কুড়িগ্রামে ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে

0

আল এনায়েত করিম রনি, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি : কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরী উপজেলার বল্লভেরখাস ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি চেয়ারম্যান আকমল হোসেনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। তবে দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন চেয়ারম্যান। আর উপজেলা প্রশাসন বলেছে সুবিধাভোগিদের লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবার আশ্বাস।

লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানাযায়,উপজেলার বল্লভেরখাস ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি চেয়ারম্যান আকমল হোসেন সরকারী বিধির তোয়াক্কা না করে নিজের ইচ্ছে মতো ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম চালিয়ে আসছেন। ২০২০-২১ অর্থ বছরে করোনা কালীন ভিজিএফ ৬ হাজার ৬৭১ টি পরিবারের জন্য প্রত্যেক পরিবারের ৪৫০টাকা হারে মোট ৩০লাখ ১হাজার ৯৫০ টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। ইউপি সদস্যদের মাধ্যমে ২হাজার ৪০০টি কার্ড বিতরণ করলেও চেয়ারম্যান নিজের কাছে ৪হাজার ২৭১টি কার্ড রেখে দেন। এসব কার্ড পরিষদের জনপ্রতিনিধিরা নিজেদের পছন্দনীয় ব্যক্তি এবং স্বচ্ছল ব্যক্তিদের কাছে বিতরণ করেন। এছাড়াও চেয়ারম্যান ভোটার আইডি নম্বর ব্যবহার করে বিভিন্ন জনের নাম দিয়ে ১৯লাখ ২১হাজার ৯৫০টাকা আত্মসাৎ করেছেন।

বিভিন্ন ওয়ার্ডের সুবিধাভোগীর ভোটার আইডি নম্বর ব্যবহার করে টাকা উত্তোলন দেখানো হলেও সেই টাকা সুবিধাভোগীরা পাননি বলে জানানো হয়। এছাড়াও ২০১৬-২০২১ পর্যন্ত অর্থ বছরের উপজেলা পরিষদের ভূমি হস্তান্তর ১%, হাট বাজারের ইজারা ১০% এবং ১৫% টাকা উত্তোলন করা হয়। সাধারণ ব্যবসায়দের নিকট হতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বিপরীতে ৩০০টাকা আদায় করে সরকারী রাজস্ব খাতে ৫০টাকা হতে ১০০টাকা জমা করে বাকি টাকা আত্নসাৎ করেন চেয়ারম্যান। জন্ম সনদের ২০০টাকা হতে ৩০০টাকা নিলেও সরকারী খাতে ৫০টাকা জমা করেন। ইউনিয়নে বসত বাড়ির বাৎসরিক কর ১০০টাকা করে আদায় হলে মূল বইয়ে-৫০টাকা দেখিয়ে বাকি টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে।

ভিজিএফ সুবিধাভোগী আবুল কাশেম বলেন, আমার নামে ভিজিএফ কার্ডের তালিকায় নাম থাকলেও আমি কোন টাকা পাইনি। সেই টাকা কে পেয়েছে তা আমার জানা নেই। একই অভিযোগ অপর সুবিধাভোগী খাইরুল আলম বলেন,আমিসহ আমার পরিবারের ৪জনের নাম দিয়েছি ভিজিএফ কার্ডে। কিন্তু ঈদের আগে শুধু মাত্র আমার মেয়ে সেই টাকা পেয়েছে। আমি এবং আমার দুই ছেলে কোন টাকা পাইনি। শুনেছি তালিকায় আমাদের নাম থাকলেও সেই টাকা চেয়ারম্যান তুলে নিয়েছেন।

সংরক্ষিত মহিলা সদস্য মমতাজ বেগমের ছেলে মাইদুল ইসলাম বলেন,আমার মায়ের মাধ্যমে ঈদের আগে ভিজিএফ’র ৪৫০টাকা পেয়েছি।

ইউপি সদস্য হুজুর আলী বলেন,ইউনিয়ন পরিষদের বরাদ্দকৃত টিআর/কাবিখা/কাবিটা/এডিপি/এলজিএসপি এর বরাদ্দ টাকার কাজ বাস্তবায়নে ইউপি সদস্যদের নিয়ে রেজুলেশন করলেও সেই কাজ সঠিকভাবে বাস্তবায়ন না করেই টাকা আত্নসাত করেন চেয়ারম্যান। চেয়ারম্যান আকমল হোসেনের স্বেচ্ছাচারিতা, দুর্নীতি এবং অনিয়মের বিষয়ে বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার না পাওয়ার অভিযোগ করেন তিনি। ইউপি সদস্য ছইফুর রহমানও একই অভিযোগ করে বলেন,আমরা নিবার্চিত হবার পর থেকে চেয়ারম্যান স্বেচ্ছাচারিত নিয়ে প্রতিবাদ করে আসছি। এজন্য আমাদেরকে অনেক হুমকিও দেয়া হয়েছে। এই অভিযোগের আগেও সকল ইউপি সদস্য চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনাস্থা নিয়ে অভিযোগ দেবার পরেও কোন কাজ হয়নি। ফলে চেয়ারম্যানের দুর্নীতি লাগামহীন হয়ে পড়েছে।

সকল অভিযোগ অস্বীকার করে চেয়ারম্যান আকমল হোসেন বলেন,পূর্বে যে গুলো অভিযোগ দিয়েছিল সেগুলো মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। অন্য মেম্বারদের সাথে আমার কোন বিরোধ নেই। কিন্তু দু’জন মেম্বার তারা সবসময় বরাদ্দের বাইরেও বাড়তি সুবিধা চেয়ে আসছে। সেই সুবিধা না দেবার কারণে তারা বিভিন্ন ভাবে আমাকে হেয় করে আসছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুর আহমেদ মাছুম বলেন, ভিজিএফ সুবিধাভোগীদের কেউ টাকা না পাওয়ার বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.