তালিকা ধরে হাজারের বেশি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযান

0

বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : নিয়ম অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময় পরপর হাসপাতাল-ক্লিনিক অর্থাৎ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলো পরিদর্শনের কথা। বলা হয় এটি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ‘রুটিন ওয়ার্ক’। কিন্তু রুটিন মেনে সেই রুটিন ওয়ার্ক না হওয়ায় অনুমোদনহীন হাসপাতাল-ক্লিনিক ও ব্লাডব্যাংকগুলো চালিয়ে যাচ্ছে তাদের রমরমা ব্যবসা। মাঝে মাঝে অভিযানে কিছু প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হলেও সেই অভিযানে ভাটা পড়ে কিছুদিন পরই। বন্ধ করা প্রতিষ্ঠানগুলোও আবার পুরোদমে শুরু করে তাদের কার্যক্রম।

২০২০ সালের নভেম্বরে ঢাকার আদাবরের মাইন্ড এইড হাসপাতালে বরিশাল মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার আনিসুল করিমকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনার পর জানা যায়, ওই হাসপাতালও সেবা দেয়ার অনুমোদন পায়নি। এরপর সারাদেশে অনুমোদিত এবং অনুমোদনহীন বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের তালিকা পাঠাতে বিভাগীয় পরিচালকদের নির্দেশ দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। বিভাগীয় কার্যালয়গুলোর পাঠানো তথ্য নিয়ে লাইসেন্সবিহীন ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টারের একটি তালিকা তৈরি করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ওই তালিকায় সারাদেশের ১১ হাজার ৯৪০টি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের নাম আসে, যারা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমোদন এবং যথাযথ সুযোগ-সুবিধা ছাড়াই চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছিল সে সময়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সে সময় বলেছিল, ওই তালিকার মধ্যে ২ হাজার ৯১৬টি হাসপাতাল ও ক্লিনিক লাইসেন্সের জন্য কোনো আবেদনই করেনি। ৯ হাজার ২৪টি হাসপাতাল-ক্লিনিকের মধ্যে কোনো কোনোটি লাইসেন্সের জন্য আবেদন করে চিকিৎসা দেয়া শুরু করলেও এখনো অনুমোদন পায়নি। আবার কোনো কোনোটির লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে, সেই অর্থে সেগুলোও অবৈধ। ওই তালিকা হওয়ার পর কয়েক দফা অভিযান চালিয়ে আড়াই হাজারের মতো অনুমোদনহীন হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করে দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। বিভিন্ন ক্লিনিককে জরিমানাও করা হয়। এরপর ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে তখনকার

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে দাবি করেন, অনুমোদনহীন কোনো ক্লিনিক-হাসপাতাল ঢাকায় আর ‘চালু নেই’।

সম্প্রতি খতনা করাতে গিয়ে শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় রাজধানীর ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল বন্ধ করে দেয়ার পর অনুমোদনহীন হাসপাতাল ও ক্লিনিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আবারো নড়েচড়ে বসে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। দায়িত্ব নেয়ার পর স্বাস্থ্য ও পরিাবার কল্যাণমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেনও অনুমোদনহীন সেবা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নিজের দৃঢ় অবস্থানের কথা ব্যক্ত করেন। ওই সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, আমি বলেছি দুর্নীতির ব্যাপারে ছাড় দেব না। এই অননুমোদিত, লাইসেন্স ছাড়া হাসপাতাল- এগুলো চলতে দেয়া যাবে না। বিষয়টি আমি এক দিনে পারব না। কিন্তু আমার মেসেজ হচ্ছে- এই অননুমোদিত ক্লিনিক, হাসপাতাল বন্ধ করে দিতে হবে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা অবশ্যই নেয়া হবে। আমি নিজেও ভুক্তভোগী এগুলোর জন্য। এরপর রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বেশ কিছু অভিযানও পরিচালিত হয়।

চলতি বছরে ১৬ জানুয়ারি সারাদেশে অনুমোদনহীন কতগুলো হাসপাতাল রয়েছে, সেই তালিকা এক মাসের মধ্যে আদালতে দাখিল করতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে নির্দেশ দেয় আদালত। সেই নির্দেশ অনুযায়ী, অধিদপ্তরের হাতে খুব বেশি সময়ও নেই। অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ইতোমধ্যে ১ হাজার দুইশরও বেশি অবৈধ হাসপাতাল ও ক্লিনিকের তালিকা করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। কয়েকটি ক্যাটাগরিতে যেমন- কতগুলো প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন আছে; কতগুলো প্রতিষ্ঠান নিবন্ধের জন্য আবেদন করেছে, কতগুলো অনিবন্ধিত আছে; কতগুলো অবৈধ এরকম ক্যাটাগরিতে এই তালিকা তৈরি করা হয়েছে। সেই তালিকা আদালতে জমা দেয়ার পর ঢাকায় বড় অভিযান শুরু হবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহ) ডা. আবু হোসেন মো. মঈনুল আহসান জানান, কয়েকটি শ্রেণিতে রাজধানীতে অভিযানের তোড়জোর না থাকলেও গেল ২০ দিনে সারাদেশে ৭২৫টি অবৈধ সেবা প্রতিষ্ঠানকে বন্ধ করা হয়েছে। হাইকোর্টে তালিকা জমা দেয়ার পর হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

অনুমোদনহীন হাসপাতালের বিরুদ্ধে নিজের দৃঢ় অবস্থানের কথা পুনরায় ব্যক্ত করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন। তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, অবৈধ হাসপাতালের তালিকা দেখে দেখে সত্যতা যাচাই করে অ্যাকশন নেয়া হচ্ছে। অবৈধ হাসপাতাল-ক্লিনিকের বিরুদ্ধে আমার অবস্থান আগে যা ছিল এখনো তাই আছে। এ বিষয়ে কোনো ছাড় নয়।

আপনি এগুলোও দেখতে পারেন

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.