যশোর খুলনা অঞ্চলে এনজিও’র কিস্তির টাকা আদায়ের চেষ্টা : ঋণ গ্রহীতারা চরম বিপাকে

0

সোম মল্লিক যশোর প্রতিনিধি : যশোর খুলনাঞ্চলে বিভিন্ন উপজেলায় এনজিওকর্মীরা বাড়ি বাড়ি কিস্তির টাকা আদায়ের জন্য অব্যাহত চেষ্টা চালাচ্ছেন। করোনার এমন সংকটে ভুক্তভোগী খেটে খাওয়া ঋণ গ্রহীতারা যখন তাদের সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন, তখন এনজিওকর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে, চাপ সৃষ্টি করে কিস্তি আদায় করছেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। লকডাউনের মধ্যে সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে কিস্তি আদায়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন কর্মীরা।

ফলে বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের ঋণ গ্রহীতারা। ঋণের টাকা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। বিভিন্ন এলাকার ছোটখাটো বিভিন্ন ব্যবসায়ীরা এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে তাদের ব্যবসার কার্যক্রম চালান। এ ছাড়াও অনেকে এনজিও থেকে সাপ্তাহিক কিস্তিতে ঋণ নিয়ে কৃষক, শ্রমিক, দিন মজুর, চা দোকানি, মুদির দোকানি, কাচাঁবাজার ব্যবসায়ী, বেসসরকারী চাকুরীজীবি, ইজিবাইক, থ্রি-হুইলার, ভ্যান, মোটরভ্যান, আলমসাধুসহ বিভিন্ন যানবাহন কিনে চালিয়ে তা থেকে আয় করে জীবিকা নির্বাহ করে এ ঋণের কিস্তি দেন।

কিন্তু করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হওয়ার পর থেকে ধীরে ধীরে মৃত্যু ও আক্রান্তের হার বাড়তে থাকায় সরকার দেশজুড়ে বিধি নিষেধ সহ কঠোর লকডাউন ঘোষণা করে। ভুক্তভোগী ঋণ গ্রহীতারা বলেন, এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে ব্যবসা ও ছোটখাটো গাড়ি কিনে তা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহসহ ঋণের কিস্তি দিয়ে আসছিলাম। কিন্তু করোনাকালীন লকডাউনে ব্যবসা বাণিজ্য প্রায় পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সংসার চালাতেই হিমশিম খাচ্ছি। লকডাউনে কয়েক সপ্তাহ বাড়ি বসে আছি, কোনো আয়-রোজগার নেই। ধারদেনা করে সংসার চলছে, কিস্তি কিভাবে দেব ভেবে পাচ্ছি না।

লকডাউনের সময় কিস্তি বন্ধ না করলে আমাদের না খেয়ে মরতে হবে। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে। বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা। ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে মহামারী করোনা ভাইরাস। আর এই মহামারী থেকে রক্ষা পেতে সরকারি নির্দেশনা ও স্বাস্থ্যবিধি মানার পাশাপাশি চলছে কঠোর বিধি নিষেধ। দীর্ঘদিন চলমান লকডাউনের কারণে বেশিরভাগ মানুষ কর্মহারা হয়ে বর্তমানে অভাব অনটনে দিন কাটাচ্ছেন।

বন্ধ হয়ে গেছে ব্যবসা বাণিজ্য ও দৈনন্দিন আয় রোজগার। এমন পরিস্থিতিতে স্ত্রী-সন্তানসহ পরিবার পরিজনদের মুখে দুবেলা দুমুঠো খাবার তুলে দিতে হিমশিম খাচ্ছেন নিন্ম আয়ের মানুষেরা। এই অবস্থার মধ্যেও এনজিওর ঋণের কিস্তি দিতে গিয়ে পড়েছেন চরম বিপাকে। এনজিও’র এক ফিল্ড অফিসার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, চাকুরী বাঁচানোর শর্তে আমাদের কিস্তির টাকা আদায়ের জন্য যেতে হচ্ছের্। অনেক বেশি কঠোর বিধি নিষেধ থাকায় বিকাশের মাধ্যমে কিস্তির টাকা আদায় করা হচ্ছে। ব্যুরো বাংলাদেশ এনজিওর মহাকাল শাখার কর্মকর্তার মহিদুল বলেন, যারা স্বেচ্ছায় কিস্তির টাকা পরিশোধ করছে। তাদের টাকা নিচ্ছি।

কারোর পরে কোন প্রকার চাপ দেওয়া হচ্ছে না। উদ্দীপন এর অভয়নগর শাখার ম্যানেজার সরদার আব্দুর ছামাদ জানান, কোন প্রকার কিস্তি আদায়ে প্রেসার নেই। আমাদের স্বাস্থ্য বিভাগ খোলা রয়েছে সেবা প্রদানের জন্য। বিষয়টা আমরা ভিন্নমাত্রায় ভেবেছি। ঋণগ্রহীতাদের মধ্যে যারা স্বচ্ছল,তারা কিস্তি পরিশোধে অনীহা দেখাতে পারেনা। আবার কেউ কেউ দেনা বাঁধিয়ে রাখতে নারাজ।

এক সংগে অনেক বোঝা হওয়ার ভয়ে কেউ কেউ কষ্ট হলেও ঋণের টাকা শোধ করতে চান। তাদের ক্ষেত্রে বিষয়টা ভিন্নভাবে চিন্তার সুযোগ রয়েছে। আবার এনজিওগুলিতে চাকুরী করা ভাই বোনদের জীবন জীবিকার কথাও ভাবতে হবে। কেননা, এনজিওগুলিও বাঁচিয়ে রাখা দরকার। আমরা মনে করি কারো কাছ থেকে জোর করাটা সমীচিন নয়। সাধ্য না থাকলে বিবেচনায় আনতে হবে। লকডাউনে কেউ হারিয়ে যাবে এমন কাম্য নয়। জোর জবরদস্তি করে আদায় করাটাও সহনীয় নহে।

আপনি এগুলোও দেখতে পারেন

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.