শেরপুরে অবৈধ ইটভাটার ছয়লাভ; পরিবেশ বিপর্যস্ত

0

ইউসুফ আলী মন্ডল, নকলা, শেরপুর থেকে : ভারতের মেঘালয় সীমান্তবর্তী দেশের ক্ষুদ্রতম জেলা শেরপুরে নতুন-পুরনো মিলে ৫৪টি ইটভাটা থাকলেও অনুমোদন নেই একটিরও। কৃষিজমি নষ্ট করে, ফসলি জমির টপসয়েল কেটে আবাসিক এলাকার মধ্যে উর্বর কৃষি জমিতে এসব ইটভাটা স্থাপিত হলেও পদক্ষেপ নেই প্রশাসনের।

শেরপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্যমতে, শেরপুর জেলা সদরসহ অন্য চারটি উপজেলা মিলে নতুন এবং পুরাতনে এ পর্যন্ত ইটভাটা স্থাপিত হয়েছে ৫৪টি। এরমধ্যে শেরপুর সদরে ২৯টির মধ্যে একটিরও অনুমোদন বা পরিবেশের ছাড়পত্র নেই। শ্রীবরদী উপজেলায় ১৪টি ইটভাটার মধ্যে একটির ছাড়পত্র থাকলেও এর মেয়াদ শেষ হয়েছে আগেই। ফলে এখানকার সবকটি বর্তমানে অবৈধ। ঝিনাইগাতি উপজেলায় ৬টি ইটভাটা থাকলেও পরিবেশের অনুমোদন নেই একটিরও। অবশ্য একটি ভাটা ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করেছে। নকলা উপজেলায় ৮টির মধ্যে একটিরও অনুমোদন বা ছাড়পত্র নেই। তবে এখানে আবেদন জমা পড়েছে একটির। নালিতাবাড়ী উপজেলার ২টির ছাড়পত্র থাকলেও গেল বছরই মেয়াদ শেষ হয়েছে তাদের। ফলে বর্তমানে জেলার ৫৪টি ইটভাটার সবকটিই অবৈধ।

সূত্র জানায়, নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে প্রতিবছরই জেলার বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠছে নতুন নতুন ইটভাটা। কোনপ্রকার বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই কৃষিজমি নষ্ট করে আবাসিক এলাকার মধ্যেই স্থাপিত হচ্ছে অধিকাংশ ভাটা। আবার এসব ভাটায় ব্যবহৃত হচ্ছে ফসলি জমির উর্বর টপসয়েল।
সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্রের ভিত্তিতে জেলা প্রশাসন ইটভাটা স্থাপনের লাইসেন্স দিয়ে থাকে। এক্ষেত্রে পরিত্যক্ত অনাবাদি জমি, নিচু জলাশয়ের ধারে, নদীর পাশে এবং কমপক্ষে চারদকে এক কিলোমিটার জনশূন্য এলাকায় ইটভাটা স্থাপনের নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু কোনো ইটভাটা মালিকই মানছে না এসব শর্ত।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শেরপুর পৌর শহরেই কোনো কোনপ্রকার অনুমোদন ছাড়া চলছে একাধিক ইটভাটা। নকলা উপজেলায় আগে থেকে অনুমোদনহীন দুটি ভাটা চালু থাকলেও গত তিন বছরে আরও ৬টি ভাটা তৈরি করা হয়েছে কোনপ্রকার অনুমোতি ছাড়াই। এরমধ্যে এ বছরই তৈরি হয়েছে ৪টি। জানতে চাইলে নকলায় সদ্য তৈরি সেভেন স্টার ব্রিকস এর মালিকপক্ষ স¤্রাট জানান, ‘শেরপুরের একটি ইটভাটারও অনুমোদন নেই। সবাই অবৈধভাবেই ব্যবসা পরিচালনা করছে। সবাই যদি অবৈধভাবে ব্যবসা করতে পারে, আমাদেরকেও এই সুবিধা দিতে হবে।’

শ্রীবরদীর রাজু ব্রিকস এর মালিক রাজু মিয়া জানান, ‘নিয়ম মেনে ভাটা করেছি। পরিবেশের ছাড়পত্রের জন্য আবেদনও করা হয়েছে।’ পরিবেশের ছাড়পত্র ও জেলা প্রশাসনের অনুমোতি ব্যতিরেকেই কিভাবে আগেই ভাটা তৈরি করা হলো এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সদুত্তর দিতে পারেননি। নালিতাবাড়ীর দুটি ভাটার মালিকরা জানিয়েছেন, আমাদের সবধরণের কাগজ রয়েছে। তবে হালনাগাদ করা হয়নি। এগুলো হালনাগাদ করা হবে। এদিকে অবৈধ এসব ইটভাটার কারণে হুমকির মুখে এখানকার কৃষিজমি। নষ্ট হচ্ছে প্রকৃতি ও পরিবেশ। স্থানীয়রা বাধা দিলেও তা কাজে আসছে না। মাঝেমধ্যে দু-একটি লোক দেখানো ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হলেও অবৈধ আটভাটা বন্ধে তা কার্যকরী নয় বলে মন্তব্য সংশ্লিষ্টদের।

এ বিষয়ে শেরপুরের জেলা প্রশাসক আনার কলি মাহবুব গণমাধ্যমকে জানান, অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযান চলমান রয়েছে।
নকলার ভাটা মালিক মোস্তাফিজুর রহমান ও বাশহাটীর মনসুর আলী গৌরদ্বার ইউনিয়নে ১০০ গজ পর পর নতুন ৪টি ভাটা বসিয়েছেন। বিপর্যস্ত পরিবেশ বাঁচাতে হলে ম্যাজিস্ট্রেটদের জরুরী পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.