নতুন চ্যালেঞ্জে যাত্রা
বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : নানা চড়াই-উতরাই, শঙ্কা কাটিয়ে ঘটনাবহুল নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদের যাত্রা শুরু হচ্ছে আজ। নির্বাচন বানচালের নানামুখী ষড়যন্ত্র, জাতীয়-আন্তর্জাতিক চাপ এবং নির্বাচন বর্জনকারীদের ভয়াল অগ্নিসন্ত্রাস-নাশকতা মোকাবিলা করে ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের ইতিহাসে রেকর্ড পঞ্চমবারের মতো সরকারি দলের আসনে বসছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ।
নানা আলোচনা ও বিতর্কের পর দ্বিতীয়বারের মতো বিরোধী দলের আসনে বসছে জাতীয় পার্টি (জাপা)। ইতিহাসের সর্বোচ্চ সংখ্যক (৬২ জন) স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য রয়েছেন এবারের দ্বাদশ সংসদে। জয়-পরাজয়ের বিপুল ব্যবধানের রেকর্ড সৃষ্টিকারী নতুন সংসদের আজ মঙ্গলবার প্রথম দিন ভাষণ দেবেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।
আগামী পাঁচ বছরের নতুন অনেক চ্যালেঞ্জকে সামনে নিয়েই যাত্রা শুরু করল দ্বাদশ সংসদ। একদিকে ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করা, অন্যদিকে সুশাসন প্রতিষ্ঠায়, সর্বত্র জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা, দুর্নীতি-জঙ্গিবাদ-অগ্নিসন্ত্রাস মোকাবিলা, উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে নিত্য-নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় যুগোপযোগী নানা আইন প্রণয়ন, ক্ষুদ্রতম বিরোধী দলকে নিয়েও সংসদকে প্রাণবন্ত করাসহ দেশের চলমান গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে অগতান্ত্রিক নানা অপশক্তির বিভিন্ন ষড়যন্ত্র-মোকাবিলা করতে সরকার ও বিরোধী দলকে নিয়ে কার্যকর সিদ্ধান্ত গ্রহণের অনেক চ্যালেঞ্জই মোকাবিলা করতে হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের।
অতীতের মতো সংসদ বর্জন, অসংসদীয় শব্দ উচ্চারণ, ফাইল ছোড়াছুড়ি, ব্যক্তিগত আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণের নেতিবাচক কর্মকা- থেকে সরকার ও বিরোধী দল বিরত থেকে সংসদ অধিবেশনকে সকল কাজের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করাও হবে দ্বাদশ সংসদের আরেকটি চ্যালেঞ্জ। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার দৃপ্ত শপথ নিয়েই আজ সংসদের প্রথম অধিবেশনে পা রাখছেন নবনির্বাচিত ২৯৯ সংসদ সদস্য।
আজ বেলা ৩টায় শুরু হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন। এর আগে কার্যোপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে বসে প্রথম অধিবেশনের মেয়াদকাল নির্ধারণ করবে। প্রথম অধিবেশনকে উৎসবমুখর করতে সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করেছে সংসদ সচিবালয়।
ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বিরোধী দলের থেকেও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যের সংখ্যা ছয় গুণ বেশি। মাত্র ১১টি আসনে বিজয়ী হলেও একাদশ সংসদের মতো এবারেও বিরোধী দলে বসছে জাতীয় পার্টি।
অধিবেশনকে প্রাণবন্ত করতে বিরোধী দলের পাশাপাশি স্বতন্ত্র এমপিদেরও ভূমিকা দেখা যেতে পারে। সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে বলেছেন, জাতীয় পার্টির পাশাপাশি সংসদে বিরোধী ভূমিকায় থেকে সরকারের গঠনমূলক সমালোচনার সুযোগ রয়েছে স্বতন্ত্র এমপিদের।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টানা চতুর্থবারের মতো নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। ২৯৯টি সংসদীয় আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ পেয়েছে ২২৩ আসন। বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ১১ এবং স্বতন্ত্ররা ৬২টি আসনে জয়ী হয়েছে। স্বতন্ত্রদের ৫৯ জনই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি জড়িত। এতে সংসদে বিরোধীদলীয় নেতার আসনে কে বসতে যাচ্ছেন, তা নিয়ে নানা আলোচনা ছিল।
তবে জাতীয় পার্টিকে বিরোধী দল ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারির পর সবকিছু পরিষ্কার হয়ে গেছে। এবার রওশন এরশাদের পরিবর্তে বিরোধী দলের নেতার আসনে বসবেন জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের।
