১০০ টাকার বোতাম চাপলেই ৮৭ টাকার পেট্রোল!
পাবনা প্রতিনিধি : পাবনা-ঈশ্বরদী মহাসড়কের সদর উপজেলার মালিগাছা ইউনিয়নের গাছপাড়া (ছোট মনোহরপুর) বাজারের পাশেই যমুনা পেট্টোলিয়াম লিমিটেডের অনুমোদিত মেসার্স ফিউয়েল অ্যাম্বাসী নামের তেল পাম্পের ১০০ টাকার বোতাম চাপলেই ৮৭ টাকার পেট্টোল (১ লিটার) পাওয়া যায় বলে অভিযোগ উঠেছে।
ডিজিটাল মিটারের আড়ালে অভিনব পন্থায় দীর্ঘদিন ধরেই অভিযুক্ত পেট্টোল পাম্প মালিকের ইন্ধনে কর্মরত অসৎ কর্মচারীরা প্রতিনিয়ত মোটর সাইকেল ব্যবহারকারীদের সাথে এই ডিজিটাল প্রতারণা করে আসছে।
গতকাল রোববার সকাল আটটার দিকে জনৈক ব্যক্তির মোটর সাইকেলে পেট্টোল শেষ হয়ে যাওয়ায় ২ লিটারের মজোর খালি বোতলে তেল নেয়ার জন্য গাছপাড়া বাজার সংলগ্ন মেসার্স ফিউয়েল অ্যাম্বাসী নামের পেট্টোল পাম্পে যান। এ সময় তেল পাম্পের মেশিন অপারেটর (নৈশপ্রহরী) বোতলে তেল দিতে আপত্তি জানান। পরে মোটর সাইকেল ব্যবহারকারীর অনুরোধে তিনি গোপনে কারও সাথে কোন কথা না বলার শর্তে ২ লিটারের ওই বোতলে ২০০ টাকার পেট্টোল দেন। ২০০ টাকার তেল ওই বোতলে প্রবেশের জায়গা হবে না অথচ ২০০ টাকার মিটার চেপেই তাকে তেল দেয়া হয়। ২০০ টাকার তেলেও বোতল ভর্তি হয়নি। তেল নেয়ার আধাঘন্টার মধ্যেই তিনি বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেয়ার সাথে সাথে শেয়ার ও কমেন্টের পাল্লা ভারি হতে শুরু করে। নানা জনের অভিযোগ ওই তেল পাম্প ঘিরে এমন কমেন্ট আসতে থাকে।
পাবনা কলেজের সহকারী অধ্যাপক মোঃ আলমগীর হোসেন মতামত দিয়েছেন, মোটর বাইকের কোম্পানীগুলো প্রতি লিটার তেলে ৭৫ কিলোমিটার যাওয়ার কথা বললেও পাম্পগুলোর জ্বালানী চুরির জন্য ৪০/৪৫ কিলোর বেশি যাচ্ছে না।
রূপপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোঃ হাবিবুর রহমান বলেন, ডিজিটাল মিটারে ডিজিটাল পন্থায় জ্বালানী চুরি করায় ওই পাম্প থেকে জ্বালানী নেয়া বাদ দিয়েছি। তাদের কঠিন শাস্তির দাবী জানান।
ব্যবসায়ী সোহেল রানা, ফরহাদ জামান রুবেল বলেন, বেশ কয়েকবার তেল চুরি হাতে নাতে ধরেছি। ধরা পড়লেই ভুল হয়েছে বলে দাবী জানায় তেল পাম্পের ম্যানেজার ও কর্মচারীরা। সরকারি চাকুরিজীবী তানভীর মাহমুদ সৈকত বলেন, আমি নিজেও এই কান্ডের ভুক্তভোগী। এদের প্রশাসনিক ভাবে তদন্ত করে আইনের আওতায় আনা জরুরী।
ওষুধ কোম্পানীর মেডিকেল অফিসার মনোয়ারুল ইসলাম বলেন, শুনেছি এই পেট্টোল পাম্প পরিবারে বেশ কয়েকটি পাম্প রয়েছে। এদের পাম্পগুলো থেকে ৫০০ টাকার পেট্টোল নিলে ৫ লিটার দেয়া হয়। ২০০ টাকার তেলের পরিবর্তে ২০ টাকার তেল দেয়া হয়েছে। এগুলো বলতে গেলেই তারা বলেন, শুনতে পারিনি অথবা ভুল হয়েছে বলেই চালিয়ে দেন।
মিথুন খন্দকার নামে জনৈক ব্যক্তি ফেসবুক কমেন্টে লিখেছেন, ১ হাজার টাকার তেল চাইলে ৫০০ টাকা আর ৫০০ টাকার চাইলে ২০০ টাকার তেল দেয়। ধরা পড়লেই ভুল আর ভুল সাফাই গেয়ে পাড় পাওয়ার চেষ্টা করেন। এদের বিরুদ্ধে কঠিন আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার দাবী তার।
পাবনার একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার সমন্বয়ক মোঃ লুৎফর রহমান জানান, পাবনার বিভিন্ন তেল পাম্পে এ ধরণের ঘটনা অহরহ ঘটছে। প্রতারণার শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। প্রত্যেকটি তেল পাম্প মনিটরিং করে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানাচ্ছি।
গণমাধ্যম কর্মি শাহীন রহমান, মোস্তাফিজ রাসেল, কলেজের সহকারী অধ্যাপক শামসুন্নাহার বর্ণা, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সাঈদ ইসলাম ও আমিনুল ইসলাম সুমন বলেন, সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণা করে ঠকানোর অধিকার এদের নেই। এদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা নতুবা আইনগত কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবী জানাচ্ছি।
মেসার্স ফিউয়েল অ্যাম্বাসী পেট্টোল পাম্পের ম্যানেজার আরিফুল ইসলাম আরিফ বলেন, ডিজিটাল মাপে কোন কম দেয়ার সুযোগ নেই। শুধু আমরা দিবো আর আপনারা দেখে নেবেন না এটা তো হতে পারে না। ১০০ টাকার বোতাম চেপে ১ লিটার তেল পাওয়া যায় এমন প্রশ্নে তিনি কোন সদ্যুত্তর দিতে পারেননি।
স্থানীয় একাধিক ব্যক্তির সাথে আলাপকালে তারা বলেন, ম্যানেজারের ভাবসাব দেখে মনে হয় সে নিজেই পাম্পের মালিক। এই প্রতারণা, তেল চুরিসহ পাম্প কেন্দ্রিক নানা অনিয়মের সাথে ম্যানেজার সরাসরি জড়িত দাবী করে তারা বলেন, পাম্প মেশিন অধিকাংশ সময় বয়স্ক নৈশ প্রহরী দিয়ে চালান। এছাড়াও যে সকল কর্মচারী আছে তারাও মানুষের সাথে খুব খারাপ আচরণ করে। স্থানীয়দের অভিযোগ, ম্যানেজার পাম্পের দোহাই দিয়ে সাধারণ মানুষকে ঠকিয়ে অবৈধ ভাবে অনেক অর্থবিত্তের মালিক হয়ে গেছে। তার বিরুদ্ধে তদন্ত করা হোক।
সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পাম্প মালিক ফিরোজ হোসেনের সাথে মুঠোফোনে একাধিক বার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন বারবার কেটে দেন। এ বিষয়ে পাবনাস্থ ভোক্তা অধিকারের সহকারী পরিচালক আব্দুস সালাম বলেন, জনস্বার্থে ওই পাম্পে অভিযান পরিচালনা করে প্রতারণার প্রমাণ পাওয়া গেলে এ ঘটনার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।