কুয়াকাটায় নিরাপদ পানি সরবরাহে ফের ৪৯ কোটি টাকার প্রকল্প

0

বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : কুয়াকাটায় নিরাপদ পানি সরবরাহের উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। এজন্য ‘পটুয়াখালী জেলার কুয়াকাটা পৌরসভায় নিরাপদ পানি সরবরাহ, ড্রেনেজ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন’ প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৮ কোটি ৯৩ লাখ ৯২ হাজার টাকা। অথচ কিছুদিন আগে কুয়াকাটায় আরেকটি প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে। যা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন।

প্রকল্পটির প্রস্তাবের ওপর সম্প্রতি প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান। সেখানে নানা প্রস্তাব নিয়ে ব্যাখা ও প্রশ্নের মুখে পড়েন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।

এ বিষয়ে ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমরা পিইসি সভা করেছি। বিভিন্ন বিষয় জানার ছিল সেগুলো সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে আলাপ-আলোচনা করে সুপারিশ দেওয়া হয়েছে। এখন সুপারিশের আলোকে ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) সংশোধন হয়ে এলে অনুমোদনের পরবর্তী কার্যক্রম শুরু করা হবে।’

প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে- কুয়াকাটা পৌরসভাটি ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি একটি তৃতীয় শ্রেণির পৌরসভা। পৌরসভার আয়তন ৮ দশমিক ১১ বর্গকিলোমিটার এবং লোকসংখ্যা ৬৫ হাজার। এটি সমুদ্রসৈকত ঘেঁষে অবস্থিত। সমুদ্রসৈকতে অসংখ্য পর্যটক আসা-যাওয়ার ফলে পৌরসভার গুরুত্ব দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। পর্যটন মৌসুমে সৈকত এলাকায় পর্যটক, সাময়িক ও ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতাসহ প্রতিদিন প্রায় ২০ হাজার লোকের সমাগম ঘটে। এ ছাড়া এই এলাকায় বিপুলসংখ্যক পর্যটন রিসোর্ট এবং হোটেল গড়ে উঠেছে।

কুয়াকাটা পৌরসভায় পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। আগের প্রকল্পের মাধ্যমে কুয়াকাটা পৌরসভায় ৩টি উৎপাদক নলকূপ, ১০ দশমিক ৩৩ কিলোমিটার বিভিন্ন ব্যাসের পাইপলাইন, ৫৮০টি গৃহসংযোগ, ২০০টি পানির একক উৎস, আটটি পাবলিক টয়লেট, পাঁচ দশমিক দুই কিলোমিটার ড্রেন ও ৩০টি কমিউনিটি নির্মাণ করা হয়েছে।

নতুন প্রস্তাবিত প্রকল্পের মাধ্যমে কুয়াকাটা পৌরসভায় চারটি উৎপাদক নলকূপ, একটি গ্রাউন্ড ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট, একটি ওভারহেড ওয়াটার ট্যাংক, ১০ কিলোমিটার বিভিন্ন ব্যাসের পাইপলাইন, এক হাজারটি গৃহসংযোগ, পোর্টেবল ডিংকিং ওয়াটার কেরিয়ার ক্রয়, ২০টি পানির একক উৎস, এক কিলোমিটার ড্রেন ও একটি সমন্বিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নির্মাণের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

প্রকল্পটির মূল্যায়ন কমিটির সভায়, আগের প্রকল্প বাস্তবায়নের তথ্য জানতে চাওয়া হয়। সম্প্রতি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ‘পটুয়াখালী জেলাধীন কুয়াকাটা পৌরসভায় নিরাপদ পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন’ শীর্ষক একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এই প্রকল্পের পিসিআর (প্রকল্প সমাপ্ত প্রতিবেদন) রিপোর্ট এবং সমাপ্ত করা প্রকল্পের কার্যক্রম ও প্রস্তাবিত প্রকল্পের কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়।

পরিকল্পনা কমিশনের মতামত : প্রস্তাবিত প্রকল্পের জন্য দুই একর ভূমি অধিগ্রহণের জন্য ৯ কোটি টাকার সংস্থান রাখা হয়েছে। এই জমি প্রকল্প হতে ব্যয় না করে পৌরসভা সংস্থান করতে পারে কি না সে বিষয়ে আলোচনা প্রয়োজন। এ ছাড়া প্রয়োজনীয় জমির নিশ্চয়তা ছাড়া বাস্তবায়ন পর্যায়ে কোনো সমস্যা হবে কি না সে বিষয়েও প্রশ্ন তোলা হয়।

ওভারহেড ওয়াটার ট্যাংক (৬৮০ ঘনমিটার) বাবদ ৩ কোটি ৫৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয় প্রাক্কলনের ভিত্তিসহ বিস্তারিত ব্যয় বিভাজন সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়েছে। ওভারহেড ওয়াটার ট্যাংক নির্মাণের জন্য ভূমির প্রয়োজন হবে কি না, ভূমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন হলে সে ব্যয় কীভাবে সম্পন্ন করা হবে তা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে পিইসি সভায়।

এ ছাড়া প্রকল্পের আওতায় কুয়াকাটা পৌরসভায় চারটি পাম্প হাউস ও একটি গ্রাউন্ড ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট নির্মাণের প্রস্তাব করার যৌক্তিকতা সভায় উপস্থাপন করেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। এক কিলোমিটার আরসিসি ড্রেন নির্মাণের জন্য এক কোটি ৭৮ লাখ ৬৫ হাজার টাকা প্রাক্কলন করা হয়েছে। এ ব্যয়ের যৌক্তিকতা নিয়েও সভায় প্রশ্ন করা হয়েছে।

এ ছাড়া প্রকল্পের আওতায় এক বছরের পরিচালনা ব্যয়সহ সমন্বিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা স্থাপন খাতে ১০ কোটি ৭৩ লাখ টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। এ কার্যক্রমটি সভায় ব্যাখ্যা জানতে চাওয়া হয়। আট কিলোমিটার বিভিন্ন ব্যাসের বিতরণ পাইপলাইনের জন্য চার কোটি ৯১ লাখ ২০ হাজার টাকা ও দুই কিলোমিটার সঞ্চালন পাইপলাইনের জন্য দুই কোটি ৪০ লাখ টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে।

কেন পাইপলাইনের ব্যাস উল্লেখ করা হয়নি তার ব্যাখা জানতে চাওয়া হয়। প্রস্তাবিত প্রকল্পের মাধ্যমে এক হাজারটি গৃহসংযোগ দেওয়া হবে। এই সংযোগের মাধ্যমে কমিউনিটি পর্যায়ে পানির বিলের বিষয়েও সভায় জানতে চাওয়া হয়।

আপনি এগুলোও দেখতে পারেন

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.