আওয়ামী লীগের কেউ সংঘাত করলেও রেহাই নেই
বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : পাঁচ জেলায় ভার্চুয়াল জনসভায় প্রধানমন্ত্রীজনপ্রিয়তা যাচাই করে নির্বাচিত হয়ে আসতে হবে * স্বতন্ত্র বা অন্য দলের প্রার্থীকে কোনোরূপ বাধা দেওয়া যাবে না
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করার লক্ষ্যে কাজ করার জন্য তার দলের সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, নির্বাচন নিয়ে যাতে কেউ প্রশ্ন তুলতে না পারে। তিনি দলের প্রার্থীদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা জনগণের কাছে যাবেন, জনগণ যাকে ভোট দেবে তিনি নির্বাচিত হবেন। কেউ কারও অধিকারে হস্তক্ষেপ করবেন না।
কোনোরকমের সংঘাত বা মারামারি, কোনো কিছুই আমি দেখতে চাই না। কোনো সংঘাত হলে, সংঘাত যদি আমার দলেরও কেউ করে তাদের কিন্তু রেহাই নেই। তাদের বিরুদ্ধে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নেব। সেটা মনে রাখবেন। নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানের স্বার্থে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কোনোরূপ বাধা না দিতে নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বৃহস্পতিবার পাঁচ জেলায় নির্বাচনি জনসভায় দেওয়া ভার্চুয়াল ভাষণে এসব কথা বলেন। বিকালে আওয়ামী লীগের তেঁজগাও কার্যালয় থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে পঞ্চগড়, লালমনিরহাট, নাটোর, পাবনা ও খাগড়াছড়ি-এই ৫টি জেলার জনসভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী। পরে এসব জেলার নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন তিনি। ভার্চুয়াল জনসভা উপলক্ষ্যে জেলাগুলোর নির্ধারিত স্থানে সমবেত হন দলীয় নেতাকর্মীরা।
প্রধানমন্ত্রী উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখার জন্য তার দলের নির্বাচনি প্রতীক ‘নৌকা’য় দেশবাসীর ভোট প্রত্যাশা করেন। তিনি তার সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের চিত্র তুলে ধরেন। খবর বাসস ও যুগান্তর প্রতিনিধিদের।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচনে জনগণ অবাধে ভোট দেবে। এটা তাদের সাংবিধানিক অধিকার। তিনি বলেন, হ্যাঁ, আমরা এটা উন্মুক্ত করেছি। আমাদের নৌকার প্রার্থীও আছে, স্বতন্ত্র প্রার্থীও রয়েছে এবং অন্যান্য দলের প্রার্থীও আছে। তিনি বলেন, যে দলের যে প্রার্থীই হোক না কেন, তাকে জনপ্রিয়তা যাচাই করে নির্বাচিত হয়ে আসতে হবে। প্রকাশ্য বা অপ্রকাশ্য কোনোভাবেই স্বতন্ত্র বা অন্য দলের প্রার্থীকে বাধা দেওয়া যাবে না। কোনো নির্যাতন বা হামলা করা যাবে না।
আওয়ামী লীগ সভাপতি তার দলের নেতাকর্মীদের নির্বাচনে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে বলেছেন। যাতে তারা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারেন। তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনে জনগণ ও ভোটারদের অংশগ্রহণ অপরিহার্য। কোন দল নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে বা নিচ্ছে না, তাতে কিছু যায় আসে না। ভোট কারচুপির কোনো নিশ্চয়তা না থাকায় বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা এ দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করি আর বিএনপির কাজটা কী? জ্বালাও-পোড়াও, অগ্নিসন্ত্রাস, এটাই তারা ভালো বোঝে। এটাই তারা করে। এদের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে হবে। কেননা সন্ত্রাসী এবং জঙ্গিবাদী সংগঠন হচ্ছে বিএনপি।
শেখ হাসিনা বলেন, ভোট চুরির অপরাধে দু-দুবার এ দেশের মানুষ খালেদা জিয়াকে ক্ষমতাচ্যুত করেছিল সেটা নিশ্চয়ই সবার মনে আছে। ’৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন হয়েছিল। আর মার্চে খালেদা জিয়া পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। ঠিক একইভাবে তারা আবার ভোট চুরি করার চেষ্টা করেছিল ২০০৬ সালে। এক কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার দিয়ে ভোটার লিস্ট করে ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছিল। পারেনি। কাজেই দু-দুবার যারা ভোট চুরির অপরাধে ক্ষমতা থেকে বিতাড়িত তাদের মুখে এখন গণতন্ত্রের কথা শুনতে হয়, ভোটের কথাও শুনতে হয়-এটাই হচ্ছে দুর্ভাগ্য।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা চাই জনগণ যাকে খুশি বা যাকে পছন্দ তাকে ভোট দেবেন এবং সে জয়ী হয়ে আসবে। কেননা গণতন্ত্রকে আরও সুদৃঢ় করতে হবে। এর যেন কোনো ব্যত্যয় না ঘটে সেদিকে লক্ষ্য রাখার আহ্বান জানিয়ে তিনি বাংলাদেশের উন্নয়নের অভিযাত্রা অব্যাহত রাখার জন্যও এটা জরুরি বলে অভিমত ব্যক্ত করেন।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আপনারা দেখছেন রেলে আগুন দিয়ে কীভাবে মানুষ পুড়িয়ে মারছে। একটা মা তার সন্তানকে বাঁচাতে বুকে ধরে রাখছে। বাসের মধ্যে হেলপার ঘুমিয়ে আছে আগুন দিচ্ছে, ট্রাকে আগুন দিচ্ছে। একটি ছেলেকে ট্রাকে বসিয়ে রেখে বাবা পানি আনতে গিয়ে দেখে ছেলে আগুনে পুড়ে অঙ্গার হয়েছে। ২০১৩ সালে, ’১৪ ও ’১৮ সালে একইভাবে তারা আগুন দিয়ে মানুষ হত্যা করেছিল। ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ঠেকানোর নামে ৫৮২টি স্কুল, ৭০টি সরকারি অফিস, ৬টি ভূমি অফিস, ৩২৫২টি গাড়ি, ২৯টি রেল, ৯টি লঞ্চ আগুন দিয়ে পুড়িয়েছিল। ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছিল।
