পাবনার যোদ্ধাহত অন্ধ বীর মুক্তিযোদ্ধা আনিসুর রহমান মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে।

মুক্তিযুদ্ধে চোখ হারানো যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা বিরল রোগে এবার হারালেন দু-পা । চিকিৎসার অর্থাভাবে এখন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে সুজানগরের যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা আনিসুর রহমান সাঈদ ।

0

নিজস্ব প্রতিনিধি : পাবনা সুজানগর উপজেলা মানিকহাট ইউনিয়নের উলাট গ্রামের যোদ্ধাহত অন্ধ বীর মুক্তিযোদ্ধা আনিসুর রহমান সাঈদ উত্তরা লুবানা হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে।
গত ১১ মে ২০২০ ইং তারিখে রাজধানীর শ্যামলী স্পেশালাইজড হাসপাতালে বিরল রোগের অপারেশনে তাঁর ২টি পা কেটে ফেলা হয়।
মুক্তিযোদ্ধা আনিসুর রহমান সাঈদের চিকিৎসক ভাস্কুলার বিশেষজ্ঞ ডাঃ এম,এস,এ সবুর বলেন তার অড়ৎঃরপ রষরধপ ড়পপষঁংরাব ফরংবধংব নামক রক্ত নালীর এক বিরল রোগে তার পা-দুটি কেটে ফেলা ছাড়া কোন উপায় ছিল না। তার এ্যজমা, ডায়াবেটিস, প্রোস্টেটেট সহ বিভিন্ন সমস্যা ছিল।
যোদ্ধাহত অন্ধ এ বীর মুক্তিযোদ্ধা আনিসুর রহমান সাঈদ সুজানগর সাতবাড়ীয়া কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র থাকা অবস্থায় ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর ডাকে সারা দিয়ে মুক্তিযোদ্ধার ট্রেনিং নিতে ভারতের কেচুয়াডাঙ্গা ইউথ ক্যাম্পে গিয়ে প্রশিক্ষণ শেষে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন।
ভারতের কেচুয়া ডাঙ্গা ইউথ ক্যাম্পের দায়িত্বে ছিলেন পাবনা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মরহুম আহম্মেদ তফিজ উদ্দিন মাষ্টার। কেচুয়া ডাঙ্গা ইউথ ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ শেষে তিনি আরো উচ্চতর প্রশিক্ষণ নিতে বিহার প্রদেশের চাকুলিয়ায় যান। চাকুলিয়া উচ্চতর প্রশিক্ষণ শেষে পূনরায় আবার মুর্শিদাবাদ জেলার রানীনগর থানার বেলতলিতে প্রশিক্ষণ নেন।
তিনি এফএফ গ্রুপের সদস্য ছিলেন। তার এফ,এফ নং-ভারতীয় ৩৫৮৭৯,চাকুলিয়া নংং-৫১১৮, তিনি ৭নং সেক্টরে ছিলেন সেক্টর কমন্ডার ছিলেন জনাব নুরুজ্জামান এবং তার আঞ্চলিক কমান্ডার ছিলেন সাবেক (পাবনা-২) সংসদ সদস্য মকবুল হোসেন সন্টু। তিনি বাংলাদেশে প্রথম শ্রেনির ভাতাপ্রাপ্ত একজন যোদ্ধাহত অন্ধ মুক্তিযোদ্ধা।
বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা কতৃক ঢাকা কলেজ গেট মুক্তিযোদ্ধা টাওয়ারে জে-৬ একটি ফ্লাট বরাদ্ধ পান এ যোদ্ধাহত অন্ধ মুক্তিযোদ্ধা।
মুর্শিদাবাদ জেলার রানীনগর থানার বেলতলিতে ট্রেনিং শেষে ২আগষ্ট জলঙ্গিঁ বর্ডার হয়ে পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার সাতবাড়ীয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় তলায় অবস্থান নিয়ে তিনি মুক্তিযোদ্ধা পরিচালনা করেন। পাবনা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য যোদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা মকবুল হোসেন সন্টু বলেন যোদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা আনিসুর রহমান সাঈদ খুব সাহসী একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিল, তার সাহসীকতায় বেশ কয়েক টি স্থানে অভিযান পরিচলানা করা