যানজট, জলাবদ্ধতা আর ফটুপাত দখলে নাকাল পাবনা শহরবাসী !

0

নিজস্ব প্রতিনিধি : প্রথম শ্রেণির পৌরসভার তালিকায় পাবনা পৌরসভা হলেও এখনও নাগরিক সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত পৌরবাসী। শহরবাসী তীব্র যানজট, জলাবদ্ধতা আর ফুটপাত দখলে নাকাল হয়ে পড়েছে। দিনদিন অটোবাইক, ইজিবাইক আর ব্যাটারী চালিত রিক্সা বৃদ্ধির ফলে জনদূর্ভোগ চরম পর্যায়ে। অল্প বৃষ্টিতেই শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে জলাবদ্ধতা আর ফুটপাতে মওসুমি ও ভ্রাম্যমান হকারদের উপদ্রুপ নিত্যদিনের দূর্ভোগ সৃষ্টি করেছে।

তথ্যমতে, ১৮৭৬ খ্রিস্টাবে প্রাচীন জনপদ পাবনায় পৌরসভা স্থাপিত হয়। প্রায় ২ লক্ষ মানুষের বসতি এই পৌরসভা ঘিরে। সিসি রাস্তা ৪.৩০ কিমি, কার্পেটিং ১৫১ কিমি, হেরিংবোন ১৭.৯০ কিমি ও কাঁচা রাস্তা ১৮.৮ কিমি। পৌর এলাকায় পাকা ড্রেনেজ ব্যবস্থা ১২০ কিলোমিটার আর কাঁচা ড্রেনেজ ব্যবস্থা ২২ কিলোমিটার। পৌরসভার হিসেব মতে, ব্যাটারী চালিত অটোবাইক ২৫০০ আর অটোরিক্সা ২৫৫০ টি চলাচল করছে। প্রথম শ্রেণির পৌরসভা হলেও নাগরিক সুযোগ সুবিধা শতভাগ এখনও আসেনি। শহরে তীব্র যানজট, জলবদ্ধতা আর ফুটপাত দখলের কারণে সাধারণ পথচারী তথা শহরবাসীর নাভিশ্বাসে পরিণত হয়েছে।

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রফেসর শিবজিত নাগ বলেন, শহরের মূলত পাবনা প্রেসক্লাবের সামনে থেকে বীণাবাণী সিনেমা হল পর্যন্ত এই যানজট সৃষ্টি হয়। যানজটের প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে ব্যাটারী চালিত অটোবাইক ও অটোরিক্সা। শহর যানজট মুক্ত করতে হলে সুপরিকল্পিত ভাবে টেকসই উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। পাবনা প্রেসক্লাবের সভাপতি এবিএম ফজলুর রহমান বলেন, অনেক পুরোনো পাবনা পৌরসভা। অথচ সেবার মান নিয়ে রয়েছে নানা সংশয়। সামান্য বৃষ্টি হলেই শহরের গুরুত্বপূর্ণ গলি ও সড়কে এমনকি মেইন সড়ক পর্যন্ত জলাবদ্ধ হয়ে যায়। আধুনিক ও যুগোপযোগী ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় জনসাধারণকে এই দূর্ভোগ পোহাতে হয়। এটা গুরুত্ব সহকারে পৌর কর্তৃপক্ষকে দেখা জরুরী বলে মনে করি।

এদিকে পাবনা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রির সিনিয়র সহসভাপতি আলী মর্তুজা বিশ্বাস সনি বলেন, শহরের প্রাণ কেন্দ্র হামিদ রোড কেন্দ্রিক দোকানপার্টের মালিকরা দিন, সাপ্তাহিক ও মাসিক চুক্তিতে দোকানের সামনে ফুটপাত ভাড়া দিয়ে আসছেন। এমন অভিযোগ আমাদের কাছে এসেছে। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে আমরা চেম্বারের পক্ষ থেকে একটি উপকমিটি করে দিয়েছি। ওই কমিটি প্রাথমিক ভাবে ব্যবসায়ীদের ফুটপাত ভাড়া থেকে বিরত এবং মুক্ত রাখতে সর্তক করে দিচ্ছেন। তারা যদি না মানেন, তাহলে আমরা শক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।

শহরে তীব্র যানজটের বিষয়টি নিশ্চিত করেন পাবনার পুলিশ সুপার শেখ রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, শহরের ভেতরে যানজট নিরসনে রাস্তার দু’পাশ প্রশস্ত করা খুবই দরকার। প্রশস্ত করা গেলে শহরে যানজট নামের জনদূর্ভোগ থাকবে না। তিনি বলেন, ওয়ান এলিভেনের সময়ে এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই উদ্যোগ ঝিমিয়ে পড়ায় সেটা আর বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। তিনি দাবী করেন, জেলা পুলিশ শহরের যানজট নিরসনে কাজ করছে। জেলা পুলিশের বেশ কিছু কর্মিসহ পৌরসভা ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মিরা যানজট নিরসনে কাজ করছে।
পাবনা পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী খন্দকার জিয়াউল ইসলাম পলাশ জলবদ্ধতায় শহরবাসীর দূর্ভোগের শেষ নেই এমন সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, বাজেট না থাকায় যুগোপযোগী ও আধুনিক ড্রেনেজ ব্যবস্থা করা সম্ভব হচ্ছে না। পৌরসভার পক্ষ থেকে উচ্চপর্যায়ে বাজেট চাওয়া হয়েছে। কাঙ্খিত বাজেট পেলেই নাগরিক সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে।

আর জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদ শহরের ফুটপাত দখল প্রসঙ্গে বলেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাঝে মধ্যেই ফুটপাত দখল মুক্ত করতে ভ্রাম্যমান আদালত ও উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। এটা শুধু জেলা প্রশাসনই নয়, পাবনা পৌরসভা কর্তৃপক্ষকেও এগিয়ে আসতে হবে। যৌথ ভাবে ফুটপাত দখল মুক্ত করতে পারলে শহরবাসীর দূর্ভোগ কমে আসবে এমন দাবী জেলা প্রশাসকের।
পাবনার সচেতন মহলের প্রত্যাশা, দ্রুত সময়ের মধ্যে পাবনা শহরবাসী তীব্র যানজট, জলবদ্ধতা আর ফুটপাত দখল থেকে মুক্তি চায়। দীর্ঘশ্বাস নয়, স্বাচ্ছন্দ্যে তারা শহরে বিচরণ করতে চান। এ জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে দ্রুত সময়ের মধ্যে শহরবাসীকে এই দূর্ভোগ থেকে মুক্তির দাবী জানান।

আপনি এগুলোও দেখতে পারেন

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.