তারেক রহমানের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, আর একটি কুলাঙ্গার আছে ২০০১ সালে তার হাওয়া ভবন ছিল। চাঁদা না দিলে ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করতে পারত না। সে অবৈধ যত কাজ আছে সবই করেছে। মানি লন্ডারিং থেকে শুরু করে অস্ত্র চোরাকারবারি, ১০ ট্রাক অস্ত্র আনা, দুর্নীতি সবই সে করেছে। বিদেশ থেকে এসে তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়ে গেছে। এজন্য তার সাজাও হয়েছে।
এখন আবার বিদেশে বসে ভোটের কথা বলে, গণতন্ত্রের কথা বলে। সে তো রাজনীতি করবে না। আবার বিদেশে বসে থেকে হুকুম দিয়ে, উসকানি দিয়ে নেতাদের দিয়ে মানুষ হত্যা করাচ্ছে। নির্বাচন বানচাল কবার পাঁয়তারা করছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, গণতন্ত্রকে আরও সুদীর্ঘ করতে হবে। এর ব্যত্যয় ঘটলে ভবিষ্যতে বাংলাদেশ শেষ হয়ে যাবে। যতটুকু উন্নয়ন করেছি সেটুকু থাকবে না।
অনুষ্ঠানের শুরুতে আওয়ামী লীগের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রার ওপর নির্মিত একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ ও অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্র্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া এবং উপদপ্তর সম্পাদক সায়েম খান তেজগাঁও দলীয় কার্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা, প্রার্থী, স্থানীয় গণমান্য ব্যক্তিরাসহ হাজার হাজার আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী সংযুক্ত পাঁচ জেলার ভেন্যুতে উপস্থিত ছিলেন।
পাবনা : প্রধানমন্ত্রীর ভার্চুয়াল ভাষণ উপলক্ষ্যে পাবনা শহরের বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম বকুল স্বাধীনতা চত্বরে জেলা আওয়ামী লীগ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ শেষে পাবনা অংশে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রেজাউল রহিম লাল, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পাবনা-৫ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক প্রিন্স বক্তব্য দেন।
এ সময় পাবনা-১ আসনের সংসদ-সদস্য ও ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু, পাবনা-২ আসনের সংসদ-সদস্য আহমেদ ফিরোজ কবির, পাবনা-৩ আসনের সংসদ-সদস্য মো. মকবুল হোসেন, সংরক্ষিত আসনের সংসদ-সদস্য নাদিরা ইয়াসমিন জলি এবং পাবনা-৪ আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থী মো. গালিবুর রহমান শরিফ উপস্থিত ছিলেন। পাবনার উন্নয়নের জন্য নেতারা প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
নাটোর : প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে জনসভাস্থল থেকে নাটোর-৩ আসনের (সিংড়া) আওয়ামী লীগ প্রার্থী তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, দেশের প্রথম স্মার্ট সড়ক, বাউয়েট, ওয়াজেদ আলী কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় করে দেওয়ায় নাটোরবাসী আপনার প্রতি কৃতজ্ঞ।
এ সময় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট মো. সিরাজুল ইসলাম, নাটোর-২ (নাটোর সদর ও নলডাঙ্গা) আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী শফিকুল ইসলাম শিমুল, নাটোর-১ আসনের (লালপুর ও বাগাতিপাড়া) আসনের প্রার্থী মো. শহিদুল ইসলাম বকুল এবং নাটোর-৪ (বড়াইগ্রাম ও গুরুদাসপুর) আসনের প্রার্থী ডা. সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী জনসভায় উপস্থিত ছিলেন। জেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা, জেলা আওয়ামী লীগের নেতা ও সুধীজনরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে বেলা আড়াইটার মধ্যেই জনসভাস্থলে এসে সমবেত হন।
খাগড়াছড়ি : খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজ মাঠে সমবেত নেতাকর্মীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য শান্তিচুক্তির মাধ্যমে পাহাড়ের উন্নয়নের সূচনা করেছিলাম। গত ১৫ বছরে তিন পার্বত্য এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। গত বছরের নভেম্বরে একদিনে ৪২টি পাকা সেতু উদ্বোধন করেছি। সেখানে সড়কের উন্নয়ন করেছি। এখন সীমান্ত সড়ক নির্মাণ করে দিচ্ছি। ভবিষ্যতে পাহাড়ের আরও উন্নয়ন করব।
বিভিন্ন এলাকা থেকে নেতাকর্মী ও সমর্থকরা নৌকার সমর্থনে খণ্ড খণ্ড মিছিলসহকারে জনসভায় আসেন। এ সময় নৌকার প্রার্থী ও খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা প্রধানমন্ত্রীর সামনে জেলার বিভিন্ন উন্নয়নচিত্র তুলে ধরেন। একই সঙ্গে ক্ষমতায় এলে খাগড়াছড়িতে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের জন্য প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা কামনা করেন।
এ সময় পার্বত্য চট্টগ্রামের সংরক্ষিত নারী সংসদ-সদস্য বাসন্তী চাকমা, পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মংসুইপ্রু চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্মলেন্দু চৌধুরী, আওয়ামী লীগ নেতা দিদারুল আলমসহ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।