সংসদ অধিবেশনের প্রস্তুতি সম্পর্কে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেন, যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। সংসদের আসনবণ্টন হয়েছে। আমরা নতুন এমপিদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি। দ্বাদশ সংসদ প্রাণবন্ত হবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।
সংসদে বিরোধীদলীয় নেতার স্বীকৃতি প্রসঙ্গে স্পিকার বলেন, কার্যপ্রণালী বিধি অনুযায়ী সরকারের বিরোধিতাকারী সর্বোচ্চ সংখ্যক সদস্য নিয়ে গঠিত দলের নেতা হিসেবেই গোলাম মোহাম্মদ কাদেরকে বিরোধী দলের নেতা স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য কোনো দলের না হওয়ায় তারা সংখ্যায় বেশি হলেও তাদের মধ্য থেকে বিরোধী দলের নেতা হিসেবে কাউকে স্বীকৃতি দেওয়ার সুযোগ নেই।
৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পথটি অতীতের মতো ততটা মসৃণ ছিল না। নির্বাচনকে সামনে রেখে একদিকে রাজপথের বিরোধী দলের আন্দোলনের পাশাপাশি বড় বড় মোড়ল দেশের চোখ রাঙানি, ভিসানীতি প্রয়োগ, নিষেধাজ্ঞার নানা হুমকিও মোকাবিলা করতে হয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগকে। নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়ে বিএনপি-জামায়াতসহ তাদের মিত্রদের সরকার পতনের একের পর এক আন্দোলন, ভয়াল সন্ত্রাস, হরতাল-অবরোধের নামে চলন্ত ট্রেনে আগুন দিয়ে মানুষ হত্যা, মহাসমাবেশের নামে প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা, প্রকাশ্য পিটিয়ে-কুপিয়ে পুলিশ সদস্যকে হত্যাসহ নানা পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হয়েছে তাদের।
সর্বশেষ নির্বাচনে যাতে ভোটাররা কেন্দ্রে না যেতে পারে সেজন্য নানা প্রতিবন্ধকতাও সৃষ্টি করা হয়। সবকিছু উপেক্ষা করে দ্বাদশ নির্বাচনে ৪১ দশমিক ৮০ ভাগ ভোটার কেন্দ্রে গিয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগ করে ষড়যন্ত্রকারীদের জবাব দিয়েছে। এ কারণে দ্বাদশ জাতীয় সংসদকে ‘ঘটনাবহুল সংসদ’ বলেও আখ্যা দিয়েছেন বিশ্লেষকরা। এবারের নির্বাচনে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী কেউ বিজয়ী হতে পারেনি। স্বাধীনতার সপক্ষের শক্তিকে নিয়েই দ্বাদশ জাতীয় সংসদের পর্দা উঠছে। তাই এবারের দ্বাদশ জাতীয় সংসদকে ‘রাজাকারমুক্ত সংসদ’ বলছেন কেউ কেউ।
স্পিকার হিসেবে ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর পুনর্নির্বাচনের সিদ্ধান্ত হওয়ায় অধিবেশন শুরু হবে ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকুর সভাপতিত্বে। আজ অধিবেশনে প্রথমেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদের স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার নির্বাচন করা হবে। বর্তমান স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকুকে ডেপুটি স্পিকার মনোনীত করেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সংসদীয় দল।
নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় তাঁরা দু’জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হচ্ছে এটি নিশ্চিত। সংসদ সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত হওয়ার পর সংসদ ভবনে রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে পুনর্নির্বাচিত স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের কাছে শপথ গ্রহণ করবেন। এরপরই পুনর্নির্বাচিত স্পিকারের নেতৃত্বে শুরু হবে সংসদ অধিবেশন।
সংসদের অধিবেশন উপলক্ষে সংসদ ভবন ও আশপাশের এলাকায় ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হযেছে। ঢাকা মেট্টোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ এলাকায় যানচলাচল সীমিত করা হয়েছে। প্রথম অধিবেশন সংসদ থেকে সরাসরি দেখার জন্য বিদেশী কূটনীতিকসহ বিশিষ্টজনদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। প্রথম দিনের কার্যসূচিতে পাঁচটি কাজের কথা বলা আছে। এগুলো হলো- স্পিকার নির্বাচন, ডেপুটি স্পিকার নির্বাচন, সভাপতিম-লীর সদস্য মনোনয়ন, শোকপ্রস্তাব ও রাষ্ট্রপতির ভাষণ। রাষ্ট্রপতির ভাষণের পর প্রথমদিনের বৈঠক মুলতবি করা হবে। রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনের এটাই হবে সংসদে প্রথম ভাষণ।
