এই পতাকা লাগবে, জাতীয় পতাকা

0

শ্রীপুর প্রতিনিধি : ‘আমার সোনার বাংলা,আমি তোমায় ভালোবাসি’এই ভালোলাগা থেকে শখের বশে দেশকে ভালবেসে শুরু করলেও সেই শখ এখন পেশায় রূপ নিয়েছে। প্রতিবছরে বিজয়ের মাস আসলেই উপজেলার সড়ক-মহাসড়কের অলিতে-গলিতে তাঁদের পদ চারণা লক্ষ্য করা যায়। একটি বাঁশের লাঠির মধ্যে বিভিন্ন সাইজের পতাকা বেঁধে,বেগ ও লাঠিটি কাঁধের রেখে,লাঠির মধ্যে বিভিন্ন সাইজের পতাকা বেঁধে তাঁদেরকে হাঁটতে দেখা যায়। শুধু পতাকায় নয় দেশের পতাকা অঙ্কিত মাথার ফিতা ও হাতের ব্রেসলেট,বাচ্চাদের চরকিও পাওয়া যায় পাওয়া যায় তাঁদের কাছে। এইসব সহ জাতীয় পতাকা বিক্রি করে যে আয় হয় সেই অর্থ দিয়েই চলে প্রায় অসংখ্য বেকার হকারদের সংসার।ভোর থেকে শুরু করে রাত পর্যন্ত চলে এদের পতাকা বিক্রি।বিভিন্ন সাইজের পতাকা বিক্রি করে উপার্জন হয় অর্থ।

জানাছিলাম গাজীপুরের শ্রীপুর মাওনা চৌরাস্তা এলাকার ফেরি করে বিক্রি করা বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা হকারদের কথা। অনেক হকার কোন কর্ম না পেয়ে এ কাজ করছেন। আবার অনেক বাংলাদেশকে ভালবেসে মৌসুমী বা শখ করে পতাকা বিক্রি করেতে এসে খুঁজে পান সংসার চালানোর চাবি।

শুক্রবার (১০ ডিসেম্বর) উপজেলার বিভিন্ন রাস্তায় দেখা মেলে প্রায় কয়েক জন বাংলাদেশর জাতীয় পতাকা বিক্রি হকারের।প্রতিবেদকের সাথে কথা হয় তাদের। তাঁরা জানান- যাঁরা বাংলাদেশকে ভালবেসে মুক্তি যোদ্ধের চেতনাকে মনে ধারন করে বিজয় দিবস উপলক্ষে জাতীয় পতাকাকে সম্মান জানতে সংগ্রহ করতে চাওয়া দেশ প্রেমী জনতার হাতে আমরা তাঁদের পতাকা তুলে দেই। পতাকা বিক্রি বিনিময়ে আমরা খুবই সামান্য পরিমাণ অর্থ তাদের কাছ থেকে লাভ নেই।এতে ক্রেতাদের তেমন কোনও অভিযোগ নেই।বরং তাঁরা হাতের কাছে পতাকা পেয়ে খুবই খুশি হন।

মাওনা চৌরাস্তার পল্লী বিদুৎ এলাকায় শেরপুরে শ্রীবরদী থেকে আসা জাতীয় পতাকা বিক্রিতা শামীম প্রতিবেদকে বলেন, আমার শখ ছিল পতাকা বিক্রির।প্রায় ১২ বছর ধরে বিভিন্ন উপজেলায় পতাকা বিক্রি করি।গত বছর করোনা ও পারিবারিক সমস্যা থাকায় পতাকা বিক্রি করতে আসতে পরিনি।বিনিময়ে তাঁদের কাছ থেকে আকার ভেদে ২০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা পতাকার দাম নিয়ে থাকি।প্রতিদিন প্রায় ৫/৭ শত টাকা পর্যন্ত আয় হয়। এই টাকা দিয়েই চলে আমাদের সংসার। এই কাজে উপজেলায় অর্ধশতাধিক লোক রয়েছে।জাতীয় পতাকা বিক্রি করা আমাদের নেশা হয়ে গেছে।

‘এই পতাকা লাগবে,জাতীয় পতাকা’,এভাবেই ডাকতে ডাকতে যাচ্ছিল পৌর এলাকার মাস্টার বাড়িতে কামাল হোসেন। কথা হয় কামালের সঙ্গে। তিনি বলেন, মুক্তি যোদ্ধা প্রেমীদের কাছে জাতীয় পতাকা তুলে দেওয়ায় এখন আমাদের কর্ম। অনেকেই এসেছিলেন শখের বশে। এখন সেই শখ থেকে অর্থ রোজগারের মাধ্যম হয়েছে। করোনাকালীন গত ডিসেম্বর বিধিনিষেধ থাকায় তখন আমরা আয় রোজকার কম করেছি। এখন অনেকটাই স্বাভাবিক।এই বছর স্বাধীনতার সূবর্ণ জয়ন্তী পালন হচ্ছে তাই পতাকার একটু বেশি। যার কারণে আয় ভালো হচ্ছে।আমরা দেশ প্রেমী মানুষকে খুশি করেই টাকা নেই। কেউ কষ্ট পায় না।তবে অনেক পতাকা প্রেমী মানুষ আছে যারা খুবই আপ্যায়ন ও সম্মান করে।

মাওনা বাজার থেকে আসা পতাকা ক্রেতা আল-আমিন বলেন,স্বাধীনতা সুবর্ণ জয়ন্তী যদি নিজের কাছে একটি লাল সবুজ পতাকা না পারি তাহলে কেমন হলো। এখানকার পতাকা হকারেরা খুবই ভাল মানের জাতীয় পতাকা বিক্রি করে।হাতের কাছে পাওয়া যায় ও দামে কম। যে যাঁর পছন্দ মত বিভিন্ন আকার ভেদে পতাকা ক্রয় করতে পরে।এই সময় এই সময় টা এলেই পাড়া মহল্লায় তাঁদের আনাগোনা বৃদ্ধি পায়।

তেলিহাটি ইউনিয়ন মুলাইদ গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রশিদ বলেন, ডিসেম্বর মাস আসলে আমার বুকের ভিতর অন্য রকম অনুভূতির সৃষ্টি হয়। যখন কাঁরও হাতে জাতীয় পতাকা দেখি তখন গর্বে বুক ভরে যায়। এই পতাকার জন্য জীবনকে বাজি রেখে দেশকে ভালবেসে নয় মাস মুক্তিযুদ্ধ করছিলাম।

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.