর্থনীতি ঠিক করতে কিছুটা হলেও সময় পাচ্ছেন। সাধারণত দুর্বল অর্থনীতির লক্ষণগুলো সরকারপ্রধানের বিরুদ্ধে জনগণের ক্ষোভের কারণ হয়ে ওঠে। বিশেষ করে যখন কেউ ১৪ বছরে গড়ে ৬ শতাংশর বেশি প্রবৃদ্ধির তদারকি করেছেন। যদিও কভিড-১৯ মহামারী চলাকালীন এটি প্রায় ৩ দশমিক ৫ শতাংশ ধীর হয়ে গিয়েছিল।
আইএমএফ কর্মসূচির প্রথম পর্যালোচনা ২০২৩ সালের দ্বিতীয়ার্ধের জন্য নির্ধারিত হয়েছে। সংস্থাটির বাংলাদেশ মিশন প্রধান রাহুল আনন্দ দেখতে পাচ্ছেন, কর্র্তৃপক্ষ ভর্তুকিমুক্ত করতে এবং বাজারভিত্তিক বিনিময় হারে যেতে ‘বিস্তৃত পদক্ষেপ নিচ্ছে’। এ সুবিধার আওতায় এ পর্যন্ত ৪৭৬ মিলিয়ন ডলার ঋণ পেয়েছে বাংলাদেশ। এই ঋণের পরবর্তী কিস্তিনির্ভর করবে আর্থিক খাতের সংস্কার নিশ্চিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীন আর্থিক নীতি অনুসরণ, নন-পারফর্মিং লোন কমানো এবং জলবায়ু পরিবর্তনের তহবিলকে উৎসাহিত করার ওপর।