৭ জানুয়ারির নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোটের নেতা শেখ হাসিনা রেকর্ড পঞ্চমবার ও টানা চতুর্থবারের মতো সংসদ নেতার দায়িত্ব পালন করবেন। সংসদ উপনেতার দায়িত্ব পালন করবেন অগ্নিকন্যাখ্যাত বেগম মতিয়া চৌধুরী। এবার বেগম রওশন এরশাদের পরিবর্তে বিরোধী দলের নেতার আসনে বসতে যাচ্ছেন জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের।
বিরোধীদলীয় উপনেতার দায়িত্ব পালন করবেন দলটির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। বিরোধী দলের চিফ হুইপ করা হয়েছে জাপা মহাসচিব মজিবুল হক চুন্নুকে।
এর আগে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন একাদশ সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরীকে দ্বাদশের চিফ হুইপ হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। একাদশ সংসদেও তিনি চিফ হুইপ ছিলেন। এ ছাড়া ইকবালুর রহিম (দিনাজপুর-৩), আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন (জয়পুরহাট-২), মো. নজরুল ইসলাম বাবু (নারায়ণগঞ্জ-২), সাইমুম সরওয়ার কমল এমপি (কক্সবাজার-৩) এবং মাশরাফী বিন মর্তুজাকে (নড়াইল-২) হুইপ নিয়োগ দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি।
সংসদে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ নিয়োগের আইনত কোনো বিধান না থাকলেও অতীতের রেওয়াজ অনুযায়ী সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি তার মহাসচিব মজিবুল হককে বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ ও দলের সংসদ সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদকে বিরোধীদলীয় হুইপ মনোনীত করেছে।
সংসদ নেতার নির্দেশে ও স্পিকারের পরামর্শ অনুযায়ী স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী আসন বিন্যাস চূড়ান্ত করেছেন। আসন বিন্যাসে একাধিবার নির্বাচিত, রাজনৈতিক দলের অবস্থান, ভোটের ব্যবধান, জনপ্রিয়তাসহ কয়েকটি বিষয় গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। অধিবেশনের প্রথম দিনে নতুন সংসদ সদস্যদের উদ্দেশে সংসদে ভাষণ দেবেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। পরে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর ধন্যবাদ প্রস্তাব উত্থাপন করা হবে। প্রস্তাবের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নেবেন সংসদ সদস্যরা। এই সংসদের সরকার ও বিরোধী দলের সব সদস্যকে অধিবেশনে উপস্থিত থাকতে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
স্পিকারের আসনের ডানদিকে থাকে ট্রেজারি বেঞ্চ। সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ট্রেজারি রেঞ্জের প্রথম সারির প্রথম আসনে বসবেন। পরের আসনে সংসদ উপনেতা মতিয়া চৌধুরী। তারপরের আসনটি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে শেখ ফজলুল করিম সেলিমকে। এ ছাড়া প্রথম সারিতে আসন পেয়েছেন আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন ও কৃষিমন্ত্রী উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ। সংসদ নেতার পেছনের সারির প্রথম আসনে সরকারি দলের চীফ হুইপ নুর-ই- আলম চৌধুরী বসবেন।
অন্যদিকে, স্পিকারের বিপরীত দিকে সামনের সারিতে বসবেন বিরোধী দলের নেতা, উপনেতা। বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ বসবেন বিরোধী দলের নেতার আসনের পেছনের আসনে। এটাই হচ্ছে সংসদের আসন বিন্যাসের রেওয়াজ। বিরোধী দলের নেতার আসনে বসবেন জি এম কাদের। পরের আসনটিতে বিরোধীদলীয় উপনেতা ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। জাপার মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু বসবেন বিরোধীদলীয় নেতার আসনে পেছনে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ হিসেবে।
খসড়া আসন বিন্যাসে বিরোধী দলের উপনেতার পাশের আসনটি জাপার রুহুল আমিন হাওলাদার এবং তারপরের তিনটি আসন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে স্বতন্ত্র এমপি ও সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী, কল্যাণ পার্টির মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম ও ১৪ দলের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননকে।
সংসদ সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে, স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার নির্বাচনের পর অধিবেশন কিছু সময় মুলতবি রাখা হবে।
