লাভজনক হওয়ায় সাতক্ষীরায় কুল চাষের সম্ভাবনা বাড়ছে

0

রিজাউল করিম সাতক্ষীরা প্রতিনিধি: সাতক্ষীরার বেলে দোঁয়াশ মাটি ও নাতি শীতোষ্ণ জলবায়ু কুল চাষের উপযোগী। ধান, পাট, সবজি ও মাছ চাষ অপেক্ষাও কুল চাষে অধিক লাভবান হওয়ায় কৃষকরা এ চাষে ঝুঁকে পড়েছে। ফলে সাতক্ষীরা কুল চাষের সম্ভাবনাময় জেলা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।

সাতক্ষীরা জেলায় এ বছর ৬৫০ হেক্টর জমিতে কুল চাষ করা হয়েছে। তবে এর মধ্যে কলারোয়া, তালা, সাতক্ষীরা সদর ও কালীগঞ্জ উপজেলায় সবচেয়ে বেশি কুল চাষ হয়ে থাকে। গত বছর জেলায় ৬০০ হেক্টর জমিতে কুল চাষ করা হয়।

জলবায়ুর পরিবর্তণজনিত কারণে ধান, পাট ও সবজির উৎপাদন কমে যাওয়ায় জেলার কলারোয়া উপজেলার সিঙ্গা, হুলহুলিয়া, বহুড়া ও সাতপোতা এলাকায় ১৯৯৫ সাল থেকে বাণ্যিজিক ভিত্তিতে নারিকেল কুল, বাউকুল, আপেল কুল, বলসুন্দরী ও ঢাকা নাইন্টি কুল চাষ শুরু হয়। এসবের মধ্যে নারিকেল কুল সুস্বাদু ও বাজারে বেশি দামে বিক্রি হয়। কুল বিক্রি করে কৃষকরা অধিক লাভ পাওয়ায় বর্তমানে উপজেলার বেড়বেড়ি, দরবাশা, কোমরপুর , নাথুপুর, বলিয়ানপুর, সোনাবাড়িয়া, রামকৃষ্ণপুর, বড়ালি, হিজলদি, সুলতানপুর, দাঁড়কি , চাঁন্দুড়িয়া ও কাতপুরসহ শতাধিক গ্রামে কুল চাষ হচ্ছে। তাদের দেখা দেখি তালা, সাতক্ষীরা সদর, দেবহাটা ও পার্শবর্তী যশোর জেলার শার্শা ও ঝিকরগাছা উপজেলার দেড় শতাধিক গ্রামে এ চাষ শুরু হয়েছে।

বাংলা সনের ফাল্গুণ মাসের শেষের দিক থেকে পুরাতন কুল গাছের ডাল কেটে ফেলে জমিতে সেচ ও পরিচর্যার কাজ শুরু হয়। কার্তিক মাসের প্রথম দিকে কুল গাছে ফুল ধরার পর বিভিন্ন কীটনাশক স্প্রে করা হয়। এ সময় কুল ফুলে মৌমাছির মাধ্যমে পরাগায়ন ঘটে। অগ্রহায়ন মাসের প্রথম দিকে গাছে কুল ধরা শুরু হলে স্বাস্থ্য হানিকর নয় এমন হর্মোন স্প্রে করা হয়। পৌষ মাসের শুরুতেই কুল পাকতে শুরু করে। শেষ ফাল্গুন পর্যন্ত কুল পাওয়া যায়। বিঘা প্রতি মৌসুমে ৫০ থেকে ৫৫ কুইন্টাল কুল পাওয়া যায়। বর্তমানে নারিকেল কুল কেজি প্রতি ৯০ থেকে ১০০ টাকা ও আপেল কুল ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। টক কুল বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকায়। কলারোয়ার সিঙ্গা বাজার, তালার পাটকেলঘাটা ও সাতক্ষীরা শহরের বড় বাজারসহ কয়েকটি ডিপোর মাধ্যমে উৎপাদিত কুল জেলার চাহিদা মিটিয়ে প্রতিদিন প্রায় ২০ মেট্রিক টন ঢাকার কারোয়ান বাজার, ওয়াজঘাট, চট্টগ্রাম, খুলনা, যশোরসহ ও দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়। জেলায় প্রায় পাঁচ হাজার পরিবার ও ১৫ হাজারের বেশি নারী ও পুরুষ শ্রমিক এসব কুল বাগানে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে।

কৃষকদের অভিযোগ, সরকারি সহায়তায় পর্যাপ্ত পরিমান কম সুদে বা সুদ মুক্ত ঋণ না পাওয়ায় তারা ঢাকার ওয়াজঘাট ও কারোয়ান বাজারের মহাজন বা ফড়িয়াদের কাছ থেকে দাদন নিতে বাধ্য হন। ফলে ওইসব ফড়িয়াদের কাছে কুল দিতে যেয়ে তারা ন্যয্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। অপরদিকে সরকারিভাবে বাজারজাতকরণ ও প্রক্রিয়াজাত করণের ব্যবস্থা (আচার ও জেলি তৈরি) না থাকায় উচ্চ মূল্যে পরিবহন খরচ গুণতে যেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষকরা।

সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপপরিচালক নুরুল ইসলাম জানান, কুল একটি মৌসুমী ফল। নারিকেল কুল, বাও কুল, আপেল কুল, বল সুন্দরী ও নাইন্টি কুল চাষ হচ্ছে। মাছের ঘেরের আইল ও পতিত জমিতে কুল চাষ হচ্ছে। এবার ৬৫০ হেক্টর জমিতে কুল চাষ হয়েছে। এখন কুল পাকা শুরু হয়েছে। প্রতি বিঘা জমিতে কুল চাষ করতে খরচ হয় ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা, বিক্রি হয় ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা। আবহাওয়া ভাল থাকলে কুল চাষে বেশি লাভ হবে। কুল একটি সুস্বাদু,মিষ্টি ও পুষ্টিকর ফল। দেশের মানুষের বিকল্প খাদ্য হিসাবে ও পুষ্টির পুরনে অনেকটা সহায়ক হবে কুল। দেশের চাহিদা মিটিয়ে কুল বিদেশে রপ্তানী করে বিপুল পরিমান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.