ভবদহবাসির দু:খ ঘোচাবে অভয়নগরের আমডাঙ্গা খাল
যশোর প্রতিনিধি : যশোরের ভবদহ এলাকাবাসির দু:খ অভয়নগরের আমডাঙ্গা খাল অনেকাংশে লাঘোব করবে বলে আশার আলো দেখেছিলেন অভয়নগরসহ ভবদহের এ অঞ্চলের মানুষ। দীর্ঘদিনের দাবি ছিল খালের গভীরতা ও প্রসস্ততা বৃদ্ধি করে ভবদহের বিকল্প হিসেবে আমডাঙ্গা খালকে ব্যবহার করতে হবে। এ নিয়ে ধোপাদী গ্রামে ও নওয়াপাড়ায় একাধিকবার সভা-সমাবেশ হয় এবং দৈনিক নওয়াপাড়া পত্রিকায় একাধিকবার সংবাদ প্রকাশ হয়।
অবশেষে বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা অভয়নগরের আমডাঙ্গা খাল ও সিদ্ধিপাশা খালসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানের জন্য প্রয়োজনীয় বাজেট প্রদান করেন। অচিরেই শুরু হবে আমডাঙ্গা খাল খনন ও জমি অধিগ্রহণ করে খালের প্রসস্ত করন। যে কারণে আসার আলো দেখতে শুরু করেছে ভবদহ উত্তর এলাকার জনগণ। জানা যায়, প্রায় দেড়যুগ আগে ৮৮/যশোর-৪ আসনের সাবেক এমপি, বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব এমএম আমিন উদ্দীন স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন। সেই থেকে শুরু হয় অভয়নগরের আমডাঙ্গা খাল খননের সুত্রপাত।
অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে খাল কেটে পানি নিস্কাশন করতে সক্ষম হলে পরবর্তীতে ওই খালে পলি ও শেওলা জমে পানি নিস্কাশন বন্ধ হয়ে যায়। এরপর গত ৫/৬ বছর আগে পূর্ণাঙ্গ আমডাঙ্গা খাল খনন করতে এবং খাল দিয়ে পানি নিস্কাশন করে ভৈরব নদে পানি পৌছে দিতে অনেক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়। তখন আমডাঙ্গা খাল খনন কমিটি গঠিত হয়। সেই কমিটি অভয়নগর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও ভবদহ পানি নিস্কাশন কমিটির আহবায়ক আলহাজ্ব এনামুল হক বাবুল এর সহযোগীতা কামনা করেন।
এসময় তিনি প্রায় ৩ বিঘা জমি খাল খনন করতে দান করেন। কিন্তু বাঁধসাধে নগদ অর্থ। এসময় যশোর জেলা ট্রাক ট্যাংলরী ও কাভার্টভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সহ সাধারণ সম্পাদক রবিন অধিকারী ব্যাচা নগদ অর্থ প্রদান করে খাল খননে সহযোগীতা করেন। পরে আবারও জলাবদ্ধতায় পড়ে ভবদহের এ অঞ্চলের মানুষ। খাল দিয়ে পানি নিস্কাশন বন্ধ হয়ে যায়।
ফলে আবারও ধোপাদী গ্রামের মানুষ সাবেক কাউন্সিলর ও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি আ: রউফ মোল্যার নেতৃত্বে অভয়নগর ও মণিরামপুরের কয়েকটি ইউনিয়নের মানুষকে একত্রিত করে ধোপাদী গ্রামে কয়েক দফা সভা সমাবেশের মাধ্যমে আবারও স্বেচ্ছাশ্রমে খালে জমে থাকা শেওলা ও পলি অপসারণ করে। কিন্তু খালের পলি ও সরু খাল দিয়ে পানির গতি বৃদ্ধি না হওয়ায় উল্লেখ যোগ্য ফল দেখছিলনা এ এলাকার মানুষ। এজন্য বার বার দাবি করা হয় স্থানীয়ভাবে জমি অধিগ্রহণ করে খালের প্রসস্ততা বৃদ্ধি করে ও খাল খনন করে ভবদহের পানি যদি ভৈরব নদীতে নিস্কাশন করা যায় তাহলে এর পূর্ণাঙ্গ সুবিধা পাওয়া যাবে। এমন দাবির মুখে ৮৮/যশোর-৪ আসনের এমপি রণজিত কুমার রায় খাল পরিদর্শনে আসেন। পরিদর্শনে বাস্তবতা অনুভব করে পানিবন্দি মানুষকে কথা দিয়ে যান এই সমস্যার সমাধান করা হবে। সেই হিসেবে গত মঙ্গলবার একনেকের বৈঠকে অভয়নগরের আমডাঙ্গা খাল, সিদ্ধিপাশায় অবস্থিত অপর একটিখালসহ বেশ কয়েকটি খালের জমি অধিগ্রহন ও খনন করতে অর্থ পাশ করা হয়।
এব্যাপারে অভয়নগর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও ভবদহ পানি নিষ্কাশন কমিটির আহবায়ক আলহাজ্ব এনামুল হক বাবুল জানান, আমডাঙ্গা খালের জমি অধিগ্রহণ ও খাল খননের জন্য একনেকে অর্থ পাশ করা হয়েছে শুনে আমরা খুশি হয়েছি, অতিদ্রুত এই কাজ বাস্তবায়ন হলে ভবদহ এলাকার মানুষ এর সুফল পেতে শুরু করবে।
এব্যাপারে যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তাওহীদুল ইসলাম দৈনিক নওয়াপাড়াকে জানান, জলবায়ূ পরিবর্তন সংক্রান্ত বিশ্ব ব্যাংকের একটি বাজেট সম্প্রতি একনেকে (জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি) পাশ হয়। যা অনেক বড় বাজেট, এটা দিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পনি নিস্কাশন কিংবা খাল খনন এবং জমি অধিগ্রহনের কাজ করা হবে। সেই আলোকে অভয়নগররের আমডাঙ্গা খালের জমি অধিগ্রহণ ও খননের কাজ করার কথা রয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, আমডাঙ্গা খালের জন্য নির্দিষ্ট কোন বাজেট নয়, এখানে জমি অধিগ্রহণ ও খাল খননে প্রয়োজনীয় চাহিদা অনুযায়ী কাজ করা সম্ভব হবে।’ উল্লেখ্য- যশোরের ভবদহের জলাবদ্ধ অঞ্চলে স্থানীয়দের যাতায়াতে নৌকা, ডোঙ্গার পাশাপাশি নড়বড়ে বাঁশের সাঁকোই ভরসা। যশোর জেলার অভয়নগর, মণিরামপুর, কেশবপুর, ফুলতলার নিম্ন অঞ্চল নিয়ে ভবদহ অঞ্চল। যেখানে বছরের প্রায় ৬ মাস জলাবদ্ধ থাকে।
এসময় বাড়ির উঠানসহ চারপাশে পানি জমে থাকে। বাড়ির বাহিরে চলাচলসহ অন্যান্য কাজে দারুণ দুর্ভোগ পোহাতে হয় এ অঞ্চলের মানুষের। অভয়নগরের ডুমুরতলা, বেদভিটা, চলিশিয়া, বলারাবাদ, সরখোয়া ও মণিরামপুরের লেবুগাতি, কুলটিয়া, মশিয়াহাটী, সুন্দলী, হাটগাছা গ্রামে গিয়ে শনিবার (১১ডিসেম্বর) সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, পানি আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। সুন্দলী গ্রামের নারায়ন চন্দ্র মল্লিক জানায়, সামন্য বৃষ্টি হয়েগেছে কয়েকদিন