শিকলে বাঁধা অবস্থায় তিন বছর ধরে জীবন কাটাচ্ছেন বাকপ্রতিবন্ধী মানিক হোসেন

0

মোঃ আসাদুল্লাহ আল গালিব, দিনাজপুর প্রতিনিধি : দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার সাতনালা ইউনিয়নের বেরুবারী গ্রামে বাসা বাকপ্রতিবন্ধী মানিক হোসেনের।লোহার শিকল দিয়ে পায়ে তালা মেরে ঘরের ভিতর বাঁশের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়েছে বাকপ্রতিবন্ধী মানিককে। কখনো তিনি দাঁড়িয়ে থাকছেন, কখনো বসে সময় কাটাচ্ছেন। চিৎকার-চেঁচামেচি আর হাসি-কান্নার মধ্য দিয়েই কাটছে তার প্রতিদিনের জীবন।গত তিন বছর ধরে লোহার শিকলে এভাবেই জীবন যাপন করছেন বাকপ্রতিবন্ধী মানিক হোসেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, নিজ সন্তানকে পায়ে লোহার শিকল ও তালা দিয়ে বেঁধে রেখেছেন অসহায় মা-বাবা। এমনিতেই কোনোমতে সংসারজীবন চলে তাদের। তার ওপর প্রতিবন্ধী দুই ছেলের চিকিৎসার চিন্তা। সন্তানদের চিকিৎসা করানো একজন দরিদ্র বাবার জন্য পাহাড়ের মতো বোঝা। তবুও স্নেহের কমতি নেই তাদের দুই সন্তানের প্রতি। চিন্তায় সারাক্ষণ কেঁদেই যাচ্ছেন অসহায় মা-বাবা।

তাদের বড় সন্তান মানিক হোসেন (২১)। তিনি জন্ম থেকেই মানসিক ভারসাম্যহীন ও বাকপ্রতিবন্ধী। তাকে প্রায় তিন বছর ধরে পায়ে লোহার শিকল ও তালা দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। ছোট ছেলে মাহফুজুর রহমান (১৪)। সেও শ্রবণ ও বাকপ্রতিবন্ধী।

এলাকাবাসী ও তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মানিক হোসেন জন্ম থেকেই মানসিক ভারসাম্যহীন ও বাকপ্রতিবন্ধী। বাড়ির বাইরে গেলে মানুষকে আঘাত করেন, কামড় দেন, শিশুদের গলা টিপে ধরেন। তাই বাকপ্রতিবন্ধী মানিককে প্রায় তিন বছর ধরে পায়ে লোহার শিকল দিয়ে রাখা হয়েছে। এতে বন্দিজীবন কাটাচ্ছেন তিনি। মানসিক ভারসাম্যহীনতার কারণে আর দশটা শিশুর মতো প্রাণোচ্ছল শৈশব পাননি তিনি। অর্থাভাবে তার চিকিৎসাও বন্ধ রয়েছে। বড় দুই সন্তানের দুশ্চিন্তায় উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠায় দিন কাটছে মা-বাবার।

মানিকের মা মরিয়ম বেগম বিডি২৪ভিউজকে বলেন, আমার বৃদ্ধ শ্বশুর-শাশুড়ি, আমরা স্বামী-স্ত্রী, ৩ ছেলে ও ২ মেয়ে নিয়ে পরিবারে ৮ সদস্য। আমার স্বামী নলকূপ মিস্ত্রির সহকারী হিসেবে কাজ করেন। তিনিই সংসারের একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তি। আমার স্বামী অসুস্থ। কাজ না করলে ভাত জোটে না। একমাত্র স্বামীর আয় দিয়েই চলে ৮ জনের সংসার।কারণ ভিটেমাটি ছাড়া আমাদের তেমন কোন জমিজমা নেই।আমার ছেলে মানিককে বাইরে যেতে দিলে লোকজনকে কামড় দেয়। প্রতিবেশীরা বাড়িতে এসে মানিককে মেরে ফেলবে, না হলে গাড়িতে তুলে দিয়ে দূরে কোথাও পাঠিয়ে দেবে বলে হুমকি দেয়। এজন্য তিন বছর ধরে পায়ে লোহার শিকল দিয়ে তালা মেরে বেঁধে রাখছি।

তিনি আরও বলেন, কেউ আমার ছেলের চিকিৎসায় যদি এগিয়ে আসতেন, তবে সে সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারত। সাতনালা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ১ নং ওয়ার্ড সদস্য জাকির হোসেন বিডি২৪ভিউজকে বলেন, আমার বাসার পাশেই মানিকদের বাসা। আনোয়ারের দুই ছেলেই প্রতিবন্ধী। আমি তাদের প্রতিবন্ধী ভাতার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। আমাদের ইউপি চেয়ারম্যান তাদের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেন।

তিনি আরও বলেন, আনোয়ারের পরিবারের অসহায়ত্বের কথা বিবেচনা করে সমাজের বিত্তবান ব্যক্তিসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাদের চিকিৎসার দায়িত্ব নেবেন, এমনটাই প্রত্যাশা করি আমরা। চিরিরবন্দর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. হামিদুর রহমান বিডি২৪ভিউজকে বলেন, আমার এ বিষয়ে জানা নেই। তবে বাকপ্রতিবন্ধী মানিক সরকারি ভাতার টাকা না পেয়ে থাকলে আমি মেবাইল ব্যাকিংয়ের মাধ্যমে সমাজসেবা অফিস থেকে এ ব্যবস্থা করে দেব।

এদিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য হৃদয়বান মানুষের কাছে সহায়তার আহ্বান জানিয়েছেন মানিকের মা। কেউ এ বিষয়ে জানতে চাইলে আনোয়ার হোসেনের 01749101235 (মানিকের বাবা) নম্বরে যোগাযোগ করতে পারেন।

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.