ভারতের সাথে রুপিতে লেনদেন শিগগিরই

0

বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : ডলারের ওপর চাপ কমাতে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের অংশবিশেষের লেনদেন নিজ নিজ মুদ্রা ব্যবহারের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে সম্মত হয়েছে বাংলাদেশ ও ভারত। অর্থাৎ কোনো ধরনের তৃতীয় মুদ্রার অন্তর্ভুক্তি ছাড়াই সরাসরি টাকা-রুপিতে লেনদেন করার বিষয়ে দুই দেশ উদ্যোগ নিচ্ছে। এখন যার যার মুদ্রায় লেনদেন করতে বাংলাদেশের সোনালী ব্যাংক ও ইস্টার্ন ব্যাংক ভারতীয় স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া ও আইসিআইসিআই ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খুলবে। ভারতীয় ব্যাংক দু’টিও বাংলাদেশী দুই ব্যাংকে একই ধরনের অ্যাকাউন্ট খুলবে। বাংলা ট্রিবিউন।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট চলমান ডলার সঙ্কটের মধ্যে কয়েক মাস ধরেই টাকা ও রুপিতে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের লেনদেন নিষ্পত্তির বিষয়ে কথা হচ্ছে। এর আগে গত সেপ্টেম্বর মাসে ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক স্টেট ব্যাংক ইন্ডিয়া (এসবিআই) সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশের সাথে ডলারের পরিবর্তে রুপি ও টাকায় লেনদেন করার। বাংলাদেশ ব্যাংকও চায় ভারতের সাথে টাকা ও রুপিতে লেনদেন করতে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো: মেজবাউল হক বলেন, ‘ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক রুপিতে সরাসরি লেনদেন করার বিষয়ে সে দেশের ব্যাংকগুলোর জন্য নির্দেশনা জারি করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকও বিষয়টি পর্যালোচনা করে টাকা ও রুপিতে দ্বিপক্ষীয় লেনদেন করার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের কোনো ব্যবসায়ী আমদানি বা রফতানির ক্ষেত্রে রুপিতে এলসি খুলতে চাইলে তা করতে পারবেন।’ ব্যাংকগুলো রুপিতে এলসি করতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংক তাতে অনুমতি দেবে বলেও তিনি জানান।
এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ের এক কর্মকর্তা বলেন, দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে টাকা ও রুপির লেনদেন করতে চাইলে ব্যাংকগুলোকে আমরা অনুমতি দেবো।’

এ প্রসঙ্গে সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো: আফজাল করিম বলেন, ‘এই মুহূর্তে ডলারের ওপর চাপ কমাতে টাকা ও রুপিতে লেনদেন করতে পারলে ভালো কাজ দেবে। টাকা ও রুপিতে ভারতের সাথে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য হলে উভয় দেশই লাভবান হবে। তার মতে, পর্যায়ক্রমে দুই দেশের আরো ব্যাংক এই প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত হবে।

জানা গেছে, বাংলাদেশ থেকে ভারতে রফতানির পরিমাণ প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ ২ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ লেনদেন টাকা ও রুপিতে সম্পন্ন করবে দুই দেশ। অপর দিকে গত অর্থবছরে ভারত থেকে বাংলাদেশের আমদানির পরিমাণ ছিল প্রায় ১৩.৬৯ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে ২ বিলিয়ন ডলার টাকা-রুপিতে লেনদেন হলেও বাকিটা বরাবরের মতো মার্কিন ডলারে পরিশোধ করবে বাংলাদেশ।

প্রসঙ্গত, দুই দেশের নিজস্ব মুদ্রার মধ্যে লেনদেন প্রক্রিয়া কেমন হবে, তা নিয়ে আলোচনা করতে চলতি মাসের শুরুর দিকে ঢাকা সফর করে ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া ও স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার একটি প্রতিনিধিদল। তারা গত ১১ এপ্রিল বেসরকারি ইস্টার্ন ব্যাংকে (ইবিএল) বৈঠক করে। সেখানে ইবিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ সফরকারীরা টাকা ও রুপিতে দুই দেশের বাণিজ্যিক লেনদেন পরিশোধ পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করেন।

এ দিকে আন্তর্জাতিক লেনদেনে ডলারের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে রুপি ছাড়াও বিকল্প মুদ্রা নিয়ে ভাবছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে চীনা মুদ্রায় এলসি খোলার অনুমতি দিয়েছে ব্যাংকগুলোকে। বিশেষ করে রাশিয়ার অর্থায়নে বাংলাদেশে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরি করা হচ্ছে, সেটার ঋণ চীনা মুদ্রা ইউয়ানে পরিশোধের ব্যাপারে বাংলাদেশ ও রাশিয়া সম্মত হয়েছে।

এ দিকে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক লেনদেনে বিকল্প নেটওয়ার্ক ব্যবহারের সুযোগ আইনে যুক্ত করার জন্য একটি প্রস্তাব সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই।

লেনদেনের ক্ষেত্রে ডলার ছাড়া যেসব মুদ্রা ব্যবহারের প্রস্তাব দিয়েছে এফবিসিসিআই, তার মধ্যে রয়েছে পাউন্ড, রুপি, ইউরো, ইয়েন ও রুবল। এসব মুদ্রা ব্যবহারে ‘বিনিময় চুক্তি’ ও ‘কারেন্সি সোয়াপ’ পদ্ধতির কথাও বলা হয়েছে।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ও অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘ডলারের বিকল্প রুপি খুব বেশি প্রভাব পড়বে না। কারণ এখনো ৫৯ শতাংশ রিজার্ভ হলো ইউএস ডলারে। ইউরো প্রায় ২০ ভাগ। আর সব মুদ্রা মিলিয়ে বাকি ২০ শতাংশ। ইউয়ান ২.২৫ শতাংশ। বিকল্প মুদ্রার ক্ষেত্রে ইউয়ান কিছুটা ভূমিকা রাখতে পারে। ভারতীয় রুপিও হয়তো হবে।’ তিনি বলেন, ‘এখানে আমদানির ক্ষেত্রে ডলার বাঁচবে। কিন্তু রফতানির ক্ষেত্রে তো আর সেটা হবে না। আমাদের এটুকু লাভ হতে পারে যে আমরা চীন ও ভারতে রফতানি করে তাদের যে মুদ্রা পাব, তা ব্যবহার করতে পারব।’

পরিসংখ্যান বলছে, বাংলাদেশের মোট আমদানির ৪০ শতাংশই হয় চীন ও ভারত থেকে। এর মধ্যে ২৬ শতাংশ চীন এবং ১৪ শতাংশ ভারত থেকে আসে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, মোট রফতানির ২৬ শতাংশ এবং আমদানির সাড়ে ৩ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্রের সাথে। মোট রফতানির ৫৬ শতাংশ এবং আমদানির ৮ শতাংশ হয় ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে।

আপনি এগুলোও দেখতে পারেন

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.