ওই সময় রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন নতুন স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারকে শপথবাক্য পাঠ করাবেন। শপথ গ্রহণের পর নতুন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে শুরু হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন। বৈঠক শুরুর পর স্পিকার সংসদে শোক প্রস্তাব উত্থাপন করবেন। পরে অধিবেশনে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে ভাষণ দেওয়ার জন্য আহ্বান জানাবেন স্পিকার। রাষ্ট্রপতির ভাষণের পর রেওয়াজ অনুযায়ী অধিবেশন মুলতবি করা হবে।
তবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ অধিবেশনে ছায়া মন্ত্রী হিসেবে বিবেচিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি নির্বাচন করতে কিছুটা সময় লাগবে। সংরক্ষিত আসনের নির্বাচনের পর সংসদীয় কমিটিগুলো চূড়ান্ত করা হবে। তবে প্রথম অধিবেশনেই গঠন করা হবে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় কমিটিগুলো।
প্রথম অধিবেশন কতদিন চলবে তা আজ স্পিকারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠেয় সংসদের কার্যোপদেষ্টা কমিটি বৈঠক চূড়ান্ত করবে। তবে এই অধিবেশনটি দীর্ঘ হবে বলেই আভাস পাওয়া গেছে।
যেভাবে হবে স্পিকার নিয়োগ ॥ সংবিধানের ৭৪ অনুচ্ছেদে স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার নিয়োগের কথা রয়েছে। এতে- সাধারণ নির্বাচনের পর সংসদের প্রথম বৈঠকে সংসদ-সদস্যদের মধ্য হতে সংসদ একজন স্পিকার ও একজন ডেপুটি স্পিকার নির্বাচিত করার কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া এ দুই পদের যে কোনোটি শূন্য হলে সাতদিনের মধ্যে কিংবা ওই সময়ে সংসদ বৈঠকরত না থাকলে পরবর্তী প্রথম বৈঠকে নির্বাচিত করতে হবে।
এদিকে, সংসদের কার্যপ্রণালী বিধির ৮ বিধিতে স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার নির্বাচনের পদ্ধতি উল্লেখ করা আছে।
এতে বলা হয়েছে- সাধারণ নির্বাচনের পর অনুষ্ঠিত প্রথম বৈঠক শুরুর অন্তত এক ঘণ্টা আগে স্পিকার হিসেবে কোনো সংসদ সদস্যের নাম প্রস্তাব করে সচিবকে সম্বোধন সংসদের যে কোনো সদস্য লিখিতভাবে জানাবেন। ওই প্রস্তাবের সঙ্গে তৃতীয় কোনো সংসদ সদস্যের সমর্থন থাকতে হবে। স্পিকার হিসেবে নাম প্রস্তাবকারীর স্পিকার হতে সম্মত বলে লিখিত থাকতে হবে। কোনো সদস্য স্পিকার হিসেবে তার নিজের নাম প্রস্তাব করতে পারবেন না।
অথবা অন্য কেউ তার নাম প্রস্তাব করলে তা সমর্থন করতে পারবেন না। একাধিক ব্যক্তির নামও কোন একক সদস্য করতে পারবে না। কোনো ব্যক্তি তার নিজের নির্বাচনকালে সভাপতিত্ব করতে পারবেন না। সংসদের দিনের কার্যসূচিতে যে সদস্যের নাম প্রস্তাব রয়েছে স্পিকারের চেয়ার থেকে তাকে আহ্বান করলে তিনি প্রস্তাবটি উত্থাপন বা প্রত্যাহার করতে পারবেন এবং কেবল এই বিষয়ের মধ্যেই তিনি তার বক্তব্য সীমাবদ্ধ রাখবেন।
যথাযথভাবে উত্থাপিত ও সমর্থিত প্রস্তাবগুলো উত্থাপিত হওয়ার পর ক্রমানুসারে ভোটে দেওয়া হবে এবং প্রয়োজনবোধে বিভক্তি-ভোটের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ হবে। কোনো প্রস্তাব গ্রহণ হয়ে গেলে সভাপতি বাকি প্রস্তাবগুলো (যদি থাকে) ভোটে না দিয়া ঘোষণা করবেন যে, গ্রহণ করা প্রসাবে উল্লিখিত সদস্য স্পিকার নির্বাচিত হয়েছেন। পরে নির্বাচিত স্পিকার শপথ গ্রহণ করবেন।
একাদশ সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীকে আওয়ামী লীগ আবারও নির্বাচিত করবেন বলে ঘোষণা দেয়ায় মঙ্গলবার সংসদের বৈঠকের শুরুতে (স্পিকার নির্বাচনের সময়) তিনি সভাপতিত্ব করতে পারবেন না। ফলে প্রথমে সংসদের বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু। তার সভাপতিত্বে আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী স্পিকার নির্বাচিত হলে সংসদের বৈঠক ২০ মিনিটের জন্য বিরতি দেওয়া হবে।
এ সময় নতুন স্পিকারকে শপথ পড়াবেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। শপথ শেষে নতুন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে মুলতবি বৈঠক শুরু হবে। এ সময় শুরুতেই ডেপুটি স্পিকার নির্বাচিত করা হবে। স্পিকারের মতো ডেপুটি স্পিকারও একই পদ্ধতিতে নির্বাচিত করা হবে।
এর আগে ২০১৯ সালে ৩০ জানুয়ারি একাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন বসে। আইন অনুযায়ী ওই সংসদের মেয়াদ শেষ ২৯ জানুয়ারি শেষ হয়েছে। একাদশের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরদিনই দ্বাদশ সংসদের মেয়াদ শুরু হলো।