হয়। উল্লেখযোগ্য একটি হলো নাজিরগঞ্জ নদী পথে লঞ্চ যোগে সাতবাড়ীয়া মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্প আক্রমণ করতে আশা পাকিস্থানী সেনাদের উপর বিরতিহীন আক্রমণ চালিয়ে নাজিরগঞ্জে পদ্মা নদীতে সলিল সমাধি করতে সক্ষম হই। ১১ই ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে সুজানগর থানা শক্রমুক্ত করতে গিয়ে আনিসুর রহমানের চোখের কোনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মূল্যবান দুটি চোখ হারায়। যুদ্ধ শেষে বঙ্গবন্ধু যথেষ্ট চেষ্টা করেও তার চোখ ভাল করতে পারেন নাই। বঙ্গবন্ধু যোদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা আনিসুর রহমান সাঈদের বাবা কে ঢাকায় ডেকে নিয়ে বলেছিলেন এই অবস্থায় তিনি ছেলেকে দিয়ে কি করাতে চান। তখন তার বাবা মোকছেদ আলী মাষ্টার বলছিলেন আমার ইচ্ছা ছিল ছেলেকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করবো কিন্তু তা আর হলো না তখন বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন হবে ইনশাল্লাহ্, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান অন্ধ বীর মুক্তিযোদ্ধা আনিসুর রহমান সাঈদকে বলেছিলেন তুমি আমার কাছে কি চাও ? বঙ্গবন্ধুর কথার জবাবে আনিসুর রহমান বলছিলেন আমি ব্যক্তিগত ভাবে কিছুই চাই না ,দেশের সকল মুক্তিযোদ্ধারা যেন দুটো ডাল ভাত খেয়ে বাঁচতে পারে আপনি তার সু-ব্যবস্থা করবেন।
বঙ্গবন্ধুর সাথে কথোপকথন তৎকালীন সাপ্তাহিক ’মুক্তি বার্তা ’পত্রিকায় ছাপা হয়েছিল। পরিশেষে যোদ্ধাহত অন্ধ বীর মুক্তিযোদ্ধা আনিসুর রহমান সাঈদ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ভালবাসা নিয়ে অন্ধ অবস্থায় লেখাপড়া করতে থাকেন তার অক্লান্ত প্রচেষ্টায় সাতবাড়ীয়া কলেজ থেকে এইচ, এস,সি, তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে অনার্স সহ এম এ সেকেন্ড ক্লাশ নবম স্থান লাভ করেন। কিন্তু তৎকালীন সরকার তাকে কোন চাকরি দেন নাই।
তিনি দাবা খেলতে পছন্দ করতেন। সমাজ সেবায় তার ব্যপক অবদান রয়েছে। হঠাৎ তিনি মার্চের ১ম সপ্তাহে অসুস্থ হয়ে পরলে তাকে ঢাকা সরোয়ার্দি হাসপাতালে নেওয়া হয়। করোনার কারনে সরোয়ার্দি হাসপাতালে অপারেশন থিয়েটার তালাবদ্ধ থাকায় অন্য কোন সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করতে না পারায় তার অবস্থার অবনতি হয় । পরে তাকে বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে ভর্তি করে অপারেশন করা হলে তার দুটি পা কেটে ফেলতে হয়।
ডা: যোদ্ধাহত এ অন্ধ মুক্তিযোদ্ধাকে ভাস্কুলার সার্জারীর পরামর্শ দেওয়া হয় । কিন্তু তিনি একজন সূর্য্য সন্তান হয়েও কোন ভাবেই সরকারী হাসপাতালে ভর্তি করতে না পারায় তাকে প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল বলে জানায় তার পরিবার। ভাল চিকিৎসা পেলে হয়ত তার পা দুটি হারাতে হতো না ।
তিনি স্বাধীনতা যুদ্ধে দুইটি চোখ হারিয়েছেন,অবশেষে করোনার কারনে নির্দিষ্ট সময়ে চিকিৎসা না পাওয়ায় তার শেষ সম্বল পা দুটিও হারাতে হলো।
তার ছোটভাই এ,কে,এম মঞ্জুরুল হক পরিবারের পক্ষ থেকে যোদ্ধাহত এ অন্ধ বীরমুক্তিযোদ্ধার সু-চিকিৎসায় জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ।

আপনি এগুলোও দেখতে পারেন

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.