ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের সফর, নতুন স্যাটেলাইট চুক্তিতে সই হচ্ছে

0

বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ দিয়ে বাংলাদেশের স্থলভাগ ও জলভাগ দেখা যাবে * গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন রাখার আহ্বান মানবাধিকার সংস্থার

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর আসন্ন বাংলাদেশ সফরকালে মহাকাশে আরও একটি নতুন স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের চুক্তি সই হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় বাংলাদেশ ইতিপূর্বে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করেছে।

ফ্রান্সের সহায়তায় এবার যে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা হবে তার নাম বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২। এটি একটি ‘আর্থ অবজারভেটরি’ ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র। এর মাধ্যমে পৃথিবী তথা বাংলাদেশের স্থলভাগ ও জলভাগ পর্যবেক্ষণ করা হবে।

ভারতে জি-২০ সম্মেলনে অংশগ্রহণ শেষে আগামী ১০ সেপ্টেম্বর ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ সংক্ষিপ্ত সময়ের সফরে বাংলাদেশে আসছেন। ফরাসি প্রেসিডেন্টকে স্বাগত জানাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফর সংক্ষিপ্ত করে ঢাকায় ফিরবেন।

জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন যুগান্তরকে বলেছেন, ‘অনেক দিন ধরেই ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফরে আসার কথা হচ্ছে। কিন্তু সময় ও সুযোগের অভাবে তিনি আসতে পারেননি। এখন ভারতে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে যোগদানের সুযোগে আসছেন।’

ফরাসি প্রেসিডেন্টের সফরকালে বড় কোনো চুক্তি হচ্ছে কি না জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ ফ্রান্সের সহায়তার লক্ষ্যে একটি সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে।’ তিনি বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আর কিছুই বলেননি।

এদিকে, কিছু কিছু আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা বাংলাদেশে গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও নির্বাচন নিয়ে শেখ হাসিনার সরকারের কাছে প্রশ্ন রাখার জন্য ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। প্যারিসভিত্তিক প্লানেট রিফিউজিস নামের একটি সংস্থা এক বিবৃতিতে বলেছে, ফরাসি প্রেসিডেন্টের উচিত বাংলাদেশে সুশীল সমাজের ওপর যে নিবর্তন চলছে তা বন্ধ করার জন্য আহ্বান জানানো।

জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের প্রধান ড. শাহজাহান মাহমুদ বৃহস্পতিবার যুগান্তরকে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ হলো একটি আর্থ অবজারভেটরি স্যাটেলাইট। এর মাধ্যমে পৃথিবীটা দেখা যাবে। ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্রটি পৃথিবীর ছবি তোলে বাংলাদেশে পাঠাবে। বাংলাদেশে কৃষি ও অন্যান্য ক্ষেত্রে করণীয় অনেক কিছু জানা যাবে। পাশাপাশি, বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা চিহ্নিত হওয়ায় আমাদের সমুদ্র অঞ্চল বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে সমুদ্র অঞ্চলে নজরদারি বাড়ানো সম্ভব হবে। বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় কেউ অনধিকার প্রবেশ কিংবা কোনো অপতৎপরতা চালাচ্ছে কি না সেটাও এই স্যাটেলাইটের মাধ্যমে জানা যাবে।’

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর সঙ্গে এটার পার্থক্য কী জানতে চাইলে শাহজাহান মাহমুদ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ টেলিভিশন স্টেশনের জন্য কাজে লাগছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ এর মাধ্যমে আর্থ অবজারভেশন করা যাবে। এর জন্য দুটি রাডার স্থাপন করা হবে। এ রাডারের মাধ্যমে ছবি পৃথিবীতে আসবে, যা বাংলাদেশের কাজে লাগবে।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ১০ সেপ্টেম্বর এক দ্বিপক্ষীয় সফরে বাংলাদেশে আসছেন। প্রধানমন্ত্রী হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টকে স্বাগত জানাবেন। সফরকালে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘরে বাংলাদেশের জাতির পিতার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ম্যাক্রোঁর শীর্ষ বৈঠকের কথা রয়েছে।

এ ছাড়া ফরাসি প্রেসিডেন্টের সম্মানে প্রধানমন্ত্রী আয়োজিত তার কার্যালয়ে (পিএমও) একটি ভোজসভায় ম্যাক্রোঁর যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে। দুই নেতা দ্বিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষর প্রত্যক্ষ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। ফরাসি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে অন্যান্যের মধ্যে থাকবেন দেশটির ইউরোপ এবং পররাষ্ট্র বিষয়কমন্ত্রী ক্যাথরিন কলোনা। সফর শেষে বিমানবন্দরে ফরাসি প্রেসিডেন্টকে বিদায় জানাবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।

ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে যে, ফরাসি প্রেসিডেন্টের এই বাংলাদেশ সফর দুই দেশের মধ্যকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে বলে দুই দেশের সরকার আন্তরিকভাবে আশা করছে। উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর আমন্ত্রণে ২০২১ সালের নভেম্বরে ফ্রান্স সফর করেন।

বঙ্গবন্ধু-১ বাংলাদেশের প্রথম ভূউপরিস্থ যোগাযোগ ও সম্প্রচার উপগ্রহ। এটি ২০১৮ সালের ১৯ মে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়। এর মধ্য দিয়ে ৫৭তম দেশ হিসাবে নিজস্ব স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণকারী দেশের তালিকায় যোগ হয় বাংলাদেশ। ফ্যালকন-৯ রকেটের মাধ্যমে এটি উৎক্ষেপণ করা হয়।

আপনি এগুলোও দেখতে পারেন

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.